somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যারিসের চিঠি

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় আকাশি,
গতকাল ঠিক দূপুড়ে তোমার চিঠি পেয়েছি
খামের উপর নাম ঠিকানা পড়েই চিনতে পেরেছি তোমার হাতের লেখা;
ঠিকানা পেলে কিভাবে লেখনি;
কতদিন পর ঢাকার চিঠি ; তাও তোমার লেখা ,
ভাবতে পারো আমার অবস্থা !
গতকাল প্যারিসে ঝরেছিলো এ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা তুষাড়পাত
তামাক ফুরিয়ে গেছে আনতে পারিনি; এই প্রথম আমি
অনেকটা সময় নিয়ে ভুলেছিলাম তামাকের গন্ধ।
তোমার চিঠিতে পরিবর্তন
আর বদলে যাওয়ার সংবাদ;
তুমি কষ্ট পেয়ে লিখেছো – রাত্রির ঢাকা এখন
নিয়নের স্নিগ্ধতা ছেড়ে নিয়েছে
উৎকট সোডিয়ামের সজ্জা,
আমাদের প্রিয় রমনা রেস্তোরা এখন কালের সাক্ষী,
মিষ্টি কয়েন বক্সের জায়গা দখল করে নিয়েছে
ডিজিটাল কার্ড ফোন
শীতের বইমেলা পরিণত হয়েছে মিনাবাজারে,
টি এস সি’র চত্বর যেন উত্তপ্ত বৈরুত।
বদলে যাওয়া কষ্টের অপর নাম স্মৃতি
এখন তাই নিয়ে বুঝি মেতে আছো;
এই পরবাসে আমার চোখের সামনেও বদলে যেতে দেখলাম
কত সুদৃঢ় ইতিহাস-
বালির বাঁধের মতন ভেসে গেল বার্লিন প্রাচীর
ইংলিশ চ্যানেলের তল দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে চলছে ট্রেন;
ইউরোপের মানচিত্র এখন রুটি হয়ে গেছে,
ক্ষিদে পেলেই ছিড়েঁ ছিড়ে খাও, স্বাধীনতা মানেই যেন উদর পূর্তি
তুমি লিখেছ- “তোমাকে ভুলেগেছি কিনা?”
প্রিয় আকাশী আমি জেনে গেছি- পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ ভুলে
থাকা;
স্মৃতি থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য এই সুদীর্ঘ প্রবাসের
অর্ধেকটা কাটিয়েছি বোহেমিয়ানদের মত ঘুরে ঘুরে
মাদ্রিদ থেকে হামবুর্গ; নিউক্যাসল্ নেপালি থেকে প্রাগ বুখারেষ্ট মেসিডোনিয়া; নর্থ সি থেকে মেডিটেরিয়ান কিংবা ব্ল্যাক সি।
তবু বাঁচতে পারিনি স্মৃতি থেকে- ফ্রান্কফুটের বইমেলায়
নতুন বইয়ের গন্ধে মনে পড়েছে তোমাকে
ফ্লোরেন্সে- মিকেলাঞ্জেলোর ‘ডেভিড’
রোমে -’পিয়েতা’ আর সিসটাইন চ্যাপেলের- ‘ লাস্ট জাজমেন্টের মত ‘
মহান সৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে
প্রথমেই মনে পড়েছে তোমাকে।
সিসিলির কার্ণিভেলে, এথেন্সের কফিশপের জমজমাট
কবিতা পাঠের আসরে মনে পড়েছে তোমাকে।
পালারমো-র সৈকতে কিন্বা ভিয়েনার তারাজ্বলা রাত্রির
আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে পড়েছে
তোমার প্রিয় কবির কবিতা-
Under the wide and starry sky
dig my Grave and let me lie
glad did I live and gladly die
And I laid me down with a will.
সুইজারল্যান্ডের লেকের কাছে স্বচ জলে
নিজের ছায়ার পাশে যাকে খুঁজেছি, সে তুমি;
ভাটিক্যানের প্রার্থনা সভা শেষে এক গ্রীক তরুণীকে
বাংলায় কি বলেছিলাম জানো?
বলেছিলাম- ‘ তুমি আমার আকাশী হবে?’
ভুলতে পারিনি তোমাকে , শত চেষ্ঠা করেও পারিনি
আর কেউ না জানুক অসংখ্য জিপসি রাত জানে
সেই না ভুলতে পারা ইতিহাস।
তুমি জানতে চেয়েছো প্যারিসের কথা-
সত্যি বলতে কি,
প্যারিস খুলে দিয়েছে আমার আত্নার চোখ
সংগীত আর শিল্পের অভিন্ন সুর আমি শুধু প্যারিসেই শুনেছি।
কনর্সাটে যতবার মোৎসার্ট কিংবা বিতোভেন শুনেছি
ততবারই কেন যেন চিরদুখী পাগল
ভিনসেন্ট ভ্যানগগের কথা মনে পড়েছে।
সমস্ত প্যারিসের রাস্তায় গ্যালারিতে ফেষ্টিভেলে খুঁজে ফিরেছি ভিনসেন্টের কষ্ট।
তোমার প্রিয় গায়ক জিম মরিসনের শেষ দিনগুলো কেটেছে
এই প্যারিসে। প্যারিসেই জিমের কবর।
অগনিত শিল্পীর কষ্ট থেকে প্যারিস পেয়েছে সৌন্দর্য,
কষ্টই প্যারিসের ঐশ্বর্য।
আমাদের সুবর্ন সময়ের স্বপ্নের প্যারিসে আজ
নিজেকে ভীষন একা মনে হয়
এলোমেলো পড়ে আছি শিল্প সাহিত্যের এই জাগযজ্ঞে
তীব্র শীতের জন্য শ্বাস কষ্ট ভোগায় মাঝে মাঝে
এইতো সেদিন আবারও বদলালাম চশমার কাঁচ
প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছি ,সময়ের কাছে;
তুমি মনে রেখো পরিবর্তনের দমকা হাওয়ায়
আমি বদলাইনি এতটুকু।
বাইজেনটাইন সম্রাজ্ঞীর মত তোমাকে ঘিরে থাক্
পৃথিবীর সমস্ত সুখ
তুমি আন্দ্যি সুন্দরী হয়ে ওঠো তোমার সৃষ্টিতে।
তুমি ভালো থেকো...
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×