আগের দিন আমাগো পার্টির জনসভা ছিলো। নভেম্বর বিপ্লব আর পার্টির শুরু একইদিনে এই উপলক্ষে প্রতি বছর আগে ঢাকায় একটা কেন্দ্রীয় প্রোগ্রাম হইতো। সারাদেশের কর্মীরা আসতো ঢাকায়...তারপর একসাথে পার্টির কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে নেতাদের বক্তব্য শোনা, কমরেডদের সাথে মোলাকাত, লাল সালাম আর কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল...তো সবকিছু সফলতার সাথে সম্পন্ন হওয়ার পর 9 নভেম্বর ক্যাম্পাসে মুখে ঝলমলে হাসি নিয়া ক্যাফেটরিয়াতে বইসা গল্প করতেছিলাম ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মারামারি নিয়া, তারা ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজীর ভাগ নিয়া মারামারি কইরা ক্যাম্পাস কেমনে অস্থিতিশীল করে এই কথা বুঝাইতে ছিলাম নতুন দুই সহযোদ্ধারে। ঠিক এমন সময় দুইটা ছেলে সম্ভবতঃ ফার্স্ট ইয়ারের, আসলো হাপাইতে হাপাইতে...তারা এলোমেলো বহুকিছু বইলা যা বুঝাইলো তার সারমর্ম হইলো ছাত্র শিবির আল বেরুনী আর কামালুদ্দিন হল দখল করছে। আমরা প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেছিলাম না...কারণ ছাত্রদলের গ্রুপিং-য়ের কোন যোগসূত্র আছে কিনা এই ধরনের প্রচারণায়, সেইটারে মাথায় রাখতে হইতে ছিলো। তারপরেও আমরা সমাজবিজ্ঞান ভবনে গেলাম। সেইখানে গিয়া দেখি ছেলে পেলে একটু অস্থির কি করবো বুঝতে পারতাছেনা। এই ধরণের পরিস্থিতি জাবিতে আগে কখনো হয় নাই।খোকন ভাই পরিস্থিতি দেইখা শ্লোগান ধরলেন ছোট একটা জমায়েতের মধ্যে। সেই জমায়েত ছয় সাতশো ছাত্র ছাত্রীর জমায়েতে পরিনত হইলো রেজিস্ট্রার বিলডিং-এ গিয়া।আমরা রেজিস্ট্রার বিলডিংয়ে গিয়া নিশ্চিন্ত হইলাম শিবির-ই দখল করছে হল। তারা সুপারী তলা পর্যন্ত আইসা দাঁড়াইছে।কিছুক্ষণ পর পর গুলি ফুটাইতেছে ফাঁকা। ছেলে পেলে একটু নার্ভাস হইয়া গেছে এর মধ্যেই কারন মাঝে মাঝেই বিড়িং বিড়িং আওয়াজ তুইলা গুলি লাগতেছে দেয়ালে। ভিসি স্যাররে আমরা গিয়া কইলাম স্যার পুলিশ লাগবো। তখন আমীরুল ইসলাম চৌ ছিলেন ভিসি। তিনি লগে লগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরে ফোন করলেন। মন্ত্রী সরাসরি কইয়া দিলো সে কিছু করতে পারবো না। রাজাকার আব্দুল মতিন চৌধুরী কিছু করবোনা এইটা আগেও আমরা জানতাম। ভাগ্যক্রমে স্বরাষ্ট্র সচিব স্যারের কলেজের সহপাঠী ছিলেন, স্যারের ফোন পাইয়াই সে কইলো এক্ষুনি পুলিশ পাঠাইতেছেন। যদিও সেই পুলিশরা আমরা শিবির কর্মীগো হলে কোনঠাসা করনের পর আই সা উপস্থিত হইছিলো। যাউগ্গা সেইদিন আমরা কোন অস্ত্র ছাড়াই হলে ঢুইকা গেছিলাম সশস্ত্র শিবির কর্মীগো দখলে রাখা হলে, আমাগো শক্তি ছিলো সংখ্যা, গোটা পঞ্চাশেক শিবির কর্মীর সামনে আমরা ছিলাম হাজারের উপর। কিছু পলাইছিলো হলের পিছন দিক দিয়া টপকাইয়া। আর বাকী গুলিরে পুলিশ আইসা বাঁচাইছিলো। আমার মনে আছে দিনের শেষে যখন আবার হল শিবির মুক্ত, তখন ছাত্রী হলের সহযোদ্ধারা আমাগো টাইনা নিয়া গেলো তাগো ক্যান্টিনে মিষ্টি মুখ করাইতে। অদ্ভুত লাগতেছিলো। মনে হইতেছিলো আমরা যুদ্ধফেরতা। খুবই বালখিল্য ভাবনা, কিন্তু ঐ সময় আসলেই কেমন লাগতেছিলো তা বইলা বোঝানো সম্ভব না, লেইখা তো অসম্ভব!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ১১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



