somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিবির বিরোধী আন্দোলন-4

০৬ ই নভেম্বর, ২০০৬ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধীরে ধীরে সব কিছু আমাগো নিয়ন্ত্রণে চইলা আসতেছিলো। একের পর এক গোপন শিবির কর্মী ধরা পরতেছিলো তাগো দেয়া ইনফরমেশনে আমরা শিহরিত হইতেছিলাম, তাগো পরিকল্পণায় আমরা ভীত হইতেছিলাম। ঢাকা শহরে বড় হওয়ার কারণে শিবিরের আসল রূপ ঠিক জানতাম না আগে। খালি জানতাম এরা হাত-পা-রগ এইসব কাইটা দখলের রাজনীতি করে। শিবির হাত কাইটা দিছিলো এইরম দুইজনরে দেখার দুর্ভাগ্য আমার হইছিলো এর আগে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এক কমরেড রাজেশদা আর আমার মেজ কাক্কুর রাজনৈতিক বন্ধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল হামিদ, এই দুইজনেরই ঠিক একই প্যাটার্নে কনুই থেইকা হাত কাইটা দিছিলো শিবির কর্মীরা, দুইটা ঘটনারই উদ্দেশ্য ছিলো ক্যাম্পাস দখল। কিন্তু তারা যে কেরম গোপন গোপন খেলায় সংগঠনের বিস্তার ঘটায়, নিয়মিত কেরম ফজরের নামাজ পইড়া আলো ফুটনের আগে সেন্ট্রাল মাঠে কাঠের আর আসল অস্ত্র দুই দিয়াই কমব্যাট ট্রেনিং সেশন করতো সেইসবের বিস্তারিত বর্ণনা দিতেছিলো ধরা পরা শিবির কর্মীরা। আক্রমণের দিন যেইসব শিবির কর্মী ধরা পরছিলো তাগো মধ্যে এক দুইজনরে হয়তো আমাগো ব্লগের জামায়াতি বন্ধুরাও চিনবেন। একজন ছিলো মাত্র সেকেন্ড ইয়ারের কাস শুরু করা মৃন্ময়। সে যদ্দুর মনে পরে জিওলজিতে পড়তো। পোলাপাইনের কাছে শুনছি সে লেডি কিলার টাইপ ছিলো। যাউগ্গা ঐটা মূখ্য না, তার আরেকটা পরিচয় হইলো সে ছিলো সালাম বরকত হলের ছাত্রদলের দফতার সম্পাদক। এই মৃন্ময় পরে শুনছি জামায়াতের কোন এক কেন্দ্রীয় নেতার সু সন্তান। আলী আহসান মুজাহিদ কি? আরেকজন ছিলো চৌহান যার নাম আগেও একবার কইছি। সে ছিলো ভাসানী হলের পর্ণো ছবি দেখার কমিটির আহ্বায়ক টাইপ। সে শিবিরের কর্মী এই পরিচয় বিশ্বাস করতে কষ্ট হইছিলো আমার নিজেরই। অসাধারণ সব ছদ্মবেশ!

এমন শিবির কর্মীরাও ধরা পরছিলো ঐ টাইমে যারা শিবির বিরোধী মিছিলে শ্লোগান ধরতো গলা কাঁপাইয়া। অনেকে ধরা পরলে তারা লাফাইয়া গিয়া কলার চাইপা ধরতো কিছু কওনের আগেই মাইর শুরু করতো। কিন্তু এই ধরনের ছেলেরা যাগো ধরতো তারা আর কোন ইনফো দিতো না। তবে সেই ছেলের রুম থেইকাই বনপুকুরে জামায়াতের অফিসে কোন নেতা আইসা তাদের কিভাবে ইসলামের পথে শহীদ হওনের কথা বলছে তার বিষদ বর্ণনা ওয়ালা লেখা ডাইরী পাইয়া আমরা হতভম্ব আর একই সাথে আতংকিত হইতে শুরু করলাম। আশেপাশের কাউরে বিশ্বাস করতে পারি না। মানুষরে বিশ্বাস করতে না পারাটা যে কিরম অস্বস্তিকর আমি হাড়ে হাড়ে টের পাইছিলাম ঐ সময়ে। এখনো কোন আদালত ভবনে গেলে আমার সেইসব দিনের স্মৃতি মাথায় আসে।

শিবির কর্মীগো আন্ডারগ্রাউন্ড বিস্তার দেইখা রীতিমতো শ্রদ্ধাবোধও জাগতো মাঝে মাঝে। তাগো সব স্তরের কর্মীরাই সবাইরে চিনতো না। আক্রমরে 3দিন পর আমাগো বন্ধু আলমগীর হলে ফিরা আসছিলো। তার হাতে মুক্তাগাছার মন্ডা। কিন্তু তারে তার দৈর্ঘ্যের চেয়ে বড় এক রাইফেল নিয়া ছাঁদে দেখা গেছে, আল বেরুণী হল দখলের পর। শেষ মুহুর্তে পালাইয়া যাইতে পারা কয়েকজনের একজন সে। আমরা তখন গেস্টরুমে বসি নিয়মিত কে আসলো কে গেলো তা দেখনের লেইগা। আলমগীররে আমরা বসাইলাম, তারে একদম সাধারণ ভাবে জিজ্ঞাসা করলাম। সে যথারীতি সব অস্বীকার করলো। আমরা তার রুমে গিয়া লকার চেক করলাম। সেইটা পুরা খালি কোন জামাকাপড় বই পত্রও নাই! এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে কিছু কয় না! তারপর তারে হালকা চর-থাপ্পরও দেয়া হইলো। সে কিছু বলে না। মানুষরে তো মারতেও পারি না ঠিক মতো! তারে নিয়া আসা মুক্তাগাছার ড্রাই মন্ডা খাওয়াইলাম আধা কেজির মতো পানি ছাড়া। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। মেষে পাশের পোলাটার কাছ থেইকা একটা ব্লেড নিলাম। ব্লেডটা টেবিলের উপর রাইখা তার চোখ বানলাম। চোখ বাইন্ধা হাতে নিলাম একটা পেনসিল। পেনসিলের শিস দিয়া হালকা কইরা তার কান্ধের রগের উপর বুলাইলাম। আর সাথে সাথে সে কয় "হাসান"। আমি কই হাসান কি? সে কয় হাসান হইলো শিবিরের সদস্য। অদ্ভুত!
আমরা জানতাম হাসান শিবির কর্মী, সে পুলিশের হাতে ধরাও পরছিলো, কিন্তু সে শিবিরের সদস্য! তারপরের নাম যেইটা কইলো সেইটা শুইনা আমি রীতিমতো ভরকাইলাম! "কামরুল ভাই"। কামরুল ভাই ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আল বেরুনী হল শাখার সভাপতি! হাসান দোহারী নামে কবিতা লিখতো বাংলা বিভাগের ছাত্র কামরুল হাসান। শিবিরের এই আক্রমণের সময় সম্ভবতঃ সে মাস্টার্সের রেজাল্টের অপেক্ষায়। তখন ছাত্রলীগের বড়ই দুর্দশা! আলবেরুনী হলের প্রায় একক প্রতিনিধিত্ব করে কামরুল হাসান দোহারী। সে ছাত্র শিবিরেরও সভাপতি!

ক্যাম্পাস থেইকা বাইর কইরা দেয়ার 15 দিন পর সে ছাত্র শিবিরের জাবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করলো। তার এই পদোন্নতি আমাগো বাঁচাইছিলো। তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি মহিবুল্লাহ আরেকটু হইলেই আমাগো বিরুদ্ধে মামলা করার সবকিছু সাজাইয়া ফেলছিলো। সে এক বিরাট ইতিহাস!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×