ভেসপুচ্চি
মাত্র ২২ বছর বয়সেই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমানোর আগে উত্তর ইতালীর সেরা সুন্দরী বলে মনে করা হত ভেসপুচ্চিকেই। সেই সৌন্দর্যের কারণেই বত্তিচেল্লি সহ ফ্লোরেন্সের অনেক চিত্রশিল্পীরই চিত্রের মডেল হয়েছিলেন ভেসপুচ্চি। বত্তিচেল্লির ১৪৮০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অঙ্কিত দ্য বার্থ অফ ভেনাস চিত্রকর্মে মাঝখানে ভেনাসরুপে দাড়ানো নারী আর কেউ নয় স্বয়ং ভেসপুচ্চিই, যিনি সেখানে ভেনাসের মডেল হিসেবে ছিলেন।আজকের দিনে কোনো জনপ্রিয় মডেলের দেখা পেলে সমলিঙ্গের সবাই যেমন তার মতো হতে চায়, ভেসপুচ্চির বেলাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তৎকালীন ইতালীয় নারীরা ফ্যাশনের জন্য তার অন্ধ অনুকরণেই অভ্যস্ত ছিলেন।চেহারাকে ধূসর, সাদা ও আরো সৌন্দর্যময় করে তোলার জন্য ভেসপুচ্চির সময়ের নারীরা মুখে জোঁক লাগিয়ে রাখতেন। জোঁকেরা তাদের মুখ থেকে রক্ত চুষে নিতো। ফলে রক্তহীনতায় মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যেত, আর এটাই তারা চাইতেন! যারা জোঁক ব্যবহারে আগ্রহী ছিলেন না, তারা পাউরুটির টুকরো, ডিমের সাদা অংশ এবং ভিনেগার একত্রে মিশিয়ে ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতেন।জন্মগতভাবেই ভেসপুচ্চি ছিলেন স্বর্ণকেশী। তার দেখাদেখি অন্য অনেকে নিজেদের চুলকে সোনালী রঙের বানাতে চাইতেন। তবে নিজেদের চুলকে সেভাবে সজ্জিত করার মতো অর্থ বা সাধ্য যেসব দরিদ্র নারীর থাকতো না তারাও সাধ মেটাতে নিজেদের চুলের রঙ হালকা করার উদ্দেশ্যে সেখানে নিজেদের মূত্রই ব্যবহার করতেন।
বর্জিয়া
পোপ ষষ্ঠ আলেকজান্ডারের কন্যা লুক্রেজিয়া বর্জিয়া ছিলেন বিখ্যাত হাউজ অফ বর্জিয়ার এক অভিজাত বংশীয় নারী। মোহনীয় রুপের জন্য অসংখ্য চিত্রকর্ম, উপন্যাস এবং চলচ্চিত্রে তাকে তুলে ধরা হয় ।তার রুপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিলো তার মাথার চুল। আর সেসবের রক্ষণাবেক্ষণে তার যে পরিমাণ সময় এবং শ্রম দেওয়া লাগতো তা জানলে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।বর্জিয়ার চুলগুলো ছিলো বেশ উজ্জ্বল এবং সোনালী বর্ণের। তার পরিবারের অন্য সবার চুলই ছিলো ঘন কালো রঙের। তবে বর্জিয়ার পছন্দ ছিলো সূর্যের আলোয় চকচক করে ওঠা সোনালী চুল। সেজন্য তিনি লেবুর রস ও একপ্রকারের ক্ষারের সাহায্যে নিজের চুলগুলোকে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগিয়ে ধুতেন। পরে দিনের বাকি সময় ধরে আবার সূর্যালোকের বসেই চুলগুলো শুকাতেন।তার সেই চুলের পরিচর্যায় এতটাই সময় যেত যে, মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে হত তাকে শুধুমাত্র চুলের যত্নের জন্য। তার সহচরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন চিঠি আজও টিকে আছে। সেসব চিঠিতে তাকে বিভিন্নজনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা গেছে এই বলে যে, তার যেতে কয়েকদিন সময় লাগবে, কারণ কাপড়গুলো গোছাতে হবে এবং মাথা পরিষ্কার করতে হবে।
ক্লিওপেট্রা
সেই সময় মিশরে নারীরা যে লিপস্টিক ব্যবহার করতেন তা তৈরিতে ব্যবহার করা হতো গুবরেপোকার চূর্ণ করা অন্ত্র। আর চোখের নিচে তারা লাগাতেন কুমিরের শুকনো মলের চূর্ণ। একজন নারী হিসেবে ক্লিওপেট্রাও সেসব ব্যবহারের বাইরে ছিলেন না।তবে যত যাই হোক না কেন ক্লিওপেট্রা তো একজন রানী। তাহলে তিনি কেন কেবল সাধারণ নারীদের কাতারে নিজেকে আটকে রাখবেন ? তার রুপচর্চা পুরো ব্যাপারটিই ছিলো রাজকীয় ব্যাপারস্যাপার।গোসলের জন্য ক্লিওপেট্রা ব্যবহার করতেন টকে যাওয়া গাধার দুধ। তার চাকরবাকরেরা প্রতিদিন সাতশত গাধার দুধ দোয়াতো। তারপর সেই দুধ দিয়ে পূর্ণ করা হতো বিশালাকার এক পাত্র। সেই দুধ টকে গেলেই কেবল ক্লিওপেট্রা তাতে গোসলে নামতেন। তার বিশ্বাস ছিলো, এর ফলে চামড়ার ভাঁজ দূর হয়।শুনতে যতই অদ্ভুত লাগুক না কেন ক্লিওপেট্রার সেই গাধার দুধ কিন্তু আসলেই তার চামড়ার সুরক্ষায় কাজে আসতো। টকে যাওয়া ল্যাকটোজ ধীরে ধীরে ল্যাক্টিক এসিডে পরিণত হয়। এটা চামড়ার উপরিভাগের অংশকে ঝরিয়ে ফেলে। ফলে বেরিয়ে আসে তুলনামূলক কোমল দাগহীন নতুন চামড়া।
নেফারতিতি
আমার মনে হয় মিশরের রানী নেফারতিতির নাম শোনেননি, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। তার নামের অর্থ হল সৌন্দর্যের আগমন। আর নামের সাথে যেন তার রুপের সত্যিকার অর্থেই মিল আছে।নিজের রুপচর্চার জন্য নেফারতিতি যে প্রচুর অর্থ এবং সময় ব্যয় করতেন সেই ব্যাপারে সন্দেহ নেই।তার সমসাময়িক কালের অন্যান্য ধনী নারীদের ব্যবহৃত প্রসাধনী সামগ্রী আমাদেরকে তার রুপচর্চার পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক ধারণাই দেয়।নেফারতিতির মাথায় কোনো চুলই ছিল না। পা থেকে মাথা পর্যন্ত তার পুরো দেহের চুলই কামিয়ে ফেলা হয়েছিলো। চুলের জায়গায় তিনি পরচুলা ব্যবহার করতেন। আর চোখে ব্যবহার করতেন সীসার আকরিক গ্যালেনা থেকে প্রস্তুতকৃত সুর্মা। তিনি যে লিপস্টিক ব্যবহার করতেন, সেটার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতো বিষাক্ত ব্রোমিন ম্যানাইট যা তার স্বাস্থ্যহানীর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
রানী প্রথম এলিজাবেথ
রানী প্রথম এলিজাবেথের সময়কালে সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রসাধনী সামগ্রীটির নাম ছিলো ভেনেশিয়ান সেরুজ। সীসা এবং ভিনেগার মিশিয়ে প্রস্তুতকৃত এ প্রসাধনীটি তৎকালীন নারীরা তাদের মুখে ব্যবহার করতেন, যাতে তাদেরকে আরো ফর্সা দেখা যায়।ভেনেশিয়ান সেরুজ ব্যবহারের দিক দিয়ে তৎকালীন অন্য সকল নারীকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন রানী। তার বয়স যখন উনত্রিশ বছর তখন তিনি স্মলপক্সে আক্রান্ত হন। ফলে তার সারা শরীর গুটি গুটি দাগে ছেয়ে যায়। এমন অবস্থায় অন্য কারো সামনেই যাবার মতো অবস্থা ছিলো না রানীর। তাই জনসমক্ষে যাবার আগে প্রতিবার তিনি শরীরের বাইরে প্রদর্শিত প্রতিটি অংশ ভেনেশিয়ান সেরুজ দিয়ে মাখিয়ে নিতেন। তিনি সেই মিশ্রণটি এতটাই বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতেন যে কেউ যদি তাকে মেকআপ ছাড়া দেখতো তবে সেই ব্যক্তি তাকে ভুলেও চিনতে পারতেন না ।
তথ্যসূত্র ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:১৬