somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরআনের আলো

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরআনের আলো
( ৬১তম পর্ব )
যৌথভাবে জীবন যাপন অব্যাহত রাখতে স্বামী ও স্ত্রী সম্মত না হলে ইসলাম তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদকে, অনিশ্চিত অবস্থায় স্ত্রীকে উৎকন্ঠিত করে তাকে চাপের মুখে রাখার চেয়ে ভালো বলে মনে করে । আজকের পর্বে আমরা তালাক সম্পর্কে কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা করবো । প্রথমে সুরা বাকারার ২২৮ নম্বর আয়াত নিয়ে আলোচনা করবো । এ আয়াতের অর্থ হলো, ‘‘ যেসব স্ত্রী তালাক পেয়েছে তারা পুনরায় বিয়ের আগে তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে পবিত্র হওয়ার জন্য । আর তারা যদি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তবে আল্লাহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন তা অন্য কাউকে বিয়ের লক্ষ্যে গোপন করা তাদের জন্য বৈধ নয়, বরং সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করা উচিত । আর এ সময়ের মধ্যে তাদের স্বামীরা যদি আপোস করতে চায়, তবে তাদের স্বামী তাদেরকে পুনরায় বিয়ে করার বেশি অধিকার রাখে । স্বামীদের জানা উচিত স্ত্রীদের উপর তাদের যেমন ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, তেমনি স্বামীদের উপরও স্ত্রীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার অছে । আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও প্রজ্ঞাময় ।'' এ আয়াতে পরিবারের ও সন্তানদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য তালাকের পর পুনরায় বিয়ের আগে স্ত্রীদেরকে প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে । যাতে তাদের গর্ভে যদি সন্তান থেকে তবে তা যেন স্পষ্ট হয় এবং নবজাতকের অধিকার যেন রক্ষা করা হয় । সম্ভবত এই নবজাতক তালাক প্রতিরোধের পটভূমি সৃষ্টি করতে পারে । এরই মধ্যে স্বামী বা স্ত্রী যদি তালাকের সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং পুনরায় আগের মতো যৌথ জীবন শুরু করতে চায় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে পুর্বের স্বামী অন্যদের চেয়ে বেশি অধিকার পাবে। আয়াতের শেষাংশে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ মিটানো ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের উভয়কেই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে । আর এ লক্ষ্যে প্রথমে স্বামীদের উদ্দেশ্যে বলা হলো,‘‘তোমাদের স্ত্রীর যেমন ঘর ও সংসারের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তেমনি তোমাদেরও স্ত্রীর অধিকার রক্ষার জন্য দায়িত্ব আছে । উপযুক্ত ও পছন্দনীয় পন্থায় এই দায়িত্ব পালন করতে হবে ।'' এরপর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘‘ পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব স্বামীর এবং এক্ষেত্রে স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর যোগ্যতা বেশি ।'' এবারে সুরা বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াত নিয়ে আলোচনা করবো । ‘‘যেকোন স্বামী দুই বার পর্যন্ত তালাক দিয়েও পূর্বের স্ত্রীর কাছে ফিরে যেতে পারে । এরপর হয় তাকে উপযুক্ত মর্যাদায় স্ত্রী হিসেবে রাখবে অথবা সদয়তার সাথে ত্যাগ করবে । স্বামী ও স্ত্রী যদি এ আশংকা করে যে তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া স্বামীর জন্য বৈধ নয় । এরপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে তারা উভয়ই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না তাহলে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয় তবে উভয়ের মধ্যে কারোই কোন পাপ নেই । এই হলো আল্লাহর নির্দেশের সীমা এবং এই সীমানা লংঘন করো না । যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে তারা অত্যাচারী।'' আগের আয়াতে বলা হয়েছিল তালাকের পর স্ত্রীকে তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। যাতে তার গর্ভে যদি সন্তান থেকে থাকে তা যেন স্পষ্ট হয় এবং তালাকের বিষয়ে স্বামী অনুতপ্ত হলে যেন পুনর্মিলনের সম্ভাবনা থাকে । এই আয়াতে বলা হয়েছে স্বামী মাত্র দুইবার পর্যন্ত স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তা ফিরিয়ে নিতে পারে । আর যদি তৃতীয়বার স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে স্ত্রীর কাছে আর ফিরে যেতে পারবে না । এরপর পরিবার পরিচালনার বিষয়ে একটি জরুরী মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে । পুরুষদের উদ্দেশ্যে এ মূলনীতিতে বলা হয়েছে স্বামীদেরকে হয় পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হবে অথবা স্ত্রীর সাথে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে হবে । আর যদি একত্রে বসবাস একেবারেই সম্ভব না হয় তাহলে অত্যন্ত ভদ্রভাবে স্ত্রীকে মুক্তি দিয়ে দাও এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে । আর যদি স্ত্রী নিজেই তালাকের জন্য পীড়াপীড়ি করেন, তাহলে স্ত্রী তার মোহরানা মাফ করে দিয়ে তালাক নিতে পারেন কিন্তু কোন অবস্থাতেই মোহরানা মাফ করিয়ে নেয়ার জন্য স্ত্রীর উপর কোন ধরনের চাপ দেয়া বা তালাক নিতে তাকে বাধ্য করানো যাবে না । এই আয়াত থেকে আমরা যা শিখলাম তাহলো
প্রথমত : স্ত্রীর মানবীয় অধিকার ছাড়াও তার অর্থনৈতিক অধিকারও রক্ষা করতে হবে এবং স্ত্রীর সম্পদ ও মোহরানা থেকে স্বামী কিছুই গ্রহণ করতে পারবে না ।
দ্বিতীয়ত : তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ যদি একান্তই অপরিহার্য হয়ে পড়ে তাহলে স্বহৃদয়তার সাথে তা করতে হবে এবং প্রতিশোধ ও বিদ্বেষের মনোভাব নিয়ে তা করা যাবে না ।
তৃতীয়ত : যেসব পরিবার তার সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলে সেসব পরিবার অত্যন্ত সৌভাগ্যের অধিকারী আর যদি কোন পরিবার পাপের সাথে চলতে থাকে তবে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ ঐ পরিবার টিকে থাকার চেয়ে অনেক ভালো ।
এবারে সূরা বাকারার ২৩০ ও ২৩২ নম্বর আয়াত নিয়ে আলোচনা করবো । এই আয়াতের অর্থ হলো, যদি কোন স্বামী দুই বার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তার কাছে ফিরে আসার পর স্ত্রীকে তৃতীয়বারের মতো তালাক দেয় তবে ঐ স্ত্রী তার জন্য আর বৈধ হবে না যদি না অন্য কোন পুরুষ তাকে বিয়ে করে । এই দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দিলে যদি তারা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার ইচ্ছে রাখে তবে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই । আর এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা । আল্লাহ তো জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট বর্ণনা করেন । আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও এবং তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে নেয়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও । অথবা সহানুভূতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও । আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে আটকে রেখোনা । আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে । আর আল্লাহর নিদর্শনকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করো না । আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর যা তোমাদের ওপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব ও জ্ঞানের কথা নাজেল করা হয়েছে তোমাদেরকে উপদেশ দেয়ার জন্য । আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে আল্লাহ সব বিষয়ে মহাজ্ঞানী । তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, তখন তারা যদি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিধিমত সম্মত হয়, তবে স্ত্রীরা তাদের পূর্ব-স্বামীদের বিয়ে করতে চাইলে তাদেরকে বাধা দিওনা । এ দিয়ে তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও কেয়ামতের দিনে বিশ্বাস করে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে । এরমধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে একান্ত পরিশুদ্ধতা ও অনেক পবিত্রতা । আর আল্লাহ যা জানেন, তোমরা তা জান না । ইসলাম বৈধ ও প্রাকৃতিক কামনা-বাসনাকে সম্মান করে এবং স্বামী ও স্ত্রীর পুণর্মিলন ও তাদের কোলে সন্তানের প্রতিপালনকে স্বাগত জানায় । আর এ জন্যই ইসলাম, কোন স্ত্রী যদি অন্য পুরুষকে বিয়ে করার পর পুনরায় তার থেকে আলাদা হয়ে যায় তবে পূর্বের স্বামীর সাথে উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে বিয়েকে বৈধ করেছে । এক্ষেত্রে তাদের পুণর্বিবাহে অভিভাবক বা অন্যকারো বাধা দেয়ার কোন অধিকার নেই এবং এক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতিই বিয়ের আকদ্ হিসেবে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে । এই আয়াত থেকে আমরা যা শিখলাম তা হলো বর নির্বাচনে কনের মতামতকে সম্মান দেখাতে হবে এবং বিয়ের ভিত্তি হলো বর ও কনের যথাযথ সম্মতি । অতএব আমরা পারিবারিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য দম্পতিদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি । আপনারা পরস্পরের অধিকার যথাযথভাবে পালন করুন যাতে সন্তানদের এ উষ্ণ আশ্রয়স্থল শীতল না হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত যেন বিবাহ-বিচ্ছেদ না ঘটে ।#
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×