জনারন্য বাংলাদেশ। যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। ফার্মগেট যেন বারুষী হাট বার। শুধু মাথা আর মাথা। এত মানুষ বাংলাদেশে! প্রায়শ চিন্তা করি কেন এত মানুষ আমাদের এ বাংলাদেশে। যেখানে মানুষকে হাজার বছর ধরে সংগ্রাম করতে হয়েছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ আর রোগ শোকের বিরুদ্ধে। কেন দৃষ্টি সীমায় আপনি কখনই নিঃসঙ্গ হতে পারবেন না? জনসংখ্যা বৃদ্ধিটা কি হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নাকি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বৃদ্ধিটা এমনই ছিল? আমি প্রধান কারনটাকে খুজে চলেছি কিন্তু কোন প্রধান কারন খুঁজে পাইনি। তবে কতকগুলো কারন খুঁজে পেয়েছি।কারনগুলো কোনটাকে প্রথমে রাখা উচিত আর কোনটাকে পরে রাখা উচিত তাও গবেষনার বিষয়। আমার কাছে প্রধান যে কারন গুলো মনে হয়েছে তা
১। সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। নাগরিকের জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের যে ভূমিকা থাকা উচিত ছিল তা অপ্রতুল ছিল বলে ধারনা করি। পরিবারের ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য অনেক গুলো লাঠির দরকার পড়ত। আর অনেক গুলো লাঠির জন্য অধিক সন্তান দরকার হত।
২। কায়িক শ্রম নির্ভর গ্রামীন অর্থনীতি অন্যতম অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য। কোন কৃষকের ত্রিশ একর চাষের জমি থাকলে তাতে কাজ করার জন্য অনেক গুলো শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ত। বিনা পারিশ্রমিকে সেটা সন্তানদের কাছ থেকে পাওয়া যেত।
৩। রোগ শোকে বিপর্যস্ত থাকত এ জনপদ। কখনও কলেরার জুজু বুড়ি, কখনও ডাইরিয়া বা কখনও গুটি বসন্তসহ আরো হাজারো রোগবালাই। স্বাস্থ্য সেবা বলতে হেকিমের গাছগাছড়া আর কবিরাজের ঝাড়ফূঁক। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। মৃতদেহ সৎকার করার লোকও পাওয়া যেত না কখনও কখনও। যার কারনে ভিটায় বাতি জ্বালানোর জন্য অনেকগুলো মরেও অন্তত একজন সন্তান যেন বেঁচে থাকে সেটা নিশ্চিত করতে অধিক সন্তান প্রয়োজন ছিল। অতঃপর সে অধিক সন্তানের দলটার পুরোটাই টিকে যায় একসময় যখন এক প্রজন্ম কলেরা ও গুটিবসন্ত থেকে বেঁচে যায়। আগে যেখানে ১০/১২টা ছেলের মধ্যে ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকত দু’এক জন সেখানে এক প্রজন্মের প্রায় পুরোটাই দাঁড়িয়ে যায়। নিট ফল হয় লোকারন্য।
৪। আরেকটা কারন দারিদ্রতা। অধিক সন্তান অধিক আয় করবে। সে গুলো এক জায়গায় জড়ো করলে অনেক আয় হবে। সংসারে আর অভাব অনটন থাকবে না। এই থিমটা ঠিকঠাক মত কাজ করে নাই। এক পরিবারের সদস্য হিসাবে পরবর্তী প্রজন্ম অনিবার্য কারনেই থাকে নাই। জটিলতা কমাতে চেয়েছে। অতিকায় পরিবারের অতিকায় সমস্যা গুলোকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করে সমস্যা গুলো ছোট করতে চেয়েছে। ফলাফল স্বরুপ একটি অতিকায় দরিদ্র পরিবার থেকে অনেক গুলো ছোট ছোট পরিবারে বিভক্ত হয়ে গেছে একই সমস্যা গুলোকে ধারন করে।
৫। বিনোদনের অভাব। স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক আলিঙ্গনই বিনোদনের একমাত্র উপায় হলে সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি শুরু না হলে সমস্যাই বটে। তারা সন্তান উৎপাদনের উদ্দেশ্যে আলিঙ্গন করে নাই। এখন আল্লাহই দিছে। কি আর করার।