নানা চড়াই-উতরাই পেরোনোর পর পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসছে বিশ্বব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের দূতাবাসের একটি সূত্র আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলো ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্রটি জানায়, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাইকা, এডিবিসহ সবাইকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আজই বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।’
এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার ব্যাপারে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বর্তমানে ওয়াশিংটনে আছেন। সেখানেই আজ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে বলে জানা গেছে।
এর আগে রাজধানীতে সকালে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ব্যাপারে যেকোনো মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত জানতে পারব।’ এই সেতুর ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ঘোষণা দিলেই আনুষ্ঠানিকভাবে জনগণকে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।
গত ২৯ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পের সহায়তায় ১২০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় বিশ্বব্যাংক। সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলেও বাংলাদেশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংস্থাটি তখন জানিয়েছিল।
ওই দিন বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ।
পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে শেষ পর্যন্ত গত রোববার রাতে ছুটিতে যান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক মাসের ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার যে চারটি শর্ত দিয়েছিল, মসিউর রহমান ছুটিতে যাওয়ায় তার সবগুলোই পূরণ হলো। এরপরই পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ফিরে আসবে বলে সরকার আশা করছিল। বিশ্বব্যাংক ফেরায় সেতুর কাজ আগামী ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। সেই প্রস্তুতিও সরকারের আছে বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বিশ্বব্যাংকের জন্য অর্থমন্ত্রীর চিঠি নিয়ে গত রোববার রাতেই ওয়াশিংটনে রওনা হন। চিঠিতে বিশ্বব্যংকের চারটি শর্ত পূরণ করার কথা উল্লেখ করে অর্থায়নের অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ জুলাই বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। আর ছুটিতে পাঠানো হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসেন ভূইয়াকে। তিনি সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন। একইভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি নতুন তদন্ত দল তৈরি করে।
বিশ্বব্যাংক ছাড়াও এই প্রকল্পের অপর দুই দাতা হচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। কাল শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর জাইকার ঋণচুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এডিবির ঋণের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকছে।
প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২১