somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যে নোবেল পেলেন এক ফরাসি লেখক

২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ওয়াসিম খান পলাশ
প্যারিস
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ৬৮ বছর ফরাসি সাহিত্যিক মোসিও জ্যা মারি গুস্তাভ ল্যা ক্লেজিও । নিদিষ্ট কোন গল্প, উপন্যাস, বা বইয়ের জন্য নয়, দীর্ঘ পাচ দশকের সাহিত্য কর্মে অবদান স্বরুপ তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্যে ফ্রান্স সর্বশেষ নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে। ফরাসী লেখক ক্লাউদে সিমন সেবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হয়েছিলেন। অবশ্য ২০০০ সালে ফরাসি – চীনা লেখক গাও জিনজিয়ানও সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন।

ফরাসিরা যেমন পুরাতন কৃষ্টি ও ইতিহাস সংরক্ষন করে থাকে তেমনি নুতন সৃষ্টির উদ্ভাবক তারা। বিশেষ করে ফরাসি সাহিত্য যে খুবই সমৃদ্ধ এ কথা কারও অজানা নয়। এ কারনেই হয়ত ফরাসিরা বই পড়ুয়া। বই পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থানের দরকার হয় না তাদের। সময় পেলেই বই খুলে বসে পড়েন। বাস, মেট্রো, ট্রেন, পার্ক, রেস্তোরা, বিশ্রামাগার – সব জায়গাতেই বই পড়তে দেখা যায় তাদের ।

সাহিত্যের নোবেল প্রাইজটি আবার ফ্রান্সে ফিরে আসাতে বই পড়ুয়া বলে খ্যাত ফরাসিরা খুবই উৎফুল্ল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি জ্যা মারি গুস্তাভ ল্যা ক্লেজিওয়ের এই নোবেল বিজয়কে ফরাসিদের সাংস্কৃতিক প্রভাবের স্মারক হিসেবে তুলে ধরে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মরিশাস ও নাইজেরিয়ার শিশু, শান্ত এক কিশোর, আমেরিকা ও আফ্রিকার মরুভুমির এক যাযাবর আমাদের এই ধরনীর সন্তান, সব দেশ ও সংস্কৃতির সন্তান। মহান এক পরিব্রাজক তিনি। যিনি ফরাসিদের প্রভাব , সংস্কৃতি ও মুল্যবোধকে বিশ্ববাসীর কাছে হাজির করেছেন।
সুইডিস নোবেল একাডেমি তাকে কাব্যিক অভিযাত্রী ও আবেগ অনুভুতির নব মাত্রার লেখক হিসাবে অভিহিত করেছে। তিনি প্রায় ৪০ টির মতো বই লিখেছেন। তাকে গন্য করা হয় ফ্রান্সের আধুনিককালের প্রথম সারির একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে।

জ্যা মারি গুস্তাভ ল্যা ক্লেজিও ১৯৪০ সালের ১৩ ই এপ্রিল ফ্রান্সের প্রাদেশিক শহর নিচ-য়ে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আর মা ফরাসি। বাবা ছিলেন ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর একজন সল্য চিকিৎসক। দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের সময় বাবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। আর ফেরেননি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে তিনি ও তার পরিবার ইল দো ফসয়ে বসবাস শুরু করেন। আফ্রিকাতেও বাস করেন তারা। পড়াশুনা শেষে তিনি আমেরিকাতে শিক্ষক তার কাজ নেন।

মোসিও জ্যা মারি গুস্তাভ ল্যা ক্লেজিও মাত্র ২৩ বছর বয়সেই আবিভুত হয়েছিলেন একজন প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক হিসেবে। তার প্রথম উপন্যাস ‘ ইন্টারোগেশন বা জ়েরা । উপন্যাসটিতে একজন তরুন চিন্তাবিদের কথা বর্ননা করা হয়েছে যাকে শেষ পর্যন্ত মানসিক হাসপাতালে যেতে হয়। এই উপন্যাসটিকে তার একটি অন্যতম সেরা সৃষ্টি হিসেবে গন্য করা হয়। ‘’ লা প্রসেস ভারবাল ‘’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে সাহিত্যিক হিসেবে তার খ্যাতি সারা ফ্রান্সে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার সাহিত্য কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৬৩ সালে প্রিস্ক রেন্ডেট পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে ক্লড সিমোন পুরস্কার এবং ২০০০ সালে গাও জিঞ্জিয়ান পুরস্কার লাভ করেন।

অবশ্য ঔপন্যাসিক হিসেবে তাকে প্রথম পাঠকের স্বীকৃতি এনে দেয় ১৯৮০ সালে প্রকাশিত ‘’ ডেজার্ড বা মরুভুমি’’ নামের বইটি প্রকাশের মাধ্যমে। এটি উত্তর আফ্রিকার মরুভুমিতে অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া একটি সংস্কৃতিক জনপদের প্রতিচ্ছবি নিয়ে লিখা গল্প।

জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি ফ্রান্সে কাটিয়েছেন। ব্রিটেন, ব্যাংকক, বোষ্টন ও মেস্কিকো সিটিতেও কাটিয়েছেন বেশ সময়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ এই সময়টায় তিনি ছিলেন পানামায় একদল ইম্বেরা ইন্ডিয়ানের মাঝে। ইন্ডিয়ানদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য নিয়ে বড় ধরনের কাজ করেছেন তিনি। মেস্কিকোর অতীত নিয়ে তার আগ্রহের কথা তিনি প্রকাশ করেছেন তার রিভে মেস্কিকান উ লা পেন্সি ইন্টারম্পু গ্রন্থে। পর্যটক হিসাবে তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সংঙ্গে মিশেছেন। অনুভব করেছেন তাদের সুখ দুঃখের কারন গুলো। তুলে ধরেছেন তার লিখনীতে।

তার প্রকাশিত বইগুলোর অন্যতম হলো - লা প্রসেস ভারবাল , লা ফেভার , ডেলুস লো , এস্কটাস মেটেরিয়াল , তেড়া আমাতা , লা লিভ্রে ডেস ফুইটেস , ডেজার্ট , লেজ আফ্রিকা , আরানিয়া ইত্যাদি ।
ল্যা ক্লেজিওর সর্বশেষ কাজগুলোর মধ্যে ২০০৭ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ ব্যালাসিনার। এই বইটিতে তিনি চলচিত্র শিল্পের ইতিহাস নিয়ে লিখেন।

লিখার পাশাপাশি তিনি ঘুরে ঘুরে আবিস্কার করতে শুরু করেন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি গুলো। নোবেল প্রাপ্তির সংবাদে তাৎক্ষনিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এটা আমার জন্য একটা অনেক বড় সন্মান। আমি আন্তরিকভাবেই নোবেল একাডেমির কাছে কৃতজ্ঞ।


আগামি ডিসেম্বরে তিনি সুইডেনের রাজধানী ষ্টকহোমে এই পুরস্কার গ্রহন করবেন।

প্যারিস – ২২-১০-০৮


[email protected]



৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×