আপনার অবর্তমানে কেউ আপনাকে স্মরণ করছে। এটা যখন জানবেন বা বুঝবেন, তখন আপনার অনুভূতি কেমন হবে? আমি বলছি, আমাকে মানসিক তৃপ্তি দিতে এর চেয়ে বড় কোন ঘটনা নেই। পরিবার-পরিজন, বন্ধুমহল বা অন্য কোথাও কারো আলোচনা আড্ডায় কিংবা একাকী ভাবনায় আমি অনুপস্থিত থেকেও প্রসঙ্গ হয়েছি এটা আমাকে দারুণভাবে ফুলকিত করে। অন্ততপক্ষে কেউ চায়না, একান্ত প্রিয় কেউ তাকে ভুলে থাকুক দীর্ঘ সময় ধরে। দেখা-সাক্ষাৎ, যোগাযোগ, বিচ্ছেদ কিংবা জীবনের অবসান ঘটলেও আপনাকে ভুলে যাবেনা প্রিয়জন। হঠাৎ ব্যস্ততার মাঝে থ' হয়ে ক্ষনিকের জন্য হারিয়ে যাবে চিন্তারাজ্যে। আপনার কিছু কথা, কিছু কাজ, কিছু ভাব-ভঙ্গির স্মৃতি ভাবিয়ে তুলবে তাকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনোযোগ দেবে কাজে। এটাই চাই আমরা সবাই। আপনার কাছের মানুষগুলোর অন্তরাজ্য শাসন করবেন অথবা কম করে হলেও সময়ে সময়ে তাদের ভাবনায় উঁকি দেবেন যেভাবে-
১. যথেষ্ট ভালোবাসুন। সম্মান, ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা দিয়ে তার হৃদয়ে শক্তভাবে খুঁটি গাড়ুন।
২. ধীরে ধীরে বুঝার চেষ্টা করুন, সে আপনার আদেশ, পরামর্শ অথবা চাওয়া-পাওয়ার গুরুত্ব দিচ্ছে কিনা?
৩. উত্তর হ্যাঁ হলে, প্রথম অস্ত্র প্রয়োগ করুন। তার সবচেয়ে প্রিয় একটি নিত্য বদ অভ্যাস বাছাই করুন। তাকে সেটি চর্চা করতে বারণ করুন। প্রথম দিকে হবেনা। কিন্তু হাল ছাড়বেন না। প্রতি মুহুর্তে অভ্যাসটি থেকে ফিরে আসার অনুরোধ করুন। আপনার অনুপস্থিতিতে এ অভ্যাসটি চর্চা করতে গেলেই তার চোখের সামনে আপনার চেহারা ভেসে উঠবে।
৪. আপনার কিছু পছন্দের খাবারের কথা তার কাছে শেয়ার করুন। আপনার অনুপস্থিতিতে এসব খাবার তার সামনে আসা মাত্রই আপনার কথা তার মনে পড়ে যাবে।
৫. যখন কিছুদিনের জন্য দূরে থাকবেন, তখন নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে কিছু আদেশ করে রাখুন। যেমন-রাত বারোটার পর যেন নেটে এক্টিভ না দেখি, এলার্ম দিয়ে রাখো সূর্যোদয়ের আগে উঠে যেন নামাজ পড়তে পারো ইত্যাদি। কিছুদিন তদারকি করে বিষয়গুলো নিয়মিত করান যাতে অভ্যাসে পরিণত হয়। আপনার বিচ্ছেদ কিংবা অনুপস্থিতিতে নির্দিষ্ট এ সময়গুলোতে তার ভাবনায় আপনি সরব থাকবেন।
৬. তার কোন টেনশনে আপনিই হউন সবচেয়ে বড় কাউন্সিলর। আপনার কাউন্সেলিং এর ফলে দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া প্রিয়জন আপনার সাময়িক বা চিরন্তন বিয়োগের পর যখনই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে, তখনই আপনার কথা স্মরণ করবে। "আজ সে বা তিনি থাকলে কতোভাবেই না আমার মন ভালো করার চেষ্টা করতো!" ফলাফল দু'টোই। আপনাকে স্মরণ করতে গিয়ে দুশ্চিন্তার প্রসঙ্গটিই হাল্কা হয়ে যাবে।
৭. আপনি যদি শুধু একজনের হৃদয়ে সজীব থাকতে চান, তাহলে তাকে নিত্য ব্যবহার্য স্থায়ী কিছু উপহার দিন। যদি পরিবারের সবার হৃদয়ে থাকতে চান তাহলে ঘরে কিছু নিত্য ব্যবহার্য আনকমন আসবাব যোগান দিন, বাড়ীর বাগানে বা আঙ্গিনায় দীর্ঘমেয়াদী উপকারী গাছ লাগান। যদি সমাজের মানুষদের হৃদয়ে অবস্থান করতে চান, তাহলে দীর্ঘস্থায়ী কোন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করুন, শিক্ষা/স্বাস্থ্য বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন। আপনার অবর্তমানে আপনার কর্মই আপনাকে স্মরনীয় করে রাখবে।
৮. সর্বোপরি ঘৃণাভরে কেউ স্মরণ করুক এমন আচরণ করবেন না। এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর হতে পারেনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:০৪