somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পলা উপাখ্যান ২.

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত তিন বছরে পলার কাছ থেকে যতবার রোদ্রস্নানের আহ্বান পেয়েছি, ততবার আমরা এসেছি, এডি ডেভিস বিল্ডিং-এর সামনের এই ঘাসের গালিচায়। আমাদের পেছনে থাকে প্রায় দুশো বছরের পুরনো স্টুডিওটি; এককালে সাইন্সল্যাব ছিল, এখন কেবল ক্লাস রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পলা আমাকে বলেছে, জেমস রাদারফোর্ড নাকি কাজ করতেন এই বিল্ডিং-এ, তখন অবশ্য এটা ফিজিক্স ল্যাব ছিল। ’বিদ্যুত কী এখানেই আবিস্কৃত হয়েছিল?’ পলাকে জিজ্ঞেস করি আমি।
জানি না। তবে এটা জানি এখনও প্রচুর বিদ্যুত এর চারপাশে জড়ো হয়। পলা বিল্ডিংটির আশপাশে গুচ্ছ বা জোড়ে বসে থাকে ছাত্রছাত্রীদের ইঙ্গিত করে বলে।
আমরাও কি তাদের মধ্যে?
অবশ্যই। তোমার কী মনে হয় না আমরা প্রতি মুহূর্তে শরীর থেকে আয়ন নি:সরণ করছি?
আমি ভেবেছিলাম পলা বোধ করি মানবিক কোন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করছে। কিন্তু একেবারে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের আলোচনায় প্রবেশ করছে দেখে আমি ওর রাশ টেনে ধরি। ইঙ্গিত করি চারপাশের চারপাশের সজীব এবং প্রেমময় ছেলেমেয়েদের দিকে, ’এরাও কি তবে তোমার ফিজিস্কের তত্ত্বে পড়ে?
না, না, কী যে বল। জীবনে নিশ্চয়ই বিজ্ঞান পড়নি। এরা হল, কেমিস্ট্রি। দেখছো না, মানুষের ঠোঁটগুলো কীভাবে ললিপপ হয়ে ওঠে ওদের কাছে! আমি পলার দিকে তাকাই পূর্ণ দৃষ্টিতে, বুঝতে চেষ্টা করি ওর বাক্যের ইঙ্গিত। কিন্তু ও আমাকে কোন সুযোগ দেয়না ওর চোখের ভাষা পড়রবার, তাকিয়ে কেবল আকাশ দেখে।

এখানে ঘাসের মধ্যে পা দিতেই কেমন একটা সংকোচ বোধ হয়, ঘাসগুলো যেন বেদনার্ত হয়ে মাটির দিকে নুইয়ে পরে। কোমল, গাঢ় এবং দৃঢ়বদ্ধ ঘাসে পা ডুবে যায়। নিজের কাছে অপরাধী মনে হয় ঘাসের বিছানায় পা দেবার জন্য। যে দেশে ঘাস বানানোর জন্য শত শত টাকা ব্যয় হয়, তাদের ঘাস যে গায়ে গতরে বাঙ্গাল ঘাসের চেয়ে নরম ও সবুজ হবে তাতে আর আশ্চর্য কী, এই ভেবে সান্ত্বনা দেই নিজেকে। তবে যে দেশে বৃষ্টি আর শীতই নিয়ম, রোদটা ভীষণ কাকতালীয় সেদেশের ঘাসের গালিচা প্রায় উদোমই পড়ে থাকে আার সে জন্যই বোধ করি হঠাত এমন মানব অত্যাচার তাদের সবুজতা নষ্ট হতে দেয় না।

এখনও পলা আসেনি। নিজের কব্জির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, যথারীতি আজও ভুলে গেছি ঘড়ি আনতে। আমার এই ভুলো স্বভাবের জন্য আমি আজকাল সময় আন্দাজ করতে শুরু করেছি। নিশ্চয়ই আমি ঠিক সময়ে এসেছি। ঘাসে হেলান দিয়ে সামনের খোলা সবুজ প্রাšতরে চোখ মেলে দিলে আর্টস বিল্ডিং-এর সামনে সযতেœ গড়ে তোলা বৃহদায়তন ঘাসের গালিচায় চোখ মেলে দিলাম। আগস্ট শেষ হতে চলল, এখনও ক্যাম্পাস বেশ খালি। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এমন রোদ উঠলে ঐ ঘাসের বিছানায় শরীর মেলে দিয়ে শুয়ে থাকত গুচ্ছ গুচ্ছ ছেলে মেয়ে। এখন কেবল কয়েকজোড়া রোদ মাখিয়ে শুয়ে আছে। তাদের মধ্যে একটি মেয়ে ঘাসে পা ছড়িয়ে অলস ভঙ্গিতে শুয়ে থাকা ছেলেটির বুকের ওপর শুয়ে যেভাবে তাকে আলতো ভাবে আদর করছে, দেখে আমার বাঙালি চোখেও অস্বাভাবিক মনে হল না। কী অসামান্য অসংকোচ প্রকাশ, যাকে ভালবাসে এবং ভাললাগে, তার সবটুকু শুষে নেবার কী এক দুর্মর বাসনা!!

পলা এল মিনিট দশেক পরে। আমি দূর থেকে ওর আসবার ভঙ্গিটির দিকে তাকিয়ে থাকি। আজ পলা পরেছে মেরুন স্কার্ট আর সাদা টপ। যথারীতি কাল কোট। ওর দু’হাতে টুটো কফির পেয়ালা। বেশ খানিকটা দূর থেকেই আমি ওর চিকন হিলের শব্দ শুনতে পাই। ওর হাঁটার ভঙ্গির মধ্যে কেমন একটা রাজসিক ব্যাপার আছে, যা আমাকে মুগ্ধ করে। পলা স্থূলাঙ্গি নয়, নয় শীর্ণা। দীর্ঘাঙ্গি নয় আবার নয় হ্রস্বও। কোমরে সামান্য মেদ থাকলেও তা সর্বশরীরে ছড়িয়ে গিয়ে ওর ক্ষিপ্রতা নষ্ট করেনি। মহাভারতে যাদেরকে মধ্যমা নারী বলা হয়েছে, ও তেমনি। কেবল জন্ম ভারতবর্ষে নয় এই যা।
সরি টু কিপ য়্যু ওয়েটিং।
তোমার জন্য আমার সময় তো ওয়েট করে না, তোমার সঙ্গে হেঁটে বেড়ায়।
হোয়াট ডু য়্যু মিন? পলা আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকায়।
যখন তুমি থাকো না, বা তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করি, তখন তোমার সম্ভাব্য স্থানগুলোতে আমি মনে মনে তোমাকে খুঁজি। পেয়ে যাই এবং তোমার সঙ্গে হাঁটতে শুরু করি। সুতরাং ওয়েট তো করি না তোমার জন্য।
আর য়্যু ফ্রম এ কান্ট্রি হোয়ার এভরিওয়ান বর্ন টু বি এ পোয়েট? অর ইট জাস্ট দ্য ইংলিশ সামার দ্যাট মেকস য়্যু আ পোয়েট?
নান অব দেম। ইট জাস্ট য়্যু।
পলা কটাক্ষে আমার দিকে তাকায়। সঙ্গে এগিয়ে দেয় কফির পেয়ালা। কোন কথা বলে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৩:৪৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×