যেমন ধরুন খোকার কথা। সাথে বাদলের কথা। দুজনেই মুক্তিযোদ্ধা। দুজনেই সম্প্রতি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। দুজনেই রাজনীতিবিদ। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুজনেই ভাল অবস্থানে থেকে দেশ ও দশের সেবা করেছেন। নিয়তির নিয়ম মেনে দুজনেই সম্প্রতি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তবে, কাছাকাছি সময় হলেও দুজনের জন্য বিদায়ী সময়টা ভিন্ন ছিল। খোকার মৃত্যুকালে "তার সরকার" গদিতে ছিল না। বাদলের মৃত্যুকালে "তার সরকার" গদিতে ছিল। ফলে যা হবার তাই হল। খোকা তার দুনিয়াবী সম্মানটুকু পেল না। বাদল পেল। খোকার অসময় ছিল, বাদলের সুসময় ছিল। বাংলাদেশে ব্যাপারটা স্বাভাবিক। বইয়ে লেখা নিয়মের বাইরে অনেক কিছুই বাংলাদেশে স্বাভাবিক।
সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত, জনগনের জন্যই কাজ করে যাবে। এইটাই বইয়ে লেখা নিয়ম। কিছু লোক অন্য দলকে ভোট দেবে, অন্য দলের সমর্থন করবে, এইটা গণতন্ত্রের নিয়ম। বাংলাদেশ এই নিয়মেই চলার কথা। মাঝে মাঝে চলে। মাঝে মাঝে পথভুলে আনমনা হয়ে হাঁটে। বাংলাদেশের সরকার দলীয় লোকদের সবসময়ই বেশি ভালবাসা ও সুবিধা দিয়ে এসেছে। নিয়মেরগুলোও দিছে, অনিয়মেও দিছে। কারও দ্বিমত থাকলে চোখে একটু পানি দিয়ে ঝিমানি কমিয়ে আবার আগের লাইনদুটো পড়ুন।
যারা রাজনীতি করে তাদের এই নিয়ে মাথাব্যাথা নাই। তারা মেনেই নিছে, সময়কালে মওকা মারবে, অসময়ে গা ঢাকা দেবে। খুবই স্বাভাবিক। সমস্যাটা হলো অন্য যায়গায়। আমজনতাকে নিয়ে। তারা তো রাজনীতি করে না, তারা জীবনযাপন করে। তারা যেকোন সরকারের আমলেই একটা "অসরকারী" উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ বাসে করে কর্মস্থলে যায়, কেউবা সাইকেল-রিকসা চেপে। কেউ স্কুলে শিক্ষকতা করে, কেউবা ভিনদেশি কোম্পানীতে বড়সড় চাকরি করে। তারা রাজনীতি করে না। কথা হল তাদের নিয়ে। তাদের যেহেতু কোন রাজনৈতিক পরিচয় নাই, তাদের সময়-অসময় দেখবে কে? বইয়ে লেখা নিয়মানুসারে সরকারের কাজ হল এই আমজনতাদের দেখভাল করা। কিন্তু বাংলাদেশে এই জিনিসটা সচরাচর দেখা যায় না। কারণ, এই জনগণের অসুবিধার উদ্রেককারীদের সবাই কোন না কোন ভাবে দলীয় পরিচয়ে পরিচিত। সরকার এই পরিচয়কে আগে দেখছে। জনগণের অসুবিধা সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। আজকে যদি আপনার পরিবারের একজন বাসচাপায় আহত হয়, তার বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ আপনি আমজনতা, আর বাস-মালিক সমিতির সভাপতির সাথে দলীয় এমপি-মন্ত্রীর চা-পানি খাওয়ার অভ্যাস আছে। এই আমজনতাকে রক্ষা করবে কে? আল্লাহ-ভগবান?
আমজনতার বাইরেও কিছু লোক হরহামেশা সমস্যায় পরে। তারা হল, বেসরকারী দলের নেতা ও কর্মী-সমর্থক। তারা সবসময় খারাপ। যেকোন কাজে তাদের দোষ। যেমন, অনেক আগে তারা যখন সরকারে ছিল তখন তারা মারামারি খুনাখুনি করেছিল। সেজন্য বর্তমানে তাদেরকে মারামারি খুনোখুনির মুখোমুখি করা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এখানে বর্তমান সরকারের কোন অন্যায় নাই। যাহোক, তারা মারছে, তারা মরছে। কিন্তু আমজনতার কি হবে?
আমজনতা, ভেবে দেখেছ কি? কোন টাকা-পয়সা না নিয়েও যখন অন্ধভাবে এলাকার চেয়ারম্যান আর এমপি'র সাত খুন মাফ করে দেয়ার জন্য চিল্লাপাল্লা কর, কদিন পর তোমার ঘাড়ে ওদের বাড়ি পড়লে তখন তোমার সঙ্গীরা সাথে থাকবে তো?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:৩২