সম্প্রতি কুয়েটের বিদায়ী ব্যাচ তাদের সেমিস্টারের শেষ দিন উদযাপনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে ক্যাম্পাসে শোডাউন করেছে। তিনধরনের পোষাক তারা ব্যবহার করেছে। দেশি লুঙ্গি-পাঞ্জাবী, তামিল মুভির আদলে সাদা, সাদা-কালো, আর আরব বেদুইন স্টাইলে হাবিবী পোষাকে তারা তাদের শেষের দিন উদযাপন করেছে।
তাদের খুশির দিন উদযাপনের এই ব্যাপারটা খুব ভাল লেগেছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন একটা ব্যাচের সব ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একমতে পৌছানো খুব কষ্টকর ব্যাপার। সেখানে ১৫ ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা দেখিয়ে দিয়েছে ঐক্যমত্য কোন অসম্ভব ব্যাপার না। সহজ-সরল মানসিকতা নিয়ে তারা আলোচনায় বসেছে, তারা ঠিক করেছে কেক কেটে ক্লাস পার্টি না করে তারা ক্যাম্পাসে একই ধরনের পোষাক পড়ে ঘুরাফিরা করবে আর সেলফি তুলবে। এই ক্ষেত্রে তারা বেঁচে আকর্ষনীয় পোষাক পরিচ্ছদ, যেটা তারা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে বানিয়েছে। একটা ব্যাচের সবাই মিলে যখন একতা দেখাতে পেরেছে, আমি এই ব্যাচের সবাইকে খুব ভাল মনের বলেই মনে করি।
আমরা যখন ক্যাম্পাসে ছিলাম তখনও বিভিন্ন আইডিয়া নেয়া হত কিভাবে একটা ব্যাচের র্যাগ ডে, লাস্ট ডে, লাস্ট এক্সাম এইগুলা উদযাপন করবে। সবাই চাইত তাদের ব্যাচেরটা যেন বাকিদের থেকে ভিন্ন হয়। '১৫ ব্যাচের আইডিয়াটা খুবই ইউনিক, এবং এজন্য তারা প্রশংসার দাবিদার। শতভাবে বিভক্ত একটা দেশে এতগুলা ছেলে-মেয়ে একসাথে দাঁড়াতে পেরেছে, এইটা নিসন্দেহে একটা ভাল কাজ। সরল মন না থাকলে তারা এই কাজ করতে পারত না।
কিন্তু, এই কাজেও খুঁত ধরা শুরু করছে বাংলার অতি বুদ্ধিমান সমালোচকরা। তাদের মতে আরব্য বেদুঈনদের পোষাকের সাথে বাংলার কি সম্পর্ক? এরা কি আইসিস? এরা বাংলার সংস্কৃতি বিকিয়ে দিচ্ছে, বাংলাকে ভুলে যাচ্ছে। চারধরনের গেট-আপ নিয়ে মিছিল করেছে ছেলেমেয়েগুলো। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে হাবিবী পোষাক নিয়েই। বাকিগুলো তামিল হিরো অথবা ভিলেন নিয়ে তাদের কোন সমস্যা নাই। লুঙ্গি-পাঞ্জাবী নিয়ে তাদের কোন প্রশংসা নাই। কেন? ঢাকার অভিজাত এলাকায় যখন লুঙ্গি পড়া রিকশাওয়ালা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন এসব সংস্কৃতির ধারক-বাহকেরা কই ছিলেন?
এত পেঁচানো কেন সমালোচকদের মন? এত নীচ কেন তাদের চিন্তাধারা? একজন তো প্রশ্ন করল, কুয়েটে আদৌ কোন পড়াশুনা হয় কি না! ক্লাসের শেষে পড়াশুনা হয় কি না সেটা তো পরীক্ষার রেজাল্টে বুঝা যাবে। সারা বাংলাদেশে যখন প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছিল, তখনো কুয়েটে মানসম্মত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়েছে। এই কথা তো সমালোচক সাংবাদিকেরা তখন প্রশংসা করে নি। এই তুচ্ছ বিষয়ে কেন এখন এত নোংরা মন্তব্য?
একবার একটা ট্যুর করতে গিয়ে আমরা টি-শার্ট ডিজাইন করলাম; শার্টের পেছনে বাংলাদেশের মানচিত্র, সামনে ব্যাচের নাম সম্বলিত লোগো। ট্যুর শেষ করে এসে জানতে পারলাম শার্টের পেছনে মানচিত্র দেওয়া শার্ট এর আগেও আরেকটা ব্যাচ বানিয়েছিল, এবং সে কারণে আমাদেরটা ইউনিক হয়নি। একটু মন খারাপ হয়েছিল, কিন্তু কি আর করা। দেশের মানচিত্র তো একটাই, বিকৃত তো করতে পারি না। কিন্তু সমালোচকদের কথা শুনে মনে হচ্ছিল, বিকৃত করলেই হয়তোবা তারা খুশি হত।
দেশের এত এত ইস্যু আছে যেখানে সমালোচকদের দৃষ্টি আঁটকায় না, ওদের মন পড়ে থাকে নীচ মানসিকতায়। কবে ওরা মানুষ হবে
আপডেট: হাবিবীদের ফুটবল খেলা দেখুন এখানে Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৬