somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শঙ্খ শিল্প

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শক্ত খোলস বিশিষ্ট সামুদ্রিক প্রাণি শঙ্খ (Turbinella pyrum) এর শুভ্রতা আর বিশেষ গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলার লোক শিল্পের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অনন্য সাক্ষ্য এই শাঁখা শিল্প একদিকে যেমন ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত অন্যদিকে অনুপম এক শিল্পমানের পরিচয়ও বহন করে। হাতে পরিধেয় শঙ্খবলয় যেমনি প্রত্যেক বিবাহিত হিন্দু রমণীর সতীত্ব আর গৌরবের প্রতীক, শঙ্খধ্বনি তেমনি শুভকাজের সূচনায় মঙ্গল বার্তা বয়ে আনে বলে তাদের বিশ্বাস।

হাতের বালা হিসেবে বহুল পরিচিত এই শঙ্খ কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার হওয়ার পাশাপাশি পবিত্র গঙ্গাজলের আধার এমনকি শঙ্খচূর্ণ রমণীদের রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হতো। হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের আটটি পবিত্র চিহ্নের একটি এই শঙ্খ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও বেশ গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসস্তূপ, মায়া-ইনকা সভ্যতার পাশাপাশি বাংলাদেশের পাহাড়পুর প্রত্নস্থানে প্রাপ্ত পোড়ামাটির ফলকে শঙ্খ উৎকীর্ণ থাকা মানব সংস্কৃতির সাথে শঙ্খের প্রাচীনত্য সহজেই বোঝা যায়।
প্রাচীন বাংলা পুঁথি ও সাহিত্য থেকে বাংলাদেশে শঙ্খ শিল্প বিকাশের প্রমাণ পাওয়া যায় যা এর কেন্দ্র ঢাকার বাইরেও নানা স্থানে বিস্তৃত হয়েছিল। সূচনাপর্ব হতে বিকাশকাল পরবর্তী পর্যায়ে বিলুপ্তির কারণগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হলে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। এই প্রবন্ধে শঙ্খ শামুকের প্রজাতিগত বিশেষণ করার পাশাপাশি জাতিতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার মাধ্যমে ওই বিশেষ প্রজাতির শঙ্খ ব্যবহারের কারণ, প্রাপ্তিস্থান ও তার আনয়ন পথ বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।
আভিধানিকভাবে বিশ্লেষণ করতে গেলে শঙ্খ বা এর সমার্থক যেসব শব্দের পরিচয় মেলে সেগুলোও অনেক বৈচিত্র্যময়। বস্তুত এই বিষয়গুলো জাতিতাত্ত্বিক গবেষণার মতো অধ্যয়নে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। একটি জাতির আচার আচরণে প্রচলিত বিষয়াদি থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকে তার স্থির ও স্থবির প্রেক্ষিত হতে গতিশীল অবস্থায় আনার জন্য জাতি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা করা হয়ে থাকে।
সেই দিক বিচারের শঙ্খ শিল্পের উদ্ভব বিকাশ ও স্বরূপ উদ্ঘাটনের জন্য শাব্দিক বিশ্লেষণ ও বুৎপত্তি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে অধ্যয়ন করা উচিত। বিশেষ করে মূল শব্দের বিকৃত রূপ বা অপভ্রংশের মাঝে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য লুকানো থাকে। এই দিক বিচারে বাংলাদেশের শাঁখাশিল্পের উপর জাতি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে শঙ্খ ও সংশ্লিষ্ট নানা শব্দের বুৎপত্তি ও অর্থবিন্যাস বিশ্লেষণ করাটা জরুরি।

প্রকৃতি ও প্রত্যয়নগত বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যায় শঙ্খ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে [্রশম্‌+খ] থেকে। বৈষ্ণব মতাবলম্বীদের উপাস্য দেবতা বিষ্ণুর যে সকল আয়ুধ পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শঙ্খ। বিষ্ণুর চর্তুআয়ুধ এর মধ্যে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম। তাই অনেক সূত্রে বিষ্ণুকে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী দেবতা বলা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস ও লৌকিক ধর্মাচারে বিশেষ করে নাগ ভক্তি ধর্ম [ঘধমধ ঈধষঃ] এ কালনাগিনী ও গোখরো সাপের মতো বিষধর সাপের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান লক্ষ করা যায়। একটি বিশাল আকৃতির গোখরো [শরহম পড়নৎধ. ঘধলধ হধলধ] এর অনেকগুলো নামের একটি হচ্ছে শঙ্খচূড়। হিন্দু ধর্মবিশ্বাসে নারীদের বিশেষ কুসংস্কারে কাউকে শাঁখচুন্নি বলে মনে করা হয়ে থাকে। এদেরকে সধবা নারীর প্রেত বলে মনে করে শাঁখচুন্নি বা শঙ্খচূণী নাম দেয়া হয়ে থাকে।
শঙ্খ শব্দটি অনেক ক্ষেত্রে সাদার পরিপূরক। যেমন এক ধরনের বুক সাদা চিলের নামকরণ করা হয়েছে শঙ্খ চিল। এর পাশাপাশি শঙ্খনিনাদ বা শঙ্খ ঘোষ থেকে শুরু করে শঙ্খ বিষের নাম পাওয়া যায়। তবে এই গবেষণা প্রবন্ধে প্রত্যেক সধবা হিন্দু রমণীর হাতে ব্যবহৃত শঙ্খ বলয়ের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে শঙ্খ শিল্পের বিকাশের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। প্রতিযোগিতামূলক বাজার, মানুষের রুচিবোধে পরিবর্তন, কাঁচামালের সহজলভ্যতা না থাকা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে এই শিল্প ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে প্রবাহিত হয়।
বিভিন্ন লোককাহিনী পৌরাণিক কাহিনী ও ঐতিহাসিক সূত্র বাংলাদেশের শাখা শিল্পের প্রাচীনত্বের প্রমাণ বহন করে। দক্ষিণ ভারতের অনেকগুলো স্থানে খ্রিস্টাব্দ প্রথম শতকের দিকে এই শিল্প উৎপত্তি লাভ করে বিভিন্ন আঙ্গিকে বিকশিত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ ভারতের ‘পারওয়া’ জাতির হাত ধরে আজ থেকে অন্তত ২০০০ বছর আগে এই শিল্প বিকশিত হয়। ‘বৃহৎবঙ্গ’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে তামিল রাজধানী কোরকাই এবং কয়েলে হতে শাখা শিল্পের নিদর্শন প্রাপ্তির কথা জানা যায় যেটি বাংলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকতে পারে।
দক্ষিণ ভারতের মান্নার উপসাগর তীরবর্তী অঞ্চলে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে শঙ্খ শিল্পের ব্যাপক বিস্তৃতির কথা জানা যায়।
পাঠকের বিরক্তির উদ্রেক যেনো না হয় তাই পোস্ট দীর্ঘায়িত করলাম না। আগ্রহীগণ আমার ব্যক্তিগত সাইটের স্টিকি পোস্টটি পড়তে পারেন। ওখানে বিস্তৃত লেখা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫২
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×