১. জাপানে উঠতি বয়সের তরুণ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাড লেভেলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা বিষয় খুব আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করলাম যে বাহিরের জগৎ সম্পর্কে এদের ধারণা অনেক কম এমনকি জানার আগ্রহ ততটা লক্ষ্য করা যায় না , অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম আমাদের কাছে পুরো ক্যাম্পাস একদম হাতের তালুর মত পরিষ্কার ছিল , কোথায় কি আছে , কোথায় কি পাওয়া যায় আমাদের তা ছিল নখদর্পনে , জাপানিজরা ছাত্ররা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের নিজ ডিপার্টমেন্ট ছাড়া অন্য ডিপার্টমেন্টগুলো কোথায় অবস্থিত জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর দিতে পারেনা , জিজ্ঞাসা করলেন তো সাথে সাথেই গুগল ম্যাপ, ৫০ ০ মিটার দূরত্বের কিছু জানতে চাইলেন গুগল ম্যাপ , কিছু জানতে চাইলেই ফোন বের করে গুগল ম্যাপ, সমস্ত দেশের অলিগলি এমনকি বাড়ির নম্বর গুলো গুগল ম্যাপ করা , রাস্তার একটা ছোট কফি শপের ওয়েবসাইট আছে , সত্যি বলতে কি এরা দরকারের বাহিরে সামান্য জিনিসটাও তাদের মাথায় রাখতে চায়না , যা তাদের প্রয়োজন নেই সেই বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায় না , এরা খুব সামান্য বিষয় অর্থাৎ যাতে সে পারদর্শী এবং যা শুধু তার প্রয়োজনে দরকার সেটা ছাড়া আর কিছুই ভাবে না , আমরা যেমন হাজারটা জিনিস মাথায় নিয়ে বসে থাকি দিন শেষে আমাদের আসল যা কাজ তারই কোনো খবর থাকে না , আমাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ মানুষ না থাকার এটিও অন্যতম কারণ , জাপানিজরা তার থেকে উল্টো , এরা যে বিষয়ে পারদর্শী তা সে এতো ভালো করে জানে যে তার চেয়ে ভালো বোধয় আর কেউ জানেনা , মূলত , অনেক কিছু ভাসা ভাসা না জেনে সামান্য কিছু ব্যাপক ভাবে জানা ভালো ।
২. গতকাল আমাদের ডর্মিটরিতে একটা ছেলেকে অনেক চেষ্টার করে প্রায় একবছরের বেশি সময় পরে তার রুম থেকে বের করেছে , এই একবছর সে বাহিরে যায়নি , বাসার কারো সাথেই যোগাযোগ করেনি , ক্লাসে যায়নি , তার বাবা মা তার একাউন্ট এ টাকা পাঠাতো , রুম থেকে সে খাবার অর্ডার দিতো অনলাইন এ খাবার চলে আসতো , কিছু দরকার পড়লে অনলাইনশপ যেমন আমাজনে অর্ডার করতো , এই সময় সে খাওয়া , ঘুম আর সারাদিন ভিডিও গেম্স্ ছাড়া আর কিছু করেনি , জাপানে উঠতি বয়সী ছেলেদের এই সমস্যা দেখা যায় , কোনো কারণ ছাড়াই এরা নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলে , এই সমস্যাকে জাপানীজে বলে হিকিকোমরি , জাপান সরকার এখন তাদের এই হিকিকোমরি সমস্যা নিয়ে চিন্তিত , মূলত অতিরিক্ত ভিডিও গেমস আসক্তি থেকে এই সমস্যা হয় বলে ধারণা ।
৩. বাংলাদেশের বর্তমান মন্ত্রিসভা বলতে গেলে ভালোই হয়েছে , তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একজন অর্থনীতিবিদকে নিয়োগ দিলে ভালো হতো , পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় একটি দেশের উন্ননয়নের পেছনে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে , অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত পরিকল্পনায় এই মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য , স্বাধীনতা লাভের পরপরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদশে একটি স্বাধীন পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন , তৎকালীন সময়ে দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের তিনি পরিকল্পনা কমিশনে নিয়োগ দেন , যেমন ড. নুরুল ইসলাম , অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রমুখ , তারা বঙ্গবন্ধু কতৃক প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন , এবং এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আজও দেশের প্রধানতম অর্থনৈতিক পরিকল্পনা , সেই হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদের বিকল্প নেই ।
৪. আমি যখন কোনো কারণে হতাশায় ভুগি কিংবা মন খারাপ থাকে তখন আমি আমার হতাশা কাটাতে ড. এ পি জ আব্দুল কালাম রচিত আত্মজীবনী গ্রন্থ অগ্নিপক্ষ পড়ি , আমার কাছে এই গ্রন্থকে অসাধারণ বলে মনে হয় , দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে , জীবনের সকল ব্যার্থতাকে অতিক্রম করে কিভাবে একজন মানুষ জীবনে সাফল্যের চূড়ায় উঠেছেন এবং তার সাথে সাথে সমস্ত ভারতবর্ষকে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বপরিমণ্ডলে একটি শক্ত অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন তা এই বই না পড়লে জানা যায়না , তার জীবনকাহিনী হতাশায় ডুবে যাওয়া যে কোনো মানুষকে আশাবাদী করে তুলতে পারে ।
৫. ইদানিং কালে ইউটিউবে বাংলাদেশিদের একটা অদ্ভুত বিষয় চোখে আসছে , কিছু মানুষ বিশেষ করে গৃহিণীরা তাদের সারাদিনে বাসায় কি রান্না করলো , কি বাজার করে আনলো , এমনকি সারাদিন কতগুলো কাপড় ধুলো !!! এমনকি কার কতগুলো গহনা আছে, কয়টা শাড়ি আছে !!!! এগুলো ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড দিচ্ছে !!!!! এমনকি দুপুরে কিংবা রাতে কি কি আইটেম দিয়ে কিভাবে খেলো সেই খাবার খাওয়ার দৃশ্য ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড দিচ্ছে !!!!!!
এই ধরণের ভিডিওর যৌক্তিকতা খোঁজার চেষ্টা করেছি কিন্তু পাইনি , কারো জানা থাকলে বলতে পারেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৪৬