এবারের ঈদে এমনই কয়েকটি ফেস্টুন দেখতে পাবে আমাদের গ্রামের প্রবেশ পথে। যেখানে লেখা আছে “আপনার আগমন শুভ হোক-ঈদ মুবারক।” নির্মাণ করা হয়েছে কলাগাছের তোরণ। তোরণের ঠিক মাঝখানটায় হলুদ কাপড়ের গায়ে লাল অক্ষরে লেখা আছে এই কথাগুলো। আমরা ছোটরা অনেক বুদ্ধি আর পরামর্শ করে এই কাজটি করেছি। আর এই আনন্দে টগবগ করছে গ্রামের শিশু আর কিশোররা। ব্যাপারটা দারুন মজার।
যারা চাকরি ও ব্যবসার কারণে গ্রামের বাইরে থাকেন তারা ঈদ উপলক্ষে সপরিবারে বাড়ি চলে আসেন। তাদের আগমনে আমাদের আনন্দ বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
ঈদের দিন পাড়ার ছেলেমেয়েরা সাজুগুজু করে দল বেধে ঘুরে বেড়াই। আর মুরুব্বিদের সামনে পেলেই ধপাস করে বসে পড়ি পায়ের কাছে। পা ছুঁযে সেলাম করি। তারা মাথায় হাত বুলিয়ে হাসিমুখে সেলামি দিয়ে দেন। কড়কড়ে নতুন টাকা পেয়ে আনন্দে আমাদের মুখ চিকচিক করে ওঠে। আমাদের হাতে জমা হয় অনেকগুলো টাকা। আগে দলবেধে হই চই করে এটা সেটা কিনে খেয়ে শেষ করে ফেলতাম সেলামির টাকাগুলো। কিন্তু এবার অন্যরকম একটা বুদ্ধি বের করেছি আমরা। ঈদি বা সেলামী পাওয়া টাকাগুলো এভাবে আর খেয়ে ফেলব না। ভালো কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।
সবাই মিলে ঠিক করেছি, আমাদের পাড়ায় যে কয়টা গরিব পরিবার আছে, যারা ঈদে নতুন জামা কিনে পরতে পারে না, ভালো কিছু খেতে পারে না, তাদের জন্যে কিছু একটা করব।
২.
কী করা যায়, কী করা যায়! চিন্তা করতে করতে আমাদের মাথায় দুর্দান্ত একটা বুদ্ধি এসে গেল। সেটা কী? গ্রামের প্রবেশ পথে একটা তোরণ নির্মাণ করা হবে। আমাদের গ্রামের যে-সকল চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীগণ ঈদ উপলক্ষে বাড়ি চলে আসবে তাদেরকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানাব। পথের উপরে নির্মাণ করা হবে কলাগাছের গেট। সবুজ কলাপাতার উপর হলুদ কাপড়ের গায়ে লাল অক্ষরে লেখা থাকবে “আপনার আগমন শুভ হোক-ঈদ মুবারক।”
তোরণের সামনে আসতেই আমরা তাদের বুকে ছোট্ট একটা টিকিট লাগিয়ে দেব সেফটিপিন দিয়ে। যে টিকিটে লেখা থাকবে “ঈদ মুবারক।” আমাদের শুভেচ্ছা পেয়ে বাড়ি আসা লোকগুলো নিশ্চই খুশি হয়ে যাবে। আমরা বলে দিব আমাদের মহৎ উদ্দেশ্যের কথা। কেউ খালি হাতে ফিরিয়ে দেবে না। আমরা তাদের দেওয়া টাকাগুলো জমিয়ে গরিব পরিবারগুলোর জন্য কিছু একটা করব।
হিসাব করে দেখেছি, আমরা যে পরিমাণ টাকা পাব, তাতে আমাদের পাড়ায় যে কয়টা গরিব পরিবার আছে তাদের জন্য নতুন জামা কিনে দেয়া যাবেএবং ঈদের দিন উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই উদ্যোগটা নেয়ার পর থেকে আমরা অনেক হিসেবি হয়ে গেছি। এখন অপ্রয়োজনে কেউই টাকা খরচ করি না। আর টাকা জমিয়ে গরিব মানুষের জন্য কিছু একটা করার আনন্দে টগবগ করছি। কারণ পরের উপকার করার মাঝে রয়েছে অনেক আনন্দ।
আমরা এই কথাটা বুঝতে পারছি যে, ঈদের আনন্দ একা একা করা যায় না। এই আনন্দ করতে হয় সবাইকে নিয়ে। কাউকে বাদ দিয়ে ঈদের আনন্দ পূর্ণ হয় না।
গ্রামের মুরুব্বিরা বলছেন, ”মহৎ কাজে ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তোমাদের এই উদ্যোগ ভাল কাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা থাকবো তোমাদের পাশে।”
বন্ধুরা ইচ্ছে করলে তোমরাও করে ফেলতে পারো এমন কিছু কাজ। ঈদ হোক আনন্দময়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩৯