somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসপাতালের ঘটনা!(মিরপুর-২ শিশু হাসপাতাল।)

০৬ ই এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

না, বাবাইকে আর বাসায় রেখে সুস্থ্ করা গেলো না। রাতে কয়েকবার পায়খানা করার সকালে একেবারেই নেতিয়ে পড়ে। আমার আর কিছুই ভালো লাগে না। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। ওকে বললে রাগারাগি করে। পঁচা দুধ খাওয়ালে কেন? বলছি না ভার দুধটা খাওয়াবে না! নিজের সুখের জন্য.........

স্যালাইন খাওয়াবো, স্যালাইন নেই। কেন নেই সেই কৈফিয়ত আমারকাছে চায়। কিন্তু ধীরে ধীরে বাবাই আরও দূর্বল হয়েপড়ে। হাসপাতালে নিতে চাই ও বলে আমাকে একা যেতে । ওর নাকি ভয়ে হাত পা কাঁপছে। আমি বলি আর সব মানুষের বিপদের সময় তুমি...
এটা নিজের ছেলে!... যাও প্লিজ! আমার কিছূ ভাল্লাগছে না।
আমি বাধ্য হয়ে একাই রওনা হলাম। ও আবার ডাকলো। উপরে আসো। পাশের বাসা থেকে একটা স্যালাইন নিয়ে গুলিয়ে খাওয়াবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। ও বলল আচ্ছা চলো আমিও যাচ্ছি...
প্যান্ট পড়তে গিয়ে আবার বলে এতো সকালে ডাক্তার এসছে?....
আমার হাত পা কাঁপছে...বলে আবার প্যান্ট রেখে দিল।

আমি হাসপাতালে এলাম। এসে দেখি ডাক্তার নাই। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছে। দেড়শ টাকা ফি। বুঝলাম টাকা খাওয়ার ধান্দা। তাই গেলাম। ডাক্তারের রুমে ঢুকতে ঢুকতে ও এসে হাজির। ও কি হাওয়ায় উড়ে এলো? আমি বাইরে থেকে ফোনকরে এইমাত্র রিকোয়েস্ট করলাম আসার জন্য!

ডাক্তার দেখেই বললেন- পানি শুকিয়ে গেছে। এখনই ভর্তি করাতে হবে। ভর্তির জন্য এখনই ৭শ টাকা জমা দিতে হবে। দুইদিনের সিটভাড়া। কিন্তু আমার কাছে ২০০টাকা আছে আর ওর কাছে কোনও টাকা নেই। ও নাকি নিচে আমাদের জন্য পায়চারি করছিল। আমি ফোন দেওয়ামাত্র রিক্সায় উঠে চলে এসছে। উপরে যায়নি টাকা-পয়সাও আনেনি।.... এখন উপায়? টাকা ছাড়া তারা ভর্তি করাবে না। ও ওর কার্ড বের করে দেখালো বলল আমি এখনই কার্ডপাঞ্জ করে নিয়ে আসছি....

অ্যাডমিশন নেওয়া হলো। টাকা ভাংতির গ্যান্জাম এবং কল্যাণতহবিলের জন্য কিছু অতিরিক্ত টাকা দিতে হলো।...
কাগজগুলো নিয়ে তিনতলায় উঠলাম। ২নং ওয়ার্ড। বেড নাই। এক্সট্রা একটা পটে শোয়াতে বলা হলো। এদিকে স্যালাইন পুশ অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই নাকি নিচের কোন সিরিয়াস রুগী নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। ও ছুটে গেলো আবার নিচে, দেখা করল সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে। ডাক্তার প্রথমে টিএন্ডটিতে এবং পরে সেলফোনে নাকি কর্তৃপক্ষের কাকে যেন অবহিত করে... নব না কী নাম যেন। ও উপরে এলে আমি জিজ্ঞেস করি কী করলে? ওরাতো বাবুকে নিয়ে গেছে! আমি তখন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছি। আমার কোল থেকে বাবুকে ওরা একপ্রকার ছিনিয়ে নিল। বাবুর চিৎকারে আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে আসছিল। না জানি কী করছে ওরা! হয়ত রগ খুঁজে পাচ্ছে না। বাবুর কান্নাটা একটু ভিন্নরকম, যে কারও কষ্টে বুক ফেটে যাবে। ও সাধারণত কাঁদে না। আর যখন কাঁদে তখন যে কেউ বুঝবে কী কষ্টটাই না পাচ্ছে।... ও ঠিকই সে রুমে ঢুকলো। দেখে চলে এলো। আমাকে কী সান্ত্বনা দেবে উল্টো নিজের অবস্থাই খারাপ। খালি বলল নিজের সুখের জন্য....
৪০০টাকার ওষুধপাতি আনলো। বললাম টাকা পেলে কোথায়? ও বলে বাকি। এতো বাকি কীভাবে পেলে? ম্যানেজ করছি। ও নাকি নরক্সাভাড়াও বাকি রেখেছে। একটা রিক্সা রিজার্ভ রেখেছে।...
বাবুকে স্যালাইন দিয়ে ও গেলো টাকা তুলতে। এটিএম বুথে। গেলো আর এলো। কড়কড়ে টাকাগুলো দেখে আল্লাহর উপর শুকরিয়া আরও বেড়ে গেলো। আজই বেতন হয়েছে কিংবা গতকাল লাস্ট আওয়ারে....

স্যালাইন কিছুক্ষণ দেয়ার পর বাবু আমার প্রায় সুস্থ্। হাতে লাগানো ক্যানেলা খাওয়ার চেষ্টা করে। পাইপ টানে। উঠে বসে, হাসে। মনটা জুড়ালো কিছুটা। এদিকে ডাক্তাররা নার্সরা তাড়া দিচ্ছে ব্লাড আর স্টুল টেস্টের জন্য। ও স্টুলের অপেক্ষা করে। স্টুল রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওষুধ দিতে পারছে না। এরমধ্যে একবার বিশাল বড় হাগু দিল। ও সেটা পটে করে ধরে নিল।....
রিপোর্ট নাকি সন্ধ্যায় দেবে।
বিকেলে স্যালাইন খোলা হলো। তারপর থেকে আর কোনও চিকিৎসা নাই। ....
স্টুল রিপোর্টের জন্য ওয়েট করতে করতে শেষ পর্যন্ত আজ সকালে একরকম রাগারাগি করে হাসপাতাল ত্যাগ করলাম।
আসলেই আমরা ভুল করেছি হাতের কাছে হাসপাতালে গিয়ে। এই হাসপাতালের দুর্নাম অনেকের কাছেই শোনা যায়।...
আমরা আর কোনও সমস্যা হলে আদদ্বীনে নিয়ে যাবো এই প্ল্যানে রিলিজ করলাম। হাসপাতালের যা পরিবেশ! ও তো বারবার চ্যানেলে ফোন দিতে চায়, আমি বলি ওরা ক্ষেপে গিয়ে কী করে ঠিক নাই...
এইসময় আমরা শুনি আরও অনেকেরই গলাকাটার গল্প। জোরকরে ধরে রাখে রোগীকে। অভিভাবক বিদায় চাইলে বলে এখনও যাওয়ার সময় হয়নি। যেতে চাইলে নিজ দায়িত্বে যেতে হবে। লিখিত দিয়ে যেতে হবে, যে আমরা কোনও কিছূর জন্য দায়ী নই।... এই কথা বললে এমনিতেই অভিভাবকরা আর সাহস করে না।
আমরা একাধিকবার এদিক ওদিক চিন্তা করে শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম বাসায় নিয়ে আসার। আল্লাহ ভরসা। আর কিছু দেখলে আদদ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যাবো।...
আল্লাহর উপর ভরসা করে নিয়ে এলাম। বাসায় আসার পরথেকে পায়খানা কমেছে একটু। এখন বাবু খেলছে আল্লাহর ইচ্ছায়...
তবু চিন্তায় আছি.... প্লিজ দোয়া করবেন। প্লিজ!
ব্লগে ঢুকে দেখলাম অনেকেই দোয়া করেছে। তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা আমার জানা নেই।... সবাই ভালো থাকবেন। আর হাসপাতাল থেকে সাবধান!
একদিনে প্রায় ২০০০টাকা খরচকরেও আমরা কোনও ভালোব্যবহার পেলাম না। সারাদিন ময়লা তোষকের উপরে শুইয়ে রেখে অবশেষে রাতে একটা বিছানা চাদর দেয়া হয়। বাথরুমগুলোর যা অবস্থা....
বাবুর পায়খানা একটু ফ্লোরে পড়ে, পরিষ্কার করতে বলেলে বলে এটা আপনারা নিজেরা করবেন...
একটা স্যালাইন পুশ করাই কাজ?...
ভালোই ডাক্তারি শিখেছে হাসপাতালগুলো।
মিরপুর-২ শিশু হাসপাতাল।
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×