somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৬

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পিয়াজ্জা দেলা রিপাবলিকার এরিয়াল ভিউ

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৫

দুপুর দেড়টার দিকে বের হয়ে এলাম সেইন্ট পিটার ব্যাসিলিকা তথা ভ্যাটিকান সিটি থেকে। দেশী ভাইএর পরামর্শ মেনেই সেইন্ট পিটার ব্যাসিলিকা দিয়েই আমার ভ্যাটিকান সিটি দর্শনের শুরু আর সমাপ্তি। এতক্ষন এক্সাইটেড ছিলাম, টের পাইনি। বের হয়ে একটু ফাকায় দাড়িয়ে ধুম্রব্রেকের কথা চিন্তা করতেই পেটের মধ্যে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো, মনে পরলো সকালে নাস্তার পর থেকে এখন পর্যন্ত পানি ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয়নি! তাড়াতাড়ি এক দোকান থেকে হাল্কা কিছু খেয়ে নিলাম। আসলে আমি যখন ভ্রমনে বের হই তখন খাওয়া-দাওয়ার দিকে খুব বেশী মনোযোগ দেই না, তাতে করে আমার হাটাহাটিতে খুব বেশী সমস্যা হয় না।

রুটপ্ল্যান করাই ছিল, সাবওয়ের লাইন এ (লাল) ধরে এসে নামলাম রিপাবলিকা স্টেশানে। উদ্দেশ্য পিয়াজ্জা দেলা রিপাবলিকা এবং নেইয়াদদের ফোয়ারা দেখা।



পিয়াজ্জা দেলা রিপাবলিকা একটা অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির পিয়াজ্জা। ইতিহাসে আর গেলাম না, আমার কাছে তেমন আহামরি কিছু মনে হয়নি। আসলে ভ্যাটিকান সিটি থেকে বের হয়ে এসে এটা দেখলে তেমনটা মনে না হওয়ারই কথা! আরেকটা কথা। ইটালীর অনেক বিখ্যাত স্থাপনাই আছে যার সৌন্দর্য এরিয়াল ভিউ ছাড়া রাস্তায় দাড়িয়ে বোঝা যায় না। পিয়াজ্জা দেলা রিপাবলিকা তেমনই একটা স্থাপনা। আমার কাছে আশ্চর্য লাগে যে, এরিয়াল ভিউর সৌন্দর্য্য বিবেচনায় এনে যে স্থাপত্যবিদ্যা সেটা তখনকার স্থপতিদের মাথায় এলো কি করে?




গ্রীক মিথোলজিতে নেইয়াদ বা নিম্ফরা একধরনের বিশুদ্ধ নারী আত্মা, অনেকটা দেব-দেবী টাইপ, যারা মিঠাপানির আশেপাশে থাকে! গ্রীক ব্যাটারা কল্পনা করতেও পারতো বটে! তো তাদের উদ্দেশ্য করেই এই ফোয়ারাটা বানানো।

এবার আর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট না, শুরু করলাম আমার কুখ্যাত হাটা! কুখ্যাত বললাম এই জন্য যে, শুধুমাত্র এই কারনে বেশীরভাগ পরিচিতজনরাই আমার সাথে আসতে চায় না। আর আমার যেহেতু একা ঘুরতে ভালো লাগে, তাই কেউ আসতে চাইলেও আমি এমন ভয় দেখাই যে তারা শেষপর্যন্ত আর সাহস পায়না! সেজন্যেই আমার এই অভ্যাস বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতমহলে কুখ্যাতি লাভ করেছে! তবে আপনাদেরকে চুপি চুপি বলি, যতোটা ওদেরকে বলি ততটা আমি আসলে হাটি না, আর সেটা সম্ভবও না।



তো হাটতে হাটতে চলে এলাম সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর-এ। এটাও একটা ব্যাসিলিকা (ক্যাথেলিক চার্চ)।



সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর-এর পিছনের ভিউ।



সান কার্লো কোয়াট্রো ফাউন্টেইন। এটা চার রাস্তার মোড়ে চারটা ঝর্ণা। একসাথে সবগুলোর ছবি তোলা সম্ভব না, আবারও সমস্যা!




কোয়াট্রো ফাউন্টেইনের দু’টা ক্লোজ ছবি।



পিয়াজ্জা বারবেরিনিতে অবস্থিত ফাউন্টেইন দেল ট্রিটন। ট্রিটন গ্রীক মিথোলজির সমুদ্রদেবতা পসেইডন এবং দেবী এম্ফিট্রাইট এর ছেলে। ভদ্রলোক নিজেও একজন দেবতা!! ছবির বামপাশের কালো টি-শার্টপরা বসা লোকটা পানি থেকে টুরিস্টদের ফেলা কয়েন তুলছিল। সামনে দাড়ানো দু’জন স্থানীয় যুবক এসে বকাঝকা করছে।



পিয়াজ্জা ডি স্পাগনার কাছে অবস্থিত ট্রিনিটা ডেই মন্টি চার্চের সামনে স্থাপিত আরেকটা মিশর থেকে চুরি করা ওবেলিস্ক।



ট্রিনিটা ডেই মন্টি চার্চ।



ফাউন্টেইন ডি লা বার্সাসিয়া, পিয়াজ্জা ডি স্পাগনায় অবস্থিত। পোপ অষ্টম আরবান রোমের প্রতিটা বিখ্যাত পিয়াজ্জাতে একটা করে ফোয়ারা স্থাপনের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার অধীনে এটি ১৬২৩ সালে নির্মান করা হয়।



লা কলোনা দেল ইমাকোলাটা (কলাম অফ দ্যা ইমাক্যুলেট কন্সেপশান), পিয়াজ্জা ডি স্পাগনার কাছেই অবস্থিত।



আমার হন্টন কিন্তু চালু আছে! চলে এলাম পিয়াজ্জা ডেল পোপোলো-তে। অতীতে রেলপথ চালুর আগে পর্যন্ত এখান দিয়েই লোকজন রোমে ঢুকতো। এছাড়া এই চত্বরে শতাব্দী ধরে জনসম্মুখে অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতো। শেষবার করা হয় ১৮২৬ সালে।



পিয়াজ্জা ডেল পোপোলো-তে স্থাপিত আরেকটা মিশরীয় ওবেলিস্ক। ফারাও সেতি ১ এটি প্রথম হেলিওপোলিস এ স্থাপন করেন, পরবর্তীতে রামাসিস ২ এটিকে পূনঃস্থাপিত করেন। সম্রাট অগাষ্টাস এটিকে ১০ খৃষ্টপূর্বাব্দে রোমে নিয়ে আসেন। আর ১৫৮৯ সালে এটিকে বর্তমান জায়গায় স্থাপন করা হয়। সামনে দেখুন একজন ফারাও এর মুর্তি সেজে দাড়িয়ে আছে। পর্যটকরা এর সাথে ছবি তোলে, টাকা-পয়সা দেয় যার যা খুশি। ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখেন পোপোলো গেট, অতীতের রোমের প্রবেশদ্বার!



রোম নগরীর তৃতীয় বৃহত্তম পাবলিক পার্ক, ভিলা বোরগেজ এর প্রবেশদ্বার।



ভিলা বোরগেজ এর পাশে ন্যাশনাল গ্যালারী অফ মডার্ন আর্ট এর প্রাচীন বিল্ডিং।



ইরানী কবি ফেরদৌসীর ভাষ্কর্য, পার্কের ভিতরে স্থাপিত।



পার্কের ভিতরে গ্রীক দেবী (মেডিসিন) এসকুলাপিয়াসের মন্দির। ১৭৮৪ সালের দিকে এর তৈরী শুরু হয়।


সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আমাকে আবার হোটেলে ফিরতে হবে, তাই আজ এপর্যন্তই। বেশি হাটিয়ে আপনাদের আর টায়ার্ড করতে চাই না, নাহলে শেষে আপনারাও আমার বদনাম শুরু করবেন!!!


তথ্য কিছু গুগলের, কিছু ওখানকার পরিচিতিমূলক পুস্তিকা এবং বোর্ডের, ছবি প্রথমটা নেট থেকে, বাকিগুলো আমার ক্যামেরা এবং ফোনের।

চলবে.........

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৭
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৪৩
১১টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×