somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা সম্ভাব্য বৃষ্টি দিনের গল্প!!

২৩ শে এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘলা দিনে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে নিজেকে খুঁজে পাই। মন ভারী হয়ে আছে আকাশেরই মতন। জানালার কাছে থেকে সরে আসলেই হয়। পারি না। মনেহয় পা দুটো মেঝের সাথে গ্লু দিয়ে আটকানো। নড়তে পারিনা। শুধু মনে হয় বৃষ্টি আসুক।

ঘরের জানালা,মনের জানালাখুলে দিয়ে ভিজি। মন খারাপ করা মেঘেদের কান্নাগুলো এসে ধুয়ে দিক যত মলিনতা। ঝমঝম বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টি হই।
"মেঘমল্লারে সারাদিনমান বাজে মল্লার গান"..........গেয়ে উঠি।

দরজা খুলে বেলকনিতে যেয়ে দাঁড়াই......
চোখের সামনে শহরের অনেকটুকু.............ডাউন টাউনের উপরের পুরো আকাশ জুড়ে কালো মেঘেদের ঘন ঘটা।ডান দিকে দুরে তাকিয়ে অবাক হই..........দুরের শহরটার পাহাড় গুলো দেখা যাচ্ছে।ওখানে তেমন কোন মেঘ নেই। আজ মনেহয় ওখানে বৃষ্টি হবেনা। বেশ ঝকঝকে আকাশ।
আমার ভাবনার ফাঁকেই হুড়মুড় করে ধেয়ে আসা বৃষ্টির দিকে তাকাই।
বৃষ্টির এমন দারুণখেলায় অবাক হই........হাত দুটো বাড়িয়ে দিই.....বৃষ্টি ছুঁই।

ঝিরঝির করে পড়তে থাকা বৃষ্টির পানি দেখে রুবেলের লেখা কবিতার লাইন মনে পড়ে......."তোমার ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির চুল আমার চোখেই বেঁধে রাখলাম" কি দারুণ এক উপমা।

খুব ইচ্ছে করছিলো বৃষ্টিতে ভিজি......কিন্তু শীতটা এখনো কমেনি।
তাপমাত্রা এখনো খুব বাড়েনি। আমার ভাবনার ফাঁকে মাথা ভিজে গেছে। ভেজা কি উচিত! জ্বর জারি হবে। কাশি হবে। আমার হলে অন্য সবার।

দেয়ালের দিকে সরে আসি। ছিটেফোটা বৃষ্টি এসে তবু ভেজাতে থাকে। রাস্তায় ছুটতে থাকা গাড়ীগুলোর শব্দ বদলে গেছে.....স্‌স্‌স্‌স্‌ .....এমনই এক আওয়াজ করে ছুটতে থাকে গাড়ীগুলো। দুরের শীর্ণ গাছগুলোর দিকে তাকাই। নিশ্চয়ই বৃ্ষ্টি ছুঁয়েছে বলে ওরা আজ খুব খুশী।এমন বৃষ্টিতে ভিজেই কদিনেই গাছে গাছে কুঁড়িরা আসবে।এপ্রিলের ২ সপ্তাহ যেতে না যেতেই গাছগুলো পাতায় ভরে উঠবে।সন্তান সম্ভবা মায়ের দিকে তাকালে যেমন প্রশান্তি আসে, মনে হয় সৃষ্টির আনন্দে ডুবে আছে। গাছগুলোর দিকে তাকালেও তখন সেই আনন্দ ছুঁয়ে যাবে।

ফোনের শব্দে ঘরে ফিরি। মুনার ফোন। এই এক বন্ধু যার সাথে প্রানের নানান কথা বলা। গলা শুনেই বুঝি মনটা মন খারাপের মেঘ হয়ে আছে।
বৃষ্টি ওদের ওদিকটায় এখনো হচ্ছে না। আকাশ মেঘলা হয়ে আছে......।

আজ ছুটির দিন।কত কাজ জমে আছে।অথচ ও আজ কিছুই করেনি।
সারাদিন ও এঘরে ওঘরে হেঁটেছে। কথায় কথায় কেঁদেছে। ওর বড় মেয়ে ওর কাছে জানতে চেয়েছে কান্নার কারন। কিছু বলতে পারেনি। ছোট মেয়েটা কাঁদতে দেখে বারবার বুকের কাছে এসে জড়িয়ে ধরেছে। ও কি করে জানবে ওর মায়ের মন খারাপ আজ আকাশের সাথে সাথে?

ও আমাকে আজ ওর বাবার গল্প করে। ছোটবেলায় মেঘলা দিনে ওর যখন খুব মন খারাপ হতো,ওর বাবা ওকে কবিতা শোনাতো। মা ব্যস্ত থাকতো সংসারের নানান ঝামেলায়। ওর প্রকৃতি ছোঁয়া মনটাকে বুঝতো ওর বাবা। সেই বাবার কথা বলে কেঁদে কেঁদে আকুল হলো। কত দিন সেই বাবাটাকে দেখেনা..............মা হীন হয়েছিলো খুব ছোট বেলাতেই।
সেই বাবাটাকে আর আগের মত পায়না। ফোনে কথা বললে রোবটের মত কথা বলে বাবা।

আমি হাসি।
বলি মুনা,এটাই তো স্বাভাবিক।
তুমি কত্ত বছর বাবার কাছে নেই।
নিজের সংসার ,নিজের পৃথিবী নিয়ে ব্যস্ত আছো
ভাবো তো তোমার বাবা। একা । ছেলেমেয়ে কেউ কাছে নেই। নিজের জীবনটাকে কোন না কোন ভাবে মানিয়ে নিয়েছেন......হঠাৎ করে মাঝে মাঝে তোমাদের সাথে কথা হয়।
ভালো মন্দ কুশলাদি ছাড়া কিইবা বলবেন?
কি করে বলবেন,"তোদের জন্য ভীষন মন কেমন করে...................... চলে আয়।"

আমার মায়ের কথা বলি। সারাদিন নিজের মনে থাকেন।
কেউ কাছে গিয়ে বসলে গল্প করলে গল্প করেন। নাহলে চুপচাপ কোন বই বা পেপার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমি দুর থেকে মাকে দেখতে পারি,মায়ের একাকীত্বতা বুঝতে পারি।আর কিছুই পারি না।।মায়ের মেনে নেয়া দেখি। এখানে আমি বা আমরা আসলেই আর কেউ না..........।
আমি থাকলে মায়ের আনন্দ কতটুকু ভাবতেও বসি না। শুধু ভাবি আমরা যখন কেউ থাকি না ।মায়ের কাছে যা থাকে তাই তো মায়ের সব।
কদিনের জন্য হুটহাট আমরা যাই যখন স্মৃতিগুলোকে আরো ভারী করে চলে যাই শুধু। মায়ের বয়সে তাঁর অনুভূতিগুলোকে কি করে বিচার করি?
কি করি ভাবি মা আগের মত ব্যস্ত হয়ে থাকবে সারাক্ষন?

ওকে বলি মুনা আমাদের কথা ভাবো।
এই বিদেশে বসে যখন আমাদের ছেলেবেয়েরা একদিন বড় হয়ে যাবে। দুরে চলে যাবে। আমরা তো এখনো আমাদের মায়ের কথে ভেবে বাবার কথা ভেবে দেশে ছুটে যাই। ওরা কে কোথায় যে থাকবে। এই জেনারেশনে আমাদের মত না। কম মানুষের মধ্যে বড় হয় ওরা। যারা শুধু নিজের জন্য চায় সারাক্ষন। মাই আর মাই। ওদের কাছে কিইবা চাওয়ার থাকতে পারে।এই পি এস ২ আর উই গেইম এ ব্যস্ত থাকা আমাদের সন্তানদের আমাদের মত করে তৈরী করে চাইনা তো তবু মাঝে মাঝে অবাক হই আমার ছোট্ট ছেলেটা খেলতে খেলতে গুন গুন করে বাংলা গান গায়। বড় ছেলেটা শুটকীর গন্ধ পেলে খুশী হয়ে যায়।

আমরা যেনো কাছে থাকি। বন্ধু সারাজীবনের। মুনা শুধু না অনেকেরই কথা ততদিন যেনো না বাঁচি।
কিন্তু যদি বেঁচে থাকি। জানি না কেমন যাবে সেইসব দিন। একটা জেনারেশনেই কি সব মায়া সব ভালোবাসা এত দুরের হয়ে যাবে? আমি তো তা মনে করি না।

ওর মন হালকা হয়ে যায় কথার ফাঁকেই।ও বলে বৃষ্টি ওখানেও পড়ছে । বলি যাও বৃষ্টি দেখো। আর সব মন খারাপের কষ্ট বৃষ্টির সাথে ধুয়ে যাক।
বলি আজ খিঁচুড়ী রান্না করো আর ডিমভাজি......
ওর কথায় মন খারাপের সুর সরে গেছে বুঝবার পর ফোন রাখি।

বৃষ্টি পড়ছেই ঝিরঝির করে। তিনদিন বৃষ্টি হবে একটানা । আবহাওয়া বার্তা এমনি।

আলমারীর সামনে এসে দাঁড়াই।
আজ শাড়ী পড়ার দিন।
বৃষ্টি শুরু হবার আগে থেকে গান বাজছিলো। সুবিনয় রায়ের রবীন্দ্রসংগীত।
একটু আগে অর্ঘ্যসেন শুরু হলো..........
"পথহারা তুমি পথিক যেনো গো সুখের কাননে,
ওগো যাও কোথা যাও।"

শাড়ী পড়ে সাজতে বসি।
চোখের কাজল আর কপালের টিপ ।আমার প্রিয় প্রসাধন।
মেঘবতী সাজে সেজে সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াই.......

শোয়ার ঘরের জানালার পাশ দিয়ে একটা বাড়ীর ছাদ দেখা যায়।
কতগুলো পাখীর লুটোপুটিকরে গোসল করা দেখি। ছাদের বৃষ্টিতে ভেজা দিন গুলো কেমন পলকে হারালো.....
সব মেয়েরাই কি এক বয়সে ছিঁচকাঁদুনে থাকে? নাকি সব বয়সেই?
কথায় কথায় কান্না?
কি জানি।
ছেলেবেলায় বই পড়ে কত যে কাঁদতাম। কোন গল্পের শেষটা মনমত না হলে চোখ ফুলে যেতো। বিছানার কোনায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছি কতদিন।

আমার কাছের মানুষ কখন কাছে এসে দাঁড়ায়।
শাড়ীটার রং প্রসংগে কিছুই বলেনা ........টিপটা সোজা করে দেবে বলে খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। খুব অবাক করে দিয়ে বলে তোমাকে একবার বোলপুর নিয়ে যাবো। শান্তিনিকেতনের পথে হাঁটতে। সেখানে যখন যাবো একদিন হলেও বৃষ্টি হওয়া চাই ই চাই।
হাঁটতে হাঁটতে দুজনে গাইবো ।
"এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে।
এসো করো স্নান নবধারা জলে।"

খুব অবাক হয়ে যাই।
আজ বিকালেই অববাহিকা বইটা পড়বার সময় খুব ইচ্ছা করছিলো ঐ সব পথে যাই। এমনই ও আমার রাখাল ছেলে।
সব বুঝে ফেলে।
শাড়ী পড়লেই ও মেঘবতী মেয়ে ডাকে।
আমি কি চাই। আমি কি ভাবি ও সব কি করে বোঝে?

বেলকোনির একপাশে দাঁড়িয়ে দুজনে বৃষ্টিপড়া দেখি।
"কি আনন্দ কি আনন্দ নাচে মুক্তি নাচে ছন্দ।"

বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছি ভেবে সরে যাই আরো।
কোথায় বৃষ্টি। দুজনের চোখে পানিতে ভিজে যাচ্ছি দুজন।

আমি না হয় ছিঁচকাঁদুনে।
ওর চোখে কান্না কেনো?
সুখের ও কান্না হয়...........বেঁচে থাকার সুখবোধ আমাদের ঘিরে থাকে।
যা আমাদের নেই তা নিয়ে দুঃখ নেই..............যা আছে সেইটুকু যেনো থাকে সেই প্রার্থনাই দুজনের।

জীবনের যে দিনগুলো গেছে.......
চলেই গেছে। কত দুর দেশে এসে আমরা কেমন পাখীর মত বাসা বেঁধে আছি।

যেখানেই যাই যতদুরেই যাই কদমফোঁটা দিনগুলো শুধু মনে পড়ে......
বৃষ্টি ভালোবাসি বলে ,বৃষ্টি দিনে বৃষ্টি ছুঁয়ে আমরা নিজেরাই আজ বৃষ্টি হয়েছি।

(সংগৃহীত)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×