somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যজিৎ রায়: প্রকৃত মেধাবী এক প্রতিভার জন্মদিন আজ

০২ রা মে, ২০০৯ সকাল ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী- সব পরিচয়ে অন্যতম স্মরণীয় বাঙালি সত্যজিৎ রায়। বাবা শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়, দাদা শিশু সাহিত্যের আরেক দিকপাল উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। ১৯২১ সালের ২ মে সত্যজিৎ রায় কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে তার পূর্ব পুরুষের ছিল রক্তের সম্পর্ক। কারণ তার পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বড় মাসুয়া গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই সত্যজিৎ রায় পরিবারে সাহিত্যচর্চ্চার ভালো পরিবেশ পেয়েছিলেন। তার দাদা-বাবা সাহিত্যিক ছিলেন, তেমনি তাদের বাড়ি থেকেই বের হতো খ্যাতনামা পত্রিকা সন্দেশ। বাড়ির মধ্যেই ছিল প্রেস। তাই বইয়ের অক্ষরের সাথে পরিচয়ের আগেই তার প্রেসের ধাতব অক্ষরের সাথে পরিচয় ঘটেছিল।

১৯৩০ সালে সত্যজিৎ বালিগঞ্জ স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হন। তবে স্কুলে ভর্তি হবার আগেই বায়োস্কোপ দেখেন তিনি। ১৯২৯ সালে তিনি প্রথম সবাক ছবি হিসাবে দেখেন টার্জান দি এপম্যান মুভিটি। তবে তার আগেই দেখে ফেলেন বেনহুর, কাউন্ট অফ মন্টিক্রেস্টো, থিফস অব বাগদাদ, আঙ্কল টমস কেবিন-এর মতো বিখ্যাত মুভি গুলো।
দেশী-বিদেশী গানের প্রতি সত্যজিৎ দারুণ ভাবে আকৃষ্ট ছিলেন । রাতে ঘুমাতে যাবার সময় কিশোর সত্যজিৎ-এর সঙ্গী ছিল সঙ্গীত। দেশী সঙ্গীতের পাশাপাশি বিটোফেন, মোৎসার্ট, বাখ তার খুব প্রিয় ছিল।

স্কুলে পড়ার সময়ই ক্যামেরায় সত্যজিৎ-এর প্রথম হাতে খড়ি। ১৯৩৬ সালে মাত্র চৌদ্দ বছর দশমাস বয়সে তার তোলা ছবি যে বছর বিদেশি পত্রিকা বয়েজ ওন পেপার-এ প্রথম পুরস্কার পায়। সে বছরই ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন সত্যজিৎ।
১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তি নিকেতনের কলা ভবনে ভর্তি হন সত্যজিৎ। বলা যায় এখানেই প্রখ্যাত চিত্রকর নন্দলাল বসুর হাতে শিল্পী সত্যজিৎ-এর জন্ম ঘটে। তবে এখানে পড়াশোনা শেষ না করেই চাকরিতে যোগ দেন তিনি।
কিন্তু চলচ্চিত্র বানাবেন- এটা ছিল সত্যজিৎ-এর বহু দিনের স্বপ্ন। বিভূতি ভূষণের পথের পাঁচালী ছিল তার প্রথম পছন্দ। কিছু টাকা যোগাড় করে ১৯৫২ সালে পথের পাঁচালীর কাজে নামেন তিনি। তবে টাকার অভাবে সেটা কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায়। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করলে পথের পাঁচালীর কাজ শেষ হয়। আর এর মাধ্যমেই আজকের সত্যজিৎ রায় হয়ে ওঠেন তিনি। একের পর এক চলচ্চিত্র তৈরি করেন আর পুরস্কার জিততে থাকেন তিনি। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো অপরাজিত, পরশপাথর, জলসাঘর, অপুর সংসার, দেবী, তিনকন্যা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অভিযান, মহানগর, চারুলতা, গুপী গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশে, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, ঘরে-বাইরে, গণশত্রু, শাখা-প্রশাখা, আগন্তুক।

তার পরিচালিত অশনি সংকেত-এ বাংলাদেশের অভিনেত্রী ববিতা অভিনয় করেন এবং প্রশংসিত হন। চলচ্চিত্রের জন্য বহু পুরস্কার জিতেছেন সত্যজিৎ রায়। উপমহাদেশের একমাত্র চলচ্চত্রি ব্যক্তিত্ব হিসাবে চলচ্চিত্রে সারা জীবনের অবদানের জন্য পেয়েছেন অস্কার পুরস্কার।

সাহিত্যিক হিসাবে সত্যজিৎ রায় একটা বড় স্থান দখল করে থাকবেন বাংলা সাহিত্যে। বিশেষ করে শিশুতোষ গোয়েন্দা কাহিনী ফেলুনাথ সিরিজ ছেলে-বুড়ো সবার প্রিয়।

তিনি ছিলেন একজন খুব ভালো চিত্রশিল্পী। কোনো সিনেমা বানানোর আগে তার সেট ও দৃশ্য কেমন হবে তা নিজের খাতায় একে রাখতনে তিনি।

হাসপাতালে বসে আঁকা সত্যজিৎ রায়ের র্সবশেষ ছবি। এতে ১১ জন বিখ্যাত মানুষের মুখ আছে।
সত্যজিৎ রায় মারা যান ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল।

আজ ২ মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

[দুরন্তের পুরনো লেখা]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৯
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×