somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিপ্রেশান বা বিষন্নতা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সামান্য এংজাইটি, টেনশান বা মন খারাপ বা মেজাজ খারাপই #ডিপ্রেশন এটা বাজে ধারণা। অনলাইনের এই যুগে সম্ভাবত এই শব্দটার সবচেয়ে বেশি অপপ্রয়োগ হয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠা হল না ডিপ্রেশান, এক্সাম আশানুরূপ হল না ডিপ্রেশান, কেউ বকা দিল ডিপ্রেশান, ইত্যাদি অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে
এসব আসলে ডিপ্রেশান নয়
ডিপ্রেশান হল ক্রণিক প্রসেস।

কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর ব্যাপি বিস্তৃত কিছু অতীত মানসিক ট্রমার কারণে এটা হতে পারে ।

আমার কাছে ডিপ্রেশান হল-

"কোন শারীরিক বা মানসিক ট্রমা বা আঘাত বা অপ্রাপ্তি অথবা ডেলিউশান যা আপ্নাকে আপ্নার দৈনন্দিন মোটিভেশানকে কমিয়ে দেয়, জীবনের লক্ষ্যকে বিচ্যুত করে একাকিত্বের গহ্বরে তলিয়ে দেয়, যা পুন:পুন চক্রাকারে চলতে থাকে "

বিভিন্ন কারণেই ডিপ্রেশান হতে পারে, যেটা কিছু দিন থেকে ভাল হয়ে যায়, আবার কিছু বছরের পর বছর চলতেও পারে।
বেশ কিছু কারণ যা আমি কাছ থেকে দেখেছি তার কারণগুলো বলতে চেষ্টা করব।
এর আগে পার্সোনালিটি নিয়ে বলে রাখা ভালো, সাধারণত ইন্ট্রোভার্ট আর এক্সট্রোভার্ট এই দুই টাইপের মধ্যে ইন্ট্রোভার্ট রাই অধিকতর ডিপ্রেশানে ভুগে থাকে।
কারণ এরা বেশি সংবেদি আর কোমল হৃদয়ের হয়, এদের কথা সামাজিক মেলামেশা পরিমিত হয়ে থাকে তাই এরাই হার্ট হবার জন্য বেশি অনুকূলে থাকে।

তো বেশ কিছু কারণের মধ্যে কিছু উল্লেখ করার মত হল :
১ ফ্যামিলিয়াল রিলেশান ক্রাইসিস, যাদের বাবা মা এর সাথে সম্পর্ক ছোট বেলা থেকে ভালো না তারা ছোট বেলা থেকেই মানসিক ট্রমার মধ্যে চলতে থাকে যেটা পড়ে বিশাল আকারে ডিপ্রেশান বা বিষণ্ণতাতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২ বিভিন্ন ব্যাপারে বাবা মায়ের ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের টানা পোড়েন।
৩ খুব পছন্দের প্রিয়জনের মৃত্যু।
পৃথিবীর বহু সুইসাইড এর অন্যতম কারণ প্রিয় বন্ধু বা প্রেমিকার অপমৃত্যু।
৪ প্রেমে টানাপোড়েন, কিংবা প্রেমিক বা প্রেমিকা কতৃক প্রতারণা।
এটা আধুনিক যুগের ছেলে বা মেয়েদের দীর্ঘমেয়াদী ডিপ্রেশানের অন্যতম কারণ।
৫ পার্সোনাল অতিরিক্ত মাত্রার গিল্টিনেস, হয়ত এমন কিছু অতীতে হয়েছে যা ধর্মীয় বা সামাজিক মূল্যবোধে পাপ বলে বিবেচিত তার জন্য অতিমাত্রার পাপবোধ থেকেও ডিপ্রেশান আসতে পারে।
৬ একাডেমিক দুর্বল পারফরমেন্স, বারবার ভালো ও সাধ্যমত চেষ্টা করার পরেও সফলতা না আসা কিংবা পছন্দের ইনসস্টিটিউটশানে ভর্তি না হতে পারাও ডিপ্রেশানের কারণ হতে পারে।

৭ চাকুরীবা জব সেক্টর যুতসই না হওয়া, কিংবা সেখানে বস কতৃক নিগৃহীত হওয়া বা আশানুরূপ স্যালারি না পাওয়া।

৮ ক্রনিক কোন রোগ বা পঙ্গুত্ব যা ঠিক হবার নয়।

৯ খুব বেশি আর্থিক চাপ, ও পারিবারিক দায়িত্ব

১০ হাইপোকন্ড্রিয়াক ডেলিউশান যেখানে রোগি মনে করে তার বিশেষ রোগ আছে এই মিথ্যা বিশ্বাসে অনেকে মানসিক ভাবে বিষন্নতায় ভুগতে পারে।

এগুলার বাইরেও অনেক কারণ আছে যা মানুষকে বিষন্নতায় আচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে।

এখন এর কিছু লক্ষণ গুলা দেখা যাক
১ ব্যক্তিগত অনুভূতিকে লুকিয়ে রাখা
২ ব্যক্তিগত ভালো বা মন্দ থাকার পরোয়া না করা
৩ কাজে বা পড়াশোনাতে উদ্দীপনা না থাকা
৪ সোসাল উইথড্রোয়াল, বা ব্যক্তিগত একাকিত্ব বেছে নেয়া
৫ অন্ধকার, নীরবতা কে বন্ধু হিসেবে বেছে নেয়া
৬ খুব মাত্রাতে নীরব বা চুপ হয়ে যাওয়া
৭ খুব বেশি গিল্টিনেস এ ভোগা
৮ হাসি আনন্দ থেকে সরিয়ে রাখা এক্সপ্রেশন লেস হয়ে যাওয়া
৯ সব ব্যর্থতার জন্য নিজেকেই দায়ি করা
১০ আসন্ন বিপদের জন্য বা মৃত্যুর জন্য তীব্র সঙ্কা
১১ সুইসাইডাল থট বা এটেম নেয়া বা সুইসাইড
১২ ব্যক্তিগত রিলেশানে ঝামেলা
আরো অনেক রয়েছে।

প্রভাবঃ বিষন্নতা খুব সাধারণ মনে হলেও এটা খুবই মারাত্মক, এটা ব্যক্তিগত অগ্রগতি, পড়ালেখা, জব, পারিবারিক সামাজিক জীবন স্থবির করে ফেলে।
এরা উর্বর সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে ফেলে।
হয়ে যায় সুইসাইড অপমৃত্যুর মত ঘটনা।

মুক্তির উপায়ঃ
এটা থেকে মুক্তির ভালো উপায় হল নিজেকে বোঝানো, বা সাইকো থেরাপি, ডাক্তার বা সাইকিয়াট্রিস্ট তারা কাউন্সিলের মাধ্যমে আর মেডিসিন (TCA, SSSRI) দিয়ে অনেকটাই সাহা্য্য করেন।
নিজেকে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করা, সব কিছু সহজভাবে মেনে নেবার ট্রাই করা।
পজিটিভলি চিন্তা করতে হবেই, আশাহত বা হাল ছেড়ে দেয়া যাবেনা।
আর সাধ্যের অতিরিক্ত প্রত্যাশা না করা,বেশি প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির গ্যাপই আশাহত করে আমাদের।
নিজের সমস্যার মূল কারন কি তার সমাধান নেয়া,
সংগ্রামী মানুষগুলার প্রচেষ্টা গুলো দেখা,
অতীতকে ভোলার চেষ্টা করা, যে সময় আছে তার সদ্ব্যবহার করা, কারন জীবন সীমিত সময়ের বিষন্নতায় যে প্রতিভা যে সময় নষ্ট হচ্ছে তার জন্য মূল্যদিতে হয় আরো বেশি।
আরো মনে রাখা দরকার এই বিষাদের জগতে আপ্নি বা আমি একা নই, তারা সারভাইভ করলে আমরাও পারব।
আর মোদ্দা কথা হল আপ্নার বা আমার মূল্যায়ন হল আমার চূড়ান্ত অবস্থান, সে কনসাইন্স আর ডিগনিটি মাথায় রাখতেই হবে।
আমাদের চূড়ান্ত অবস্থাতে আসতে যে সেক্রিফাইস করতে হয়েছে তা কেউ দেখবে না।
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×