somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায়রে ঢাকা, আহারে ঢাকা

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশই সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল থাকা স্বত্বেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন একজন ট্রাফিক পুলিশ। কখনো কখনো গাড়ির সামনে হাত উচু করে দাঁড়িয়ে, কখনো দড়ি দিয়ে রাস্তার দুপাশ বেধে, কখনো অপরাগ হয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে ঘাম ঝরে লোকটির। সুসংবাদ হল এই যে, যেহেতু আমরা প্রগ্রতিশীল দেশ এবং আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে নাকি পা বাড়িয়েছি। তাই বেশিরভাগ সিগন্যালগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক একজন থেকে দুই বা ততোধিক ট্রাফিক পুলিশ বর্ধিত করা হয়েছে।

দেশের মাধ্যমকি ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ এর হার আকাশচুম্বী। প্রতি বছর গ্রাডুয়েশন শেষ করে বেকার বসে আছে হাজার হাজার যুবক। কে যেন বলেছিল, 'যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত।' ভদ্রলোক ভাল বলেছেন, আমাদের দেশের দিকে তাকালে তা স্পষ্ট বুঝা যায়। ভুমিকা অনেক হল, এবার একটু ভিতরে প্রবেশ করা যাক।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার স্বাভাবিক গতি এখন ঘন্টায় ৭ কিঃমিঃ, দশ বছর আগে এই গতিসীমা ছিল ঘন্টায় ২১ কিঃমিঃ । বাহ, অসাধারণ অর্জন। প্রতিদিন এই ট্রাফিক ৩.২ মিলিয়ন কর্মঘন্টা নষ্ট করছে যার ফলে প্তিবছর বিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে আমার উন্নতশীল সোনার দেশটি। আরো একটি মজার সংবাদ হল আগামী অল্প কয়েকবছরের মধ্যেই এই গতিসীমা ৪কিঃমিঃ এ নেমে আসবে এবং আসা করা যায় ২০৫০ সালের মধ্যে আমরা আমাদের সোনার নগরীকে অচল করে দিতে পারবো।



৯০ এর দশকে সর্বপ্রথম ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় 'ঢাকা সিটি কর্পোরেশন' । ৯০ এর দশকে দেশে অত্যাধিক পরিমাণ শিক্ষিত মানুষ এবং জিপিএ ৫ ধারীর সংখ্যা না থাকলেও তখন সবাই লাল নীল সবুজ বাতি দেখেই চলাচল করতো। আজ সেই লাল, নীল, সবুজ বাতি জ্বলে না। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হয় এখন হাতের ইশারায়। বর্তমান সময় অটোমেটিক সিগন্যাল সিস্টেম বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতি-পোস্ট স্থাপনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচও হয়েছে। ফলাফল, ডিজিটাল বাংলাদেশ।

ঢাকার যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যালের কাজে গত ১৬ বছরে কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০০ সালের দিকে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় ৭০টি জায়গায় আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানোর কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার না হওয়ায় অল্প দিনেই বেশির ভাগ বাতি অকেজো হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১০-১১ অর্থবছরে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) নামে আরেকটি প্রকল্পের আওতায় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সরঞ্জাম কেনা হয়। এর আওতায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯২টি মোড় বা ইন্টারসেকশনে সোলার প্যানেল, টাইমার কাউন্ট ডাউন, কন্ট্রোলার ও ক্লেব স্থাপন করা হয়। এ স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালব্যবস্থাও এখন অকার্যকর।



নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদক জোডি রোজেন ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে ‘দ্য বাংলাদেশি ট্রাফিক জ্যাম দ্যাট নেভার এন্ডস’ শিরোনামে ঢাকাকে নিয়ে একটি রিপোর্ট করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের অন্যান্য মেগাসিটির মতো একটা উঠতি আবাসন খাত, বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণি, একটা প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডল নিয়ে ঢাকা যেন যুগপৎভাবে দ্রুত বেড়ে ওঠা এক নগরী ও গোরস্থান, যা অবাধ দুর্গতি দারিদ্র্য, দূষণ, রোগব্যাধি, রাজনৈতিক দুর্নীতি, চরমপন্থী সহিংসতা, জঙ্গি হামলা ইত্যাদির কারণে পর্যুদস্ত।
কিন্তু শিক্ষাবিদ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের কাছে একুশ শতকের নাগরিক অকার্যকারিতার বিশাল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্বের চরম বিধ্বস্ত শহর ঢাকার পরিচিতি দিয়েছে তার ট্রাফিক। এটি ঢাকাকে পরিণত করেছে একাধারে উন্মত্ত ও স্থবির এক নগরে, পরাবাস্তব একটি জায়গায় এবং বদলে দিয়েছে পৌনে দুই কোটিরও বেশি নাগরিকের জীবনের ছন্দকে।’


সাংবাদিক জোডি রোজেনের এ এক নির্মম সত্য উচ্চারণ। রিপোর্ট করতে এসে এই সাংবাদিক বিমানবন্দর থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত এসেছিলেন। মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর, এসব এলাকায় গেলে কী বলতেন সেটা ঈশ্বরই ভালো বলতে পারবেন। এই এলাকায় গেলে মনে হয়, এটা যেন মধ্যপ্রাচ্যের কোনো যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চল।
রূপকথার ট্রাজেডির এই অঞ্চলে ফ্লাইওভার হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ এর ডিসেম্বরে। এর মধ্যে খরচ বেড়ে ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা থেকে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকায়। তমা গ্রুপের উন্নয়নের জোয়ার বইছে এখানে। একজনকে বলতে শুনেছি, এই এলাকা হল ঢাকার ‘আলেপ্পো’।

অপরদিকে দেশের ৮০% ড্রাইভিং লাইসেন্সই নাকি ভূয়া। ঘরে বসেই কোন পরীক্ষা না দিয়েই পাওয়া যায় এই সহজলভ্য লাইসেন্স। বিআরটিএ'র রিপোর্টের বরাত দিয়ে পত্রিকায় এমনটি প্রকাশিত হয়েছে।আর বর্তমানে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ যেভাবে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কঠোর শাস্তি দিয়ে থাকেন তা হচ্ছে একটি কেস কিংবা নিচের চিত্রটি।



দেশের উন্নতি হচ্ছে, আমরাও ঘরে বসে ফ্রিতে উন্নায়নের জোয়ার দেখছি সোফিয়ার কন্ঠে। অনেক পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে এসব ছোটখাটো সমস্যা সমাধানে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায় একটাই। পাচ লক্ষ ওয়েব ডেভলপার, গ্রাফিক ডিজাইনার তৈরি করে প্রতিটি ইউনিয়নে আইসিটির বাতাস পৌছে দেয়া আর সবার হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট পৌছে দেয়াটাই ডিজিটালাইজেশন? ব্যাস, এতটুকুই!

আসলেই কি আমাদের উন্নতি হচ্ছে? না হচ্ছে না। এর জন্যে কি সরকার দায়ী? না, কোনভাবেই না। এর জন্যে আপনি দায়ী, আমি দায়ী, আমরাই দায়ী। শিক্ষিত হয়ে অশিক্ষিতর মত কাজগুলো করার আগে আপনার হারিয়ে যাওয়া বিবেকে নাড়া দেয়না কখনো। একটি দেশের নাগরিক হয়ে কোন দায়িত্ব ও কর্তাব্য পালন করেছেন আপনি? সরকার কি সারা ঢাকাতে ট্রাস ক্যান স্থাপন করেনি? আপনি কি ওতাতেই ময়লা ফেলেন? একটা অশিক্ষিত ড্রাইভার সিগন্যাল না মানতে পারে, আপনি বড়লোকের দুলালী হলেও অশিক্ষিতর চেয়ে মোটেও কম নয়। সামান্য জায়গা পেলেই সেখানে পাছা ঢুকিয়ে দেবার অভ্যাস প্রত্যাহার করুন। আপনার মহাবুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্ক যখন আপনাকে ইঙ্গিত দেয় ট্রাফিক না মানলে আপনার ১ মিনিট সময় বেচে যাবে, তখন খুব নিশ্চিন্তে ধরে নিতে পারেন আপনার ১ মিনিট বাচানোর ফলে ১০০০ মিনিটের ক্ষতির জন্যে আপনিই দায়ী। প্রতিটি দেশ ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগুচ্ছে, আর আমরা নামছি নিচের দিকে। এবং আমি জানি, একদিন না একদিন ইউটার্ণ হবেই। হয়ত সেদিন আমি থাকবোনা। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। জিপিএ ৫ এর শিক্ষায় নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:১৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×