Arundhati Roy: after the lockdown, we need a reckoning
Source Article: Click This Link
Translation: Umme Salma
মহামারীর নিয়ে ভারতের কাণ্ডকারখানা একটি সামাজিক বিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জবাবদিহি করবে কে?
লক-ডাউন থেকে বেরিয়ে আমরা কিসের জন্য সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করছি? সবচেয়ে জরুরি হল, খুব যত্নসহকারে জবাবদিহিতার খতিয়ান রচনা।
২৪শে মার্চ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মাত্র চার ঘন্টার নোটিশে ভারতের ১.৩৮ বিলিয়ন মানুষের উপর সবচেয়ে শাস্তিমূলক লকডাউন আরোপের ঘোষণা দেন। ৫৫ দিনের লকডাউনের পরেও, এমনকি অবিশ্বস্ত কিছু অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী ভারতে কোভিড ১৯ পজিটিভ আক্রান্তের গ্রাফ ৫৪৫ থেকে বেড়ে এক লক্ষেরও বেশিতে গিয়ে পৌঁছেছে। গণমাধ্যমগুলো প্রধানমন্ত্রীর কোভিড ১৯ টাস্কফোর্সের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে লকডাউনটি যে উপায়ে প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেই পন্থার কারণের এটি ব্যর্থ হয়েছে।
সৌভাগ্যক্রমে, বহুসংখ্যক রোগীর মধ্যে কোনো লক্ষ্মণ নেই এবং নিবিড় যত্নের প্রয়োজন, আমেরিকা ইউরোপের তুলনায় এমন রোগীর সংখ্যা ভারতে খুবই কম । সমস্ত সামরিক উপমা, এই ব্যাধিকে ঘিরে ভীতি, ঘৃণা এবং কালিমালেপনের পরে আমাদের অবহিত করা হয়েছে যে, যেহেতু লকডাউন শিথিল করা হয়েছে, আমাদেরকে ভাইরাস সাথে নিয়েই বাঁচতে শিখতে হবে।
অসুস্থতা নিয়ে কিভাবে বাঁচতে হয়, ভারতে আমরা তা ভালো করে জানি। সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে কোভিড ১৯ এ মাত্র ৩০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যমান তথ্য মোতাবেক আগে থেকেই এটা জানা যে, একই সময়ে (জানুয়ারির ৩০ তারিখ থেকে শুরু করে) দেড় লক্ষ মানুষ, অন্যান্য যাদের অধিকাংশই দরিদ্র, শ্বাসযন্ত্রেরই আরেকটি সংক্রামক রোগ যক্ষ্মায় মারা যেতো; এদের অনেকেই ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মায় মারা পড়তো।
এই শূন্য-পরিকল্পনার লকডাউনের অর্থ এই যে গত ৫৯ দিনে (কাশ্মীরের জন্য এই লকডাউন ১২০ দিনের এবং ১০ মাসের ইন্টারনেট অবরোধ) ভারত এমন এক দুঃস্বপ্ন দেখেছে যার ক্ষতি আমরা কখনোই হয়তো পুনুরুদ্ধার করতে পারব না। লকডাউনের আগে ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্ব ছিল। লকডাউন ১৩৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের ক্ষতি করেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
খাদ্য, আশ্রয়, অর্থ বা যাতায়তের কোনো উপায় না পেয়ে কয়েক মিলিয়ন শ্রমিক শহরেই আটকা পড়েছে। ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ট্রমাটাইজড মানুষগুলোর শহর থেকে নিজের গ্রামে শতশত মাইলের এই যাত্রা এতো সপ্তাহ পরে এসে এখন একটি মহাপ্লাবন। মর্যাদা এবং আশ্রয় ছিনতাই হওয়া এই একদা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষগুলো শতশত মাইল পায়ে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে অথবা অবৈধভাবে বেসরকারি ট্রাকে গাদাগাদি করা মালামালের মতো পথ পাড়ি দেয়। তারা সঙ্গে করে ভাইরাস বহন করেছে, ঝোপঝাড়ের আগুনের মতোন গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে দিয়েছে। এই বেপরোয়া যাত্রায় অনেকে ক্ষুধা ও ক্লান্তিতে মারা গেছেন অথবা দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
মহাসড়ক ধরে যাবার সময় পুলিশী বর্বরতার হাত থেকে বাঁচতে তারা রেলপথ ধরে হাঁটতে শুরু করেন। একটি মালবাহী ট্রেন দূর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হবার পরে পুলিশ এই পথগুলিতেও টহল দিতে শুরু করে। এখন আমরা দেখছি হাতে নিজেদের মালপত্র আর ছোট বাচ্চাদের ধরে রেখে মানুষ নদীর উপর স্রোতের উপর ভেসে চলেছে। তারা বাড়ি যাচ্ছে, ক্ষুধা এবং বেকারত্বের বাড়ি যাচ্ছে।
আমরা মানুষকে খাবারের জন্যে দিশেহারা হতে দেখি এবং ফিরতি অভিবাসন বিপর্যয় শুরু হবার কয়েক সপ্তাহ পরে সরকার যে কয়টি বাস ও ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে তাতে চড়ে বসবার আশায় হাজার হাজার মানুষকে দেখি ঝাঁক বেঁধে ভিড় করছে বাস স্টপ আর ট্রেন স্টেশনে (যেখানে সামাজিক দূরত্ব একটি নির্মম রসিকতা)। আপাতত, আমাদের কাছে ভয়াবহতার মাত্রার মোটামুটি ধারণা রয়েছে। এর গভীরতা এবং ব্যাপ্তি সম্পর্কে আমরা যৎসামান্যই জানি।
জাতির উদ্দেশ্যে তার বিভিন্ন ভাষণে মোদী কেবল একবার এই অসহায় যাত্রার কথা উল্লেখ করেছেন, অথচ তির্যকভাবে একে তপস্যা ও ত্যাগ- আত্মসংযম ও উৎসর্গের হিন্দু ধারণায় সাজিয়ে তুলেছেন ঠিকই।
এরই মধ্যে, বিপুলভাবে প্রচারিত ‘অপারেশন বন্দে ভারত” এর মাধ্যমে বিদেশে আটকা পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরত আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কী কী করা হচ্ছে সে বিষয়ে সামাজিক দূরত্বে সাজানো ফ্লায়িং ক্লাসগুলোকে আশ্বস্ত করতে টিভি রিপোর্টে এয়ারপোর্ট এবং প্লেনের বিশদ স্যানিটাইটেজন প্রটোকলগুলো বিশদভাবে প্রচার করা হয়েছে।
এই কোভিড ১৯ এর যুগে, একটি শ্রেণীর প্রতি এমন মনযোগ এবং অন্য শ্রেণীর প্রতি প্রকাশ্য নিষ্ঠুরতা এই উপলব্ধিই দেয় যে ভবিষ্যতে ভারত নিজের ফ্লায়িং ক্লাস এবং ওয়াকিং ক্লাসকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে এবং কস্মিনকালেও কায়িকভাবে এরা একে অপরের মুখোমুখি হবেনা।
আমাদের একটি নতুন মুসলিম বিরোধী নাগরিকত্ব আইন রয়েছে এবং কাজের ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের নতুন নিবন্ধন রয়েছে। যারা এর প্রতিবাদ করেছিল, বিশেষ করে মুসলিম তরুণদের কঠোর অ-জামিনযোগ্য আইনে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মুসলিম ঘেটো এবং বিশাল কেন্দ্রগুলো ভারতে ইতোমধ্যেই বিদ্যমান। এখন আমরা শ্রেণী বিদ্বেষকে স্বাগত জানাতে পারি। স্পর্শহীনতার যুগ, যেখানে একটি শ্রেণীর বাস্তব শরীরকে অন্য শ্রেণীর মানুষের জন্য জৈব-বিপর্যয় হিসেবে দেখা হয়।
বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের পাওয়া সুরক্ষা ছাড়াই যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে অবশ্যই এই জৈব-ঝুঁকিপূর্ণ শরীরগুলোকেই শ্রম দিতে হবে। এবং সেবা শ্রেনীগুলো অ-বিপজ্জনক যন্ত্র দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। উদ্বৃত্ত শ্রমজীবী শ্রেণীর কী হবে- বিশ্বের বেশির ভাগ জনসংখ্যার- কেবল ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী? এই চরম পরিণামের জন্য কে দায়ী? একটি ভাইরাস নয়- আমি আশা করি।
আমাদের কোভিড ট্রায়াল দরকার। একটি আন্তর্জাতিক আদালতে। একবারে ন্যূনতম পর্যায়ে হলেও দরকার। এটা আমার লক-ডাউন পরবর্তী বাস্তব-স্বপ্ন।। এটা আমার লক-ডাউন পরবর্তী দিবাস্বপ্ন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২০ সকাল ৮:৩৫