somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাদার'স ডে গিফ্ট (গল্প)

১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

1.


ঃতুমি কেন এসেছো?
রওনাক আহমেদের শীতল প্রশ্নে আমি মোটেই বিস্মিত হলাম না!


ঃ আশা করি,তোমাকে তোমার মা পাঠায়নি।
ঃ না।
ঃ তুমি কী নিজের প্রয়োজনে এসেছো?
ঃ কিছু দরকার তোমার? টাকা?
ঃ না।
ঃ ছোটবেলায় একটা মার্সিডিজ চেয়েছিলে,সেটা?
ঃ না।
ঃ তোমার জন্য কেনা ফ্ল্যাটদুটো?
ঃ না।
ঃ নিজের উত্তারাধিকার বুঝে নিতে এসেছো?
ঃ না।
ঃ তবে কেন এসেছো?
উত্তরটা তৈরী ই ছিলো-
ঃ আগামীকাল ফাদার’স ডে। তোমাকে একটা উপহার দিতে এসেছি।
রওনাক আহমেদের কথায় শ্লেষের সুর-
ঃ ফাদার’স ডে!
১৭ বছর পর তোমার ফাদার’স ডে’র কথা মনে হলো!
আমি কাধ ঝাকিয়ে আমার নির্লিপ্ততা বুঝিয়ে দিলাম।






2.


দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই গা শিরশির করে উঠলো;
এই রুমে সারাক্ষণ কুলিং সিস্টেম অন থাকে।
রওনাক আহমেদ ঠান্ডা খুব পছন্দ করেন।
অন্য কারো এই রুমে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু আমার কথা ভিন্ন- আমি তার মেয়ে; যদিও গত ১৭ বছরে একবার ও লোকটাকে বাবা বলে ডাকিনি।
বাইরে সমাজে কখনো নিজেকে তার মেয়ে বলে পরিচয় দেইনি।
কী হতো দিলে!
আমার বাবা আন্ডারগ্রাউন্ডের একজন ডাকসাইটে ক্রিমিনাল একথা জানলে, অর্পা কী আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড হতো?
সে ঠান্ডা মাথায় ট্রিগার টেনে কারো ঘিলু বের করে দিতে পারে- একথা জানলে, পবন কী আমার সামনে গোলাপ নিয়ে দাঁড়াতো কখনো?
হাসপাতালের বয়স্ক রোগীরা আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করতো কখনো- যদি জানতো- আমি রওনাক আহমেদের ঔরসজাত সন্তান; যার ভেজাল ঔষধে তারা আরো অসুস্থ হচ্ছে!
না।
আমি আমার দ্বিতীয় বাবার মতো একজন সাধারন স্কুল শিক্ষকের পরিচয়ে মানুষ!


১২ টার পর ফাদার'স ডে'র উপহার দিতে এই রুমেই আসতে হবে; ঘুরে ঘুরে দেখছি রুমটা।
কাবার্ড ভর্তি বিদেশী মদ, ক্যাবিনেটে ফাইলপত্র, ডেস্কের ড্রয়ারে একটা 6.5" Ruger Blankhawk;
দীর্ঘিশ্বাস ফেলে রিভলভারটা দেখলাম। এই ড্রয়ারেই আমার জন্য ছোটবেলায় চকলেট জমা থাকতো।






3.


ঠিক ১২টায় দরজায় নক করতেই সাড়া এলো-
ঃ ভেতরে এসো।
আমি গুটি গুটি পায়ে ভিতরে ঢুকলাম, হাতে র‍্যপিং পেপারে মোড়ানো একটা বক্স।
রওনাক আহমেদের চোখে-মুখে প্রশ্ন!
ঘড়ি দেখে ১ মিনিট অপেক্ষা করলাম।
ঃ হ্যাপি ফাদার'স ডে,রওনাক আহমেদ।
বক্সটা নিতে নিতে চমকে উঠলেন!
চোখে শ্লেষ ছড়িয়ে বললাম,
ঃ চমকালে কেন? "বাবা" ডাকিনি,তাই?
তার চোখে এখনো নিরব জিঞ্জাসা!
ঃ গত ১৭ বছর ধরে আমি তোমাকে বাবা ডাকিনি। আজ ডাকবো,ভাবলে কী করে!
আচমকা আমি তার ড্রিংসের গ্লাসটা তুলে এক ঢোকে সবটুকু গিলে ফেললাম।


রওনাক আহমেদের চোখে বিস্ময়!


মুখ মুছে বললাম-
ঃ আজ আমি তোমাকে দুইটা গিফ্ট দেবো; প্রথমটা হলো কিছু সত্যি।
তুমি কী জানো - তোমার আর মায়ের ডিভোর্সে কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি? আমার।


চোখ বড় হয়ে গেলো রওনাক আহমেদের।
ঃ মাত্র ৭ বছর বয়স ছিলো আমার, কিন্তু সে রাতগুলোর কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে।
তুমি তখন আন্ডারগ্রাউন্ডের উঠতি ক্রিমিনাল; রোজ রাতে মাতাল হয়ে মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করতে, গায়েও হাত তুলতে কখনো কখনো!
তোমার সাথের প্রতিটা মুহূর্ত অসহ্য যন্ত্রনায় কেটেছে মায়ের।
আমি কীভাবে ভুলতে পারি, আমাকে বুকে জড়িয়ে রাতের পর রাত মায়ের কান্না?
আমি আমার অপরিনতি বুদ্ধি দিয়েই মাকে একটু একটু করে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছি।


রওনাক আহমেদের চোখ-মুখ কঠিন হয়ে উঠছে।
আমার ভিতরে একধরনের সুখানুভূতি কাজ করতে শুরু কিরলো!


ঃ তারপর মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে।
তার মহানায়ক ও আমি।
আমার বয়স তখন ৯। কিন্তু আমি সফল হয়েছিলাম একটা নতুন বাবা পেতে- যার আদর ভালোবাসায় আমি এতোটা বড় হয়েছি।


গম্ভীর একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন রওনাক আহমেদ-
ঃ এখন কেন এসব বলছো?
ঃ কারণ, আমি তোমাকে ঘৃণা করি-তুমি একজন ক্রিমিনাল, কোল্ড হেডেড মার্ডারার।


ক্রোধে কাঁপছেন রওনাক আহমেদ। চিৎকার করে উঠে দাঁড়ালেন-



আমি ক্রুর হাসি হেসে বললাম-
ঃ আমি এখন তোমাকে দ্বিতীয় গিফ্টটা দিতে চাই- একটা নির্মম মৃত্যু!


ক্রোধে এলোপাথারিভাবে ড্রয়ার হাতরান রোনাক আহমেদ।
শীতল কন্ঠে বললাম-
ঃ তোমার রিভলভার? ওই গিফ্ট বক্সটাতে আছে।




রিভলভার তাক করে ক্রুর হাসি হাসলেন রওনাক আহমেদ, আমার ভিতরে তখন ও একটা শান্তভাব!
দেখতে পেলাম সে ট্রিগারে হাত রাখছে...








পরিশিষ্টঃ


পার্কে বসে আছি। খবরের কাগজের প্রথম পাতায় রওনাক আহমেদের ১৫ বছর আগের একটা ছবি।
কাগজটা কোলে রেখে চোখ বন্ধ করলাম।
গতকাল রাতে ট্রিগার টানার আগে আমি তাকে বক্সের ভিতরে রাখা চিরকুটটা পড়তে বলেছিলাম।
চিরকুট পড়ে রওনাক আহমেদ চিৎকার করে বলেছিলেন-
ঃ আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা!


এধরনের মানুষরা আসলেই কাউকে বিশ্বাস করেনা।
কিন্তু আমি জানতাম এটা অবধারিত ছিলো; নিজ DNA-উৎসের প্রতি ক্রমবর্ধমান ঘৃণা নিয়ে রাতের পর রাত
জেগে আমি বিস্ফোরক সম্পর্কে পড়েছি।
সাধারন একটা বুলেট থেকে কীভাবে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানো যায়-সেটা জেনেছি, শিখেছি শুটিং এর ব্যাকওয়ার্ড ফোর্সকে কাজে কীভাবে একটা রিভলভারকে সেই বিস্ফোরকের কন্ট্রোলার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

আমার পরিশ্রম বৃথা যায়নি !
রুমের তাপমাত্রা যে বেশি ছিলো এটাও খেয়াল করেননি রওনাক আহমেদ,ট্রিগার টেনেছিলেন তিনি ... তারপর ...

রুমের চারকোণায় রাখা চারটা বিস্ফোরকের ব্লাস্টিং পাওয়ার এতো বেশি ছিলো যে...

পাঁচ সেকেন্ডে জানিনা কীভাবে নিজেকে ছুঁড়ে দিয়েছিলাম রুমের বাইরে!
------------------------------------------------------()-----------------------------------------------------------------------
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×