somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়া একটি দেশ ...

১৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Map of the Republic of Biafra — 1967 – 1970)

“সূর্য্যদয়ের দেশ” গানটি বুকে নিয়ে যে রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিলো একটি অন্ধকার মহাদেশে একদিন, সে রাষ্ট্র আলোর মুখ দেখতে পায়নি খুব বেশীদিন । আতুর ঘরেই তার মৃত্যু ঘটে গেছে মাত্র আড়াই বছর বয়সেই ।
জাতীয় সঙ্গীত ছিলো তার , ছিলো পতাকায় লাল, সবুজ আর কালোর মাঝে উদিত সূর্য্যের মুখ ।ছিলো নিজস্ব কারেন্সী ।




Biafran Currency (c.1968)


বেঁচে থাকেনি কেন সে !
কারন তার জন্মই যে হয়েছিলো রক্তের স্রোতে ভেসে যেতে ।রাজনীতির পাশা খেলায় সে যে ছিলো দাবার গুটি । কেবল মাত্র অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিশ্বরাজনীতি যুগে যুগে বিষমাখা তীরে জগতজুড়ে অসহায় মানুষ মারার যে খেলা চালিয়ে এসেছে , এটি তারই একটি সংস্করন । জাতিস্বত্তা নয়, সংস্কৃতির অটুট বন্ধন নয়, ধর্মের অচ্ছেদ্দ্য বেড়াজাল নয় যেখানে কেবল স্বার্থই প্রধান নিয়ামক । বর্ন-গোত্র, ভাষা-ধর্ম যেখানে পরাভূত নিত্যকাল ।

লেঃ কর্ণেল চুকুইয়েমেকা ওদুমেগেউ ওজুকু , সবে জন্ম নেয়া রাষ্ট্রটির প্রধান নিয়ন্ত্রক “রেডিও বায়াফ্রা”য় দেয়া ভাষনে যখোন বলেন – “ আমি আগেও যা বলেছি আজ আবার তার পূনরাবৃত্তি করতে চাই, যে যুদ্ধ আমরা শুরু করেছি তা সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরী করে দেয়া একটি যুদ্ধ । এ যুদ্ধ বৃটেন আর রাশিয়ার অশুভ আঁতাতের সরাসরি নির্দেশনায় এবং আমেরিকার মৌন সম্মতিতে মঞ্চায়িত হচ্ছে পর্দার আড়াল থেকে । আমি দেখতে পাচ্ছি , তাদের কাছে মুক্তি আর স্ব-সংকল্পের কথা গায়ের চামড়ার রংয়ের সাথে শর্তাবদ্ধ । আর তাই আমাকে বলতেই হচ্ছে, কালো চামড়াদের জন্যে একটা বায়াফ্রা চাই । আজ যদি একটি বায়াফ্রা শ্বাসরূদ্ধ হয়ে মরে তবে ভবিষ্যতে ‌এ থেকে আরো বায়াফ্রা জন্ম নেবেই।” তখন সবে জন্ম নেয়া রাষ্ট্রটির পক্ষে-বিপক্ষে যতো তত্ব আর তথ্যের মুখে ছাই পড়ে যায় ।

হ্যাঁ, যে রাষ্ট্রীয় ভূখন্ডটুকুর কথা বলছি নাম তার “বায়াফ্রা”। কৃষ্ণ আফ্রিকার কৃষ্ণকায় নাইজেরিয়া নামের ফেডারেল দেশটির দক্ষিন-পূর্বাঞ্চল ঘিরে যা উদয় হয়েছিলো সূর্য্যের মতো ।
এর জন্মের ইতিহাস বর্ন-গোত্র, ভাষা-ধর্ম নিয়ে যে ভাবে চিত্রিত হয়ে আছে তা হয়তো আসল সত্য নয় ।

যুক্তরাজ্যের কলোনীর খাতা থেকে নাম খারিজ হয় নাইজেরিয়ার ১৯৬০ সালে । নতুন জন্ম নেয়া অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোর মতো এর সীমানা জাতিগত ভাবে প্রতিবিম্বিত হয়নি । নানা ধর্মভিত্তিক জাতি আর সম্প্রদায় নিয়ে বিচিত্র সাজ ছিলো এর । তাই উত্তরের মরুভূমি অঞ্চল অধ্যুষিত ছিলো আধা স্বায়ত্ব-শাষিত ফিউডাল মুসলিম রাজ্যগুলি নিয়ে । প্রধানত ক্রীশ্চান এবং সর্বপ্রানবাদী (Animist)গোত্রগুলি অধ্যুষিত করে রেখেছিলো এর দক্ষিন অঞ্চল ।
উত্তরে ছিলো “হাউসা” এবং “ফুলানী” সম্প্রদায়ের বাস, দক্ষিন পশ্চিম ছিলো “ইরুবা”দের দখলে আর “ইগবো” সম্প্রদায় ছড়িয়ে ছিলো দক্ষিন পূবে ।
১৯৬৩-৬৪ সালের নাইজেরিয়ান সেনস্যাস ক্রাইসিস, ১৯৬৪ সালের ফেডারেল ইলেকশান ক্রাইসিস এবং ১৯৬৫ সালের ‌ওয়েষ্টার্ণ নাইজেরিয়ান ইলেকশান ক্রাইসিস সব মিলে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দিলে ১৯৬৬ সালের জানুয়ারীতে সামরিক বাহিনীর হাতে চলে আসে ক্ষমতা । আর সুযোগ বুঝে পুবের ইগবো সম্প্রদায়ের একটি দল নাইজেরিয়ার তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী স্যার আবুবাকর তাফাওয়া বালিউয়া এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী স্যার আমেদু বেল্লু সহ ৩০ জন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে প্রথম সামরিক ক্যু’টি ঘটিয়ে ফেলে ।
১৯৬৬ সালের ১৫ ই জানুয়ারীর দুপরে রেডিও কাদুনা থেকে ক্যুদেঁতা Major Nzeogwu এর কন্ঠে ভেসে আসে -
“In the name of the Supreme Council of the Revolution of the Nigerian Armed Forces, I declare martial law over the Northern Provinces of Nigeria.
The Constitution is suspended and the regional government and elected assemblies are hereby dissolved.”

একই বছরের জুলাই মাসে উত্তরের সামরিক ইউনিট আর একটি পাল্টা ক্যু এর জন্ম দেয় । উদ্দেশ্য ফেডারেল নাইজেরিয়াকে একীভূত রাখা । সামরিক কর্মকতাদের মুসলিম অংশটি ক্ষুদ্র “আনগা” সম্প্রদায় থেকে আগত ক্রিশ্চান ধর্মাবলম্বী জেনারেল ইয়াকুবু গোউন কে এই ফেডারেল মিলিটারী গভর্নমেন্ট (এফ এম জি )এর প্রধান ঘোষনা করেন । সেপ্টেম্বরের মধ্যেই উত্তরাঞ্চলে মারা পড়ে প্রায় ত্রিশ হাযার ইগবো এবং পূবের শহরগুলিতে গৃহযুদ্ধের এই ডামাঢোলে আরো মারা পড়ে উত্তরাঞ্চলীয় মুসলিমরা । রক্তের গঙ্গায় ভেসে যায় কৃষ্ণদেশটি ।
গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা বেড়ে যেতে পাশ্ববর্তী ঘানার আবুরী শহরে বৈঠকে বসলেন সকল অঞ্চলের সামরিক জান্তা আর সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা । বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলো একটি শিথিল কনফেডারেশান গড়ে তোলার । নাইজেরিয়ার চারটি অঞ্চলকে ভেঙ্গে ১২ টি ছোট ছোট রাজ্যে ভাগ করা হয় । এতে প্রাকৃতিক সম্পদ বঞ্ছিত উত্তরাঞ্চলীয়রা অসাম্যের শিকার হবেন ভেবে অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন । পশ্চিমাঞ্চলের এক নেতা হুমকি দিলেন , যদি এর পরেও পূর্বাঞ্চল আলাদা হয়ে যায় তবে তারাও আলাদা হয়ে যাবেন । একথায় উত্তরাঞ্চলীয়রা তাদের সাথে তাল মেলালেন ।
কারনটা আর কিছু নয় – অর্থনৈতিক । নাইজেরিয়ার তেলক্ষেত্রগুলি যা দেশের একমাত্র প্রধান আয়ের উৎস তা সবই দেশের দক্ষিনাঞ্চলে । গৃহযুদ্ধ একদিনে লাগেনা । এর ক্ষেত্র তৈরী হয় দীর্ঘকাল ধরে চলা বঞ্ছনা থেকে ।

ইতিহাসের এই ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধের পেছনের কারনগুলি নিয়ে ইতিহাসবিদ আর গবেষকদের কিম্বা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মন্তব্যগুলিতে সত্যটি ঠিক ফুটে ওঠেনি । কেউ একে খ্রীষ্টান-মুসলমানদের দ্বন্দ হিসাবে প্রচারে সচেষ্ট হয়েছেন । দেখা গেছে স্বীকৃতি না দিলেও ইজরায়েল , রোডেশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ফ্রান্স, পর্তুগাল এমোন কি ভ্যাটিকান-সিটি বিদ্রোহী বায়াফ্রানদের সব রকমের সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছে প্রচুর । কেবলই রাষ্ট্র নয় - জয়েন্ট চার্চ এইড, হোলি ঘোষ্ট ফাদারস অব আয়ারল্যান্ড, কারিতাস ইন্টার ন্যাশনাল, আমেরিকান ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস এর মতো সাহায্যকারী খ্রীষ্টান সংস্থাগুলো পিছিয়ে ছিলোনা মোটেও । হতে পারে মানবতার কারনেই এই সাহায্য এসেছে কিন্তু এদের সকলের পরিচিতি অন্য রকম ভাবতে বাধ্য করে অনেকটাই । আর যুদ্ধের প্রোপাগান্ডার পেছনে এটাও একটা কারন ।

ইউএস মেরিন কমান্ড এন্ড ষ্টাফ কলেজের ছাত্র মেজর আবুবাকার আতোফারাতি নাইজেরিয়ার এই গৃহযুদ্ধের কারন, ষ্ট্রাটেজী এবং এ থেকে শিক্ষা সম্পর্কে তার গবেষনাপত্রে লিখেছেন –
“ফেডারেশান অব নাইজেরিয়া নামে আজকের দিনে আমরা যাকে চিনি তা কিন্তু কোনও কালেই সত্যিকার ভাবে সমশ্রেনীভুক্ত ছিলোনা । এখানে মানুষ-গোত্র-ভাষা আর ধর্ম এতো বেশী ভাবে বিচিত্র আর বিভক্ত ছিলো যে তা সম্ভব ও ছিলোনা । কেবল মাত্র এর প্রাকৃতিক সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখতেই এর কলোনিয়াল শাসকেরা এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় বিচিত্রতাকে উড়িয়ে দিয়ে একে একটি ভূখন্ডে সীমাবদ্ধ করে রাখার কুটনীতিতে অটল ছিলেন । তাই প্রশাসনিক সুবিধার জন্যে উত্তর আর দক্ষিনকে একীভুত করে ফেললেন ১৯১৪ সালে । অথচ দুই প্রান্তে দুইটি আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুললেন । এর ফলে কেবল মাত্র দেশের নামটি ছাড়া মানুষগুলির ভেতর “কমন” আর কিছু রইলোনা । পরিনামে গেড়ে বসলো বিভক্তি, ঘৃনা, অসুস্থ প্রতিদ্বন্ধিতা আর উৎকট অর্থনৈতিক বৈষাম্য ।
জাতীয়তাবাদের ধারনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উন্মেষ ঘটেছিলো জাতীয় ঐক্যের বদলে জাতি, গোত্র, ভাষার উপর ভিত্তি করে । ফলে কলোনিয়াল প্রভুদের বিরূদ্ধে জনগণের সম্মিলিত ঐক্যের সাধন সম্ভব হয়নি কখনও । অনুন্নত আর অশিক্ষিত ভুখন্ডগুলোর বেলায় যা ঐতিহাসিক সত্য । আর একারনেই রাজনৈতিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক প্রভুত্ব আর সামরিক প্রাধান্য কুক্ষিগত করতে একটি অঞ্চল বা গোত্র আর একটির উপর টেক্কা মারার সংগ্রামে মেতে ওঠে যা সময়ের সাথে সাথে বেগবান হতে থাকে । আর শেষমেশ সে সংগ্রাম পর্যবসিত হয় ক্যু, কাউন্টার-ক্যু আর রক্তক্ষয়ি গৃহযুদ্ধে ।
এই সত্যটাই এক এক করে সত্যি হতে শুরু করে নাইজেরিয়ার ভাগ্যে । ১৯৬৭ সালের ৬ই জুলাইতে পুরোমাত্রায় শুরু এই যুদ্ধের । ১৯৬০ সালে অর্জিত স্বাধীনতার পর থেকেই অস্থিরতা, অস্বচ্ছ শান্তির আবহ সব মিলিয়ে দেশটির বাসিন্দাদের মনে যে খটকা জেগে উঠেছিলো তার শেষ পরিনতি এই গৃহযুদ্ধ । যদিও এর বীজ প্রোথিত হয়েছিলো দেশটির জিওগ্রাফি, হিস্ট্রি, কালচার এবং ডেমোগ্রাফির রকমারির কারনে ।”

তার এই বক্তব্যের সাথে অনেক মিল খুঁজে পাবেন আপনি ১৯৬৭ সালে জন্ম হওয়ার পরপরই “গভর্ণমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব বায়াফ্রা” কর্তৃক প্রকাশিত এক ঘোষনায় । সেখানে প্রকাশিত বক্তব্য এরকম –
“ভয়-ভীতি, তিক্ততা আর ঘৃনা থেকে মুক্ত একটি জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে চোদ্দ মিলিয়ন জনতা তাদের নিয়তিকে নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন।”
“ আমরা বায়াফ্রানরা দেশের যে কোনও অঞ্চলের লোকদের তুলনায় সর্বাপেক্ষা বেশী মানব আর বস্তু সম্পদ জুগিয়েছিলাম ফেডারেশানটির জাতীয় ঐক্যের জন্যে।”
“১৯১৪ সালে যখোন ব্রিটিশ শাসকেরা উত্তর আর দক্ষিনকে এক করে ফেললেন তখন থেকেই আমরা বায়াফ্রানরা ছড়িয়ে পড়েছি দেশটির সবখানে- উত্তরের ফুলানী-হাউসা আর পশ্চিমের ইরুবা এলাকাতেও । সেখানে আমরা শিল্প আর ব্যবসা-বানিজ্যের নতুন নতুন পথ খুলে দিয়েছি, প্রতিষ্ঠা করেছি উপাসনালয় আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা আর কোনও গোত্রই এ পর্য্যন্ত দেশের জন্যে করেনি।”
“ বায়াফ্রানদের যোগ্যতা আর তাদের কর্মক্ষমতার সম্ভাবনা তাদের কে পশ্চাদপদ প্রতিবেশীদের থেকে আলাদা করে রেখেছিলো।”
“ আর এইসব বৈষ্যম্যের কারনেই হিংসা আর শত্রুতা বায়াফ্রানদের পিছু ছাড়েনি ।”
“ আমরা ফুলানী- হাউসা সম্প্রদায়ের উচ্চশ্রেনী যারা উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রনকারী আর ফেডারেল সরকারের উপর প্রভুত্বকারী, তাদের প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা ভাবনার ঘোরতর বিরোধীতা করেছি ।”
View this link
1969, at parade to celebrate the Second Independence Anniversary of Biafra; General Efiong is fourth from left; General Ojukwu, Head of State, is fifth from left.

পূর্ব থেকেই অনুমিত “ইগবো” সম্প্রদায়ের (পরবর্তীতে বায়াফ্রান সরকার ) এই মনোভাবের কারনেই ১৯৬৭ সালের জানুয়ারীতে ঘানার আবুরী শহরে বিবাদমান সকল অঞ্চলের সামরিক জান্তা আর সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে একটি শিথিল কনফেডারেশান গড়ে তোলার যে সিদ্ধান্ত হয় তার প্রতি সন্দেহ থেকেই যায় পশ্চিম আর উত্তরাঞ্চলের ।
আর সত্য সত্যিই তা ঘটে যায় ১৯৬৭ সালের ৩০ শে মে মাসে । সংখ্যাগরিষ্ঠ ইগবো সম্প্রদায় ফেডারেশান অব নাইজেরিয়ার পূর্ব-মধ্যাঞ্চল, দক্ষিন-পূর্বাঞ্চল আর নদী অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে “বায়াফ্রা” নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষনা দেন । সাথে সাথেই গ্যাবন, হাইতি, আইভরি কোষ্ট, তাঞ্জানিয়া আর জাম্বিয়া একে স্বীকৃতি দিয়ে বসে ।
বহু রক্তক্ষয়ী কান্ডের পরে সে রাষ্ট্রটি ১৯৭০ সালের ১৫ ই জানুয়ারীতে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে আবার মুছে যায় ।

পূর্ব নাইজেরিয়ার সামরিক গভর্ণর লেঃ কর্ণেল ওজুকু স্বাধীনতা ঘোষনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন – “Now, therefore, I, Lieutenant-Colonel Chukwuemeka Odumegwu Ojukwu, Military Governor of Eastern Nigeria, by virtue of the authority, and pursuant to the principles, recited above, do hereby solemnly proclaim that the territory and region known as and called Eastern Nigeria together with her continental shelf and territorial waters shall henceforth be an independent sovereign state of the name and title of "The Republic of Biafra”.
নতুন রাষ্ট্র বাযাফ্রার প্রথম রাজধানী ঠিক করা হয় “ইনুগু” শহরকে ঘিরে । স্বাধীনতা ঘোষনার পাঁচ মাসের মাথাতেই ফেডারেল বাহিনীর হাতে শহরটি দখল হয়ে যায় । পরে এক এক করে আবা, উমুহাইয়া আর শেষে ওয়েরী শহরে রাজধানী স্থানান্তর করতে হয় তাদের । জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে নাইজেরীয় সরকার শুরু থেকেই বায়াফ্রার উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে ফেলেন । আর সত্যিকারের যুদ্ধ শুরু হয় জুলাইতে । প্রথম দিকে বায়াফ্রানরা যুদ্ধে এগিয়ে থাকলেও নাইজেরীয় বাহিনীর বিমান, স্থল এবং জলপথে আক্রমনের মুখে তাদের রাষ্ট্র সীমানা সংকুচিত হয়ে আসে । ১৯৬৮সালের সেপ্টেম্বরে ফেডারেল বাহিনীর “ফাইনাল অফেনসিভ” আক্রমন বায়াফ্রানরা প্রতিহত করে দিলেও দক্ষিনদিক থেকে আর একটি “সাউদার্ণ অফেনসিভ” ঠেকাতে পারেনি তারা । যুদ্ধের খরচ জোগানোর মূল উৎস তেল ক্ষেত্রগুলি তাদের হাতছাড়া হয়ে গেলে রসদ আর খাদ্যাভাবের মুখে পড়ে যায় শিশু রাষ্ট্রটি । ধারনা করা হয় এর ফলে তীব্র অপুষ্টিতে মারা পড়ে ১ মিলিয়ন মানুষ । খাদ্যের সন্ধানে মানুষ ছুটতে থাকে দিগবিদিক ।

Biafran refugees leaving Owerri; May, 1968.

১৯৬৯ সালের ৩০শে জুন নাইজেরীয় সরকার বায়াফ্রায় পাঠানো রেডক্রসের সব ধরনের সাহায্য বন্ধ করে দেন । দু’সপ্তাহ পরে কেবল মাত্র ঔষধপত্র সহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয় শুধুমাত্র যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইন এলাকাগুলিতে ।
অবস্থা অনুকুল নয় দেখে ওজুকু অক্টোবর মাসে ইউনাইটেড ন্যাশনস এর কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনেন ।কিন্তু ফেডারেল সরকার তাকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করতে বলেন ।ডিসেম্ভরের মধ্যেই এফ-এম-জি’র “ব্লাক স্কর্পিয়ন” নামে ভূষিত জনপ্রিয় কর্ণেল বেঞ্জামিন আদিকুনলের ৩নং মেরিন কমান্ডো ডিভিশান অবশিষ্ট বায়াফ্রাকে দু’ভাগে ভাগ করে কোনঠাসা করে ফেলে ।
১৯৭০ এর ১৫ ই জানুয়ারীতে সারেন্ডার করার মূহুর্তে বায়াফ্রা এভাবে আকারে বড় রকমের সংকুচিত হয়ে পড়ে আর প্রকট খাদ্যাভাব এর কারনে মানুষ না খেয়ে মারা যেতে থাকে । লেঃ কর্ণেল ওজুকু পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী আইভরি কোষ্টে ।যাওয়ার আগে ওজুকু তার চীফ অব ষ্টাফ জেনারেল ফিলিপ ইফিয়ঙ কে "officer administering the government" হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে রেখে যান পিছনে । ১২ই জানুয়ারী’ ১৯৭০ এর ১২ই জানুয়ারী ইফিয়ঙ যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানান এবং এফ-এম-জি’র কাছে আত্মসমর্পন করেন । বায়াফ্রা আবার নাইজেরিয়ার ভুখন্ডে একীভূত হয়ে যায় ।

22 Jan 1970, Lagos, Nigeria --- Nigerian Federal Leader Major General Yakubu Gowon (wearing peak cap with red band) addresses a press conference in Lagos.


16 Jan 1970, Lagos, Nigeria --- Lagos, Nigeria: Three members of an International Team of Observers reporting in Lagos, right to left, Col. Douglas Cairns of Great Britain; Yngye Berlund of Sweden; and Brig. John Drewery of Canada. As part of an eight-man team that visited the war zones, they said they neither saw nor heard of any evidence of genocide in the eastern Region Nigeria, formerly Biafra.

সারা পৃথিবী জুড়ে বায়াফ্রায় সাধারন মানুষের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ ওঠেছিলো সেদিনগুলিতে । মানবতাবাদী সকল শ্রেনী এককন্ঠ হয়ে পড়েছিলেন । তখনকার বাংলাদেশেও বামপন্থী দলগুলো পিছিয়ে ছিলোনা এর সাথে গলা মেলাতে । গণহত্যাকে গণহত্যাই বলতে হয়, বিবেকবান মানুষের কাছে এর কোন ধর্ম নেই, জাত নেই, ভুখন্ড নেই ।

আফ্রিকার বায়াফ্রায় যখোন যুদ্ধ শেষ তখন এশিয়ার দক্ষিন পূবের বাংলাদেশে ঘটে চলেছে এ্কই কাহিনীর পূনরাবৃত্তি । শোষন বজায় রাখা । ধর্মের দোহাই দিয়ে যা হয়েছিলো সেখানে, তা গণহত্যা ।

আমাদের যা শেখার তা হলো, জাতিস্বত্তা নয়, সংস্কৃতির অটুট বন্ধন নয়, ধর্মের অচ্ছেদ্দ্য বেড়াজাল নয় পৃথিবী জুড়ে কেবল স্বার্থই রাজনীতির প্রধান নিয়ামক । বর্ন-গোত্র, ভাষা-ধর্ম যেখানে পরাভূত নিত্যকাল ।
নইলে বায়াফ্রার গণহত্যায় যেখানে খ্রীষ্টান দুনিয়া সোচ্চার হয়েছিলো একসাথে, সেখানে বাংলাদেশের মুসলিম মানুষগুলির হত্যায় একটিও মুসলিম দেশ এগিয়ে আসেনি কেন ?
ইতিহাসবিদরা, গবেষকরা কি বলবেন ?
আপনারাই বা কি ভাবে দেখবেন তাকে ???
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৩২
৩৭টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×