somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অযাচিত নিবেদন !!!!!!!!

২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




নূর মোহাম্মদ নুরুর মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে সহব্লগার “শায়মা”র লেখা পোস্টে
নূর মোহাম্মদ নূরু ভাইয়া আর কখনও ফিরবেনা আমাদের মাঝে " সহব্লগার ঢাবিয়ানের মন্তব্যের সূত্র ধরে একটা নিবেদন করছি সকল ব্লগারদের উদ্দেশ্যে---

নিকট অতীতে সহ ব্লগার নয়ন, আবু হেনা এবং সম্প্রতি নূর মোহাম্মদ নুরুর তিরোধান আমাদের অনেকটা অজান্তেই ঘটে গেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সবাই ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য । সহব্লগার খায়রুল আহসানের একটি মন্তব্যে জানলুম প্রিয় ছড়াকার প্রামানিক্ও নাকি অসুস্থ্য হয়ে এ মূহুর্তে হাসপাতালে। এসব আমাদের অনেকেরই জানা ছিলোনা, জেনেছি তাদের মৃত্যুর পরে। এবং তাদের জন্যে আফসোস করেছি। অবাক করার বিষয় হ’ল, অসুস্থ্যতা আর আর্থিক কষ্টের মাঝে্ও তারা ব্লগে সময় দিয়ে গেছেন। কেন ?

“কেন”টি মনে হয় এই যে, তারা শত অসুস্থ্যতা আর আর্থিক কষ্টের মাঝে্ও একটুখানি প্রানের ছোঁয়া পেতে, শত অপ্রাপ্তির-অতৃপ্তির মাঝে্ও একটুখানি তৃপ্তির খোঁজে ব্লগে আসতেন । লেখা আর মন্তব্যের আদান প্রদানের ভেতর দিয়ে তারা হয়তো নিজেদের দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকতে চাইতেন। ব্লগটাকে ভাবতেন নিজের একটুখানি উঠোন, পার্থিব জীবনের অপূর্ণতা নিয়ে্ও যেখানে নিজেদের মেলে ধরা যায়! নিভু নিভু আয়ুস্কাল জেনে্ও বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় একটুখানি বাতাসের খোঁজে তারা হয়তো ব্লগে আসতেন। নইলে তারা রোগশয্যায় শুয়ে থেকে এখানে আসতেন না।
ব্লগটাকে ভালোবেসে, আপন মনে করেই আসেন। আসার অন্য আর কোন কারন নেই।


মনে হয় আমাদের সকল বয়সের ব্লগাররাই এমন ইচ্ছে নিয়ে আসেন। আসেন তাদের সীমিততাকে অতিক্রম করে হলে্ও নিজেকে প্রকাশ করার অদম্য আকাঙ্খা নিয়ে। উড়তে চান ব্লগের একটুখানি খোলা আকাশে। ডানা মেলে উড়ে চলা পাখিদের ভীড়ে মিশিয়ে দিতে চান নিজেকে্ও!
কিন্তু মাঝেমাঝে কেউ কেউ ঝড়ের মুখে পড়ে যান। তাদের সীমাবদ্ধতাকে, অক্ষমতাকে, অজ্ঞানতাকে কটাক্ষ করে আমরাই কেউ কেউ তাদের সমূলে উৎপাটনে লিপ্ত হয়ে যাই। একবারের জন্যে্ও ভাবিনে, এইটুকু আকাশ কেড়ে নিলে তারা উড়বেন কোথায় !
যেমনটা ঢাবিয়ান লিখেছেন –
“কিছু কথা না লিখে পারছি না কারন ব্লগার নুরু ভাইয়ের শেষ সময়ের ব্লগিংটা উনার জন্য আনন্দদায়ক ছিল না কোন অবস্থাতেই। খুব খারাপ লাগছে যে উনার শেষ সময়ে ব্লগে উনাকে অনেক অপদস্ত হতে হয়েছে কপি পেস্ট ইস্যূ্তে। টুকলিফাই সাংবাদিক, কপি পেস্ট সাংবাদিক , লেখা চোর ইত্যাদি ট্যাগ করে উনাকে যত্রতত্র অপমান করার চেষ্টা হয়েছিল। এগুলো কোন অবস্থাতেই কাম্য ছিল না।“

একবার ভাবুন, নিজেদের সীমাবদ্ধতা, অক্ষমতা, অজ্ঞানতা নিয়ে্ও যারা এখানে আসেন তাদের অপদস্ত করা কি আমাদের প্রাজ্ঞতার পরিচয় ? আমাদের সহনশীলতার পরিচয় ? আমাদের বিবেকবোধের পরিচয় ?

শায়মার এই পোস্টেই মন্তব্য করতে গিয়ে “কাল্পনিক_ভালোবাসা” বলেছেন –“ব্লগ একটি বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনার স্থান, এখানে যে কোন ভুলের ব্যাপারে আলোচনা সমালোচনা হবেই।“ অবশ্যই একটি সুবিবেচনা প্রসূত বক্তব্য। কিন্তু উনি বলেন নি, আলোচনা সমালোচনার মানে এই নয় যে, নোংরামী করতে হবে।
কিন্তু কাল্পনিক_ভালোবাসার কথা মতো আমরা কি বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা করি ? আমরা কি কখন্ও শালীনতায় থেকে আলোচনা সমালোচনা করি ? কেউ কেউ আছেন, তেড়ে আসেন অশোভনীয় শব্দ সহযোগে অপদস্ত করে আনন্দ পেতে। কেউ আসেন দলবলে।

একই পোস্টে “জুন” লিখেছেন –
“অযাচিত আক্রমণ, ছোট করা, চুড়ান্ত রকম অপমান করা যেন ব্লগে স্বাভাবিক একটা ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে যা আমি অনেক মন্তব্যে বলেছি। এই সব কারনে ব্লগে আসতে আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা করে না, অবশ্য আমার আসা না আসায় কারো কিছু যায় আসে না এটা আমি জানি।“
একই কারনে জুনের মতো অনেকেই এখন ব্লগে আসেন না বা আসতে ইচ্ছে করেন না। ফেসবুকের দোহাই দিয়ে আমরা তাদের এই না আসাটাকে জায়েজ করে আত্মতৃপ্তি খুঁজি অহেতুক।
এটা কিছুতেই শুভ কোন্ও লক্ষন নয়। ব্লগের ভাটার টানটির কারন খুঁজুন। কারনটি বুঝতে পারলেই ব্লগ আবার জোয়ারে ভরে যাবে।

আর কতোদিন ব্লগে বিচরণ করতে পারবো, আমরা কেউই তা কিন্তু জানিনে। আমার মতো যারা বয়স্ক ব্লগার আছেন তারা এই আছেন তো এই নেই! নবীনরা্ও যে হঠাৎ রোগেশোকে ধরাশায়ী হবেন না এমন নিশ্চয়তা নেই। প্রয়াত “নয়ন” তার জলন্ত উদাহরণ।
নশ্বর এই পৃথিবীতে আমরা সবাই ক্ষনিকের অতিথি মাত্র! তাহলে কেন আমরা নিজেদের অহেতুক বিবাদে জড়িয়ে বেঁচে থাকাটাকে অসুন্দর করে তুলছি ? পৃথিবীর পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত আমরা ক’জন খানিকটা জিরোনোর জন্যে “রিসোর্ট” এর মতো একটি জায়গা খুঁজে পেয়েছি যার নাম – ব্লগ। “রিসোর্ট”এ আগমনকারীরা কেউ কি একে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়, না কি সৌজন্যতার-বন্ধুত্বের এক একটা মায়াজাল বুনে যে যার পথে চলে যায় ?

আর একটি কথা্ও এর সাথে বলতে চাই সহ ব্লগার খায়রুল আহসান এর একটি মন্তব্যের সূত্রে। খায়রুল আহসান বলেছেন -
“উনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রায় এক মাস আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে গেলেন, অথচ আমরা এতজন ব্লগার ঢাকায় বাস করেও অবহিত না হবার কারণে তার অসুস্থতায় কোন সাহায্যেই আসতে পারলাম না, এটা বড়ই আফসোসের বিষয়!”
অবশ্য খায়রুল আহসান একাই নন, অনেকেই এই আক্ষেপটি করেছেন।
এব্যাপারটি নিয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষের ভাবার কিছু রয়েছে অবশ্যই।

শিরোনামে আমি “ অযাচিত” শব্দটি যোগ করেছি। হয়তো অনেকের কাছেই এটা অযাচিত মনে হতে পারে। হোক, ক্ষতি নেই! কিন্তু আমি অপদস্তদের পক্ষে উপযাচক হয়ে এই যে এতো কথা বললুম, তা একবার আপনার শুদ্ধ হৃদয়ে অনুভব করুন । উত্তরটা পেয়ে যাবেন।

আমার নিবেদনটা এটাই – আর নয়, এখানেই থেমে যাই আমরা। বেশ ক’টি মৃত্যু কি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সেটাই দেখিয়ে যাচ্ছেনা ?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৭
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একুশ বছর

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৩৬



একুশ বছর—
সাত হাজার ছয়শত পঁয়ষট্টি রাত
আমি নির্ঘুম— চোখের নিচে কালো দাগ সাক্ষী।
আজও ভেসে ওঠে তোমার প্রিয় হাসিমুখ
আর কাজল কালো এণাক্ষী।

প্রথম যেদিন আমি, তোমার পানে চেয়েছি
তোমার দুচোখে আমি, আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

"বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী".....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২২

"বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী".....

ভারতীয় উপমহাদেশ প্রায় ২০০ বছর বৃটিশদের অধীনে ছিলো। দীর্ঘ বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে আমরা পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেলাম। আবার দুই যুগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশী হিন্দুরা কেন শক্তভাবে কথা বলতে পারছেনা?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২১


বাংলাদেশের হিন্দুরা বলতে গেলে ৯৫ পার্সেন্ট আম্লিগকে ভোটি দেয় ইহা ধ্রুবসত্য। অনেকেই হয়তো দ্বিমত পোষণ করতে পারে সেটা তার নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারা সবসময়ই ভাবে আম্লিগ তাদের রক্ষাকর্তা কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরে বাধ্য হবে ভারত: ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮





অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে রায় হলে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে দু’দেশের স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে ভুয়া তথ্য ছড়ানোয় শীর্ষে ভারত

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৪




বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়ানো দেশের তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। মাইক্রোসফটের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×