এলাকায় আমরা যারা শিক্ষিত সমাজ বলে পরিচিত ছিলাম তাঁরা ছিলাম সংখ্যায় ৬/৭ জন। যে দেশে নাম দস্তখত করতে পারলেই শিক্ষিত বিবেচনা করা হয় সেদেশে ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় থাকা তরুণরাতো রীতিমত শিক্ষিতের বাপ! বিকাল বেলায় আমরা মোল্লার চা দোকানে বসে আড্ডা দিতাম। দোকানের পিছনে একটা ক্যারামবোর্ডে ছিল এখানে জুনিয়ররা প্রায় সারাক্ষণই খুটখাট শব্দ তুলত।
একদিন তাহের কাকাকে দোকানে ঢুকতে দেখে আরেকজন বলে উঠল- কাগা বাকশালী আইছে, এই পিচ্ছি কাগারে চা দে।
চায়ের প্রস্তাবে ‘বাকশালি’ কাগা দমবার পাত্র নন। তিনি বললেন- খালি বাকশালিদের দোষ, ভাঙ্গা সুটকেস থেকে কোকো জাহাজ, ডান্ডি ডাইং আর কোটি কোটি টাকা কেমনে বাহির হয় সেটা বুঝাই ক শালার বেটা।
মজার খুনসুটিতে যাকে শালার বেটা সম্বোধন করা হয়েছে সে কি একটা জবাব দিতে যাচ্ছে এমন সময় হুড়মুড় করে ৮/১০ জনের একটা দল দোকানে ঢুকে পড়ল। ড্রজন দেড়েক ক্রিমিনালকে একসাথে পেয়ে আগুন্তকদের চোখ খুশিতে চক চক করছে। পোশাক দেখে আমরা অনুমান করে ফেললাম এরা কারা? দেখলাম কোন প্রকার দেখাদেখি বা অনুমানে না গিয়ে ক্যারাম বোর্ডের দু;খেলোয়াড় পেছনের ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে জানমারা দৌড় দিয়েছে। ধরা খেয়ে গেছি এমন একটা ভাব আর চেহারায় আতংকের ছাপ নিয়ে আমরা সকলে উঠে দাঁড়ালাম।
পাঠক অনুমান করে ফেলেছেন যে, আমরা রেপিড একশন ব্যাটিলিয়ান তথা র্যা বের পাল্লায় পড়েছিলাম। অনুমান ভুল। আমরা তাবলীগ ওয়ালার খপ্পরে পড়েছিলাম।
লাদেনের মত দাড়িওয়ালাজন দলের আমির। ইনি সকলের সাথে মোসাফাহা করলেন।মোসাফাহা করার জন্য আমার হাতটা ধরার পরে কোন এক বিচিত্র কারনে তিনি আমার হাত ছাড়ার কথা ভুলে গেলেন! দুনিয়া আখেরাত,কবর আজাব আর তাবলীগের পথই যে দ্বীনের সঠিক পথ এই নিয়ে ঝাড়া বিশ মিনিট বক্তৃতা দিলেন।
সব শেষে ‘বাদ মাগরেব মসজিদে ঈমান ও আমলের আলোচনা হবে, আমরা সবাই হাজির হই বহুত ফায়দা হবে।‘’ বলে তিনি আমাদের মসজিদে আহবান করলেন। দলের ৩/৪ জন কাপড় ঠিক নাই বলে কেটে পড়ল।
‘কাপড় ঠিক নাই’ বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকেনি, এই নিয়ে বেশি না ভেবে কয়েকজন সহ আমি দলের পিছু নিলাম।
মাস দুয়েক আগের ঘটনা। সকালে গ্রামের একটা ছেলে পানিতে পড়ে মারা গেছে।বিকাল পর্যন্ত তার জানাজা হয়নি।হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নাই। কারন ছেলেটার বাবা নামাজ পড়েনা। বেনামাজির ছেলেকে দাফন করে ইমাম আর সমাজ পতিরা দোজখের টিকেট কনফার্ম করতে চাচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় থানা থেকে পুলিশ গিয়ে ইমাম আর সমাজপতিদের দাবড়ানী দিয়ে লাশ দাফন করায়।
এসআই মানুষ, ডিউটি করতে গেছস, তোর কি ঠ্যাকা পড়ছে যে গনজাগরনী সংঘের লিটনেরে খোঁজ করতে হবে? গ্রামের মানুষ দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে ওস্তাদ।বাপজান ছিলেন পাঁচ ওয়াক্ত জামাতের মুসল্লি,তাই অল্পের জন্য ‘মুরতাদ’ হওয়া থেকে রক্ষা পেলাম।(নাস্তিক ট্যাগ তখনো চালু হয়নি)
তবে মুরুব্বিয়ানে কেরাম আমার ‘মুরতাদ’ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে পুর্ন সজাগ ছিলেন। এই ক্ষনে আমার ঈমানী চেতনা জাগ্রত করার একটা মোক্ষম সুযোগ পেয়ে তারা বাপজানকে পরামর্শ দিয়ে আমাকে এই তাবলীগ জমাতের সাথীভাই করে দিলেন।
(বাকি কাহিনী অন্য কোন দিন)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৩