আমাকে বাসা পাহারায় রেখে মা মেয়ে গেছে টিকা কেন্দ্রে। দেখলাম অনেকগুলো কাপড় চেয়ারে আলু থালু পড়ে আছে। ভাবলাম বসেইতো আছি,কাপড়গুলো ইস্ত্রি করে ফেলি। অনভ্যস্ত হাতে, কোমর বাহু ব্যাথা করে সবগুলো কাপড় ইস্ত্রি করে ওয়ারড্রোবে তুলে রাখলাম।
আকামের ধাড়ি,কোন কাজ পারিনা ইত্যাকার কথা হররোজ শুনি, আজ বাসায় এসে দেখো আমি কি চিজ!
সামনের রুমে বসে টিভি দেখছি। কিছুক্ষণ পরে মা মেয়ের আগমন। আরো কিছুক্ষণ পরে গিন্নী এ রুম ও রুম কি যেন খোজাখুজি করছে। কানে এলো মেয়েকে বলছে - চেয়ারে কিছু কাপড় ছিল গেল কই?
"যাবে আর কই? সব ইস্ত্রি করে ওয়ারড্রোবে তুলে রেখেছি" বলার জন্য সিনা টান টান করে দিগবিজয়ী ভাব নিয়ে সবে উঠে দাঁড়িয়েছি। আমি কিছু বলার আগেই গিন্নী এসে জিজ্ঞেস করল- চেয়ারে কিছু কাপড় ছিল, ধোয়ার জন্য রেখেছিলাম, তুমি দেখেছো?
আমি ধপাস করে আবার সোফায় বসে পড়লাম!
আজও আমি বাসা পাহারায়। সবাই গেছে গাইড না কি সাথে আরও টুকটাক কি যেন কিনবে।
কিচেনে দেখি কয়েকটা এঁটো প্লেট পড়ে আছে। ঝকঝকে করে ধুয়ে ফেললাম। নজর গেল আধোয়া একটা কড়াইয়ের উপর। ময়লায় কালো কুচকুচে হয়ে আছে। দিলাম ডলা। বউ যে এত খবিশ এটা আমার জানা ছিল না। কয় মাস ধোয়নি আল্লাহ মালুম!
কিছুতেই কালি উঠছেনা। বউ দেখি এরকম কড়াই ভিম টিম কি সব লাগিয়ে ঝকঝকে করে ফেলে। আমিও কম কিসে? ভিম, ছাই সব এস্তেমাল করলাম। দেখি যেই কালি সেই! আমার ধৈর্য আবার রবার্ট ব্রুস সাহেবের কাছাকাছি। মনে একটা জেদও চেপে বসেছে। গিন্নী পারলে আমি কেন পারবেনা!
কয়েকদিন আগে বাসা রঙ করা হয়েছে। রঙ মিস্ত্রিরা একটা ঝামা পাথর রেখে গেছে। খুঁজে পেতে ওটা বের করে দিলাম ডলা। ঘেমে নেয়ে একাকার! কড়াই মাজা যে এত কষ্টের আমার জানা ছিল না। ৪৫ মিনিটের মাথায় কড়াইটা একেবারে ঝকঝকে রূপো!
এক সময় তিনি বাসায় এলেন। কিছুক্ষণ পরে কিচেনে ঢুকেই চিল চিৎকার! হায় হায় রে! কি সর্বনাশ করেছে রে! বানিজ্য মেলা থেকে কেনা আমার শখের নন স্টিকি ফ্রাইপ্যান!
শার্ট গায়ে দেয়ার মত সময়ক্ষেপণ রিস্ক নিলাম না, বগলে নিয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম!
'যঃ পলায়তি সঃ জীবতী'।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:১৯