somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যঃ এটা আমি নাকি মরহুম সালমান শাহ!

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আধা ঘন্টা ধরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি,বাস দেখলেই হাত উঠাতে উঠাতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। এ কারণেই আমি বড় খালার বাড়ী যাইনা। হাইওয়ের পাশে বাড়ি,আশেপাশে কোন বাস স্টপ নাই। রাস্তার ধারে ট্রাফিক পুলিশের মতো হাত উঠিয়ে দাড়িয়ে থাকতে হয়।আমি তালেবর নই যে হাত উঠালে ইন্টারদিস্টিক গাড়ী গুলো দাড়িয়ে যাবে।

খেয়াল করলাম, আমি দাড়ানোর জন্য গাড়িগুলোকে সিগনাল দিলেই গাড়িগুলো স্পিড বাড়িয়ে দেয়। শেষটাতো এমন স্পিড তুলেছে, বাতাসের ধাক্কায় পাশের ঝোপে ঢুকে গেছিলাম! ঝোপ থেকে উঠে সবে পেন্টের ধুলো ঝাড়ছি এমন সময় দেখি একটা বাস একদম আমার সামনে ব্রেক কষে দাড়িয়ে পড়েছে। পড়িমরি করে গাড়িতে উঠে এক ভদ্রলোকের পাশে আসন নিলাম।

গাড়ী ছাড়তে না ছাড়তেই পাশের সীটের একটা সুন্দরী মেয়ে বলে উঠলো "ও মাই গড!আপনি এতো সুন্দর কেন? আমার গালে হাত দিয়ে বলল আপনার বডি এতো সুন্দর কেন! নিশ্চই জিম করেন?

আমার গায়ের রঙ হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।রঙের কারণেই আব্বা-আম্মা ডাকে কালাচাঁন। খালাতোবোন কালু ডাকাত বলে ক্ষ্যাপায়। বাসে এই মেয়ে আমার মধ্যে এমন কি দেখে সুন্দর বলল বুঝতে পারলাম না। মনে মনে লজ্জা পাচ্ছিলাম।

একটুপর মেয়েটা আমার পাশে বসা ছেলেটাকে বলল "এই যে ভাই আপনি উঠুন, আমি এই ভাইয়ের পাশে বসতে চাই।আপনি আমার সীটে বসুন"।
দেখলাম ছেলেটা সুড়সুড় করে পাশের সারির মেয়েটার সীটে গিয়ে বসল। মেয়েটা বসল আমার পাশে। খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটা বেশ সুন্দর। কয়েকদিন আগে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে একটা ফেসওয়াশ কিনেছিলাম। বিজ্ঞাপনে বলা ছিল এই ফেসওয়াশ চার সপ্তাহ মাখলে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও চকচকে। কিন্তু দুই সপ্তাহেই যে হাতে হাতে ফল পাবো এটা ভাবিনি।

মেয়েটা বলল " আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে"?
লোকাল বাসে সুন্দরী মেয়ে পাশে বসলে সব ছেলেরাই সিঙ্গেল হয়ে যায়। বললাম "জ্বীনা আমি সিঙ্গেল"। মেয়েটা এবার সরাসরি বলল "প্রেম করবেন আমার সাথে"? মেয়েটার কথা শুনেই মনের মধ্যে জেমস ভাইয়ের " ঝাকানাকা দেহ দোলানা" গানটা বেজে উঠলো।

সারাজীবন গার্লস স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে একটা মেয়ে পটাতে পারিনি। যে মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি সেই মেয়ে বলেছে আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে।
খালাতো বোন মলিটা বড়ই ঠোঁটকাটা, সেতো বলেই দিয়েছে আলকাতরা আর আমার কালারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। ইসস যদি পাশে বসা সুন্দরী মেয়েটার কথাটা ভিডিও করে মলিকে দেখাতে পারতাম।

মেয়েটাকে উত্তর দিতে যাবো এর মধ্যে আরেকটা মেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আমার পাশে বসা মেয়েটিকে বলল "বাসে বসা সুন্দর ছেলেদের দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছে করে না? এই ছেলেকে আমার পছন্দ হয়েছে। তুই অন্য কাউকে দেখ"। দেখলাম আমার পাশে বসা মেয়েটা উঠে চলে গেলো।

এবার যে মেয়েটা এলো সে আরো সুন্দরী । আমি তাড়াতাড়ি ফোন বের করে সামনের ক্যামেরায় নিজের চেহারা দেখে নিলাম।সত্যি এটা আমি নাকি মরহুম সালমান শাহ!
নিজেকে রেস থ্রির সালমান খান মনে হচ্ছিল,শুধু চশমাটাই নাই। বাসায় ভুলে সানগ্লাস ফেলে এসেছি বলে নিজের উপর রাগ হচ্ছিল। নতুন মেয়েটা এবার বলল "ওয়াও, আপনি আমার দেখা সেরা পুরুষ । প্রেম করবেন আমার সাথে"? মেয়েটার কথা শুনে বুকের মধ্যে ধপাস ধপাস শুরু হয়ে গেলো। গর্বে বুক ফুলে
উঠলো। মনে মনে সেই ফেসওয়াশ কোম্পানি কে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। মেয়েটাকে উত্তর দিতে যাবো এমন সময় দেখি আরো তিনটা মেয়ে এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।ওরা একসাথে বলে উঠলো " এই ছেলে প্রেম করবে আমার সাথে?"। এবার আমার
পাশের বসা মেয়েটা উঠে ওদের সাথে মারামারি শুরু
করলো।

আহা! সুন্দরী মেয়েরা আমাকে পাবার জন্য আজ মারামারি করে। এই দিন যে আসবে কল্পনাও করিনি। কিন্তু এ কি!চারজন মেয়ে আমার চার হাত পা ধরে বাসের মধ্যে টানাটানি শুরু করলো। একজন বলে এই ছেলে আমার, আরেকজন বলে না না এই ছেলে আমার।ওদের টানাটানি তে আমার ফেনী রাজাজীর দিঘির পাড় থেকে কেনা নতুন জামা ফালা ফালা হয়ে গেছে। প্যান্ট ছিঁড়া ছিঁড়া অবস্থা। নিজেকে সালমান খান ভাবা ছেড়ে গনপিটুনিতে মর মর ধৃত পকেটমার ভাবতে শুরু করলাম।

প্রথম যে জন উঠে চলে গেছিল সেও ছুটে এল। দেখি সে হাত পায়ের শেয়ার পায়নি বলে শরিরের মাঝ বরাবর কিসের তালাশে হাতাহাতি শুরু করে দিয়েছে। সেকেন্ড কয় পর তার অভিব্যক্তি দেখে বুঝলাম, সে তার মঞ্জিলে মুকসুদকে ধরে ফেলেছে। হাত পায়ের আশা অনেক আগেই ত্যাগ দিয়েছি।কিন্তু পঞ্চমির হাত থেকে আমার বংশের প্রদিপের সলতে বাচাতেই হবে!

হঠাৎ আমার মাথায় ৬০ ওয়াটের বালব জ্বলে উঠলো! আরে! আমিতো দুঃস্বপ্ন দেখছি। এরকম পরিস্থিতিতে খিচে চিৎকার দিলে তাতক্ষনিক ফল মিলে, ঘুম ছুটে যায়,দুঃস্বপ্নও শেষ!
দিলাম খিচে চিৎকার! সাথে সাথে ঘুম ছুটে গেল,আমার নয় হেলপারের। ব্যাটাকে গাড়ি ছাড়ার সাথে সাথে ঘুমে তলিয়ে যেতে দেখেছিলাম। এইক্ষনে চিৎকার শুনে হেলপার একটা লাঠি নিয়ে দৌড়ে এল,ওদের যায়গা বেযায়গায় কয়েক ঘা বসিয়ে বলল "ঐ শিগগির একে ছেড়ে দে নইলে কারেন্টের শক দিবো। শকের কথা শুনে "সাথে সাথে পাচটা মেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলে গাড়ির মধ্যে ধপাস করে পড়ে গেলাম।

হেলপার বলল " ঐ মিয়া আপনি কখন উঠলেন বাসে? পুরাটা পথ গেট লক আইলাম! ও বুঝছি, একটু পেসাব করতে নামছিলাম তখনই উইঠ্যা পড়ছেন? তাড়াতাড়ি নামেন ভাই, এই বাস পাবনা যাবে। বাসের মধ্যে যারা আছে ওদেরকে লাংগলকোট মানসিক হাস্পাতাল থেকে পাবনার হেমায়েতপুর মানসিক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। হেলপারের কথা শুনে সাথে মধ্যম অংশের ব্যাথায় আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি পাবনা মানসিক হাসপাতালে একটা বিশেষ চেয়ারে বসে আছি,আমাকে ইলেক্টিক শক দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩৮
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×