somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মাদ্রাসা জীবন- শেষ পর্ব

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময়গুলো ফুরিয়ে যাচ্ছিল হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো। দেখতে দেখতে নবম শ্রেণিরও ক্লাশ শুরু হয়ে গেল। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা সব মিলিয়ে একটা ফুটবল টিমের সমান। ১১ জন! কেউ চলে গেল বিদেশে কারো হয়ে গেল সংসার। আটজন ছেলে আর তিনজন মেয়ে! এর মধ্যে আবার ভাগ হয়ে যাবে দুই গ্রুপে। বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগ। বিজ্ঞান বিভাগে স্কুলের মতো পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান থাকলেও বাংলা আর ইংরেজী ১০০ নাম্বার করে। সাথে আছে, কোরআন (সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান), হাদীস (মেশকাত শরীফ), আরবী ১ম পত্র (গদ্য ও পদ্য), আরবী ২য় পত্র (নাহু ও সরফ), ফিকহ ও উসূলুল ফিকহ ( স্কুলের ইসলাম শিক্ষার মত) এবং সাধারন গণিত। বিজ্ঞান বিভাগের সমস্যা ছিল জীববিজ্ঞান আর উচ্চতর গণিত একত্রে নেয়া যেত না। মানবিক বিভাগে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের পরিবর্তে ইসলামের ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান ও কৃষিশিক্ষা। বাকি বিষয় একই। বিজ্ঞান বিভাগে আমি আর হাফেজ দুই ছাত্র। আমাদের ব্যাচ নিয়ে স্যারদের দু:শ্চিন্তা বেশি ছিল। আমাকে ছাড়া আর কাউকে দিয়েই ভরসা পাচ্ছিলেন না। আমার চিন্তা ছিল অন্য জায়গায়। বিজ্ঞান বিভাগের একজন মাত্র ম্যাডাম দিয়ে সব ক্লাশ করানো হতো। সেই ম্যডামও আবার উদ্ভিদ বিজ্ঞানের। আশেপাশে কোন বিজ্ঞানের শিক্ষকও ছিল না সে সময়। কোন সমস্যায় পড়লে গাইড বই ছাড়া আর কেউ বুঝিয়ে দেয়ার মতো ছিল না।

মাদ্রাসার একটা নিয়ম ছিল যে, প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে স্পেশাল কেয়ার নেয়ার জন্য হোস্টেলে রাখা হতো। আমাদেরকেও হোস্টেলে উঠার জন্য বলছেন স্যারেরা। প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষার পর আমরা আটজন মিলে হোস্টেলে উঠেছিলাম। তখনো হোস্টেল রুমটি টিনের ঘর এবং ফ্লোরটিও কাঁচা ছিল। হোস্টেলে উঠার পর দেখলাম বেড়ার নিচ দিয়ে পাশের বাসার মুরগি এসে খাবার নষ্ট করে প্রায় প্রায়ই। স্যারদের জানানো হলেও ঠিক করে দিচ্ছে না। আমরা ছাত্রারা মিলে পাশের সংরক্ষিত শালবন থেকে কুচি পাথর এনে নিজেরাই ফ্লোর মেরামত করে নিয়েছিলাম। রান্নার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে শালবনের কাঠ কেটে আনতাম। প্রতি সপ্তাহে ৫ কেজি চাল আর ৩০০ টাকা করে উঠাতাম হোস্টেল মেস চালানোর জন্য। কিন্তু তবুও বেশিদিন সেই ম্যাস টিকেনি।

ছাত্ররা হোস্টেলে এসে এখন আগের চেয়ে আরো বেশি ফাঁকি দেয়। পাশের বাসার মুরগি ধরে ধরে খায়। আরো বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে স্যারদের কাছে। আমি একা পরেছিলাম ফান্দে। কিছু বলতেও পারছিলাম না, সইতেও পারছিলাম না। অবশেষে হোস্টেল থেকে চলে আসি।

আমার টেস্ট পরীক্ষার সময় দাদা-দাদী দুই সপ্তাহ আগে পরে মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে টেস্ট পরীক্ষা মন মত হল না। তারপরও টেস্টে এ+ পেয়েছিলাম। বাকী সবার পাশ নিয়েই টানাটানি।

আমার ছোট আংকেল তখন উপজেলা শহরে থাকতেন। আংকেল আমাকে এসএসসি পরীক্ষার দুইমাস তার কাছে নিয়ে রাখলেন। ২০০৮ সালে ফেব্রুয়ারীতে পরীক্ষা হয়েছিল। খুবই ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। রেজাল্ট বের হবার পর দেখলাম টেব্যুলেশন শিটে আমি এ+ পেয়েছি। মোট পাশ করেছি ৮ জন। ছেলে ১ জন আর মেয়ে দুই জন ফেল। বাকীরা কোনমতে পাশ। রেজাল্ট বলার মতো না। গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হবার পর সেবারই প্রথম এ+ আসে আমাদের মাদ্রাসায়। রেজাল্টের পর পরই আমার খুবই জ্বর হয়েছিলো। পনের দিনের মতো জ্বর। কিছুতেই সেরে উঠছিলাম না। ১৫ দিন পর রেজাল্ট শিট বের করে দেখি আমার সব বিষয়েই প্লাস, মানে গোল্ডেন। আমি তো খুশিতে ঘামতে ছিলাম! আমার জ্বর যেন তখনই সেরে গেল। স্যারদের দেখালাম আমার গোল্ডেন এ+ রেজাল্ট। তারাও খুব খুশি। কারন স্যারেরা মনে করেছিলেন আমি শুধু এ+ পেয়েছি। তার দুইদিন পর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে অভিনন্দন পত্র পেলাম পুরো উপজেলায় মাদ্রাসা বিভাগে ১ম হওয়ার জন্য। কারন মাদ্রাসা বিভাগে আর কেউই গোল্ডেন এ+ পায়নি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ও সনদ দিয়েছিলেন। স্যারেরাই আমাকে প্রাইভেট কার ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিলেন সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে।

আলিম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম জেলা সদর মাদ্রাসায়। আলিম শ্রেণিতে প্রায় ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। সেখানও নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে পেরেছিলাম। মাদ্রাসা বোর্ডের বৃত্তিসহ গোল্ডেন এ+ পেয়েছিলাম। সেই বৃত্তির জন্য অনার্স লেভেলে আমাকে কোন ক্রেডিট ফিও দিতে হয়নি। অনার্সে ভর্তি যুদ্ধটা আমার জন্য মোটেই সহজ ছিলো না। আলিম পাশ করার পর ভর্তি কোচিং করার জন্য আমাকে সিলেট যেতে হয়েছিলো। প্রায় ছয়মাস সিলেটে লজিং থেকে কোচিং করেছি। সিলেটে থাকার সেই দিনগুলো নিয়ে লিখবো পরবর্তী কোন লেখায়।

এত দীর্ঘ পোস্টটি পড়ার অনেক ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩২
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×