১।
বেশ কয়েক বছর আগের কাহিনী গ্রীন লাইনের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে কক্সবাজার থেকে ঢাকা আসছি । মন আমার ফুরফুরা কারন অফ সিজন হওয়াতে সৈকতে ভিড় ভাট্টা কম তাই মনের মত করে উপভোগ করেছি চার দিন। একদম দরজার সাথে জানালার পাশে প্রিয় সিটে বসেছি । গতরাতে বৃষ্টি হয়েছিল চারিদিকে সবুজ সবুজ ভাব । জানালা দিয়ে দেখছি সেই অপরূপ প্রকৃতিকে । এমন সময় পাশের সিট থেকে একটি বাচ্চা ছেলে তীক্ষ গলায় কি একটা প্রশ্ন করলো তার মাকে ? মা খুশী হয়ে জবাব দিলো ,এবার বাবাকে আরেকটি প্রশ্ন। উনিও উত্তর দিলেন এবং সবার দিকে গর্বের সাথে তাকালেন । আমরাও তার বুদ্ধিমত্তায় চমকৃত হোলাম । এরপর শুরু হলো হাই ফ্রিকোয়েন্সীতে তার নন স্টপ প্রশ্ন আর তার বাবা মায়ের উত্তর। আমি দু একবার করুন ভাবে বুদ্ধিমান বাচ্চাটির বাবা মায়ের দিকে তাকিয়েছি, তারা ততটা গর্বের সাথে আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিল। সারা বাসের মানুষ এক পর্যায়ে বিরক্ত কিন্ত তাদের কোন হেলদোল নেই। এক পর্যায়ে মনে হলো নেমে যাই কিন্ত পরদিন ছেলের ক্লাশ । চিটাগাং পর্যন্ত পৌছাতে পৌছাতে আমার মাথা ভো ভো করা শুরু হলো। সেই ছেলের কৌতুহলী প্রশ্ন শেষ হলো ১১ ঘন্টা পর কলাবাগান বাস স্ট্যান্ডে এসে। আমি বাস থেকে নেমে বমি করে দিয়েছিলাম । বর্তমানে নিডোর এডটা দেখে আমার সেদিনের স্মৃতি মনে পরে আর একই অনুভূতি হয়। অনেক বাচ্চারাই তো চুপচাপ থাকে তারা কি নির্বোধ ??
২। চায়না মার্কেট থেকে বাসায় ফিরছি থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ৮ নম্বর বাসে( দ্রুতগতিতে চালানোর জন্য কুখ্যাত)। সেই প্রিয় সীটে বসা অর্থাৎ সিড়ি দিয়ে উঠতেই হাতের ডানদিকের প্রথম সীট । পরের স্টপেজে এক ভদ্রলোক উঠে আমার পাশে বসলো । তাকে আমি জানালার পাশটা ছেড়ে দিলাম । বাসের গতি ধীর হয়ে আসলো, বুঝলাম পরবর্তী গন্তব্যের কাছাকাছি এসেছি। হঠাৎ পাশের লোকটি ধরমরিয়ে উঠে দাড়ালো আর আমাকে প্রচন্ড ভাবে হাতের ইশারা করতে লাগলো আর নিজস্ব ভাষায় কি জানি বলছিল । তখনো বাস থামে নাই। বাসটা ততক্ষনে থামলো আর লোকটিও মহা উত্তেজিত হয়ে আমাকে ডাকছে দেখে ভাবছি "তুমি নামবা নামো, আমাকে নামতে বলছো কেনো" !! এমন সময় কনডাক্টার মহিলা আমার হাত ধরে হেচকা টানে সিট থেকে উঠিয়ে তার দিকে টেনে নিলো । আমিতো চলন্ত বাসের মধ্যে টলছি । এমন অভিজ্ঞতা আমার জীবনে হয় নাই । ভাবছি এটা কি হচ্ছে ! বাসের দুই তিন সীট পেছনে কিছু শ্বেতাংগ ট্যুরিষ্ট বসা তার মাঝে সবচেয়ে স্বাস্থ্যবতী যিনি একাই তিন সীটে বসার উপযুক্ত, তিনি হাচোড় পাচোড় করে উঠে তার সীটে আমাকে বসতে বলছে । এদিকে আরো দুজন থাই মেয়ে উঠে দাড়িয়েছে সীট ছেড়ে । বাসের মধ্যে এক হুলুস্থুল অবস্থা । আমি শ্বেতাংগীনিকে বসতে বলে অল্প বয়সী একটি মেয়ের সীটে বসে দম নিয়ে তাকিয়ে দেখি আমার সীটে এক ক্ষীনকায় ছোটখাটো সৌম্য দর্শন বৃদ্ধ বৌদ্ধ ভিক্ষু বসে আছে। বাসের মধ্যে যে এত হুলুস্থুল সেদিকে তার দৃষ্টি নেই, তার দৃষ্টি জানালার বাইরে। কিন্ত মুখ দেখে মনে হলো তার উপস্থিতি নিয়ে এই ঘটনায় সে কুন্ঠিত। তাদের জন্য যে ঐ সীট রিজার্ভ থাকে আমি জানতাম না। এবং কোন মহিলা তাকে বা তার পরনের কাপড়টুকুও স্পর্শ করতে পারে না । কিন্ত তার সেই শান্ত স্নিগ্ধ মহিমান্বিত মুখটি দেখে আমার মনে হলো তার পাশে বসে একটু গল্প করি ।
৩।
মানিকগঞ্জ থেকে বাসে আসবো ঢাকায় । কিন্ত তার আগে বাস স্টপেজে আসতে আসতে চকচকে এক মিনিবাস ছেড়ে দিলো । রিকশাওয়ালাকে বকাবকি করলাম টাকা ভাংতি দিতে দেরী করলো বলে । পরের বাসে উঠেছি, কিছুদুর চলার পর তাকিয়ে দেখি সামনে একটি জটলা। পাশ দিয়ে যেতেই দেখি রাস্তার পাশে মাটির উপর সারি সারি লাশ সাজানো আর সেই মিনিবাসটি গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে দুমরে মুচড়ে আছে ।
চলবে
ছবি ঃ নেটের সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:১৬