somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমের পথে এক গুনাহগারের পবিত্র ওমরাহ যাত্রা

২৮ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মদীনার মসজিদে নববীর মাঝে এই স্থানটির নাম রিয়াজুল জান্নাত অর্থাৎ দুনিয়ার বুকে এক টুকরো বেহেশত । সেই রিয়াজুল জান্নাতের গম্বুজের মাঝে অসাধারন কারুকাজ করা ঝাড় লন্ঠন
বেশ কয়েক বছর আগের কথা থাইল্যান্ড হয়ে লাওস ঘুরে এসে দেবরের মুখোমুখি হোলাম। সে আমারই ক্লাশমেট, লন্ডন থেকে পোস্ট ডক্টরেট করা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, হাভেভাবে বেশ ভারিক্কী। মুখ তুলে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো "কই গিয়েছিলে"। আমি জানালাম, সাথে সাথে তার বড় ভাইয়ের সামনেই আমাকে ধমক দিয়ে বল্লো "ঐ দিকে ক্যানো ! পশ্চিমে যাও, পশ্চিমে যাও "। প্রসঙ্গত সে খুব ধার্মি্‌ক, তবে গোড়া নয়। তার ধমক খাওয়ার পর থেকেই আমি অনেকবার পশ্চিমে যেতে চেয়েছি কিন্ত সুযোগ হয় নি। একটা কথাই প্রচলিত আছে যে আ;ল্লাহ না চাইলে তুমি হাজার চেষ্টা করেও তার ঘরে যেতে পারবে না ।


রাতের আধারে মসজিদে নববী
শেষ পর্যন্ত সব বাধা দূর করে আমরা ১৪ জনের এক দল এই ফেব্রুয়ারীতে পবিত্র ওমরাহর উদ্দেশ্যে মক্কার পথে রওনা দেই । তবে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল মদীনা। কারন প্রথমে মক্কা গেলে আমাদের ঢাকা থেকে নিয়ত করে প্লেনে উঠতে হতো আর আমাদের পুরুষ সংগীদের ইহরাম বাধতে হতো। তাই মনে হয় প্রথম মদীনায় যাই। মদীনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে এক মসজিদে থেমে আমরা দু রাকাত নামাজ পড়ে ওমরাহর নিয়ত করি। ছেলেরা ইহরাম পরেই বাসে উঠেছিল।

এই আমাদের প্লেন দুবাই এর পথে, আমরা এখন হরমুজ প্রনালী অতিক্রম করছি
সকালে এমিরেটস এর ফ্লাইটে রওনা হোলাম, দুবাই ট্রানজিট, কিন্ত সেখানে পৌছে গেট খুজে জায়গা মত পৌছাতেই শুনি বোর্ডিং এর জন্য ডাক। প্রায় দুই ঘন্টার উপর ফ্লাই করার পর সৌদী আরব সময় বিকালে মদীনায় পৌছাই। এখানে একটা জিনিস দেখে খুব অবাক হয়েছি সেটা হলো ইমিগ্রেশনের সমস্ত অফিসাররা মহিলা। আমার স্বামীর আঙ্গুলের ছাপ উঠছিল না বলে তাকে এক নম্বর কাউন্টারে পাঠালো কারন সেখানে একমাত্র পুরুষ অফিসার বসে আছে। সেই ভদ্রলোক তার আঙ্গুল ধরে মুচড়ে টুচরে ছাপ বের করলো কারন সেদেশে মহিলারা তো পুরুষকে টাচ করবে না । সব ঝামেলা চুকিয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে লাগেজ নিয়ে আরেক প্রস্থ চেক করে বাইরে বের হয়ে আসলাম । লোকজন, ভীড়ভাট্টা, কম, বেশিরভাগই আসে জেদ্দা এয়ারপোর্ট হয়ে মক্কায়।

আলো ঝলমল জেদ্দা এয়ারপোর্ট
যাক সারাদিন জার্নি করে ক্লান্ত শ্রান্ত আমাদের জন্য রিজার্ভ করা বাসে করে হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মদীনা সময় রাত ১০ টা। রুম পেতে পেতে এগারোটা। সেদিন আর কোনদিকে না গিয়ে সোজা বিছানায়। ঘুমের অতল তলে। ভোরে আমাদের হোটেলের একেবারে কাছেই মসজিদে নববীর সামনে এসে দাড়ালাম, সামনের দিকে ছাতার মত চাদোয়া যেন রোদ না লাগে মুসুল্লীদের। সুউচ্চ মিনার সাথে সবুজ গম্বুজ যার নীচেই রসুল (সাঃ) এর রওজা মোবারক যার সাথে আছেন তার প্রিয় সাহাবী হযরত আবু বকর রা: আর ওমর (রাঃ)।

মসজিদে নববীর সামনে ছাতার মত অপরূপ কারুকাজ করা চাদোয়া যা চিন্তা করেছিলেন কিং আবদুল্লা বিন আবদুল আজিজ
চোখের সামনে এইসব দেখে অপার্থিব এক ভালো লাগায় মনটা আপ্লুত হয়ে উঠলো। মনে পরলো ওয়াইজ কুরুনীকে নিয়ে গাওয়া ট্রেনের সেই অন্ধ ভিক্ষুকের গানের কলিগুলো। আলী নবীজির মৃত্যু সংবাদ নিয়ে তার কাছে যেয়েও যখন বলতে পারছি্লেন না, তখন ওয়াইজ কুরুনি তাকে জিজ্ঞেস করেছিল "কোথা হইতে আসছো তুমি কোথায় ঠিকানা"! আলী (রা: ) উত্তর দিয়েছিলেন, "মদীনা শহরে ঘর, শশুর আমার পয়গম্বর, গায়ের জামা পাঠাইয়াছে আপনারাই কারন"। ওয়াইজ কুরুনী বুঝতে পারলেন এ কথার রহস্য কি। কথিত আছে এরপর মুহুর্তেই তিনি মারা যান।

মদীনার মসজিদে নববীর ওসমান বিন আফফান গেট
ছল ছল চোখ নিয়ে নামাজের জন্য মসজিদের দিকে এগিয়ে গেলাম। কত গুনাহগার আমি, নবীজির সাফায়াত কি আমি পাবো! আল্লার রহমত কি আমার উপর বর্ষিত হবে! আস্তে আস্তে আমাদের দলের ছয় জন মহিলা সহ মসজিদের ভেতরে বেছানো নরম সবুজ চোখ জুড়ানো কার্পেটের উপর জায়নামাজে গিয়ে বসি। বিশাল মসজিদ অনেক মানুষ কিন্ত কোন শোরগোল নেই, নেই কোন আওয়াজ। সাদা উচু উচু স্তম্ভ, কারুকার্য্যময় কাঠের বেড়া দিয়ে মেয়েদের নামাজের এলাকাটি আলাদা করা। মসজিদে সবার জায়গা হয় না তারা বাইরে কার্পেটের উপর বসেছে নামাজের উদ্দেশ্যে।

মসজিদের ভেতরে পথের দু পাশে সারি সারি সাদা সাদা ড্রামে জমজম কুয়ার পানি আর গ্লাস। কেউ খাচ্ছে কেউ বোতল ভরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই একসাথে বসতে না পেরে যে যার মত বসে পরি ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য।

চলবে
সব ছবি আমার তোলা তবে বেশি বেশি ছবি বা নিজেদের ছবি তোলার মত মন ছিল না

পশ্চিমের পথে এক গুনাহগারের পবিত্র ওমরাহ যাত্রা(২য় পর্ব)

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:৪০
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×