আবার আসছে রমজান- আবার ফিরে আসছে পেট ঠেসে খাওয়ার আনন্দ, দেদার শপিংয়ের আনন্দ, ভালোর সাথে পঁচা মিশিয়ে ভালো বলে চালিয়ে দেবার আনন্দ, চিনির দাম বাড়ানোর আনন্দ, বেশি বেশি লাভ করবার বেশি বেশি আনন্দ........
আনন্দ সবার জন্য! ছাত্রদের আনন্দ স্কুল ছুটি ঘোষণায়, রোজাদারের আনন্দ রাস্তায় থুতু ফেলায়, রাস্তার আনন্দ তার বুক ভরে থেমে থাকা যানবাহনে, রিক্সাওয়ালার আনন্দ বেশি বেশি যাত্রী পরিবহনে, অজ্ঞান পার্টির আনন্দ বেশি শিকার ধরাতে, পুলিশের আনন্দ বেশি চাঁদা পাওয়াতে, ছেলের আনন্দ সেহরি পার্টিতে যাওয়া, বাবার আনন্দ ঈদের জন্য বেশি ঘুষ নেওয়া, ক্রেতার আনন্দ কেনাকাটায়, বিক্রেতার আনন্দ ক্রেতার গলাকাটায়.....
এই আনন্দময় রমজান এল কিনা বোঝার জন্য আশপাশে একটু নজর ফেরালেই চলবে। অনেক কিছু বদলে যাওয়া দেখেই বোঝা যাবে রমজান এসেছে, রমজান এলেই মানুষ, পরিবেশ, সব কেমন অন্যরকম হয়ে যাবে। বিটিভি চালালে যখন দেখা যাবে ঘোষিকা আর সংবাদ পাঠিকার মাথায় কাপড় দেয়া,তখন বুঝে নিতে হবে রমজান এসে গেছে, কারণ একমাত্র রমজান মাসেই তারা মাথায় কাপড় দেন।
চারপাশে যখন টুপি পরিহিত দের আধিক্য দেখা যায়, তখনও বোঝা যায় রমজান এসে গেছে। আবার এশার নামাজের সময় মসজিদে গিয়ে মুসল্লীদের আধিক্য দেখলেও বোঝা যায় রমজান এসেছে- কারণ তারাবির মাধ্যমে নেকি হাসিল করার উদ্দেশ্যে অনেকেই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। একমাত্র এশার নামাজের সময়ই এসব মুসল্লিদের মসজিদে দেখা যায়, বাকি নামাজের সময় না।
রাস্তায় বেরিয়েও পরীক্ষা করে দেখা যায় রমজান এসেছে কিনা। যদি রাস্তায় নানা ধান্ধায়, নানা ব্যবসার ফিকিরে লোকে ছুটতে থাকে, ছুটতে ছুটতে ক্রমাগত রাস্তায় থুতু ফেলতে থাকে, আরো ছুটতে থাকে শপিংমল মুখী মানুষ, তাহলে বুঝে নিতে হবে রমজান এসে গেছে।
সরকারি অফিসে কোনো কাজের জন্য গেলেও রমজানের আগমন বোঝা যায়। যখনই দেখা যাবে স্যার, কিংবা স্যারের পিএ মাথায় নতুন টুপি পরেছেন,আর আপনার কাজের কথা শুনে হাসিমুখে বলছেন,
"খরচা একটু বেশি করতে হবে, বুঝতেই তো পারছেন এ মাসে কত খরচ"
তৎক্ষণাৎ আপনার মনে পড়ে যাবে, ওহ, বেশি খরচের মাস রমজান এসে গেছে!!
হয়ত বাজারে গেছেন, বিক্রেতা ৪০ টাকা কেজির মরিচ চাইল ২০০ টাকা কেজি, ৫০ টাকা কেজির বেগুন চাইল ১৮০ টাকা কেজি, রেগে যেতে যেতে আপনার মনে পড়বে, "আরে, এতো রমজান।" মনে পড়ার পর বাড়তি দাম দিয়ে জিনিস গুলো আপনি কিনবেন, afterall, রমজানে সারাদিন না খেয়ে থাকার ক্ষতি ইফতারে তো পূরণ করতেই হবে।
সন্ধ্যার দিকে, এই ধরুন মাগরিবের সময় মার্কেটে গেলে যখন দেখবেন মার্কেটের আশেপাশে সমস্ত খাবারের দোকানে মার্কেটে আগত লোকজন দিয়ে ভরা, অনেক দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতা একসাথে খাবারের আয়োজন করছেন- আপনি হয়তো ভাববেন, "ব্যাপার কি, মাগরিবের সময় নামাজ না পড়ে এরা খেতে বসেছে কেন?" ভাবতে ভাবতেই আপনার মনে পড়ে যাবে, "আরে এ তো রমজান মাস, শপিং করতে গিয়ে অনেকে তো মাগরিবের নামাজ পড়েইনা!"
সামু ব্লগ থেকেও জানা যায় রমজান এল কিনা। যখন সামুর সর্বগুণী ব্লগার নাচা- গানা পোস্ট বাদ দিয়ে হরেক পদের ভার্চুয়াল খানা নিয়ে হাজির হবেন, তখনই বোঝা যাবে রমজান এসে গেছে!!
================================================================================
রমজান আসল বলে কি কারো কষ্ট হয়? হয়, রমজান মাস আসলেই বাড়ির গিন্নীর বাড়তি কাজের কষ্ট সইতে হয়। রমজান মাস আসার একমাস আগে থেকেই গিন্নী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন, লিস্ট মিলিয়ে বাজার করেন, ঘরে খাবার স্টক করতে থাকেন, যেন সারাদিন রোজা রাখার পর সকলে ইফতারে ভূরিভোজ করতে পারেন। নিজে রোজা রেখে বাড়ির গিন্নিকে খাটাখাটনি করতে হয়, বাড়ির অন্যান্য রোজাদারদের রোজা রাখার কষ্ট কমাবার জন্য।
রোজার দিনগুলোতে দুপুর থেকেই শুরু হয় গিন্নীর রান্নার প্রস্তুতি। প্রচন্ড গরম রান্না ঘরে রোজাদার গিন্নী ক্রমাগত রেঁধে চলেন নানা পদের ইফতারি। বিকাল নাগাদ শুরু হয় শরবত বানানো। টেবিল জুড়ে নানা আকারের বাসন সাজাতে সাজাতেই ইফতারের সময় শুরু হয়ে যায়!
মাগরিবের নামাজান্তে, সারাদিন রোজা রাখার পর ভুরিভোজের দরুন শ্রান্ত-ক্লান্ত সকলের ক্লান্তি দূর করার দায়িত্ব গিন্নীর। শুরু হয় চা বানানোর পালা। চায়ের পর গাদা গাদা হাঁড়ি, কড়াই, হাতা, খুন্তি, চামচ, থালা, বাটি, গ্লাস ধোবার পালা। তারপর গিন্নীর ব্যস্ততা শুরু হয় রাতের খাবার আয়োজন করতে করতে। এক ফাঁকে ক্লান্ত দেহে তারাবির নামাজ পড়া শেষ করেন। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে উঠি শুরু হয় সেহরির আয়োজন। পরদিন সকাল বেলা নিত্যকার গৃহকর্ম। অবশ্য কোনো কোনো গিন্নির ঘরের কাজে সহায়তা করার জন্য গৃহকর্মী থাকে। কিন্তু এই গৃহকর্মীদের সমঝে চলতে হয়, তারাতো আর বাড়ির গিন্নির মত বিনা বেতনের কর্মী না, যে রমজান মাসে দিনে ২০ ঘণ্টা কাজ করবে! তাই গৃহকর্মীরা মাঝে মাঝেই কাজে আসবে না, সেই সময়ে গিন্নির কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।
রমজানে গিন্নীদের ইবাদত? এত কাজের মধ্যে ইবাদতের সুযোগ তারা কই আর পাচ্ছেন!! দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারা মনে মনে জপ করেন, 'পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য', আর ভাবেন আগামী রমজানে নিশ্চয়ই কাজের বোঝা একটু হালকা হবে, তখন ইবাদত করার সুযোগ পাবেন।
=================================================================================
কাল, বা পরশু- আসছে রমজান। ব্লগের সবার জন্য রমজানের শুভকামনা।
ইফতারের ছবি: গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৩২