আমরা যখন বিশ্বজিৎ, অভিজিৎ, রাজীব হায়দার দের বীভৎস চেহেরা ভুলতে বসেছি, ঠিক সে সময়ই আরেকজন রিফাত শরিফ নৃশংসতার শিকার হলেন। সেটাও আবার জনসম্মুখে সবার সামনে।ঠিক যেন বিশ্বজিতের পুনরাবৃত্তি। বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে, এমন কি তার স্ত্রীর সামনেই তাকে কুপিয়েছে কয়েকজন যুবক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত শরীফ। রিফাত কে কোপানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন যুবক রিফাতকে জনসম্মুখে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে। রিফাতের সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী হামলাকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। হামলাকারীরা বাধা উপেক্ষা করেই রিফাতকে কোপিয়ে খুবই নির্বিঘ্নে চলে যায়। এখন প্রশ্ন হল, উপস্থিত জনসাধারণ কেন কোন বাধা দিল না?
একটি ঘটনা ঘটার পর সেই ঘটনা চুলচেরা বিশ্লেষণ আমরা করতে পারি খুব ভালোভাবে। এটা এমন কেন হলো? ওটা অমন কেন হল? কেউ কিছু বলল না কেন? মানুষ এত নিষ্ঠুর কেন? আমরা তামাশা প্রিয় জাতি! আমরা সেলফি প্রিয় জাতি! ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু কখনো কি ওই পরিস্থিতিতে আপনি আপনাকে দাঁড় করিয়েছেন? একবার ভাবুন তো, আপনার সামনে যদি এই ঘটনা ঘটতো তাহলে আপনি কি করতেন!!? উপস্থিত সকল কে নিয়ে ওই রামদাধারী কতিপয় যুবক কে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেন? কাউকে সাথে না পেলে একাই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেন? না!!! আসলে আপনি কিছুই করতেন না। ওই ঘটনার সময় উপস্থিত জনসাধারণের যে ভূমিকা ছিল আমার মনে হয় আপনার ভূমিকা ও তাই হতো। যদি তা না- ই হয়, তবে বলুন তো প্রতিনিয়ত আপনার চারপাশে আপনার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অসংখ্য অন্যায়ের কতটার প্রতিবাদ আপনি করেছেন?? ভাড়া নিয়ে লোকাল বাসের কন্টাকটার, লেগুনার হেলপার, রিক্সাওয়ালার সাথে কথা কাটাকাটি ছাড়া আর কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ আমরা করি না। কারণ আমরা জানি প্রতিদিন চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অন্যায়গুলো প্রতিবাদ এককভাবে করে কিছুই করতে পারবো না। অতএব নিরবে অন্যায় সহ্য করা ছাড়া আমাদের যেন আর কিছুই করার নেই। কিন্তু এভাবে আর কতদিন বলতে পারেন?
আজ বিশ্বজিৎ হত্যার আসামীরা ক্ষমা পেয়ে যায়, অভিজিৎ, রাজীব হায়দার দের হত্যার কোনো বিচার হয়না। সাগর-রুনি, তনু, ত্বকী হত্যার তদন্ত শেষ হয়না, বিচার তো পরের কথা। এত বিচারহীনতার মধ্যে রিফাত শরিফদের নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা বিচ্ছিন্ন এবং স্বাভাবিক। যে জাতির, তার পিতার হত্যার বিচার করতে সময় লাগে ৩৮ বছর। সে জাতির সাধারণ মানুষ এত সহসায় বিচার পাবে সেটাও আশা করা মুর্খতা।
লিখলে আরো অনেক কিছুই লেখা যায় আসলে কালকে রিফাত শরীফের ঘটনার ভিডিও দেখার পর থেকেই মনটা ভালো নেই। শুধু বারবার মনে হচ্ছে যদি কখনো আমিও এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হই, তাহলেও তো মানুষ এভাবেই তামাশা দেখবে!
বার বার শুধু কবি গুরুর দুটি চরন মনে হচ্ছে,,,,
সাত কোটি বাঙ্গালিরে হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি।
সত্যিই আমরা আজও মানুষ হতে পারলাম না।