পৃথিবী বিখ্যাত কবিতা- যখন মারা যাবো
মূল - মওলানা মুহাম্মদ জালালুদ্দিন রুমি
ভাষান্তরঃ - রহমান লতিফ
----------------------------
যখন আমি মারা যাবো
যখন আমাকে কফিনে আটকে নাও,
কখনোই মনে করো না'গো তুমি -
হারিয়ে যাচ্ছি পৃথিবী থেকে আমি।
একফোঁটা চোখের জল ফেলো না'গো তুমি
করো না'গো আর্তনাদ কিংবা দুঃখ অনুভব—
আমি'তো পতিত হচ্ছি না কোন দানবের নরকে।
যখন দেখো আমার লাশ বহন করা হচ্ছে
আমার চলে যাওয়ায় ফেলো না'গো অশ্রু'
আমিতো যাচ্ছি না'গো সব ছেড়েছুড়ে,
আমি যে পৌঁছে যাচ্ছি— শ্বাশত প্রেমে
আমাকে যখন কবরে রেখে যাও
বলো না'গো তুমি- চিরবিদায়
মনেরেখো কবর'তো কেবল একটিমাত্র পর্দা- যার পেছনে অনন্ত স্বর্গোদ্যান
আমাকে কেবল কবরে নামাতেই দেখবে
এখন আমাকে উঠে আসতে দেখো
কিভাবে ওখানেই হবে তার যবনিকা
যখন সূর্য অস্তমিত অথবা চাঁদ ডুবে যায়
মনে হয় যেন এখানেই শেষ
যা অনেকটা সূর্যাস্তের মতো
কিন্তু বাস্তবে,এটা কেবলই প্রভাত
যখন কবর তোমাকে আটকে দেয়
এটা সেই মুহূর্তই -যখন আত্মা চির-স্বাধীন
তুমি কি কখনো দেখেছো—
পৃথিবীতে রোপিত হয়েছে একটা বীজ
যেটা জেগে ওঠেনি নতুন জীবন নিয়ে,
কেন তবে তোমার সন্দেহ - মানুষ নামক বীজের উঠে আসাতে
তুমি কি দেখছো কখনো !
কু’পে নোয়ানো কোন বালতি
এসেছে ফিরে খালি,
একটা আত্মার জন্য তবে কেন ও'গো বিলাপ
যদি তা আবার আসিতে পারে ফিরে
যেভাবে ফিরে এসেছে ইউসুফ কু’প থেকে!
যখন শেষবারের মতো
তুমি তোমার মুখ বন্ধ করো,
তোমার শব্দ এবং আত্মা
এমন এক জগতে যুক্ত হবে—
যার নেই কোন সময়- যার নেই কোন ঠিকানা।
ফুটনোট- কবির মৃত্যু নেই,, কথাটি তার জন্য শতভাগ সত্য কেননা সারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত পারস্যের কবি মাওলানা জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি ও বেষ্ট সেলিং পয়েন্ট বলা হয়। দেশ, জাতি, কালের সীমানা ছাপিয়ে যাওয়া কবিই তিনি। রুমির লেখা মসনবী কাব্যগ্রন্থকে ফারসি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ট কাব্যগ্রন্থের সাথে তুলনা করা হয়। ১২০৭ সালে আফগানিস্তানে জন্ম নেয়া এই আধ্যাত্মিক কবি ৮০০ বছরের বেশি সময় ধরে পাঠক হৃদয় দখল করে চলেছেন। সুফিবাদ, অতীন্দ্রিয়বাদ,ধর্মতত্ত্ব, আইন এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর প্রেম রুমির লেখা বিভিন্ন কবিতা এবং শ্লোককথার মাধ্যমে সমাদৃত। রুমির দুটি বই অনুবাদের পর তিনি জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। ইংরেজ সাহিত্যিকগন জালালউদ্দিন রুমিকে নিয়ে বিস্তর গবেষনার পর ইংরেজী সাহিত্যকে তাদের কাছে পানসে মনে হয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রিসার্চ স্কলার এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত সামির আসাফ তার ‘The Poet of the Poets’ নিবন্ধে লিখেছেন-
‘গভীরতার মানদণ্ডে রুমির তুলনায় শেক্সপিয়রের মান হচ্ছে মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ।’
রুমি পয়ত্রিশ হাজার শ্লোক লেখেছেন যেমন- আমি সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজছিলাম। তাই আমি মন্দিরে গেলাম, সেখানে তাকে খুঁজে পেলাম না। আমি গির্জায় গেলাম, সেখানেও তাকে পেলাম না। এরপর আমি মসজিদে গেলাম সেখানেও তাকে পেলাম না। এরপর আমি নিজের হৃদয়ে তাকে খুঁজলাম, সেখানে তাকে খুঁজে পেলাম।” হ্যাঁ, সেক্সপীয়ার, কিটসে সবাইকে পিছনে ফেলে মওলানা মুহাম্মদ জালালুদ্দিন রুমিই বর্তমানে সেরাদের সেরা। রুমির কবরের এপিটাফটিতে উজ্জ্বল হরফে লেখা রয়েছে, ‘যখন আমি মৃত, তখন আমাকে আমার সমাধিতে না খুঁজে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও।’ তিনি আছেন সকল ধর্ম ও সব মানুষের হৃদয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৯ ভোর ৬:২১