চিত্রঃ গুগল
বিখ্যাত নাস্তিকদের অন্তিম মূহুর্তের বাণী ও মৃত্যু যন্ত্রণা
মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার পূর্বমুহূর্তে বিশ্বের বাঘা বাঘা কয়েকজন নাস্তিক ও খোদাদ্রোহীর হতাশাজনক অভিব্যক্তি
১. সিজার বুর্জিয়া
সংক্ষিপ্ত এই জীবনের ক্ষণে ক্ষণে সবকিছুর জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম মৃত্যু ব্যতিরেকে। অথচ অাজ মৃত্যু অামার দুয়ারে উপস্থিত অার অামি সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত! জীবন্মৃত অবস্থায় এর চেয়ে দুঃখজনক মনোব্যথা অার কি হতে পারে!
২. টমাস হিবস ( একজন বিখ্যাত দার্শনিক)
- মৃত্যুর পূর্বে তিনি বলেন, "অামি এখন বিষাদময় অন্ধকারের গর্তে ( মৃত্যুমুখে) দ্রুতই ধাবমান হচ্ছি। এই মুহূর্তে যদি অামি সমগ্র দুনিয়ার বাদশাহ হতাম তাহলে অামার জীবনের সমস্ত সম্পত্তির বিনিময়ে হলেও এই কঠিনতম অবস্থা বিদূরিত করতাম। করার চেষ্টা করতাম! হায়!
৩. টমাস ভেন ( ১৮ শতকের একজন নাস্তিক লেখক)
মৃত্যুর সময় তিনি তার অাশেপাশে জড়ো হওয়া অাত্মীয়স্বজন ও ভক্তকুলের উদ্দেশ্যে বলেন, -"অামি তোমাদের কাছে অাশা করি যে তোমরা অামাকে ছেড়ে যাবেনা। হে স্রষ্টা! অামি এমন কি পাপ করেছি যার কারণে এই কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার উপযুক্ত হয়েছি?
সমগ্র দুনিয়া এবং এই দুনিয়ার সমপরিমাণ অারো একটি দুনিয়ার যদি অামি মালিক হতাম তাহলে তার বিনিময়ে এই ভয়ানক অাযাব দূরীভূত করার চেষ্টা করতাম। তোমরা অামাকে ছেড়ে যাবেনা। অন্তত এই মুহূর্তে একটি শিশুকে হলেও অামার পাশে রেখে যাও। সারাজীবন শয়তানের সাহচর্যে থেকে যাবতীয় অপকর্ম করেছি। অার অাজ এই মুহূর্তে অামি জাহান্নামের দরজায় করাঘাত করছি!
৪. স্যার টমাস স্কট ( একজন বিখ্যাত ইংরেজ গবেষক ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা )
১৫৯৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যমুখে পতিত হওয়ার সময় সে অত্যন্ত করুণারূপ কণ্ঠে বললো, "যাপিত জীবনের কোনদিনই অামি একবারের জন্যও বিশ্বাস করিনি যে অাল্লাহ একজন অাছেন এবং তার অবাধ্যদের জন্য তিনি জাহান্নাম তৈরী করে রেখেছেন!"
কিন্তু মৃত্যুপথ যাত্রার এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে অামি মহান স্রষ্টা অাল্লাহ এবং তার সৃষ্ট নরক "জাহান্নাম" এর অস্থিত্ব ভালোই বুঝতে পারছি। অামি এখন জাহান্নামের জ্বলন্ত অাগুণের গর্তে নিমজ্জিত হওয়ার মুখোমুখি অবস্থায় এসে দাড়িয়েছি। অামার অবাধ্যতার জন্য মহান বিচারক অাল্লাহর এটা উপযুক্ত শাস্তি। এতে তিনি বিন্দুমাত্র অন্যায়ের অাশ্রয় নেননি! অামি প্রকৃতই অপরাধী ছিলাম।
৫. ভল্টেয়ার ( বিশ্ববিখ্যাত একজন নাস্তিক দার্শনিক। জন্মগ্রহণ করেছিলেন ফ্রান্সে। মৃত্যু ১৯৭৭ সালে)
- মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় তিনি তার চিকিৎসক বুসিনকে বলেন, স্রষ্টা অামাকে অনেক সুযোগ দিয়েছেন এবং মানুষও অামাকে অনেক সাহায্য করেছে কিন্তু তা অামি কাজে লাগাতে পারিনি। তুমি যদি অামাকে অার ৬ মাস বেঁচে থাকার সুযোগ দিতে পারো তাহলে অামি তার থেকে তোমাকে অর্ধেক হায়াত দিয়ে দিতাম! কিন্তু অাফসোস! অাজ অামি মৃত্যুপথযাত্রী! নরকই অামার শেষ ঠিকানা!
৬. ভল্টেয়ার ( ইউরোপিয়ান একজন ডাক্তার)
- মৃত্যুর পূর্বে তিনি বলেছেন, ( অামাকে যদি সমগ্র ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনাঢ্য ব্যক্তি বানিয়ে দেওয়া হয় তাহলেও অামি অামার মতো একজন নাস্তিকের চেহারা দেখতে চাইবোনা। নাস্তিকতা অভিশপ্ত এক মানসিকতার নাম।) মৃত্যুর পূর্বরাতে তিনি সারারাত ক্ষমা! ক্ষমা শব্দ উচ্চারণ করে চিৎকার করেছিলেন!
৭. ডেভিড হিয়ম ( স্কটল্যান্ডের একজন ইতিহাসবিদ, নাস্তিকতায় বিশ্বাসী ছিলেন। ১৭৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন)
- মারা যাওয়ার অাগ মুহূর্তে তার করুণ পরিস্থিতি ও ছটপট অবস্থার প্রত্যক্ষদর্শী একজন ভক্ত বলেন, "ডেভিড সারাক্ষণ শুধু এ কথা বলে চিৎকার করতে থাকতো : ( "অাগুন তার অগ্নিশিখা দিয়ে অামাকে জ্বালিয়ে অঙ্গার করে দিচ্ছে)। সে একটু অারাম পাওয়ার জন্য অত্যন্ত ব্যগ্র হয়ে থাকত। কিন্তু হতাশার সমস্ত চাপ তার চেহারায় ভেসে উঠত!
৮. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ( ফ্রান্সের রাজা ছিলেন )
( দুনিয়াবি কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব লাভের অাশায় এবং পৃথিবীর শাসনকর্তা হওয়ার লোভে এ নেপোলিয়ন লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিলেন!)
- দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার সময় নেপোলিয়ন এর হাহুতাশমিশ্রিত অভিব্যক্তি ছিলো এরকম, "( হায়! অাফসোস, অামার সময় অাসার অাগেই অামি পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে মাটির গর্ভে চলে যাচ্ছি। অথচ অামার সমস্ত রাজত্ব, নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব এই কঠিনসময়ে অামার কোনই কাজে অাসছেনা। অামি ছিলাম দুনিয়ার একজন নামকরা শাসক-সম্রাট! এই সম্রাটী জীবনই অামাকে জান্নাতের পথ থেকে বিতাড়িত করে হাবিয়া দোযখের গর্তে নিমজ্জিত করেছে! হায়!
৯. স্যার ফ্রান্সিস নেপার্ট ( ব্রিটেনে প্রতিষ্ঠিত একটি নাস্তিক্যবাদী সংগঠনের প্রধান ছিলেন তিনি)
- মারা যাওয়ার সময় তার পাশে উপবিষ্ট এক লোককে সম্বোধন করে বললেন, "( 'অাল্লাহর অস্থিত্ব নাই' এ ভ্রান্ত কথা দুনিয়ার কাউকে তোমরা বলোনা, অামি এ মুহূর্তে অাল্লাহর অস্থিত্ব পূর্ণভাবে উপলব্দি করছি। 'জাহান্নাম নাই' এ কথা অামাকে বলোনা। জাহান্নামের ভয়াবহ অাগুনের তীব্রতায় অামি এখন দগ্ধ হচ্ছি!
অাফসোস!
তোমাদের এখনো সময় অাছে। সঠিক বিশ্বাসে ফিরে এসো। বাস্তবতা মেনে নাও। অামি নাস্তিকতায় বিশ্বাসী হয়ে গোটা জীবনটাই নষ্ট করেছি, ধ্বংস করেছি! দুনিয়াতে অামি একহাজার বছর জীবন অতিবাহিত করলেও অামি এ জাহান্নামের কথা স্বীকার করতাম না। অার এখন বুঝতে পারছি, অগণিত বছর এই অাগুনেই অামাকে থাকতে হবে!
হায়! হায়! এ জাহান্নাম কি অামাকে কখনো মুক্তি দিবে!?
১০. সম্রাট নবম শার্লস
( ফ্রান্সের রাজা ছিলেন তিনি। ১৫৭২ সালে শুধু তার অনুসৃত ধর্মমত 'ক্যাথোলিক খ্রিষ্টীয় মতাদর্শ' গ্রহণ না করার কারণে তিনি প্রায় লক্ষাধিক 'প্রটেস্টান্ট' মতাদর্শী খ্রিষ্টান হত্যা করেছিলেন। ইতিহাসে তার এ হত্যাযজ্ঞ বীভৎস একটি গণহত্যা হিসেবে ঘৃণিত হয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। )
- মারা যাওয়ার অাগে তিনি তার একাধিক ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে বলেন, "( অামি এ কঠিন সময়ে ঐ সকল লোকদেরকে অামার সামনে হাটতে দেখছি যাদেরকে অামি হত্যা করেছিলাম ক্ষমতার দম্ভে! অহংকারের চোখে! এবং অাহতদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি তারা অামার দিকে একে অপরকে কী যেন ইশারা করছে!
অামি অামার ভয়াবহ ঠিকানার ( জাহান্নাম ) মুখোমুখি এসে দাড়িয়েছি!
জীবনে অামার মতো চরম ভুল অার কেউ করেছে কিনা অামার জানা নাই। নিজেকে অামি চিরস্থায়ী শাস্তির উপযোগী করেছি! যার কোন শেষ নাই!
হায়!
১১. ডেভিড স্ট্রবিস ( জার্মানির অধিবাসী একজন নাস্তিক লেখক ছিলেন তিনি। এবং জার্মানিতেই ১৮৭৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন)
- মৃত্যুশয্যায় কাতরানো অবস্থায় তিনি খুবই মর্মাহত হয়ে বলেন, "( হায়! অাল্লাহকে অস্বীকার করার মিথ্যা দর্শনই অাজ অামাকে এ ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। অামি উপলব্দি করছি এখন অামার অবস্থান হচ্ছে ধারালো দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী দাঁতের মাঝখানে। অামি জানিনা কখন অামাকে ক্ষতবিক্ষত করা হবে? ( অর্থাৎ যেকোন মুহূর্তেই অামি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারি)
১২. জোসেফ স্টালিন
( অামেরিকার নিউজউইক ম্যাগাজিনে "রাশিয়ান কমিউনিস্ট বিপ্লব"'র প্রধান নেতা স্বৈরচারী শাসক জোসেফ স্টালিন এর কন্যা স্ভেটলিনা স্টালিন এর একটি সাক্ষাতকার গত শতাব্দীতে প্রকাশিত হয়েছিলো)
- তার পিতা স্টালিনের মৃত্যু হওয়ার সময়কার ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "( অামার পিতার মৃত্যুর সময় অত্যন্ত খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হয়। মৃত্যুর কিছুক্ষণ অাগে তিনি হটাৎ তার চক্ষুদ্বয় খুলে খুবই ক্রুদ্ধদৃষ্টি দিয়ে সবার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাতে থাকেন! অামরা এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যাই।
পরিবারের সবাই ভীত হয়ে পড়ে। এবং তিনি তার ডানহাতের অাঙ্গুল দিয়ে অামাদের মাথার উপরে কিসের দিকে যেন বারবার ইশারা করছিলেন। কিছুক্ষণ পর পরেই এরকম অবস্থার সূত্রপাত হচ্ছিল! তার ইশারার ভঙ্গিমা ছিলো খুবই ভয়ানক! ভিন্নরকম ইঙ্গিত! এর কিছুক্ষণ পরেই তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়!
১৩. অ্যান্টন যান্ডর লেভেই ( ইউরোপের প্রসিদ্ধ একজন নাস্তিক। নামকরা লেখকও। বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তক হিসেবেও প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন। ইবাদাতুশ শয়তান নামক একটি গির্জার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এই অাল্লাহদ্রোহী ব্যক্তিটি। এবং অাল্লাহর অস্থিত্বের বিরুদ্ধে, কুরঅানী চিরন্তন সত্যনির্ণয়ের বিরোদ্ধে 'ইন্জিলুশ শয়তান' নামক একটি বইও রচনা করেছিলেন তিনি।)
- ১৯৯৭ সালে তিনি যখন মারা যাচ্ছিলেন তখন তার তীব্র চিৎকারে অাশেপাশের সকলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ভীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে চারপাশে। তিনি বারবার এ কথা বলে চিৎকার করছিলেন যে, "( - হায় কী করেছি অামি সারাজীবন!? জীবনে কত সাংঘাতিক ভুল করেছি তা গণনা করে শেষ করা যাবেনা!)"। সেই অসহনীয় ও কঠিন সময় তিনি অাল্লাহর কাছে শুধু ক্ষমার অাশায় ছটপট করতে থাকেন! গগনবিদারী চিৎকার করতে থাকেন!
অনেক লোক তার পাশে জড়ো হয়েছিলো। সবাইকে তিনি তার হতাশার ভাষা প্রকাশ করতে থাকেন। খুবই অসহায় অবস্থার অবতারণা হয় তখন। এরই কিছুসময় পর তার প্রাণবায়ু চিরদিনের জন্য শরীরগত হয়ে যায়!
- এই জন্য ঈমান অনেক বড় পাওয়া। বিশাল বড় সম্পদের নাম। নাস্তিকতা সব হারানোর অপর নাম। অাল্লাহ তায়ালার কাছে সবসময়ের কামনা, তিনি যেন অামাদের সবাইকে ঈমানের হালতে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণের তাওফীক দেয়! অামীন ইয়া অাল্লাহ।
.
মুল: ড. অালী মুহাম্মদ অাস-সাল্লাবী
অনুবাদ : রাশেদ মুহাম্মদ জিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৫০