somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মৃত্যুপথযাত্রীর উদ্ধৃতি...

২৮ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি একজন অসুস্থ মানুষ।
আমার সারা দেহে প্রচন্ড ব্যথা
অনেক বছর ধরে এই রোগ কুয়াশার মত আচ্ছন্ন করেছে আমাকে।
এখন আমার অন্তিমকাল।
কালো বেড়ালের মত নিঃশব্দ পায়ে আমার দিকে হেঁটে হেঁটে আসছে ‘মরণ’।
সব বিজ্ঞ চিকিৎসক একবাক্যে বলেছে---
তোমার আয়ু বেশিদিন নেই।।

অথচ, আমার যে বাঁচতে ইচ্ছে করে।
তাই, আমি শেষ চেষ্টা করতে চাই।
ক্ষীয়মাণ প্রাণশক্তি জড়ো করে,
বেঁচে থাকার অনাদি তাড়না নিয়ে,
নিজের নিরাময়কারী হয়ে নিজেই দাঁড়াই,
নিজের সামনে, প্রতিবিম্বের মত।
সারা সত্ত্বার রোগাক্রান্ত রূপটা সর্বাগ্রে নিরীক্ষণ করি।

ইস ! হৃ্দপিন্ডে কি তীব্র হলুদ অসুখ বাসা বেঁধে আছে;
সেখানে হাত রেখে বললাম, “অসুখ, তুমি চলে যাও
এই হৃদপিন্ড ছেড়ে !”
সেই হলুদ অসুখ জবাব দিলো -“খবরদার, তাড়াতে চেওনা আমাকে !
আমি ভালোবাসা
বহুকাল ধরে এই হৃদপিন্ডে বসতি গেড়ে আছি।”

ফুসফুসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,
সেখানে ঘন নীল পতঙ্গেরা অগণিত রন্ধ্র তৈরী করেছে;
করছে এখনও।
তাই, ঝাঁঝরা হয়ে গেছে ফুসফুস।
বললাম, “তোমাদের পুড়িয়ে মারবো !”
তারা জবাব দিলো – “আমরা ভালোবাসার অজস্র স্বপ্ন;
আমাদের চিরকালীন বসতি থেকে উচ্ছেদ করে দেবার ক্ষমতা তোমার নেই !”

দেহের অজস্র ধমনীর দিকে চেয়ে দেখি, তারা রক্তহীন, পান্ডুর।
খরায় শুকিয়ে যাওয়া নালার মত শুষ্ক।
ধমনীর লাল, শুদ্ধ রক্ত তৃষিতের মত শুষে নিয়ে
প্রতিটি ধমনীতে ফুটে আছে কয়েকটি কৃষ্ণচূড়া।
দূর্নিবার ক্রোধে আমি বললাম – “ছিঁড়ে নেবো তোমাদের !”
হিমশীতল নির্দয়তায় তারা জানালো – “তোমার সাধ্য নেই !
আমরা ভালোবাসার নৈবেদ্য, আমরা অক্ষয়-মৃত্যুহীন।“

দৃষ্টি ফেরালাম দেহের শিরাগুলোর প্রতি।
কোথায় সেখানে নীল রক্তের প্রবাহ?
খটখটে, শুকনো শিরাগুলো একাকার হয়ে গাঢ় নীল আকাশ হয়ে গেছে;
জৈষ্ঠ্যের বর্ষণহীন, তপ্ত আকাশ।
চিৎকার করে বললাম – “দূর হও, দূর হও !”
বিষণ্ন হেসে সে জবাব দিলো – “আমি ভালোবাসার অসহ্য ব্যথা,
আমার অন্য কোথাও যাবার জায়গা নেই!”

এভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছি এখন
অজস্র নীল মাছি, লাল লাল কৃষ্ণচূড়া আর একটি আকাশকে ধারণ করে
আমি নিজেকে বড় অসহায় ভাবে সঁপে দিয়েছি
মৃত্যুর চারটি থাবার কাছে।

‘ভালোবাসার হলুদ বিষে আক্রান্ত’ আমি এখন খুব ভালো করে জানি;
হীরা-চুনি, সোঁদা ঘ্রাণ ভরা নবান্ন, বৃষ্টির রাত শেষে একটি সূর্যোদয়,
সোনালি চিলের পালক............
এসব কোনওটাই ভালোবাসার স্বরূপ নয়।
ভালোবাসা আসলে চিরক্ষুধিত, চিরতৃষিত বলির মঞ্চ।

ভালোবাসা ঘাতক অসুখ
ভালোবাসা জমকালো কারাগার।


*******************************************************
*******************************************************

কবিতাটি আমার লেখা নয়। এত অসহ্য সুন্দর কবিতা আমি লিখবো, উপরওয়ালা সেই ক্ষমতাই দেননি আমাকে! যে মেয়েটি লিখেছিলো, তাকে আমি আক্ষরিক অর্থেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। বহু বছর পর নিতান্তই কপালগুণে যখন খুঁজে পেলাম তখন খুব অবাক হয়ে দেখি, কতই না বদলে গেছে সে! খুব চঞ্চলতা বা উচ্ছলতা কখনোই ছিলো না তার মধ্যে, বরাবরই সে ধীর-স্থির স্বভাবের, কিন্তু এখন আরও কেমন যেন স্থবির হয়ে গেছে। খানিকটা রষকষহীনও। নিজের স্বামীকে কি পাগলের মত ভালোই না বাসতো (এই কবিতাটাও স্বামীকে ভালোবেসেই লেখা), হয়তো এখনও বাসে, কিন্তু সেই ভালোবাসাও মনে হয় যেন কোনও জড়পদার্থের ভালোবাসা। মা হওয়া কপালে লেখা ছিলো না, কিন্তু অসম্ভব ফুটফুটে একটি সন্তানের মা হবার সৌভাগ্য তার হয়েছে। আমার চেয়ে সে যে বয়সে অনেক বড় তা নয়, তবু কি এক অদ্ভূত কারণে আমাকেও সে তার সন্তানের মতই ভালোবাসতো। কত মজার মজার নামে ডাকতো আমাকে, এখন আর তা ডাকে না। মাঝেমাঝে বলতো, "চুলগুলোর এমন বারোটা বাজিয়ে রেখেছ কেন? এসো আমি তেল দিয়ে দিই"... তারপর কত যত্ন করেই না তেল দিয়ে আঁচড়ে দিত। কত প্রিয় ছিলো তার বৃষ্টিভেজা শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়া- কিংবা জীবনানন্দের বই হাতে রাতের পর রাত পার করে দেয়া, নিজের লাল শাড়ি, আলতার শিশি আর সিঁদুরের কৌটা নিয়ে পাগলামি করা... এসব এখন তার কাছে শুধুই এক সুদূর পরাহত কল্পনা। লেখাপড়া, সংসার, ক্যারিয়ার আর জীবনের চাপে শত সহস্রবার নিষ্পেষিত হতে হতে শেষ পর্যন্ত আজ সে পরিণত হয়েছে এক জীবন্ত ফসিলে।

এই কবিতা আজ উৎসর্গ করলাম তাকেই – সেই জীবন্ত ফসিলকে, আমার সেই হারিয়ে পাওয়া দ্বিতীয় মাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:২৯
৭৩টি মন্তব্য ৬৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×