পৃথিবী অবিরামভাবে পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে চলছে। প্রতি ঘন্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বেগে। এ কারণেই দিন রাত হয়। আমাদের মনে হয়, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ঘটছে। বাস্তবিক সূর্যের উদয় বা অস্ত যাওয়া বলতে কিছু নেই। পৃথিবীই আমাদের ঘুরাতে ঘুরাতে সূর্যের কাছে আনে আবার দূরে সরিয়ে দেয়।
বাসে চলার সময় আমরা টের পাইনা এতো জোড়ে চলছি। কারণ বাসটি আমাদের নিয়েই চলতে থাকে। যদি হঠাৎ ব্রেক করে তবে সামনের দিকে ধাক্কা খাই।
যদি পৃথিবীর ঘুর্ণন হঠাৎ থেমে যায় কি হবে? এটি পৃথিবীতে বসবাসরত সমস্তকিছুর জন্য হবে এক মহা ভয়ানক বিপর্যয়। প্রথমেই মুহুর্তের মধ্যে পৃথিবীর পৃষ্ঠে থাকা সবকিছু ছিটকে গিয়ে কমপক্ষে ঘন্টায় ১৬৭০ কি.মি বেগে পূর্ব দিকে উড়তে শুরু করবে। মানুষ থেকে শুরু করে পশুপাখি, রাস্তাঘাট, বিল্ডিং, পাহাড় পর্বত এমনকি মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যাবে সবকিছু। সমুদ্রের পানি পর্যন্ত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করবে! এতে করে প্রথমত সকল সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বিশাল আকৃতির ঢেউ সৃষ্টি হবে। যার ফলে সমুদ্র উপকূলীয় শহরগুলো নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যাবে। পানি চলে যাবে দুই মেরুর দিকে। এসময় পুরো পৃথিবীর বায়ুমন্ডল প্রচন্ড গতিবেগের সাথে সম্পূর্ণ পৃথিবী পর্যায়ক্রমে ঘুরতে থাকবে। পৃথিবীর এই অ্যাটমোসফিয়ার এত জোরে ঘুরবে যে পৃথিবীতে সেসময় প্রচন্ড গতিতে বাতাস প্রবাহিত হবে। আর বাতাসের সাথে সাথে কিছুক্ষন পরপর আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটবে ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শুরু হবে ভয়ানক ধুলোর মেঘ জমা। যা শুরু করবে বর্তমানের প্রচণ্ড ঝড়গুলোর চেয়ে দশগুণ প্রচন্ড ঝড় এবং বজ্রপাত। সেই বজ্রপাতের ফলে প্রচন্ড বিদ্যুতায়নের সৃষ্টি হবে। এর সাথে সাথে, হঠাৎ করে পৃথিবী থেমে যাওয়ায় প্রচন্ড ধাক্কার কারনে বাতাসে যে বিশাল ঢেউ বা শকওয়েভের সৃষ্টি হবে, তা পারমানবিক বোমা বিস্ফোরনের শকওয়েভের চাইতে বহুগুন ভারী। পৃথিবীর কেন্দ্রে ভারসাম্য নষ্ট হতে শুরু করবে। আর এতে করে প্রথমত ঘন ঘন তীব্র ভূমিকম্প হতে থাকবে। ভূমিকম্পের পাশাপাশি সেসব স্থানে আগ্নেয়গিরি দেখা যায়; সেখান থেকে ঘন ঘন অনেকক বেশি পরিমানে আগ্নেয়গিরি উত্তাল হতে থাকবে। আগ্নেয়গিরি ধীরে ধীরে অনেক বড় শহরে প্রবেশ করে শহরের যাবতীয় পরিকাঠামোকে ধ্বংস করে দিতে শুরু করবে। তাছাড়াও পৃথিবীর কেন্দ্রাতিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে হারিকেন ঘূর্নিঝড় সৃষ্টি হবে। পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে গেলে পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যও স্থির হয়ে যাবে। দিনরাত বলে কিছু থাকবে না। পৃথিবীর গতি থেমে যাওয়ার পর প্রচণ্ড গতির বায়ুর ঘর্ষণের ফলে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আগুন লেগে যাবে। আর এই আগুন এর জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে ‘অক্সিজেন’! এই ভয়ানক আগুনের ফলে মহাপ্রলয় সৃষ্টি হবে। ওজন স্তর নষ্ট হয়ে যাবে। সৌরমন্ডলীয় বায়ু আমাদের পৃথিবীতে প্রবেশ করে মারাত্মক রেডিয়েশন এর সৃষ্টি করবে ; যার ফলে পৃথিবী আমাদের থাকার অযোগ্য হয়ে পড়বে। পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
এরপরে আসে পৃথিবীর উল্টো দিকে ঘূর্ণন। সেটা শুরু করলেই কেবল সূর্য পশ্চিম দিকে উঠতে পারবে। হঠাৎ করে পৃথিবীর আবর্তন বন্ধ হবে না। লক্ষ কোটি বছর পরে বন্ধ হলেও উল্টো দিকে ঘূর্ণন শুরু করবে না। অত দিনে মানুষ বিকল্প বাসস্থল খুঁজে পাবে যদি টিকে থাকে।
ফলে পশ্চিমে সূর্য উদয় দেখার সুযোগ কোন দিনই আসবে না।