এই মহাকরোনাকালের মধ্যেই গত এপ্রিলে মোদী আমেরিকা থেকে ১২০০ কোটি টাকার সমরাস্ত্র কিনতে প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতকে এই মারণাস্ত্র বিক্রির করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে আমেরিকা। সমরাস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে সব দেশের ওপরে রয়েছে ভারত। স্টকহোমের ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদেন জানানো হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পৃথিবীতে মোট অস্ত্র আমদানির মধ্যে ভারত একাই কিনেছে ১৩ শতাংশ। সেই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল পরবর্তী তিন বছরও। ‘টেন্ডস ইন ইন্টারন্যাশনাল আমর্স ট্রান্সফার ২০১৯’ শীর্ষক আরেক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাপী মোট অস্ত্র আমদানির ৯ দশমিক ২ শতাংশ আমদানি করে ভারত অস্ত্র আমদানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তারা এবছর আমেরিকা থেকে ১৫ কোটি ডলারের অস্ত্র কেনার প্রস্তাব দেয়ার পরেই আরো ৮১ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনবে রাশিয়া থেকে। তার অস্ত্র দরকার। করোনা দমনের চেয়ে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য তিনি জাতীয়তাবাদী চেতনা আরো জাগ্রত করার জন্য প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে যুদ্ধ বাধানোতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
১। বাংলাদেশঃ এনআরসি করে বাংলাদেশের সাথে ঝামেলা পাকানোটা অনেকটাই সেরে রেখেছেন। এখন দ্বন্দ্ব বাধানো খুবই সহজ হবে। লক্ষ লক্ষ বাংলাভাষী মুসলিমকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে ধর্মীয় জিকির তুলতে পারলেই কেল্লা ফতে। এমনিতেই মুসলিম বিরোধী একটা মতাদর্শ তৈরি করে রেখেছে। এই লোকগুলোকে ঠেলে দিতে হবে দাঙ্গাও লাগাতে হবে। তাহলে উগ্রপন্থীহিন্দুরাও মুসলিমদের ঠেলে বাংলাদেশে ঢুকানোর চেষ্টা করবে।
২। পাকিস্তানঃ গত বছর ভারতের লোকসভা নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতীয় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ) কর্মীর উপর আত্মঘাতি হামলায় ৪০ জন কর্মী নিহত হয়। জঙ্গী সংগঠন জয়শ-ই-মোহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে কিন্তু পাকিস্তান নিজেদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালায়। এর ফলে বিজেপি নির্বাচনী নিরুঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনের আগে অতি প্রয়োজনীয় হামলায় বিজেপি ব্যাপকভাবে লাভবান হয়। ফলে এ সময়ে কেন জয়শ-ই-মোহাম্মদ বিজেপির স্বার্থের জন্য হামলা চালালো তার প্রশ্ন উঠবেই। আবার জোশ তুলে সারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত কাশ্মিরীদের উপর হামলা চালানো হল।কাশ্মিরী ছাত্রদের ভর্তি বাতিল করে ও সর্বত্র তাদের বর্জন করে একটি কাশ্মির বিরোধী হাইপ তুলে।কাশ্মিরের জন্য বিশেষ আইন বাতিল হয়ে যায়।
৩। নেপালঃ নেপাল ছিল পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র এবং ভারতের সাথে সুদীর্ঘকাল ধরেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছিল। বিজেপি সরকার বারবার নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিপুল মাত্রায় হস্তক্ষেপ করে, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে সম্পর্কর অবনতি ঘটায়। নেপাল সংকট থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়েই চীনের সাথে হাত মেলায়। সাম্প্রতিক সময়ে তারা ভারতের দখলে থাকা কিছু এলাকাকে নিজেদের দাবী করে মানচিত্র বদল করে। নেপালের সাথে শক্তি প্রয়োগ করে বিজেপে সুবিধা নিতে চাইবে। তবে নেপালের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু হওয়ায় সেখানে বেশি সুবিধা নাও আসতে পারে। আবার ভারতের শত্রু রাষ্ট্র চীনের সাথে সম্পর্ক করার বিষয়টা যদি জনগণকে খাওয়াতে পারে তবে তা কাজেও লাগতে পারে।
৪। চীনঃ ভারতের সীমান্তে থাকা সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রাষ্ট্র চীন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মোদী ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক বেশি উন্নতি করায় চীনের সাথে একটা দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। এমনিতেই পাকিস্তানের সাথে চীনের সুসম্পর্ককে ভারত ভাল চোখে দেখে না। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে চীনের সাথে সীমান্ত নিয়ে সংঘাত হয়েছে। দালাইলামাকে আশ্রয় দেয়াতেও অতীতে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। চীন জুজুর ভয় তুলে ভারত তার সামরিক শক্তি অতি মাত্রায় দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি করছে। চীন এটাকেও ভাল চোখে দেখছে না। খুবিই নিন্দনীয়ভাবে চায়না সেনারা ভারতীয় অন্তত ২০জন সেনাকে তারকাটা লাগানো রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। চীন বুঝে বাংলাদেশ-নেপাল বা পাকিস্তানের জন্যই এতো আয়োজন নয়। ভারত চীনকে মাথায় রেখেই এসব করছে। মোদীর ফাঁদে চীনও যদি পা দিয়ে যুদ্ধ আরো জটিল করে তবে সেটাও মোদীর লাভের খাতাতেই যাবে। ভারতের জনগণের জাতীয়তাবাদী চেতনা গভীরতর করা সম্ভব হবে।
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। জরিপ বলছে তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে আছে। এই ব্যবধান দূর করে বিজেপি চাইবে ক্ষমতায় যেতে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থতা, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থতা, ভারতীয় জনগণের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে ব্যর্থতা ঢাকতে হলে পূর্ব ও পূর্ব উত্তর ফ্রন্টে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ দরকার। ভুটান বাদে এ অঞ্চলের তিন রাষ্ট্র নেপাল, বাংলাদেশ ও চীনকেই ব্যবহার করতে হবে। ভারতের জনগণের ক্ষতি করেও কিভাবে তাদের খুশি রাখতে হয় সেটা বিজেপি ভালই জানে। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ খাওয়ানো ছাড়া বিজেপির কোন পথই খোলা নেই। অসচেতন জনগণও খাওয়ার জন্য হা করে বসে আছে। চীনের সাথে সুবিধা করা সহজ নয়। ইতোমধ্যেই হাতাহাতি লড়াইতেও হত্যার ঘটনা তাদেরই বেশি হয়েছে। তা দিয়েই চীন বিরোধী মনোভাব তৈরিতে কাজ করছে বিজেপি। তারা চায়না পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত চীনের সাথে সমঝোতায় মোদী যাবে হয়তো। তাহলে দেখা যাক যুদ্ধটা আর কার সাথে লাগায়?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৫৪