somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

আমাদের নারী জাগরণের বিভিন্ন অধ্যায়

০১ লা জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক) বেথুনের ছাত্রীদের বৃটিশবিরোধী আন্দোলন

বাংলায় নারী জাগরণ যতটুকুই হয়েছে তাতে ধর্মনিরপেক্ষ বেথুন স্কুল ও কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানে অধ্যয়ন করেই বাংলার বহু নারী জেগে উঠেছিলেন। তারা এখান থেকে বের হয়ে শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখেন। ব্রাহ্ম, হিন্দু ও খৃস্টান নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করলেও ফজিলাতুন্নেছাসহ খুব কম সংখ্যক মুসলিম নারী শিক্ষাগ্রহণে এগিয়ে আসেন। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে। বৃটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া কয়েকজন হলেন-

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারঃ মাস্টারদা সূর্যসেনের নির্দেশে চট্টগ্রামে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে একজনকে হত্যা ও ১১ জনকে আহত করে।
কল্পনা দত্তঃ কলকাতা থেকে তিনি চট্টগ্রামে বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন। নিজে তৈরি করেন গান কটন। তিনি মাস্টারদা সূর্যসেনের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মীতে যোগ দেন এবং তাঁর সাথে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
ইলা মিত্রঃ তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম অগ্রসৈনিক। শিক্ষা বিস্তার ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। তিনি নাচোলের রাণীমা নামে খ্যাত ছিলেন। চারবার পশ্চিমবঙ্গের লোকসভার সদস্য ছিলেন।
লীলা নাগঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী। বৃটিশবিরোধী আন্দোলন ও নারী জাগরণের পথিকৃত। ঢাকা ও কলকাতায় অনেকগুলো নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
বীণা দাসঃ বীণা দাস ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবের নেত্রী ছিলেন। বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের উপর পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন। বড় বোন কল্যাণী দাস ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
কমলা দাশগুপ্তঃ বিক্রমপুরের মেয়ে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সশস্ত্র সংগ্রামী। বিপ্লবীদের জন্য বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংরক্ষণ করতেন এবং বহন করতেন। মন্দিরা পত্রিকা সম্পাদনা করতেন ও গবেষক ও সাহিত্যিক ছিলেন।

২) শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড


বেগম রোকেয়া, মহাশ্বেতা দেবী, মৈত্রেয় দেবী, তসলিমা নাসরিনসহ অনেক নারীই সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পান। তাদের নারী জাগরণমূলক লেখা নারীদের উদ্বুদ্ধ করে। সংগীতেই নারীরা সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। এমনকি পুরুষদের সাথে সমান তালেই তারা এগিয়ে চলছেন। বাইজী-নর্তকীরা শুরু করলেও এক সময় সুশীল নারীরাই সংগীতকে এগিয়ে নেন। প্রতিভা বসু নজরুলের গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পান। বাংলাদেশে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও মমতাজ দীর্ঘকাল জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। শ্রেয়া ঘোষাল সারা ভারতেরই অন্যতম সেরা শিল্পী আর পশ্চিম বঙ্গে মৌসুমী ভৌমিক জনপ্রিয়তায় সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিনেমা নাটকের অভিনেত্রীরাও ভূমিকা রাখছেন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বহু নারীই এখন মন্ত্রী, সচিব, প্রশাসক, চিকিৎসক, ব্যাংকার, আইনজীবী ও শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

৩। এনজিও কর্মকাণ্ড
বাংলাদেশে নারীদের ঘর থেকে বের করে আনতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে এনজিওগুলো। নারী নেতৃত্ব ও গণসচেতনতার উপর দুটি বড় পরিসরে গবেষণা করে দেখেছি এনজিওদের ভূমিকা। এনজিও কর্মকাণ্ড যেসকল স্থানে বেশি সেখানে নারীরা নেতৃত্বে বেশি আসে, ভোট দিতে বেশি আসে, সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে পারে, পরিবারে সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, আশা, প্রশিকা, টিএমএসএস, ব্যুরো বাংলাদেশ, ভোসড, আইন ও শালিস কেন্দ্র ইত্যাদি অসংখ্য এনজিও সারাদেশে নারীদের নিয়ে কাজ করেছে। ওহাবী চেতনার তীব্র ধর্মান্ধতা থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসতে পেরেছে।

৪। গার্মেন্টস
নারীদের সাবলম্বি করতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে গার্মেন্টস খাত। এখানে স্বল্পশিক্ষিত বা সুশিক্ষিত সব পর্যায়ের নারীরাই কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। এতে নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কর্মক্ষেত্র পেলেই নারীরা সংসারের নিপীড়নের জাল ছিন্ন করতে পারছে। আত্মমর্যাদা লাভ করে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে। লক্ষ লক্ষ নারী আয় করে আবার তা পরিবারের জন্যও পাঠাতে পারছে। এখানে নারীদের স্বল্প বেতন দিয়ে শোষণ করছে মালিক পক্ষ। এ নিয়ে নারীনেত্রীরাই কাজ করে যাচ্ছে।

এখন স্কুলগুলোতে নারীর হার পুরুষের চেয়ে বেশি। উচ্চ শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ ৪০% এর বেশি। উদ্যোক্তা হিসেবেই আমাদের নারীরা প্রতিষ্ঠা পায় নি। সরকার এখাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে, ঋণ দিয়ে ও নিরাপত্তা দিয়ে নারীদের এগিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে। একবার শুরু করতে পারলেই নারীরা নিজেরাই এগিয়ে যেতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×