somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

নারীরা কেন জঙ্গীবাদে জড়ায়?

০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ আমার এক সহকর্মী যিনি কুয়েটের সাবেক ছাত্র নেতা ছিলেন তার সাথে জঙ্গীবাদ নিয়ে আলাপ করলাম। কুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী কেন জঙ্গীগোষ্ঠীর সাথে জড়িয়ে পড়েছিল তাই বুঝার চেষ্টা করছিলাম। যে কজন জঙ্গীবাদে জড়িয়ে আফগানিস্তানে তালেবানে বা সিরিয়ায় আইএসে যোগ দিয়েছিল তাদের বৈশিষ্ট্য জানলাম- তারা কারো সাথে মিশতো না, খেলাধুলা করতো না, চুপচাপ মনমরা থাকতো, আড্ডা দিতো না, প্রতিবাদ করতো না, গোবেচারা টাইপ।

কি বুঝা যায়? স্পষ্টতই ওই ছেলেদের- ১) সামাজিকীকরণ ঘটেনি, ২) মানবিক বিকাশ ঘটেনি ও ৩) পারিবারিক সমস্যা ছিল। ফলে বিচার বিবেচনা করার জন্য যে পরিমাণ মেধার বিকাশ তাদের দরকার ছিল তা তাদের ছিল না। তারা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছিল।


একজন নারীর ক্ষেত্রে কি ঘটে? অধিকাংশ পরিবার তাকে সমাজের ভালমন্দ বুঝতে দেয় না। যতটা পারে অজ্ঞ রাখার চেষ্টা করে। অভিজ্ঞতা থেকেই বহু জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়। ফলে অনেকের পাঠ্যবইর বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা কম হয়ে যায়। এই কারণে সিক্সথ সেন্স অধিকতর প্রখর থাকার পরও তারা বিভ্রান্ত হয়ে যান। নিজের আয় না থাকায়- পিতা, স্বামী বা পুত্রের মতাদর্শ তাকে গ্রহণ করতেই হয়। একসময় সেটাই আকড়ে ধরে। আজ প্রথম আলো যে রিপোর্ট টি দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে- ‘স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ৮৫ জন নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার নারীদের বড় অংশই উগ্রবাদে দীক্ষিত ছিলেন না। শতকরা ৫২ জন উদ্বুদ্ধ হওয়ার পেছনে একাধিক কারণের কথা বলেছেন। শতকরা ২১ ভাগ জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন স্বামীর কারণে। তা ছাড়া পরিবার উদ্বুদ্ধ করেছে ৭ শতাংশ নারীকে, বাবা, ভাই, ছেলে ও বন্ধু ১৪ শতাংশ, ধর্মীয় গুরু ৪ শতাংশকে ও ৩ শতাংশ অনলাইন ও ফেসবুকে উদ্বুদ্ধ হন।’ এখানে হিসাবটা জটিল করে দিয়েছে। সহজ করে বললে যারা তথ্য দিয়েছেন তাদের ৪০% জঙ্গীবাদে জড়িয়েছেন স্বামীর কারণে, পরিবার বন্ধুদের কারণে ৪০% অর্থাৎ ৮০ ভাগ নারী জঙ্গীবাদে জড়িয়েছে স্বামী, পিতা, ভাই, পুত্র ও বন্ধুদের কারণে। আর অনলাইনে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়েছে ৬%।

এই তথ্য এটাই নিশ্চিত করে যে, তারা বুঝেশুনে নয় চাপে পড়ে, বাধ্য হয়ে জঙ্গীবাদে জড়িয়েছে। স্বামী বা পিতা যখন প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছে যে, এটাই সঠিক পথ, এ পথে না আসলে বাড়ি থাকতে পাড়বে না। একেতো নিজের শক্তিশালী ভাবাদর্শ গড়ে উঠেনি অন্যদিকে চাপ। সে জড়িয়ে যায়। পুরুষ জঙ্গিদের স্ত্রী ও কন্যারাও অন্য নারীদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে বিপথগামী করে দেয়।


আমাদের বিক্রমপুরের এক মেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়তো। সে তার এক রুমমেট দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে জড়িয়ে যায়। ইন্টার্নী শেষ না করেই বিয়ে করে আরেক উগ্রবাদীকে যে একটি দোকানের সেলসম্যান। তাদের কন্যাটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে ডাক্তার দেখায়নি। সে মারা যায়। মেয়েটি ছিল আামর এক সহকর্মীর কাজিন। পরিবারের সাথেও ডিটাচড হয়ে যায়। রাজশাহী বোর্ডের মেধাতালিকায় থাকা সুমাইয়াও জড়িয়ে গিয়েছিল জঙ্গিবাদে। ধরা পড়ে এখন জেলে। এমন আরো কিছু মেধাবী নারীর কথা আমরা বিভিন্ন সময়ে পড়েছি। পাঠ্যবইর বাইরে মননশীল ও সৃজনশীল লেখা না পড়া এবং সামাজিকীকরণ না ঘটনাতেই এমনটা হয়। আমি বেশ কয়েকটি ঘটনা দেখেছি- পারিবারিক তীব্র সংকটে ভাই মাদকাসক্ত ও বোন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল অথবা দুই ভাইর একজন মাদকাসক্ত আরেকজন উগ্রপন্থী। তারা পারিবারিক সংকট থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছে যে যার মতো করে। ধনাঢ্য পরিবারেও এমনটা ঘটে ওই পারিবারিক সংকটের কারণেই।

সামাজিক মাধ্যমে যারা মানুষকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে তাদের গ্রেফতার করার নজির খুবই কম। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলাও করে না। তারা কোন অনুভূতিতে আঘাতও দেন না। সংখ্যালঘুদের ধর্মে আঘাত দিলেও মামলা হয় না। কয়েকজন কুখ্যাত জঙ্গি যেহেতু অনলাইন-ফেসবুক থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে তাই তাদেরও নজরদারিতে রাখা দরকার। এরচেয়েও ভাল সমাধান হল- মুক্তচিন্তা করার অবাধ সুযোগ দেয়া। সবাই মত প্রকাশ করবে এবং মানুষ সব মত মিলিয়ে সঠিকটা বুঝতে পারবে। তাদের একটি স্বচ্ছ, সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবাদর্শ তৈরি হবে। নইলে নারীদের জঙ্গিবাদ থেকে মুক্তরাখা কঠিন হবে।

জঙ্গিনেতারা কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নারীকে টার্গেট করে। প্রথমে তারা নামাজ, রোজা ও ভালো ভালো কথা বলে ধর্মভীরু নারীদের উদ্বুদ্ধ করে। এরপরই ওই নারীদের আস্তে আস্তে জঙ্গি কাজে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে। তবে এ ক্ষেত্রে খুবই কম সফল হয় বলে ধরাপড়া জঙ্গিরা পুলিশকে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন। কিন্তু যখন কেউ পারিবারিকভাবে জঙ্গি হয়, তখন তার স্ত্রী, সন্তান সবাই জঙ্গি হয়ে যায়। এই মতাদর্শ নিয়েই শিশুরা বড় হয়ে ওঠে। নারীরা জঙ্গি কাজে জড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে একজন বিবাহিত ব্যক্তি যদি হঠাৎ জঙ্গি দলে অংশ নেয়, তখন সে তার স্ত্রীকেও জঙ্গি কাজে জড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। যখন কারও স্ত্রীর জঙ্গি কাজে সম্পৃক্ত হতে রাজি না হয় তখন ওই ব্যক্তি স্ত্রী, সন্তান ফেলে বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যায়। এটাকে তারা হিজরত মনে করে। আরেকটি অংশ হলো, কেউ যদি অবিবাহিত থাকা অবস্থায় জঙ্গি কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হয় এবং যখন বিয়ে করতে যায় তখন জঙ্গি পরিবারের কোন মেয়েকেই বিয়ে করে। জঙ্গিরা নিজেরা নিজেরাই এ বিয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। মেয়েরা জঙ্গিদের ফাঁদ থেকে বের হতে পারে না।

করোনাকালে অনেকগুলো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে বিশ্বব্যাপী। গত মাসে নাইজেরিয়াতে জঙ্গি হামলায় ৬৯ জন মুসলিম নিহত হয়েছেন। গ্রামের লোকজন জঙ্গিদের গতিবিধির তথ্য নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়ে আসছে সন্দেহে ওই জঙ্গিরা গ্রামটিতে ধ্বংসলীলা চালায়। গত এপ্রিলে মোজাম্বিকের জঙ্গিরা ওই গ্রামের তরুণদের দলে ভেড়াতে চেষ্টা করলে কয়েকজন এর প্রতিবাদ করে; এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জঙ্গিরা ৫২ জন মুসলিমকে হত্যা করে। এছাড়া পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাশ্মির ও আফ্রিকার কয়েকটি স্থানে জঙ্গি হামলা হয়েছে। হলিআর্টিজন হামলা ছিল বাংলাদেশে ভয়াবহ। এরপর দুবছর আগে জঙ্গি হামলায় নিহত হন লেখক-প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু। প্রকাশ্য জঙ্গি হামলা পরিসংখ্যানগতভাবে অবশ্যই কমেছে। পুলিশকর্তারা বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছেন বাংলাদেশে জঙ্গিরা কোনঠাসা। হলি আর্টিজানে হামলার পরে অনেকগুলো বাড়ি ঘেড়াও করে পুলিশ জঙ্গিদের সাথে বন্দুকযুদ্ধ চালিয়ে তাদের দমন করেছে। ক্রসফায়ারেও বেশ কিছু জঙ্গি মারা পড়েছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি পুরুষ জঙ্গির সাথে তাদের স্ত্রীরাও জঙ্গি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বড় কোন ঘটনা ঘটেনি।

মৌলবাদ বিস্তার লাভ করলে তা থেকে উগ্রমৌলবাদ সৃষ্টি হবেই। উগ্রমৌলবাদীদের মধ্যে কে কখন কোথায় জঙ্গি হয়ে উঠবে তা নির্ধারণ করা মুশকিল। আমরা নিউজিল্যান্ডে দেখলাম মাত্র একজন বর্ণবাদী ও জাতীয়তাবাদীই অর্ধশত মুসল্লিকে মসজিদের ভিতরেই হত্যা করে ফেললো। একজন জঙ্গিও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে কখনো কখনো। গত দু-তিন মাসে পৃথিবীতে অনেকগুলো জঙ্গি হামলা হয়েছে। তাতে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, এই দুর্যোগকালে জঙ্গিরা পৃথিবীর যে কোন স্থানেই হামলা চালাতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৫৫
৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×