চার্লস ডারউইন ১৮৫৯ সালে তার বই অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস প্রকাশ করেন। প্রথমে এটা বিজ্ঞানীদেরও সমালোচনার মুখে পড়ে। ওই সময়ে জীবের পরিবর্তনের/জীবের উৎপত্তির/ এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির উদ্ভবের নানান ধারণা প্রচলিত ছিল। এগুলোর কোনটাই পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত ছিল না। ১৯৪০ এর পরে মুলধারার জীববিজ্ঞানীরা সকল বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে বিবর্তনকে স্বীকৃতি দেন।তারা বিবর্তনকে পর্যবেক্ষণ করে নব্য ডারউইন সংশ্লেষণ ও বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করেন।বর্তমানে অন্তত ৯ ধরনের (৯টি নয়) প্রমাণ রয়েছে। বৈজ্ঞানিক মহল সম্পুর্ণভাবে একে স্বীকার করে নেয়। বাংলাদেশের বহু মানুষই বিবর্তনবাদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা পোষণ করে এটিকে হাস্যকর করে তুলতে চায়। এর কারণ হল আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বিবর্তন সম্পর্কে ভুল তথ্য উপস্থাপন। বাংলাদেশের দু‘ধরনের মানুষ, দু‘ধরনের বিবর্তনবাদ জানে- অল্প মানুষ ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও অধিকাংশ মানুষ সাঈদীর ভুয়া বিবর্তনবাদ।
সাঈদীর ভুয়া বিবর্তনবাদে কি বলে?
বিবর্তনবাদ একটি তত্ত্ব মাত্র, এটি সত্যি কিছু নয়। তত্ত্ব হল ধারণা, সেই ধারণাতো বিজ্ঞান নয়।বিবর্তনবাদ পরীক্ষা করা যায় না। বিবর্তনবাদ বলে বানর থেকে মানুষ হয়েছে। আমাদের পাছায় নাকি লেজ ছিল? আপনারা অনেকেই পাছায় হাত দিয়ে পরীক্ষা করছেন লেজ ছিল কি না? যদি তাই হতো তাহলে পৃথিবীর সকল বানর মানুষ হয়ে যেতো। কিন্তু আমরা দেখছি এখনো বহু বানর রয়ে গেছে। এর থেকেই প্রমাণ হয় বানর থেকে মানুষ হয়নি। বিবর্তন হল সারভাইবাল দা ফিটেস্ট। জিরাফ লম্বা গাছের পাতা খাওয়ার চেষ্টা করতে করতে গলা বড় করে ফেলেছে। হাজার হাজার বিজ্ঞানীই বিবর্তনবাদ স্বীকার করেন না। আপনারা কি কেউ বানরকে মানুষ হতে দেখেছেন, ছাগলকে গরু হতে?
কিছু ছাগু এটাকেই প্রকৃত বিবর্তনবাদ ধরে বসে আছে। ওরা জানেই না এগুলো পুরোটাই ভুয়া ও মিথ্যাচার। বিবর্তনবাদকে বিতর্কিত করতেই এসব মিথ্যাচার করা হয়।
ডারউইনের বিবর্তনবাদ কি বলে?
সব জীবই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়েছে। জীব স্থির নয়, বিবর্তনের মাধ্যমে তাদের পরিবর্তন ঘটে আসছে। তাদের কাউকেই পৃথক পৃথকভাবে তৈরি করা হয়নি। তারা সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তন বা পরিবর্তনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়েছে। প্রকৃতিতে বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানত এই পরিবর্তনগুলো ঘটে থাকে। পূর্বসুরী প্রজাতি থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটতে হাজার, লক্ষ এমনকি কোটি বছর লেগে যেতে পারে। বিবর্তন ঘটে অত্যন্ত মন্থর গতিতে, প্রাকৃতিক নির্বাচন, মিউটেশন, জেনেটিক ড্রিফট, ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা, বংশীয় বা জেনেটিক রিকম্বিনেশনসহ বিভিন্ন কারণে প্রজাতির মধ্যে ছোট ছোট পরিবর্তন ঘটতে থাকে। আর বহু মাইক্রো-বিবর্তনের মাধ্যমে ঘটা সম্মিলিত পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে এক সময় প্রজাতি বা প্রজাতিটির একটি অংশ অন্য আরেকটি প্রজাতিতে পরিণত হয়। অনেক সময় মেগা বিবর্তন বা বিবর্তনে উল্লম্ফন ঘটে। এগুলো এক প্রজন্মে ঘটে না, বিশেষ কোন সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ বছরের পরিবর্তে হাজার হাজার বছর লাগে এই তড়িৎ বিবর্তনগুলো ঘটতে। প্রজাতির উদ্ভব বা জীবের ম্যাক্রো-পরিবর্তনের তত্ত্বটি আজকে ফসিল রেকর্ড ছাড়াও আধুনিক বিজ্ঞানের বহু শাখার সাহায্যে বহু উপায়ে পরীক্ষা করা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:২৫