somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

ডারউইন কি বাংলাদেশে ঘৃণিত!

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশে একটা শ্রেণির কাছে ডারউইন খুবই ঘৃণিত মানুষ। তাদের চোখে মিরজাফর, হিটলার, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, খন্দকার মোশতাক ইত্যাদি ঘৃণিত মানুষের চেয়েও ডারউইন বেশি ঘৃণিত। অথচ বলা হয় সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের একজন ডারউইন এবং সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী তত্ত্ব ডারউইনের বিবর্তনবাদ। শুধু বাংলাদেশেই নয় দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই ডারউইনকে বিতর্কিত ও নিন্দিত বিজ্ঞানী বানানো হয়েছে। মূলত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভ্রান্ত ধারণার কারণেই তারা অনবরত বিবর্তনবাদ সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রকাশ করায় আজ শিক্ষিত সমাজেও বিবর্তনবাদ সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। ভুল ধারণা তৈরি করতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন ওয়াজের বক্তারা। তারা বিবর্তনবাদ সম্পর্কে কিছু না জেনেই বা ভুল জেনেই তা প্রকাশ করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়েছেন। এগুলো প্রতিরোধ করা যায়নি।

অধিকাংশ মানুষই বিবর্তনবাদ সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে। তারা মনে করে-
• বিবর্তন বাদ হল- বানর থেকে মানুষ হওয়া। এটা সত্য হলে কোন বানর থাকতো না, সবাই মানুষ হয়ে যেতো।
• বিবর্তনবাদ একটি তত্ত্ব মাত্র। তত্ত্ব প্রমাণিত কিছু নয় একটা ধারণা মাত্র। বিবর্তনবাদের কোন প্রমাণ হয়নি এখনো। বহু বিজ্ঞানীই এটাকে বাতিল করে দিয়েছেন।
• বিবর্তন হল সারভাইবাল দা ফিটেস্ট। এটা আমাদের ধর্মগ্রন্থেই আছে। জিরাফ লম্বা গাছের পাতা খাওয়ার চেষ্টা করতে করতে গলা লম্বা করে ফেলেছে।

এই ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত ভাবেই। আমাদের শিক্ষক গাজী আজমল স্যার ছিলেন দেশের সেরা জীববিজ্ঞানের শিক্ষক। খুবই আশায় ছিলাম তিনিই পড়াবেন বিবর্তনবাদ। স্যার ছুটিতে থাকায় পড়াতে আসলেন হুজুর মিজান স্যার। তিনি ঢুকেই উপরের কথাগুলোও বললেন ভূমিকা হিসেবে। আরো বললেন, পড়াতে হয় বলেই পড়াচ্ছেন। পরীক্ষায় আসবে না। এগুলো বিশ্বাসও করবে না।

অনেকের মতোই আমারও ওখানেই থেমে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের ওই বই আমার মধ্যে একটি সংশয় রোপন করে দিয়েছিল। আমার প্রশ্নগুলোর জবাবও ছিল। বিবর্তনবাদ পড়া ছাড়িনি। আরো পড়তে পড়তেই একসময় বুঝতে পারি। হিন্দু ও মুসলিম মৌলবাদীরা কেন ডারউইনের মুণ্ডুপাত করে তাও বুঝতে পারি। ডারউইনের বিবর্তনবাদ সমস্ত অলৌকিক বিশ্বাসের উপরই আঘাত হেনেছে। সৃষ্টিবাদ নস্যাৎ হয়ে গেলে বহুজনের জীবিকাই শেষ হয়ে যাবে। খাবে কি করে? সৃষ্টিবাদীরা ডারউইনের মুখের সাথে বানরের শরীর যুক্ত করে একটি ছবি প্রকাশ করে খুবই মজা পায়। মনে হয় তাদের প্রিয় ছবি ওটি। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ মনে করে, বিবর্তনবাদ হাস্যকর ও মিথ্যা। তাদের এই মনে করাতেই যেনো বিবর্তনবাদ ভুল হয়ে যাবে। বাস্তবিক আধুনিক বিজ্ঞানীরা এবং উন্নত চিন্তার মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে, সবই বিবর্তনের ফল। বিবর্তন তত্ত্বের উপর ভর করেই এগিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞান, অণুজীববিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান। বিবর্তন বাদের কারণেই এক প্রাণির উপর ওষুধ প্রয়োগ করে তার সফলতা পাওয়া যাচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বারবারই বলছেন, করোনাভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে বিবর্তিত। এটি বাদুর থেকে বনরুই জাতীয় একটি বন্যপ্রাণীর দেহ থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। কিন্তু মৌলবাদীরা- ট্রাম্পের সেই কথাকেই গুরুত্ব দিয়ে বলতে চায়, এটি চীনের পরীক্ষাগারেই তৈরি হয়েছে বা কানাডার একদল বিজ্ঞানী ওহানে এসে এটি ছড়িয়ে গেছে। তবুও বিজ্ঞানীদের কথা মানবে না। শুধু করোনাভাইরাসই নয়- প্লেগ, কলেরা, স্পেনিশ ফ্লো ইত্যাদি অণুজীবের ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি এগুলো বারবারই বিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তনের কারণেই আজ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে মৃত্যুহার বিভিন্ন। এক্ষেত্রে মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কাজ করছে। আবার প্রোটিন আকর্ষি বিবর্তিত হয়ে আরো শক্তিশালী হয়েছে কিন্তু তারা মৃত্যুঘটানোর সামর্থ্য কিছুটা হারিয়েছে। ফলে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং মৃত্যুহার কমছে।

আমরা অবাক হইনি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চেলারা ঘোষণা দিল- গোমূত্র সেবন করলে আর করোনা হবে না, গোবরে অবগাহন করলে করোনা ধরবে না। কোটি কোটি বিজেপিভক্ত মৌলবাদী দেখলো গোমূত্র বা গোবরে কাজ হচ্ছে না, ঢাক-ঢোল পিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। তখন মোদীজি ঘোষণা দিলেন, তারা ১৫ আগস্ট থেকেই টিকা দেয়া শুরু করবে। মানে শেষ পর্যন্ত মোদীকেও যেতে হল বিজ্ঞানের কাছেই। অবাক হইনি, বাংলাদেশে মুফতি আমির হামযা যখন ঘোষণা দিল- মুসলমানদের করোনা হবে না, হলে কোরান মিথ্যা। কাজী ইব্রাহিম স্বপ্নে পায় করোনা ওষুধ, করোনার সাথে কথাও বলেন তখন তাকে সুস্থ মানুষ ভাবা যায় না। আরো মাওলানারাও বিদ্রোহ করে ঘোষণা দিলেন, তারা সামাজিক দূরত্ব মানবেন না। শেষ পর্যন্ত অবাক করে দিয়ে তারা সবই মানলেন। মক্কাতেও হজ্ব হল সীমিত পরিসরে সামাজিক দূরত্ব মেনে। তার আগে মক্কা বন্ধও থাকলো অনেক দিন। আশার জায়গা হল, তারাও বিজ্ঞানীদের নির্দেশনা মেনে নিলেন। থানকুনি পাতা, কালোজিরা, রসুন যে করোনাভাইরাস ঠেকাতে পারে না তাও মেনে নিতে বাধ্য হলেন। ইসকন সদস্যরা প্রার্থণা করতে আক্রান্ত হলেন উল্টো ৪৩ জন। তাবলিগ কর্মীরা করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আক্রান্ত হলেন শতে শতে। গির্জায় প্রার্থণা করতে গিয়ে ফ্রান্সকে ভোগিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়াতে ছড়িয়েছে প্রার্থণালয় থেকেই। এখন সবাই তাকিয়ে আছে- কবে টিকা আনবেন বিজ্ঞানীরা, সবাই মেনে নিচ্ছেন- চিকিৎসকরা কি বলছেন তা!

টিকা আবিষ্কার করতে গিয়ে মাথায় রাখতে হচ্ছে ভাইরাসের বিবর্তনকে। আজ এই দুঃসময়ে এই করোনাভাইরাসও প্রমাণ করে দিচ্ছে বিবর্তনবাদকেই। ডারউইন কি মুচকি হাসছেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৬
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×