বছর দেড়েক আগের কথা।
আমার দীর্ঘদিনের রুমমেটের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ইতি ঘটেছিলো তখন।তাই সে রুম ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।কিছু কারনবশত নতুন রুমমেট পেতে দেরি হয়ে গিয়েছিলো।যার ফলে আমার রুমে আমাকে একাই বসবাস করতে হয়েছিলো প্রায় তিন মাস। সবসময় একা!কথা বলার মানুষ নেই কোনো।চার বছরের পুরোনো রুমমেট যে অংশে থাকতো সেখানে কেউ নেই।একেবারে ফাঁকা।এ এক অদ্ভূত শূন্যতা।একা একা রুমে ভালো লাগত না।একাকীত্ব গ্রাস করে ফেলতো।তাই রুমে যত কম থেকে পারা যায় তার চেষ্টা করতাম।দিনের বেলা ত ক্যাম্পাসে ক্লাস,আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিতাম।কিন্তু রাতে তো থাকতেই হয়।রাতটা খুবই দূর্বিসহ কাটত। আলোই জ্বালাতাম না।প্রচণ্ড শূন্যতা অনুভব করছিলাম।
কিন্তু কয়েকদিন পর আমি একটা জিনিস লক্ষ করলাম।আমার রুমে টুকরো টুকরো কাগজ।দু-তিনদিন পরপরই দেখা যাচ্ছে।অনুভব করলাম আমার রুমে আমি একা নই।আরেকজন আছে।কাজকর্মের ধরন দেখে বুঝলাম একটি ইঁদুর।আমার বিছানার পাশে পায়ের দিকে একটি জুতার বাক্স ছিলো।প্রতি রাতে আমি টের পেতাম সে দৌড়ে গিয়ে সেই বাক্সে ঢুকছে।তাকে কখনোই জ্বালাতন করিনি।তার উপস্থিতি বিরক্তি উৎপাদন করে নি কখনোই। মনে হতো যেন আমি আমার রুমে একা নই।
ফাইনাল পরীক্ষা ছিল সামনে। তাই একটু আমার বইপত্রের সাথে কুশল বিনিময় করতে গিয়েছিলাম।সবই ঠিক ছিল।কিন্তু নির্মলেন্দু গুণের 'জন্ম দিও বঙ্গে' বইটি খুলেই দেখতে পেলাম খুব শৈল্পিকভাবে আমার বইয়ের কিছু পৃষ্ঠা কেটে রেখেছে কেউ।নকশা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার কাজ।তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ইঁদুর মহাশয় বেছে বেছে বই থেকে মাত্র তিনটি কবিতা কেঁটেছেন। কবিতা গুলো হলো,
১. একটি মুরগী কবিতা,
২. কামপত্র এবং
৩. বোদলেয়ারের বিড়াল।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৫৬