somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরল বিশ্বাস

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপু আজ সকালে থানায় এসেছে একটা অভিযোগ নিয়ে। অভিযোগ হয়তো বড় কিছু না।আবার অনেক কিছু।তার অনেকগুলো টাকা খোয়া গেছে। প্রতারিত হয়েছে সে।প্রতারণার মামলা করার জন্যই এসেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার অভিযোগ নিলো। ডায়েরিটাও করে ফেললো।কিন্তু তাকে যেতে দিলো না। অন্য একটা রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বললো।আধা ঘন্টা হয়ে গেল কারো কোনো খবর নেই। রুমে সে একা ছিলো না যদিও। তার বিপরীত দিকেই আরেকজন মেয়ে বসে ছিলো। সে মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলো এখানে আসার কারণ। জানা গেল সেও প্রতারিত হয়েছে।কিন্তু ধরণটা বললো না।

প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পরেই দুজন মহিলা কনস্টেবল ঢুকলো রুমে সাথে একজন মহিলা অফিসার। অফিসার তার সামনে একটা অভিযোগপত্র ধরে সেটা পড়ে নিশ্চিত হতে বললো। মেয়েটা পড়ে নিশ্চিত করার পরপরই অফিসার প্রথমে মেয়েটাকে চড় মেরে নিচে ফেলে দিলো।এরপর পায়ের বুট দিয়ে লাথি মারতে মারতে বললো-

"ভালোবাসা দিয়া গাঞ্জুট্টি ভালো করতে গেছিলি!! ফল পাইছছ না! দেখ ক্যামনে ভালোবাসা সারা দুনিয়ায় ছড়াইয়া দিছে।"

বলেই মারতে লাগলো পুনরায়। কিছুক্ষণ মারার পরে মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলো-

"আর করবি এমন।বলদ মাইয়া কোথাকার!!"

মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বললো

"আমার কী দোষ? ও বললো, বাবু! একবার দেখেই ডিলিট করে দেব।আমি সরল বিশ্বাসে দিয়ে দিছি।ও যে ছড়িয়ে দেবে তা কি জানতাম??"

"ওরে সরল বিশ্বাসী রে!!" বলে আবার মারতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর যখন মার শেষ হলো তখন এরকম ভুল আর করবো না মর্মে মুচলেকা নিয়ে মেয়েকে ছেড়ে দেয়া হলো।আর এটাও বলে দিলো যে তার অভিযোগের সঠিক সুরাহা হয়ে যাবে। চিন্তা যেন না করে।আর এমন ভুল যেন ভবিষ্যতে আর না করে।

এতক্ষণ পুলিশ আর মেয়ের কাণ্ডকারখানা দেখছিলো অপু। মেয়েটা আর পুলিশ ছাড়া রুমে আর সে ই আছে একমাত্র। একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল অপুর শিরদাড়া বেয়ে। সে চলে যাবে বলে মনস্থির করলো।কিন্তু ভয়ে জায়গা থেকেই উঠতে পারলো না।তার সামনে দিয়েই মেয়েটা সহ পুলিশগুলো চলে গেল তাকে রুমে রেখে।এবার দুজন পুরুষ কনস্টেবলসহ একজন এস আই ঢুকলো রুমে।তার হাতে বাঁশের কঞ্চি শোভা পাচ্ছে একটা। অপুকে অভিযোগ পড়ে দেখতে বললো না। জিজ্ঞাসা করলো,

"বিকাশে ট্যাক্স পে করছছ!তাই না?”

"জ্বি স্যার"

"গিফট কই?"

"কাস্টমসে।"

"তুই ও কি সরল বিশ্বাসে টাকা দিছছ?"

"জ্বি স্যার।"

"তুই তো দ্যাহা যায় মাল্টি। একই লগে বলদ আর লোভী।"

বলেই দুই কন্সটেবলকে অপুর দুই হাত ধরতে বললো। এরপর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে সপাং সপাং শব্দে অপুর পশ্চাদ্দেশে পেটাতে লাগলো এস আই।কিছুক্ষণ পর তার কাছ থেকেও মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিলো।তাকেও অভিযোগের সুরাহা করার আশ্বাস দিয়ে বিদায় করে দিলো।

ওপরের পরিস্থিতি কাল্পনিক হলেও অপু এবং মেয়েটার ঘটনা সত্যি। চাইলেই কিন্তু এসব প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শুধু দরকার নিজের সচেতনতা। যে জিনিস কোনোমতেই আমার পাওয়ার কথা না,সেই জিনিস আমাকে অফার করা হচ্ছে মানেই এতে ভেজাল আছে।এখানে সরল বিশ্বাস ধোপে টিকবে না। এসএসসি পাশেই লাখ টাকার চাকুরি কিংবা কানাডা সেটেলড পাত্রীর জন্য পাত্র চাই সবই একই ধরণের প্রতারণা।একটু বুদ্ধি খাটালেই এসব থেকে বাঁচা যায়। কিন্তু মানুষের লোভ সীমাহীন। গিফট এসেছে।কাস্টমস থেকে খালাস করতে হবে। এজন্য টাকা দিয়ে দিচ্ছে।বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে টাকা দিয়ে দিচ্ছে।

আর মেয়েদের সাথে ঘটা ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ। বাবু চাওয়ামাত্রই ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে দিচ্ছে।পরে বাবু সেটা ছড়িয়ে দিচ্ছে।অথচ সে যদি না দিতো তাহলে এসবের কিছুই ঘটতো না। না দিলে কী হবে? বাবু চলে যাবে? গেলে যাক। নিজের সম্মান নিজের কাছে।নিজেই নিজের সম্মান রক্ষা না করলে অন্য কেউ আসবে না রক্ষা করতে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে যে "প্রতারকদের নির্মূল করা যাচ্ছে না কেন?তারা তো সংখ্যায় কম।" আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে তারা বের হয়ে যায়। ধরা যাক কোনো প্রতারককে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হলো। তার বিরুদ্ধে সাধারণ প্রতারণার মামলা হবে। যে মামলায় একশো বারে দুইশো বার জামিন পাওয়া যায়। সে এবার জামিন নিয়ে অন্য কোনো জেলায় অপকর্ম করবে। এবার সেই জেলায় আবার নতুন করে অভিযোগ গঠন করে মামলা হতে হতে সে অন্য জেলায় গিয়ে ঘাঁটি গাড়বে। গ্রেফতার হলে আবার জামিন নিয়ে নেবে।

তাহলে এখন উপায় কী? উপায় হচ্ছে আমাদের নিজেদেরই সচেতন হওয়া। প্রতারকরা কিন্তু কাওকে জোর করছে না টাকা দিতে। সরল বিশ্বাসী লোকগুলোই কিন্তু নিজেদের মাথা পেতে দিচ্ছে কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার জন্য। সুতরাং প্রতারকেরা যদি তাদের কাস্টমার না পায় তাহলে তাদের ব্যবসা এমনিই বন্ধ হয়ে যাবে। আর তাই আমি মনে করি এসব সরল বিশ্বাসী লোকদের ধরে হালকা প্যাদানী দিলেই এসব প্রতারণার কেস কমে যাবে।

আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো সরলভাবে কাওকে বিশ্বাস না করে বক্রভাবে চিন্তা করতে হবে। আমাকে যে জিনিসটি দেয়ার কথা বলা হচ্ছে সেটা আমার আদৌ পাওয়ার কথা কি না ।তাহলেই আর সরল বিশ্বাসে কেউ প্রতারিত হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৪
৯টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×