somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বাড়ি ও কতগুলো যান্ত্রিক চোখ

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন ধরে তপু যেদিকেই তাকাচ্ছে শুধু কতগুলো চোখ দেখতে পাচ্ছে। মানুষের চোখের মতোই সাদা ডিম্বাকৃতির ফ্রেমের মধ্যে কালো গোলাকার মণি। কিন্তু চোখগুলো মানুষের মতো হলেও মানবীয় নয়। দানবীয় চোখ সেগুলো। আসলে দানবীয়ও বলা যায় না। যান্ত্রিক চোখ বলা যায়। তবে পুরোপুরি না। সেগুলো দেখতে অবিকল মানুষের চোখের মতো জীবন্ত। যন্ত্রের মতো নির্জীব নয়। কিন্তু সেই চোখগুলো চেয়ে থাকে অবিশ্রান্ত। এক মুহূর্তের জন্যও পলক ফেলে না। যেন কোনো যন্ত্র। কেউ বন্ধ করে না দিলে সেই চোখ কখনো পলক ফেলবে না। এই মানবাকৃতির প্রবল যান্ত্রিক চোখগুলো কখনোই তার পিছু ছাড়ছে না। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সে দেখতে পায় তার বিছানা বরাবর দরজায় দুটি চোখ প্রবল লালসায় তার দিকে চেয়ে আছে। পাশ ফিরে দেয়ালের দিকে তাকালেও একই দৃশ্য। তপুর মনে হয় এই চোখগুলো তাকে কবর পর্যন্ত অনুসরণ করবে। হয়তো তপু কবরে যাওয়ার পরও চোখগুলো তাকে দেখা দেবে। তপু মানুষ। সে মারা যাবে। কিন্তু চোখগুলো যন্ত্র। সেগুলো মরবে না।কখনোই মরবে না। এমন না যে ছোটবেলা থেকেই এই চোখগুলো তাকে অনুসরণ করছে। ছ'মাস আগেও এই চোখগুলোর কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। সে অনেকদিন পর বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলো। তার প্রত্যাবর্তনে রীতিমতো কয়েকদিন উৎসব চলেছে তার বাড়িতে। আত্মীয়-স্বজন,প্রতিবেশী অনেকেই দেখা করে শুভকামনা জানিয়ে গেছে। সে যখনই রাস্তা ধরে হেটে গেছে বিশ বছরের ব্যবধানে সমাদরের মাত্রাটা সে অনুধাবন করতে পেরেছে। সালাম আর কুশল বিনিময়ের স্রোত সামলানোর জন্য সে চেয়েছিলো হাতে একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বের হবে,যেখানে লেখা থাকবে, "ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?"

তপুর অনেকদিনের ইচ্ছা ছিলো তার একটা বাড়ি হবে। ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে একটা স্থায়ী ঠিকানায় যাবার প্রস্তুতি সে প্রবাস জীবনের শুরু থেকেই নিয়েছিলো।তার নিজের ছোটভাইকে সে টাকা দিয়েছিলো জমি কেনার জন্য। কিন্তু ভাই সেটা নিজের নামে কিনে রেখে দিয়েছে। তপু নিজেকে প্রবোধ দিয়েছে।ভাই ই তো নিয়েছে। বাইরের লোক তো নেয় নি। পরবর্তী সময়ে বোনজামাই জমি কিনে দেয়ার কথা বলে টাকা চেয়েছিলো। কিন্তু এবার আর সেই ভুল করে নি তপু। একেবারে চলে এসেছে দেশে। স্বপ্ন পূরণের জন্য পদক্ষেপ নেয় সে। খুব সতর্কতার সাথে খোঁজ-খবর নিয়ে একটা সুন্দর জমি কেনে । সেখানে সুন্দর বাড়ির কল্পনায় বিভোর হয় সে । তখনো যান্ত্রিক চোখগুলো তার সামনে আসে নি। চোখ গুলো দেখা দেয় জমি কেনার কিছুদিন পরই। রাতের খাবার খাওয়ার পর সে একটু বিশ্রাম করছিলো। তখনই তার ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে একটা কল আসে। কলটা রিসিভ করার পরই একটা ঠাণ্ডা কণ্ঠ শুনতে পায় তপু। গাম্ভীর্য ঝড়ে পড়ছে সেই কণ্ঠ থেকে। লোকটি নিজেকে পরিচয় দিলো ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও একই সাথে দলীয় ওয়ার্ড কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে। যদিও তিনি কাউন্সিলরের চেয়ে সহ-সভাপতি পরিচয় দিতেই বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলে মনে হলো তপুর। জনগণকে পাশে নিয়ে তিনি সভাপতি হবেন খুব শীঘ্রই। জনগণের সেবায় তিনি নিয়োজিত আছেন গত ত্রিশ বছর ধরে। দেশের অন্যায়,লাম্পট্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একজন সংগ্রামী যোদ্ধা তিনি। জনগণকে শোধরাতে তিনি পত্রিকায়ও লেখালেখি করেন মাঝে মাঝে। তপুর এসব শুনতে বিরক্ত লাগছিলো। সহ-সভাপতি সম্পর্কে তার সম্যক ধারণা ছিল আগেই। কিন্তু সে বিরক্তি প্রকাশ করে না। তার মনে একটা ভীতি ও আশংকা থাকে। তার আশংকাকে অবশেষে সত্যি প্রমাণিত করেন কাউন্সিলর। তপু বিদেশ থেকে এসেছে বেশিদিন হয় নি। তাকে ছিড়েখুঁড়ে খাওয়ার জন্য ওৎ পেতে আছে হায়েনা রা। জনতার সেবক হিসেবে তার কর্তব্য জনগণকে বিপদ থেকে রক্ষা করা। কিন্তু এসবের পেছনে খরচ আছে। অনেক লোককে ট্যাকল করতে হবে। তাই প্রটেকশন মানি হিসেবে মাত্র দশ লাখ টাকা চেয়েছে। তপু হঠাৎই রেগে যায় একথা শুনে। তার কলিজার রক্ত পানি করা টাকা সে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। অপর প্রান্ত থেকে "তোকে দেখে নেব" বলে হুমকি আসে। সে ফোন কেটে দেয়। সে ঘাবড়ে যায়। সবকিছুরই প্রতিকার আছে বলে মনকে প্রবোধ দেয় সে। অনেকক্ষণ ছাই পাশ চিন্তাভাবনা করে ঘুমিয়ে পড়ে সে। চোখজোড়া লেগে আসার পর সে নিজেকে দেখতে পায় একটা উন্মুক্ত প্রান্তরে। একটু দূরেই তার সাধের জমিটা। সে জমিটার কাছে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু পারছে না। সে যত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে জমির দিকে,জমিটা তত দ্রুত তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সে অনন্তকাল ধরে হাঁটছে,দৌড় দিচ্ছে।কিন্তু জমির নাগাল পাচ্ছে না। হাঁটার সময় তার কাছে যা ছিলো সব কেড়ে নিয়ে গেছে অনেকগুলো হাত। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। হঠাৎ সে খেয়াল করে তার গায়ে কোনো কাপড় নেই। সেগুলো কখন কে খুলে নিয়ে গেল সে টের পায় নি। সে জমির চিন্তা বাদ দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজতে থাকে যা দিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা যায়।কিন্তু কিছু পেল না। চারিদিকে শুধু বালু আর বালু। তার সারা শরীরে বালু। বালু ঝাড়তে ঝাড়তে আবার চারিদিকে তাকায় সে। এবার সে দেখতে পায় কতগুলো মানবাকৃতির যান্ত্রিক চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে লালসার দৃষ্টি মেলে। সে এখনই না পালালে হয়তো চোখের অনেক নিচ থেকে দুটো হাত বের হয়ে তার হৃদপিণ্ড, কিডনি,ফুসফুস,কলিজা সব নিয়ে যাবে। সে প্রাণপণে দৌড় দেয় জমি অভিমুখে। জমিও সেই গতিতে তার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ সে হোচট খেয়ে পড়ে যায়। তখনই সে জেগে ওঠে ঘুম থেকে। হাপাতে থাকে।সারা শরীর ঘাকে ভিজে গেছে তার। চারিদিকে তাকায় সে। সে তার বিছানায় আছে দেখে আশ্বস্ত হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই তার চোখের দৃষ্টি যখন দরজায় আবদ্ধ হয় তখনই সে দেখতে পায় একজোড়া কালো মণিযুক্ত সাদা চোখ।তার দিকে তাকিয়ে আছে। যেমনটা সে স্বপ্নে দেখেছিলো। এবার ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকানোর পর সে আরো কিছু চোখ দেখতে পেলো। ভয়ে চিৎকার করে উঠলো সে। তার চিৎকারে তার পরিবারের লোকজন ঘুম ছেড়ে ছুটে এলো তার ঘরে। সে সবাইকে জিজ্ঞাসা করলো চোখ দেখতে পাচ্ছে কি না। তপু ছাড়া কেউই দেখতে পাচ্ছিলো না সে চোখ। কেউ দেখছে না।কিন্তু চোখগুলো ছিলো সেখানে।সবাই সাময়িক ভ্রম বলে প্রবোধ দিয়ে ঘুমোতে যায় সে-রাতে। শুধু তপু সে রাতে দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি।

চোখ গুলোকে সাথে নিয়েই জীবনযাপন করতে থাকে সে। "তোকে দেখে নেব" হুমকির পনেরো দিন হয়ে গেছে। দেখে নেবার কোনো আলামত পাওয়া যায় নি। কিন্তু সতেরো তম দিনেই বিপত্তি দেখা গেল। সে সকালে নাস্তা করছিলো। হঠাৎ তার বাসার দরজায় টোকা পড়ে। জিজ্ঞাসা করার পর ওপাশ থেকে উত্তর আসে, "দরজা খুলুন।আমরা থানা থেকে এসেছি। আপনার নামে ওয়ারেন্ট আছে।" দরজা খোলার পর কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘরে ঢোকে।তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে চায়। কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে ত্রানের টিন ও তেল চুরি হয়েছে। কাউন্সিলর মামলা করেছেন অজ্ঞাত আসামীর নামে। তপুর জমির একাংশ খুঁড়ে সেসব চুরি হওয়া জিনিস পাওয়া গেছে। তাই তাকে গেফতার করতে এসেছে। কিন্তু তপু বলে যে সে এসবের কিছু জানে না।সে নির্দোষ। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না।তাকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। থানা হাজতে ওসি সাহেব আসেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সে দোষ স্বীকার করে না। ওসি তাকে চড় মারে কয়েকটা। তাতেও কাজ হয় না।সে ওসি কে অনুরোধ করতে থাকে তার কথা শোনার জন্য।কিন্তু ওসি শুনতে চায় না।অবশেষে অনেক অনুনয়ের পর ওসি তার কথা শুনতে চায়। তপু তাকে খুলে বলে কাউন্সিলরের টাকা চেয়ে ফোনকলের কথা।হুমকির কথা। ওসি কোনো কথা না বলে উঠে চলে যায়। অনেকক্ষণ পর একজন কন্সটেবল এসে তপুকে নিয়ে যায় ওসির রুমে। তারপর কন্সটেবল চলে যায়। রুমে শুধু তপু আর ওসি। তপুকে ওসি কিছু প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটা অনেকটা এরকম, " এখন জমি কিনেছেন,কাউন্সিলর টাকা চাইছে,এরপর যখন বাড়ি করবেন তখন আবার টাকা চাইবে। এ চাওয়ার কোনো শেষ নেই। তাছাড়া না দিয়েও থাকতে পারবেন না।নমুনা তো দেখলেনই। তার চেয়ে তাকে যে টাকাটা দিতেন সেটা আমাকে দিন। আপনার ত্রিসীমানা থেকে সরিয়ে দিচ্ছি ওকে। আমাকে বারবার দিতে হবে না।একবার দিলেই হবে।"তপু সাথে সাথেই রাজি হয়ে যায়। সে আর ধকল সহ্য করতে পারছিলো না। ওসি তাকে ছেড়ে দেয়।সে বাড়ি ফিরে দুদিন পরই ওসির নির্দেশমতো একটা বেনামি একাউন্টে টাকা জমা করে দিয়ে আসে। ওসি সাহেব তার কথা রেখেছিলেন। টাকা জমা করার পরের দিনই কাউন্সিলরকে অস্ত্র,মাদক,খুন ও ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তপু জানতে পারে যে এসব কাজ সত্যিই করেছে কাউন্সিলর। কিন্তু এতদিন সে টাকা দিয়ে পুলিশকে ঠাণ্ডা রেখেছিলো। ইদানিং মনোমালিন্য চলছে পুলিশ আর কাউন্সিলরের মধ্যে। তপুর মনে হতে থাকে একারণেই হয়তো তার কাছ থেকে টাকা খেয়ে কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাতে তপুর কী? আপদটা বিদেয় হলেই হলো। তিনদিন পর পত্রিকা মারফত তপু জানতে পারলো অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে কাউন্সিলর। তপু হাফ ছেড়ে বাঁচে। তার মনে হতে থাকে এবার হয়তো তার জীবন থেকে বিদায় নেবে চোখগুলো। কিন্তু সেগুলো নিলো না বিদায়। তাহলে কি আবার কোনো বিপদ আসছে? আতঙ্ক আবার পিছু নেয় তার।

বিপদের আশঙ্কা নিয়েই সে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেয়।সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো। বিপত্তি শুরু হয় বাড়ির ভিত গঠনের কাজ শুরু হবার দিন। ট্রাক ভর্তি কিনে আনা মালামাল আটকে রেখে দিয়েছে স্থানীয়রা। তারা সেগুলো ট্রাক থেকে আনলোড করতে দেবে না। এর কারণ হিসেবে জানা গেল যে স্থানীয় অনেকেই ইট,বালু,রড, সিমেন্টের ব্যবসা করে। আবার ঠিকাদারও আছে। কিন্তু তপু বাইরে থেকে মালামাল কিনে এনেছে এবং স্থানীয় ঠিকাদারদের কাজ না দিয়ে বাইরের কোম্পানিকে কাজ দিয়েছে। এর প্রতিবাদস্বরূপ তারা এসব আটকে দিয়েছে। এলাকায় বাড়ি করে থাকতে হলে তাদের সার্ভিস নিতে হবে। নইলে তারা বাড়ি করতে দেবে না। তাদের পেছনে শক্ত হাত আছে এসব হাবিজাবি বকতে থাকে তারা। অগত্যা তাদের কথায় রাজি হয় তপু। কিন্তু মালামাল কিনতে গিয়ে তপু দেখতে পায় ইচ্ছাকৃতভাবে অধিক দাম রাখছে তার থেকে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তার কিছু করার নেই। আবার ঠিকাদারেরাও নিম্নমানের কাজ করছে। মানসম্মত কাজের জন্য আরো টাকা দাবি করে তারা। অগত্যা কিছু টাকা গচ্চা দেয় সে। তার বাড়ি তৈরির কাজ ক্ষিপ্রতার সাথেই এগিয়ে চলছিলো। কিন্তু হঠাৎই তার প্রতিবেশি এসে একদিন বাগড়া দেয় কাজে। তপু নাকি বাড়ি করতে গিয়ে প্রতিবেশির জমির একফিট ভেতরে ঢুকে গেছে। সে মামলা করেছে।সুতরাং কাজ বন্ধ। এবার আদালতে ছোটাছুটির পালা শুরু। তপু সবকিছু মেনেই কাজ করছিলো। সে একফিট জায়গা ছেড়ে নিয়ে বিল্ডিং করছিলো। সে আবাক হয়ে যায় যে,সেই একফিট সহ আরো একফিট ঢুকে গেল কিভাবে? প্রতিবেশি একদিন তপুর বাসায় আসে সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে। সে বলে যে, বর্তমান বাজারমূল্যে ঐ একফিটের দাম যা আসে তা দিয়ে দিলেই সে মামলা তুলে নেবে। তপু রাজি হয় না। সে আদালতেই মীমাংসা করতে চায়। একদিন আদালতের নির্দেশে একজন আমিন এলো জমি মাপতে। জমি পুরোপুরি না মেপেই সে চলে যেতে উদ্যত হলো।কারণ জিজ্ঞেস করাতে সে বললো তার শরীরটা ভালো লাগছে না। তপু আমিনের অভিসন্ধি বুঝতে পারলো। তারপরও কিছুক্ষন অনুনয় করলো।কিন্তু সার্ভেয়ারের তাতে মন গললো না মোটেও। এরপর তপু কিছু টাকা সার্ভেয়ারের পকেটে ঢুকিয়ে দিতেই তার শরীর খারাপ উঁবে গেল। সে ঠিকঠাক মতো জমি মেপে চলে গেল। মামলায় তপুই জিতলো অবশেষে। বাড়ির কাজ আবার শুরু হলো। কিন্তু চোখগুলো তার দৃষ্টিসীমাতেই রয়ে গেল। চোখগুলো এখন আর তাকে ভীত করে না। সব সয়ে গেছে তার।ভয় পাবার মতো শক্তি নেই।সে ক্লান্ত। চোখগুলোর প্রতি মাঝে মাঝে কৃতজ্ঞতায় ছেয়ে যায় তার মন। তাকে পদে পদে বিপদের আভাস দিচ্ছে চোখগুলো।

এর মধ্যেই একদিন তার বাড়ির সব কাজ শেষ হয়ে যায়। বাড়িটা দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে। তার স্বপ্নের বাড়ি আজ বাস্তবে তার সামনে দাড়িয়ে আছে।কিন্তু সে এখনই তার বাড়িতে উঠতে পারছে না। গ্যাস,পানি,বিদ্যুৎ প্রতিটির লাইন আনার জন্য ছুটতে হচ্ছে তাকে অফিস থেকে অফিসে, টেবিল থেকে টেবিলে। অনুমোদন পেতে কত ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাকে। সবাই শুধু টেবিলের নিচ থেকে লেনদেন করতে চায়। সকলকেই তার খুশি করতে হয়েছে।। নাহলে আটকে রেখেছে ফাইল। সবাইকে খুশি করে সবকিছু শেষ করে তার বাড়িটিকে সম্পূর্ণ করে সে বাড়িতে ওঠার আগের দিন রাতে তার বাসায় ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল বেলা সে যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন দেখে যে তার বহুদিনের সঙ্গী চোখগুলো নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তপু। কোথাও নেই সেগুলো। সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। এটা কি তার ভ্রম? নাকি সত্যিই চলে গেছে সেগুলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে চায় না সে। আরেকটু পরই সে তার নতুন বাড়িতে উঠবে। পরিবারের অন্য সকলে বাড়িতে ঢুকে গেছে। কিন্তু তপু বাড়িতে ঢোকার আগে একবার চারিদিকে তাকিয়ে নেয়। নাহ! চোখগুলো নেই! তারপর সে বাড়িটার দিকে তাকায়।অশ্রুসজল হয়ে যায় তার চোখ। তার মনে হতে থাকে,বাড়িটা যেন তাকে বলছে, "অনেক হয়েছে।এবার ভেতরে ঢোক।"

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×