somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনিস রায়হানের সিপিবি-বিচার : গলদের গোড়াটা কোথায়?

২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আনিস রায়হান পরিশ্রমী লেখক। তরতাজা নানা বিষয়ে মাঝে মাঝেই তার লেখা ইস্টিশন ব্লগে পাই। তার ভাষাও আড়ষ্ট নয়, সুখপাঠ্য। তিনি সম্প্রতি একটি লেখা লিখেছেন, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ-সিপিবি’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকারকে অবলম্বন করে (http://www.istishon.com/node/12374)। লেখাটিতে বন্ধু আনিস ‘মার্কসবাদের আলোকে’ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের বক্তব্য ও বিভিন্ন সময়ে নেয়া পদক্ষেপগুলোকে বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পেয়েছেন। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে স্বাগত জানিয়ে সিপিবির দেয়া প্রেসবিজ্ঞপ্তি নিয়ে বাম মহলে যে আলোড়ন হয়েছে, আনিস রায়হানের লেখাটি ঠিক সে সময়ে প্রকাশিত হওয়ায় ওই আলোড়নেও প্রভাব ফেলেছে।

আমাদের দেশে কমিউনিস্ট ও বাম রাজনীতিতে পলিমিক্স বা একে অপরের ভুল-ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা প্রায় অনুপস্থিত। এরকম একটি অবস্থায় আনিস যখন ‘মার্কসবাদী’ অবস্থান থেকে এদেশের সবচেয়ে বড় বামপন্থী দল এবং কমিউনিস্ট পার্টি হিসাবে পরিচিত সিপিবির সভাপতির বক্তব্যকে বিশ্লেষণের উদ্যোগ নিয়েছেন তা সাহসী কাজ নিঃসন্দেহে। বন্ধু আনিস অনেকগুলো পয়েন্টে কমরেড সেলিমের বক্তব্য এবং বিভিন্ন সময়ে নেয়া পদক্ষেপগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। স্কাউট আন্দোলন থেকে শুরু করে পায়জামা-পাঞ্জাবি, ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি তার লেখায় গুরুত্ব পেয়েছে মূলত দুটি প্রসঙ্গ : (১) মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব সম্পর্কে মূল্যায়ন; এবং (২) সোভিয়েত-চীন বিতর্ক, যা কমিউনিস্ট মহলে ‘আন্তর্জাতিক মহাবিতর্ক’ নামে পরিচিত।
কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বর্তমানে সিপিবির সভাপতি। এর আগে তিনি সিপিবির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি একেবারে স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় রাজনীতির যে ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সেই ধারাতেই আছেন। অর্থাৎ কমরেড সেলিম তার রাজনীতিতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন, কনসিসটেন্ট আছেন। সেই অর্থে কমরেড সেলিমের সমালোচনা মূলত তাঁর রাজনীতিরই সমালোচনা, অর্থাৎ সিপিবি’র রাজনীতির সমালোচনা। আনিস রায়হান অতীতেও তার লেখায় সিপিবি সম্পর্কে নিজের সমালোচনা তুলে ধরেছেন। এই লেখাটাকে তারই অংশ হিসাবে বিবেচনা করলে নিশ্চয়ই ভুল হবে না। এই লেখায় বন্ধু আনিস কমরেড সেলিমের সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনা থেকে বিশ্লেষণ করতে করতে সাধারণ সিদ্ধান্ত টেনেছেন। আনিস রায়হানের সিদ্ধান্ত : কমরেড সেলিম, যিনি নিজেকে একজন কমিউনিস্ট ও মার্কসবাদী হিসাবে দাবি করেন, তাঁর জীবন ও কর্মের কোথায়ও মার্কসবাদের সম্পর্ক নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত জীবন আসলে ‘অসহায় আত্মসমর্পণের’ দলিল।

ব্যক্তিগতভাবে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বা অন্য কোনো বাম-কমিউনিস্ট নেতাকে নিয়ে, তার বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেটা দরকারও। কিন্তু এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা দরকার যে এসব ভুল বা বিচ্যুতির উৎস কোথায় – সেটা কি কমরেড সেলিমের ব্যক্তিগত চিন্তাপদ্ধতির সমস্যা নাকি সেটা তাঁদের দলীয় চিন্তাপদ্ধতির সমস্যা। কমরেড সেলিম যেহেতু দল থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যক্তি নন তাই তাঁর ভুলগুলোও তাঁর দল সিপিবি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। অতীতেও বিভিন্ন সময় আনিস রায়হান, বা অন্য আরো অনেকে সিপিবির রাজনৈতিক ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা-বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং আমাদের আলোচনায় বিষয় হল, সিপিবি’র রাজনীতির এই যে ভুল, সিপিবি’র সভাপতি কমরেড সেলিম-এর এই যে মার্কসবাদ থেকে বহুদূরে অবস্থান – তার উৎস কি?
আনিস তাঁর লেখায় প্রশ্ন তুলেছেন :
“সিপিবি নেতারা বারবার আত্মসমালোচনা করেছেন। নতুন লাইন গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বিএনপি-আওয়ামী লীগ যখন সঙ্কট সমাধান করতে পারছে না, তখন তারাই ছুটে যান মীমাংসা করতে। মার্কসবাদী পার্টিতে বুর্জোয়াদের সংলাপে সহযোগিতার লাইন কোথা থেকে আসে?”
এই সহযোগিতা বলতে ২০১৩ সালের অক্টোবরে সিপিবি-বাসদ জোটের হাসিনা-খালেদার সাথে সাক্ষাৎ ও পরামর্শ প্রদানের বিষয়টি স্মরণ করেছেন আনিস রায়হান। (Click This Link) এর সাথে সম্প্রতি সরকারের পাতানো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে” সিপিবির দেয়া বিবৃতির বিষয়টি আমরা আমলে নিতে পারি। (http://cpbbd.org/?page=details&serial=73) [যদিও সিপিবি’র জোট-বন্ধু বাসদ (খালেকুজ্জামান)-এর কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি (http://spb.org.bd/)।]
কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সাক্ষাৎকারে যে বিষয়টিতে আনিস ‘অসহায় আত্মসমর্পণ’-এর নজির খুঁজে পেয়েছন সেটি হল আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব প্রসঙ্গ। তিনি লিখছেন:
“সেলিম ভাই এই সাক্ষাৎকারে মজার একটা তথ্য দিয়েছেন। যার সঙ্গে সিপিবির পুরো ইতিহাসটা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বলেছেন, ৬ দফা দাবীতে শেখ মুজিবের ডাকা ৭ জুনের হরতালে পিকেটিং করতে গিয়েই তিনি জীবনে প্রথম জেল খাটেন! সেই ধারাবাহিকতা আজো ক্ষুণ্ন হয়নি। সিপিবি আজো আওয়ামী লীগের হয়ে বেগার খাটছে। মাঝে তো তাদের অংশই হয়ে গিয়েছিল (অর্থাৎ বাকশালে বিলীন হয়ে যাওয়া – লেখক)।”
এবং বিভিন্ন উদাহরণ টেনে তিনি লিখছেন,
“শেখ মুজিবের প্রতি সেলিম ভাইয়ের মধ্যে যে এক ধরণের মোহাবিষ্টতা কাজ করে” এবং “আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কথা উঠলেই সেলিম ভাইকে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করতে দেখেছি।”
এ ধরনের আরো কিছু নজির আমরা পরে আলোচনার সাপেক্ষে তুলে ধরব।

আনিসের মতো প্রশ্নটি আমাদেরও – একটি কমিউনিস্ট নামধারী পার্টির এই যে লাগাতার ভুল, তার উৎস কোথায়? গলদের গোড়াটা কোথায় প্রোথিত? এ বিষয়ে বন্ধু আনিস কোনো আলোচনা তার ওই লেখায় করেননি। আমার জানা মতে, এ আলোচনা তিনি কোথাও করেননি। বন্ধু আনিস সিপিবি’র ভুল খুঁজছেন, ভুল চিহ্নিত করছেন কিন্তু ভুলের উৎস চিহ্নিত করছেন না। তিনি কমরেড সেলিমের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখছেন কিন্তু সিপিবি’র রাজনীতির গলদের গোড়া অনুসন্ধান করছেন না। তিনি বলছেন, ‘সিপিবি নেতারা বারবার আত্মসমালোচনা করেছেন। নতুন লাইন গ্রহণ করেছেন’, কিন্তু তারপরও লাগাতার ভুলের পর ভুল করে চলেছে। এক্ষেত্রে একটা ন্যায্য প্রশ্ন আমরা তুলতেই পারি – সিপিবি আদৌ কখনো তাদের লাইন পাল্টে নতুন লাইন গ্রহণ করেছে?

রাজনৈতিক লাইন এবং তার গুরুত্ব
বন্ধু আনিস নিশ্চয়ই জানেন, কমিউনিস্টদের কাছে রাজনৈতিক লাইন মানে শুধু কিছু কর্মসূচি নয়, বক্তব্য নয়। রাজনৈতিক লাইন মানে কোনো একটা দেশে বিপ্লবের স্তর নির্ধারণ, শত্রু-মিত্র নির্ধারণ। আনিস রায়হান নিশ্চয়ই এটাও জানেন যে, কোনো একটি কমিউনিস্ট পার্টির এই রাজনৈতিক লাইনের ওপরই তার কর্মসূচি নির্ভর করে। একটি বিপ্লবী পার্টি তার রণনীতির ভিত্তিতেই সমগ্র আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করে থাকে। রণনীতির ভিত্তিতে রণকৌশলও তৈরি হয় যা সামগ্রীক আন্দোলনকে বিভিন্ন পর্যায়ে বিকশিত হয়ে উঠতে সহায়তা করে। ভুল রণনীতি ভুল পথে পরিচালিত করে এবং গণসংগ্রামগুলোকে বিপথগামী করতে সহায়তা করে। এ প্রসঙ্গে কমরেড মাও সেতুঙ-এর শিক্ষার কথা আমরা স্মরণ করতে পারি।
শোধনবাদী লিন পিয়াও-চক্রের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ১৯৭১ সালে মাও সেতুঙ বলেছিলেন,
“মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক লাইনের সঠিকতা-বেঠিকতাই সবকিছু নির্ধারণ করে। পার্টির লাইন সঠিক হলে, সবকিছুই ঠিকমত চলবে। যদি তার কোনো অনুগামি না থাকে তাহলে অনুগামি হবে, যদি বন্দুক না থাকে তাহলে বন্দুক অর্জিত হবে, রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলে তা অর্জিত হবে। আর লাইন যদি ভুল হয়, তাহলে অর্জিত ফলও খোয়া যায়। লাইন হচ্ছে জালের রশির মতো। যখন একে ধরে টান দেয়া হয়, তখন সমস্ত জালটাই খুলে যায়।”
(The correctness or otherwise of the ideological and political line decides everything. When the Party’s line is correct, then everything will come its way. If it has no followers, then it can have followers; if it has no guns, then it can have guns; if it has no political power, then it can have political power. If its line is not correct, even what it has it may lose. The line is a net rope. When it is pulled, the whole net opens out.)

মহান নভেম্বর বিপ্লব এবং কমরেড লেনিনের কয়েকটি অমূল্য শিক্ষা
আমরা জানি, সামন্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে আধুনিক বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বুর্জোয়াশ্রেণী যে বিপ্লব সাধন করেছিল সেগুলিকে বলে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। যেমন ফরাসি বিপ্লব, ইংল্যান্ডের ক্রমওয়েল বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, জাপানের মেইজী বিপ্লব ইত্যাদি। তখন বুর্জোয়াশ্রেণীর সামনে একটাই শত্রু – সামন্তবাদ। তারপর সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ বিকাশের প্রক্রিয়ায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সাম্রাজ্যবাদের স্তরে উন্নীত হলো। শুরু হলো পররাজ্য গ্রাস। ইতিহাসে এর পূর্বেও উপনিবেশ ছিল। কিন্তু এই পর্যায়ে উপনিবেশ স্থাপনের মধ্য দিয়ে লগ্নিপুঁজির শাসন ও শোষণ প্রতিষ্ঠিত হলো। এই উপনিবেশের বুর্জোয়াশ্রেণী সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন এবং অভ্যন্তরীণ সামন্তবাদী-উপনিবেশবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে বিপ্লব করে সেটাও বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব; তবে জাতীয় স্বাধীনতার বিষয়টি যুক্ত হওয়ায় এ বিপ্লবকে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন আমেরিকান ওয়ার অব ইনডিপেন্ডেন্স, ভারতবর্ষ, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন।
ইতিহাসে এরপর এসেছে শ্রমিক বিপ্লবের ঐতিহাসিক কাল। এ পর্যায়ে এসে এবং বিশেষভাবে রাশিয়ায় শ্রমিক বিপ্লব সম্পন্ন হওয়ার পর ঔপনিবেশিক দেশগুলোর বুর্জোয়ারা সাম্রাজ্যবাদ এবং সামন্তবাদের চেয়েও শ্রমিকশ্রেণীকেই তাদের প্রধান শত্রু হিসেবে ভাবতে শুরু করে। ইতোমধ্যে পুঁজিবাদ একচেটিয়া রূপ নিয়েছে, সাম্রাজ্যবাদের স্তরে উপনীত হয়েছে এবং পুঁজিবাদের উত্থানের যুগের প্রগিতিশীল যা কিছু উপাদান তাও হারাতে শুরু করেছে। এ পর্যায়ে ঔপনিবেশিক, আধা-ঔপনিবেশিক ও আধা-সামন্ততান্ত্রিক দেশের শ্রমিকশ্রেণী তাদের নেতৃত্বে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন, সামন্তবাদ উচ্ছেদ এং গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে থামিয়ে না দিয়ে ধারাবাহিক বিকাশের মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে যে বিপ্লব সাধন করে তাকে বলা হয় নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব বা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব। যেমন চীন, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশে হয়েছিল। আর একটা স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্রে শ্রমিকশ্রেণী যে বিপ্লব করবে সেটা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। যেমন রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে হয়েছিল।
কমরেড লেনিনের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি হল ১৯১৬ সালের রচনা ‘সাম্রাজ্যবাদ : পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়’ এবং ১৯১৭ সালের এপ্রিল থিসিস। এপ্রিল থিসিসে লেনিনের মূল প্রতিপাদ্য হল : বিপ্লবের প্রশ্নটা মূলত রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রশ্ন। কোন শ্রেণী ক্ষমতায় আছে এবং কোন শ্রেণী বা শ্রেণীসমূহ তাকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করবে সেটাই মূলকথা। এই এপ্রিল থিসিসের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই বলশেভিক পার্টি নভেম্বর বিপ্লব সম্পন্ন করেছিল।
এখানে কমরেড লেনিনের রেখে যাওয়া কয়েকটি শিক্ষা আমাদের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় সংক্ষেপে তুলে ধরছি :
প্রথমত, নভেম্বর বিপ্লবের আয়োজন সম্পন্ন করতে গিয়ে কমরেড লেনিন দেখান যে পুঁজিবাদ তার অন্তর্নিহিত নিয়মের কারণেই অসমভাবে বিকশিত হয়েছে। আর তাই দেশে দেশে পুঁজিবাদের চেহারা দেখতে আপাত ভিন্ন ভিন্ন হলেও তার মূল চরিত্র-বৈশিষ্ট্যটি একই থাকে। তিনি আরও দেখান যে, যেহেতু বিশ্ব পুঁজিবাদ ইতোমধ্যে তার বিকাশের শেষ সীমা সাম্রাজ্যবাদে উপনীত হয়েছে ফলে দুনিয়ার কোথাও আর পুঁজিবাদ নতুন করে আদর্শিক রূপে বিকশিত হবে না। কিন্তু তা না হলেও পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ যেহেতু একসূত্রে গাঁথা তাই দুনিয়ার কোনো দেশেই বিপ্লবের প্রশ্নটি কেবল সে-দেশের উপর নির্ভর করে নেই, সাধারণভাবে তা বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত, লেনিন দেখান যে মার্কসবাদী বিশ্লেষণ অনুসারে অর্থনীতি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করলেও রাজনীতি অর্থনীতিকে অতিক্রম করে যায়, যেমনি বস্তু থেকে ভাবের উৎপত্তি হলেও ভাব বস্তুকে পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। লেনিন অর্থনীতিবাদী ধারণার (ইকনোমিক ডিটারমিনিজম) চোরাবালি থেকে মার্কসবাদকে রক্ষা করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের তত্ত্ব হাজির করেন। তিনি দেখান যে, রাষ্ট্রবিপ্লবের মূল প্রশ্নটি হল রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের প্রশ্ন। অর্থাৎ রাষ্ট্রক্ষমতা কোন শ্রেণীর হাতে হাতে, কোন শ্রেণী সেটা দখল করবে -- এই প্রশ্নই রাষ্ট্রবিপ্লবের চরিত্র নির্ধারণ করবে।
তৃতীয়ত, নভেম্বর বিপ্লব ও কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি দুনিয়ার সামনে শ্রমিকশ্রেণীর ঐতিহাসিক বিপ্লবী ভূমিকার প্রমাণ দাখিল করেছে।
চতুর্থত, বলশেভিক পার্টির ইতিহাস সেই সঙ্গে এই শিক্ষাও দেয় যে, শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী পার্টি কেবল তত্ত্বগত দিক থেকে বুর্জোয়া-পেটিবুর্জোয়াদের থেকে ভিন্ন হবে না, চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও ভিন্ন হবে। বুর্জোয়া পার্টির সঙ্গে বাহ্যিকভাবে আপাত মিল যতই থাকুক না কেন, তার গঠনকাঠামো, শৃঙ্খলা ও কর্মপদ্ধতি, সংস্কৃতি সবই ভিন্ন হতে বাধ্য। কারণ বুর্জোয়া শক্তিকে উৎখাত করা কেবলই তখনই সম্ভব যখন সর্বহারাশ্রেণী তার চেয়েও সংগঠিত ও প্রজ্ঞার অধিকারী হয়।
আমরা মনে করি, নভেম্বর বিপ্লবের এই ক’টি বিশেষ শিক্ষা আমাদের আলোচনা এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের বিপ্লবের স্তর এবং সিপিবির অবস্থান
আমরা সিপিবির রাজনীতির আদ্যোপান্ত আলোচনায় যাব না, সে সুযোগও এখানে নেই। বর্তমান সিপিবি পাকিস্তান আমল থেকে ‘মস্কোপন্থী’ পার্টি হিসাবে পরিচিত। এই মস্কো-পিকিং বিভক্তির ইতিহাস কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের আত্মজীবনীতে এসেছে, আনিস রায়হানও এ নিয়ে তার বিশ্লেষণ রেখেছেন। সে আলোচনা এখন মূলতবি থাকুক।
পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবের স্তর ছিল জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব। ১৯৬৮ সালে তাদের প্রথম কংগ্রেসে পাকিস্তানে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তথা সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্মসূচি তারা হাজির করেছিল। যদিও এই বিপ্লব বলতে তারা সোভিয়েত পার্টির শোধনবাদী লাইনের অন্ধ ও যান্ত্রিক অনুসরণে বুর্জোয়াদের সহযোগিতায় ‘অধনবাদী পথে সমাজতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ উপায়ে উত্তরণ’ বুঝিয়েছিল।
এই বিচ্যুতির পরও পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আমলে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের একটা মানে বোঝা যেত। কিন্তু ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয় এবং পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটে। এ প্রসঙ্গে ১৯৭২ সালে সিপিবি’র ২য় কংগ্রেস রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় :
“অশেষ মূল্য দিয়ে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি তা ক্ষমতার মামুলি রদবদল নয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও চীনের মাওবাদীদের সাহায্য ও সমর্থনপুষ্ট পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের ঔপনিবশিক ধরনের শোষণ ও তাদের সামরিক জান্তার অত্যাচারী শাসন থেকে আমরা মুক্ত। সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতিতত্ত্বের বিষবাষ্প রাষ্ট্রীয় শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে আমাদের আর কলুষিত করতে পরে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নয়া উপনিবেশিক শোষণের জাল আর সেন্টো-সেয়াটো সামরিক জোটের বন্ধন রজ্জু আজ ছিঁড়ে গেছে। আমরা সত্যিকার স্বাধীতা অর্জন করেছি।” (কংগ্রেস রিপোর্ট পৃ: ৪) [উদ্বৃত করার ক্ষেত্রে কোনো ভুল-ত্রুটি ঘটলে তার দায় লেখকের]
“... এক গৌরবোজ্জ্বল মুক্তি সংগ্রমের মধ্য দিয়ে লক্ষ শহীদের আত্মদান ও জনগণের বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের স্বাধীন বাসভূমি, স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করিয়াছে। একটি স্বাধীন ও সর্বভৌম রাষ্ট্র রূপে গণপ্রজাতন্ত্রীক বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।” (পৃ: ১১৯) এবং “... স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে ছিল বাংলাদেশের প্রধান জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ।” (পৃ: ১২১)

তাহলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয়তাবাদী শক্তি তথা জাতীয় বুর্জোয়াশ্রেণী। তাহলে লেনিনীয় শিক্ষামতে বিপ্লবের স্তর কি দাঁড়ায়? অবশ্যই সমাজতান্ত্রিক। আর তাঁরা কি বললেন? তাঁরা বললেন :
“... বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী তত্ত্বের দ্বারা পরিচালিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পার্টি। পার্টির লক্ষ্য হইল - বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু দেশের বর্তমান পশ্চাৎপদ সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা হইতে এক ধাপে সমাজতন্ত্রে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে পৌঁছিবার জন্য বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জনগণকে অধনবাদী বিকাশের পথে অগ্রসর হইয়া জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সমাধা করার আহ্বান জানাইয়াছে।” (পৃ: ১২৯)
অর্থাৎ বুর্জোয়াশ্রেণীর সাথে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী(!) প্রগতিশীল কর্মসূচি একযোগে কার্যকর করে ধাপে ধাপে ‘অধনবাদী পন্থায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজতন্ত্রে’ উত্তরণের লাইন। মার্কসবাদী ধারণাই বটে। আসলে এ ছিল দেশের বাস্তবতা উপেক্ষা করে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের শিক্ষা উপেক্ষা করে ক্রুশ্চেভীয় শোধনবাদী তত্ত্বের অন্ধ অনুসারী হয়ে লাইন গ্রহণ।

এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, সিপিবি সেদিন শেখ মুজিব সম্পর্কে যা মনে করত, আজো তাই মনে করে এবং কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তারই প্রতিধ্বনি করেছেন মাত্র। শুধু তাই নয়, সিপিবি’র দ্বিতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবর রহমান বলেছিলেন :
“... আমর মনে হচ্ছে আজকে আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মনোপলি নেই। কারণ গোপনে গোপনে এত কমিউনিস্ট পার্টি, সোশ্যালিস্ট পার্টি, প্রগতিশীল পার্টি হয়ে গেছে যে, মসিবতে পড়ে গেছি আমরা। তবে আমরা এইটুকু বুঝি যে, আপনাদের সাথে আমাদের নীতির মিল আছে। ... বোধহয় আপনারাই একমাত্র কমিউনিস্ট।”
তাহলে দেখা যাচ্ছে, কারা সাচ্চা কমিউনিস্ট সে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন দেশের বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলের নেতা। এবং তিনি এটুকুও বেশ বুঝতে পারছেন যে বুর্জোয়া এই দলটির সাথে তাদের নীতিরও মিল আছে।
সিপিবি-কি সেই লাইন থেকে সরে এসেছে, সেই লাইন পাল্টেছে? বন্ধু আনিস রায়হান কি বলেন?
সিপিবি’র সর্বশেষ কংগ্রেসে গৃহীত দলিলে বলা হয়েছে :
“বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনে শত্রুর ভূমিকায় থাকবে সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ এবং এদের সহযোগী আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজির মালিক, লুটেরা ধনিক গোষ্ঠী এবং গ্রামাঞ্চলের পরগাছা কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীসহ মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল চক্র । এ ছাড়াও যারা বিশ্বব্যাংক, আই এম এফ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সুবিধাভোগী ও লুটেরা ধনিক শ্রেণীর তাঁবেদার এবং প্রতিক্রিয়াশীল ভাবধারার অনুসারী এরাও এই বিপ্লবী প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করবে এবং শত্রুর ভূমিকায় থাকবে।”
তাহলে কি দাঁড়াল? কথার সামান্য রদ-বদল, কিন্তু সেই একই রাজনৈতিক লাইন, সেই জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লাইনেই সিপিবি অনড়-অচল-অব্যয় হয়ে রয়েছে।

‘রাজনৈতিক লাইন’ই শেষ কথা নয়
দলের রাজনৈতিক লাইনের সঠিকতা-বেঠিকতা সম্পর্কে কমরেড মাও-এর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। দলের লাইন যদি সঠিক না হয়, তবে দলের যা আছে, তাও সে হারাবে। কমরেড মাও সেতুঙ-এর এই অমূল্য শিক্ষাকে ভিত্তি করে আমাদের যুগের মহান মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ আমাদের শিখিয়েছেন যে, সঠিক বিপ্লবী লাইন হচ্ছে একটি সর্বহারা বিপ্লবী দলের প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু এরই সাথে সাথে তিনি সর্বহারা সাস্কৃতিক মানের প্রশ্নটিও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আমাদের সামনে শিক্ষা হিসাবে রেখেছেন।
মার্কসের একটা কথা আমরা সবাই জানি যে, মার্কস বলছেন, দুনিয়াকে পাল্টাতে হলে সবার আগে শ্রমিকশ্রেণীর নিজেকে পাল্টাতে হবে। এই পাল্টানো মানে কি? সাংস্কৃতিক ভাবে পাল্টানো। এটাকেই অন্যদিক থেকে লেনিন বলছেন, cultural revolution precedes technical revolution । লেনিনের এই শিক্ষাকে ব্যাখ্যা করে কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছেন :
“দল বিচারের ক্ষেত্রে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দ্বন্দ্বমূলক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী যেমন পার্টির বিপ্লবী তত্ত্বেক প্রথমে বিচার করতে হবে, তেমনি সাথে সাথে সেই দলের চিন্তা ও বিচার পদ্ধতি এবং দলের নেতা ও কর্মীদের প্রাত্যহিক ব্যবহারের মধ্যে সংস্কৃতিগত মান যা তাঁরা প্রতিফলিত করছেন, তাকেও বিচার করে দল সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। কারণ, মনে রাখতে হবে, বুর্জোয়া মানবতাবাদ থেকে উন্নততর সাংস্কৃতিক মান, অর্থাৎ সর্বহারা সংস্কৃতিগত মান অর্জন করা ব্যতিরেকে এই তত্ত্ব সম্পর্কে বিচার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার প্রয়োগও সঠিক হতে পারে না ।” (কেন ভারতবর্ষের মাটিতে এসইউসিআই একমাত্র সাম্যবাদী দল)
বন্ধু আনিস কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সাক্ষাৎকার থেকে ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিশ্লেষণ করে দেখাতে চেয়েছেন, সেখানে মার্কসবাদের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। আমরা বিনীতভাবে বলতে চাই, একটা কমিউনিস্ট পার্টি তার দলের নেতা-কর্মীদের জড়িত করে এক সর্বব্যাপক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম পরিচালনা না করলে তিনি নেতাই হোন আর কর্মীই হোন, বুর্জোয়া সংস্কৃতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসবেন কি করে? আর তাইতো কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ব্যক্তিগত জীবনে সততা, ত্যাগ, কষ্ট স্বীকার করা ইত্যাদি যত কিছুই থাকুক না কেন, তার সাথে এদেশের যে-কোনো বুর্জোয়া মানবতাবাদীর জীবনের কোনো পার্থক্য করা যাবে না।

গলদের গোড়াটা কোথায়?
আশা করি, আমাদের আলোচনার যে ভরকেন্দ্র, সিপিবির রাজনৈতিক ভুলের (অথবা বিরাট তালিকাপূর্ণ ভুলসমূহের) মূল কারণ সম্পর্কে খানিকটা হলেও আমরা আলোকপাত করতে পেরেছি। এ সম্পর্কে আরো দু-একটা কথা বলার মাধ্যমেই আলোচনার সমাপ্তি টানা যেতে পারে।
আমাদের দেশের বামপন্থী শক্তির একটা বড় অংশই জনগণের মূল শত্রু হিসাবে দেশের বুর্জোয়াশ্রেণীকে চিহ্নিত করতে এবং তার বিরুদ্ধে কার্যকর গণআন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এদের সবার ভুলের গোড়াই হল ওই রাজনৈতিক লাইন – জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লাইন। বামপন্থী বন্ধুদের কেউ কেউ সাম্রাজ্যবাদকে জনগণের প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, কেউ কেউ প্রধান শত্রু ও সমস্যা হিসাবে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাকে চিহ্নিত করেছেন। আবার একই দল কখনো সাম্রাজ্যবাদ কখনো সামন্তবাদ-মৌলবাদকে প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে কর্মসূচি নির্ধারণ করেছে। বামপন্থী বন্ধুদের এই ভুল জনগণের একটা অংশকেও বিভ্রান্ত করেছে, ভুল পথে পরিচালিত করেছে। শুধু তাই নয়, এই ভুল থেকে বামপন্থীদের অনেকেই ঘুরে-ফিরে জাতীয় বুর্জোয়াদের মধ্যে প্রগতিশীল উপাদান খুঁজে পেয়েছেন, লড়াইয়ের মিত্র খুঁজে পেয়েছেন। অথচ কমরেড লেনিনের শিক্ষাকে অভ্রান্ত প্রমাণিত করে গত ৪২ বছরের ইতিহাস প্রমাণ করেছে, এখানকার বুর্জোয়াদের কোনো অংশই সাম্রাজ্যবাদ বা মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কার্যকর ও আপসহীন লড়াই করা দূরে থাক, নানা মাত্রায় এসব শক্তির সাথে আপস-সমঝোতা করে চলেছে। এভাবে যে বুর্জোয়াশ্রেণী আজ দেশের জনগণের প্রধান শত্রু, জনগণের সকল দুর্দশার প্রধান কারণ – তাদের উন্মোচিত করার পরিবর্তে বুর্জোয়াদের কোনো-না-কোনো অংশ সম্পর্কে জনগণকে মোহগ্রস্ত করতে সহযোগিতা করেছেন।
বন্ধু আনিস রায়হানকে আমাদের কথাগুলো ভেবে দেখতে অনুরোধ রইল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:৩৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×