somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশুত্ব

৩১ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'পশুত্ব' শব্দটি একটি ঘোরতর নেতিবাচক শব্দ। সাধারণত, কোন মানুষের নেতিবাচক চরিত্র প্রকাশের উদ্দেশ্যে পশুত্ব শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সোজা বাংলায়, পশুত্ব বলতে পশু তথা ইতর-জাতীয় প্রাণী যা করে, মানুষও যদি সেরকম কিছু করে তাকে পশুত্ব বলে। যেমন: হায়েনা সিংহের শিকার কেড়ে খায়, যে মানুষ অন্যের অধিকার হনন করে খায় বা লুণ্ঠন করে তার মধ্যে পশুত্ব আছে।
আবার একটু অন্যভাবে ভাবলে, মানুষ যেহেতু প্রাণী তাই বলা যায় মানুষও এক ধরনের পশু। উন্নত মস্তিষ্ক বিধায় এই পশুকে আমরা পশু না বলে প্রাণীই বলি। একটি প্রাণী পৃথিবীতে কিছু বেসিক ইন্সটিংক্ট নিয়েই জন্ম নেয়। মানুষের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। মানুষেরও কিছু সহজাত প্রবৃত্তি আছে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। একটি শিশু জন্ম নেবার পর ক্ষুধা পেলে কান্না করে, ভয় পেলে কান্না করে। যেকোনো আবেগ প্রকাশ করে কান্নার মাধ্যমে। আস্তে আস্তে সে শেখে ভিন্ন ভিন্ন আবেগ প্রকাশের বিভিন্ন প্রক্রিয়া। এই আবেগ গুলোও কিন্তু ঐ বেসিক ইন্সটিংক্ট বা সহজাত স্বভাব বা প্রবৃত্তি।

পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী মোটামুটি দুইটি সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে, খাদ্য গ্রহণ ও বংশবৃদ্ধি। মানুষও তাই, তবে, মানুষ তার বেসিক ইন্সটিংক্ট বা সহজাত প্রবৃত্তি কন্ট্রোল করতে পারে। তাকে কন্ট্রোল করতে শেখায় তার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম ইত্যাদি ইন্সটিটিউশন। মানুষ শেখে 'খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন' তাই বলে অপরের খাদ্য ছিনিয়ে নেয়া ঠিক না। এখানে বোঝার বিষয়, সহজাত প্রবৃত্তি কিন্তু শুধুমাত্র 'যেকোন উপায়ে খাদ্য গ্রহণ', কিন্তু 'খাদ্য ছিনিয়ে নিয়ে নয়' এটা হলো কন্ট্রোলড বা লার্নড বিহেভিয়ার।

প্রাণীর বংশবৃদ্ধির প্রবণতার ক্ষেত্রেও এই সহজাত প্রবৃত্তি কাজ করে। পুরুষ প্রাণী চায় অধিক সংখ্যক স্ত্রী প্রাণীর সাথে মেটিং করে তার বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা যতদূর সম্ভব বাড়াতে। এই বেসিক ইন্সটিংক্ট মানুষের ক্ষেত্রেও আছে। পুরুষ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন, প্রণয়। কিংবা অধিক টেস্টোস্টেরন নির্গত হলে রেইপ, মোলেস্টেশন জাতীয় কাজ করা। রেইপ বা সেক্সুয়াল মোলেস্টেশন যদিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিন্তু এই প্রবণতা পুরুষের ক্ষেত্রে খুবই প্রাকৃতিক, বায়োলজিকাল। কিন্তু এই সহজাত প্রবৃত্তি যেহেতু অন্যের ক্ষতির কারণ হয় তাই প্রবৃত্তিকে সোশ্যাল নর্ম, ধর্ম ইত্যাদি দিয়ে কন্ট্রোল করতে বলা হয়। ছোটবেলা থেকে দেখতে দেখতে মানুষ শিখেও যায় এটা খারাপ বা ওটা অন্যায় ইত্যাদি। অর্থাৎ সে কন্ট্রোল করে তার সহজাত প্রবৃত্তিকে। আর যারা কন্ট্রোল করতে পারে না বা শেখে না তাদের এরূপ আচরণকে আমরা পশুত্ব বলি, ধিক্কার জানাই।

ছেলেদের এই মাল্টিপল সেক্সুয়াল ডিজায়ার সামাজিক কিংবা ধর্মীয় কোনো দিক থেকেই সমর্থন করে না, এবং করা ঠিকও না। আমরা প্রাণী হলেও যেহেতু উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি কন্ট্রোল-এর মধ্যেই নিহিত আছে মনুষ্যত্ব, আর যার এই সহজাত প্রবৃত্তি কন্ট্রোল করার ক্ষমতা নেই, সে ইতর-সম প্রাণী বৈ আর কী?

বংশবৃদ্ধির এই প্রবণতা স্ত্রী প্রাণীদের মাঝেও আছে, তবে তা পুরুষ প্রাণীর চেয়ে আলাদা। স্ত্রী-প্রাণীদের বংশবৃদ্ধির বেসিক ইন্সটিংক্ট হলো যোগ্যতর মেল পার্টনার খোঁজা এবং সুস্থ সবল সন্তান ধারণের সক্ষমতা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা। প্রাণী হিসেবে স্ত্রী তথা মেয়ে মানুষদের ক্ষেত্রেও এই সহজাত প্রবৃত্তি ব্যতিক্রম না। পার্টনার নির্বাচনের ক্ষেত্রে উন্নততর বডি, কিংবা উপার্জন ক্ষমতা, গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করা নারীদের ক্ষেত্রে এই বেসিক ইন্সটিংক্টেরই রেজাল্ট।

আবার আরেকটু ডিগ ডাউন করলে দেখা যায়, সুস্থ সবল সন্তান ধারণের সক্ষমতা প্রদর্শনও নারীদের ক্ষেত্রে এই বেসিক ইন্সটিংক্টেরই ফলাফল। অর্থাৎ দেহ প্রদর্শনের ইচ্ছা নারীদের ক্ষেত্রে জন্মগত বা পুরুষদের প্রবৃত্তির মতই একটি সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু যেহেতু সামাজিক এবং ধর্মীয় কারণে তা সম্পূর্ণরূপে পসিবল না তাই আংশিক প্রদর্শনকেও বলা যায় এই সহজাত প্রবৃত্তিরই একটি অংশ বা পরিমার্জিত সংস্করণ। একটা সময় সামাজিক এবং ধর্মীয়ভাবে নারীদের এই সহজাত প্রবৃত্তিকে কোণঠাসা করে রাখা হলেও, বর্তমানে তা খুবই স্বাভাবিক চোখে দেখা হয়। এমনকি উৎসাহিতও করা হয়। শর্ট ড্রেস বা বডি প্রদর্শনকে বোল্ড বা সাহসী নামের তকমাও দেয়া হয়।
আমার কাছে, সমাজের এই দ্বিরূপচারিতাকে হিপোক্রেসি মনে হয়। একজন পুরুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে যদি 'পশুত্ব' বলা হয় একজন নারীর সহজাত প্রবৃত্তিকে কেন 'পশুত্ব' বলা হবে না?

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, যেহেতু পুরুষের সহজাত প্রবৃত্তি (একাধিক প্রণয়, রেইপ, মোলেস্টেশন)-এর কারণে অন্যের ক্ষতি হয় তাই তা এটা পশুত্ব, পক্ষান্তরে যেহেতু নারীর সহজাত প্রবৃত্তি (ধন-সম্পদ দেখার প্রবণতা, দেহ প্রদর্শন, যৌনতা প্রদর্শন) অন্যের ক্ষতি করে না তাই এটা পশুত্ব নয়।

আসলে লাভ-ক্ষতির বিষয়টি ডিরেক্ট বা ইনডিরেক্ট দু'টোই হতে পারে। পুরুষের সহজাত প্রবৃত্তি ডিরেক্ট ক্ষতির কারণ হলে নারীর সহজাত প্রবৃত্তি কিন্তু ইনডিরেক্ট ক্ষতির কারণ হয়। এবং দুই সহজাত প্রবৃত্তিই সামাজিকভাবে যেহেতু ক্ষতিকারক তাই দু'টোকেই সমানভাবে নাহোক অন্তত আংশিকভাবে ক্ষতিকর বিবেচনা করা উচিত। কারণ দু'টোই পশুত্ব, দু'টোই ইতর-সম প্রাণীর মত আচরণ।
পুরুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে যদি অপরাধের তকমা দিয়ে আইনের আওতায় আনা যায় (যা মানবজাতির কল্যাণে উচিতও বটে) নারীদের সহজাত প্রবৃত্তিকেও এ্যাটলিস্ট সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত করা, কটাক্ষ করা কিংবা বাধা দেওয়া কেন উচিত হবে না?

পশুত্ব তো পশুত্বই তা যে-ই করুক, যেভাবেই করুক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৩৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×