somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী সম্পর্কে কিছু কথা . . .

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল কিছু ভাই দেখা যাচ্ছে শায়খ আলবানী সাহেবকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছেন। অনেকে তো তার নামে মাযহাব বানানোর ঘোষনাও দিয়েছেন !!! তাই বাধ্য হয়ে লিখা . . .

>>>>>



!!!
>>>>>>

উক্ত ভাইদের মূলত “বুখারী শরীফ মানি” এই দাবিতেই সোচ্চার দেখা যায় বেশি। (যদিও কতটুুুকু মানেন তা গোড়ায় হাত দিলেই বুঝায় যায়) তাই শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব ইমাম বুখারী সম্পর্কে কি বলেছেন তা দিয়েই শুরু করছি . . .
ইমাম বোখারী (রহঃ) কে অমুসলিম আখ্যায়িত করা-

শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) ইমাম বোখারী (রহঃ) কে অমুসলিম আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম বোখারী (রহঃ) বোখারী শরীফের “কিতাবুত তাফসীর” এ সূরা কাসাস এর ৮৮ নং আয়াতের যে ব্যাখ্যা করেছেন, সে সম্পর্কে নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) লিখেছেন,
ان هذا التأويل لا يقول به مؤمن مسلم وقال إن هذه التأويل هو عين التعطيل.

“এ ধরণের ব্যাখ্যা কোন মুমিন-মুসলমান দিতে পারে না। তিনি বলেন, এ ধরণের ব্যাখ্যা মূলতঃ কুফরী মতবাদ “তা’তীলের” অন্তর্ভূক্ত”

ইমাম বোখারী (রহঃ) সূরা কাসাসের ৮৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
كُلُّ شَىْءٍ هَالِكٌ إِلاَّ وَجْهَهُ إلا ملكه, ويقال: إلا ما أُريد به وجه الله

“আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে”
এখানে তিনি “ওয়াজ্হুন” শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন “মুলকুন” তথা আল্লাহর রাজত্ব। তখন অর্থ হবে, সবকিছু ধ্বংস হবে, তাঁর রাজত্ব ব্যতীত। অথবা “ওয়াজহুন” দ্বারা যা উদ্দেশ্য হবে, তা ব্যতীত সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
[ফাতাওয়াশ শায়েখ আলবানী, পৃষ্ঠা-৫২৩, মাকতাবাতুত তুরাছিল ইসলামী, প্রথম প্রকাশ ১৯৯৪ইং]

আর ইমাম বোখারী যদি সালাফীদের নিকট অমুসলিমই হয়ে থাকে, তবে আহলে হাদীস বা সালাফীরা কিভাবে ইমাম বোখারী বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করে?

হানাফী মাযহাবকে খ্রিস্টধর্মের সাথে তুলনাঃ

শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) হানাফী মাযহাবকে খ্রিস্টধর্মের সাথে তুলনা করে লিখেছেন,
هذا صريح في أن عيسى عليه السلام يحكم بشرعنا ويقضي بالكتاب والسنة لا بغيرهما من الانجيل أو الفقه الحنفي و نحوه

“এ থেকে স্পষ্ট যে, হযরত ঈসা (আঃ) আমাদের শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা দিবেন এবং কিতাব ও সুন্নাহের মাধ্যমে বিচার করবেন। তিনি ইঞ্জিল, হানাফী ফিকহ কিংবা এজাতীয় অন্য কিছু দ্বারা বিচার করবেন না”
[আল্লামা মুনযীরি (রহঃ) কৃত “মুখতাসারু সহিহীল মুসলিম” এর উপর শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর টিকা সংযোজন, তৃতীয় সংস্করণ, ১৯৭৭, আল-মাকতাবুল ইসলামি, পৃষ্ঠা-৫৪৮]

এখানে শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী খুব সহজে হানাফী মাযহাবকে খ্রিস্টধর্মের বিকৃত ইঞ্জিলের সাথে তুলনা করেছেন; অথচ তিনি এতটুকু চিন্তা করেননি যে, তাঁর নিজের পিতা একজন সুদৃঢ় হানাফী আলেম। আমরা সকলেই জানি, কেউ যদি ইঞ্জিল অনুযায়ী বিবাহ-শাদী করে, তবে ইসলামে তার বিবাহ বিশুদ্ধ হবে না।

শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর নিজের বক্তব্য অনুযায়ী তাঁর পিতা এমন একটি মতবাদের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, যা বিকৃত ইঞ্জিলের সমগোত্রীয়। এখন তিনি যদি হানাফী মাযহাবকে বিকৃত ইঞ্জিলের সাথে তুলনা করেন, তবে আমাদের কারও আপত্তি করার পূর্বে তাঁর নিজেরই সতর্ক হওয়া উচিৎ। কেননা একথা বলার দ্বারা তার নিজের পিতা-মাতারই বিবাহ বিশুদ্ধ হয় না।

এছাড়া তিনি তার জীবনে দীর্ঘ একটি সময় নিজেও হানাফী ছিলেন। তাঁর জীবনীতে লেখা হয়েছে,
الحنفي (قديماً) ، ثم الإمام المجتهد بعد
[সাবাতু মুয়াল্লাফাতিল আলবানী, আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আশ্-শামরানী, পৃষ্ঠা-২, ১৬]

“প্রথম জীবনে হানাফী, পরবর্তী জীবনে নিজেই মুজতাহিদ ইমাম”

তিনি যদি হানাফী মাযহাবকে ইঞ্জিলের সমতুল্য মনে করে থাকেন, তবে তিনি প্রথম জীবনের যে সময়টাতে হানাফী ছিলেন সেসময়ে তিনি কি মুসলমান ছিলেন?

বর্তমান বিশ্বে ৯২.৫ ভাগ মুসলমান চার মাযহাবের কোন একটি অনুসরণ করে থাকে এবং অবশিষ্ট ৭.৫ ভাগ লোক শিয়া মতাবলম্বী। দীর্ঘ তের শ’ বছর যাবৎ মুসমিম উম্মাহ মাযহাবের অনুসরণ করে আসছে, তবে কি তিনি সব মুসলমানকে খ্রিস্টানদের মত পথভ্রষ্ট মনে করেন?

শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহঃ) এর প্রতি অভিশাপঃ
শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ সম্পর্কে শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) লিখেছেন,
أشل الله يدك وقطع لسانك -يدعو على العلامة الشيخ عبد الفتاح أبي غدة-.
ويقول عنه: إنه غدة كغدة البعير
ثم يقول مستهزئا ضاحكا: أتعرفون غدة

“আল্লাহ তায়ালা তোমার হাত অবশ করে দিক এবং তোমার জিহ্ক্ষাকে কর্তন করুক । [কাশফুন নিকাব, পৃষ্ঠা-৫২]
তিনি আরও বলেন , সে হল উটের প্লেগ রোগের মত একটা মহামারী (গুদ্দাতুল বায়ীর)। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে উপহাস করে বললেন, তোমরা কি জানো, উটের প্লেগ কী?

ড. ইউসুফ আল-কারযাবী সম্পর্কে শায়েখের উক্তিঃ

তিনি ড. ইউসুফ আল-কারযাবী সম্পর্কে বলেছেন,
اصرف نظرك عن القرضاوي واقرضه قرضا
“তুমি ইউসুফ কারযাবী থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখো এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো”

তিনি ড. ইউসুফ আল-কারযাবী সম্পর্কে আরও বলেছেন,
إن يوسف القرضاوي يفتي الناس بفتاوى مخالفة للشريعة و لهُ فلسفة خطيرة
“ইউসুফ আল-কারযাবী শরীয়ত বিরোধী ফতোয়া প্রদান করে, তার কাছে রয়েছে ভয়ঙ্কর সব দর্শন”

শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ)
হাদীসুল গদীর সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) সম্পর্কে লিখেছেন,
إنني رأيت شيخ الإسلام ابن تيمية ، قد ضعف الشطر الأول من الحديث ، وأما الشطر الآخر ، فزعم أنه كذب !وهذا من مبالغاته الناتجة في تقديري من تسرعه في تضعيف الأحاديث قبل أن يجمع طرقها ويدقق النظر فيها.والله المستعان
“আমি শায়খ ইবনে তাইমিয়াকে দেখেছি, তিনি হাদীসের প্রথম অংশকে দুর্বল বলেছেন এবং হাদীসের শেষ অংশকে তিনি মিথ্যা মনে করেছেন। আমার ধারণামতে “হাদীসকে যয়ীফ বলার ক্ষেত্রে এটি ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর বাড়াবাড়ি, যা তাঁকে হাদীসটি যয়ীফ বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে; অথচ তিনি হাদীস বর্ণনার বিভিন্ন পরম্পরা খতিয়ে দেখেননি। এবং এ ব্যাপারে গভীর দৃষ্টিপাত করেননি।”
[সিলসিলাতুস সহীহা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৩৪৩-৩৪৪, হাদীস নং ১৭৫০]

শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী পৃথিবী বিখ্যাত অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ফকীহের সমালোচনা করেছেন। সালাফীরা আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এবং আব্দুল ওহাব নজদী (রহঃ) কে তাদের মাইলফলক মনে করে থাকে। কিন্তু শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী সমস্ত আলেমের ক্ষেত্রে সব ধরণের নিয়ম-কানুনের দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছেন। এবং যেখানে যেভাবে ইচ্ছা তার সমালোচনা করেছেন।

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) “কালিমুত তাইয়্যিব” নামক বিখ্যাত একটি কিতাব রচনা করেছেন। শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) সে কিতাবের হাদীসগুলো বিশ্লেষণ করে একটি কিতাব লিখেছেন, সহীহুল কালিমিত তাইয়্যিব। এ কিতাবে নাসীরুদ্দিন আলবানী লিখেছেন-
أنصح لكل من وقف علي هذا الكتاب ( الكلم الطيب لإبن تيمية) و غيره: أن لا يبادر إلي العمل بما فيه من الأحاديث، إلا بعد التأكيد من ثبوتها، و قد سهلنا له السبيل إلي ذلك بما علقنا عليه ، فما كان ثابتا منها عمل به ...وإلا تركه، ( صحيح الكلم الطيب-ص-৪)

যারা আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর এ কিতাবটি সম্পর্কে অবগত রয়েছে, তাদেরকে নসীহত করব, এ কিতাবে যে সমস্ত হাদীস রয়েছে, সেগুলোর প্রতি তারা যেন আমল করতে অগ্রসর না হয়, যতক্ষণ না হাদীসগুলো শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত হয়। আমি এর উপর যে টিকা সংযোজন করেছি, এর মাধ্যমে প্রত্যেকের জন্য বিষয়টি সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং যে সমস্ত হাদীস প্রমাণিত হবে, সেগুলোর উপর আমল করা হবে, নতুবা সেটি পরিত্যাগ করা হবে”
[সহীহুল কালিমিত তাইয়্যিব, পৃষ্ঠা-৪]

শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানীর এ কথা উল্লেখ করে আল্লামা হাবীবুর রহমান আজমী (রহঃ) লিখেছেন,
و ليس يعني الألباني بذلك إلا أنه يجب علي الناس أن يتخذوه إماما و يقلدوه تقليدا أعمي، ولا يعتمدوا علي إبن تيمية و لا علي غيره من الثقات الأثبات من المحدثين، في ثبوت الأحاديث حتي يسألوا الألباني و يرجعوا إلي تحقيقاته!

“অর্থাৎ নাসীরুদ্দিন আলবানীর একথা বলার দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষ যেন আবশ্যকভাবে তাঁকে ইমাম বানায় এবং তাঁর অন্ধ অনুকরণ করে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আলবানীকে জিজ্ঞেস না করবে এবং তার বিশ্লেষণকে গ্রহণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লামা ইবনে তাইমিয়াসহ অন্য কোন বিশ্বস্ত ও গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী মুহাদ্দিসের হাদীসের উপরও নির্ভর করবে না।”

মূলতঃ শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী পৃথিবী বিখ্যাত অধিকাংশ মুহাদ্দিসের হাদীসের সমালোচনা করেছেন। এবং এ সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি হাদীসশাস্ত্রের কোন মূলনীতিরও তোয়াক্কা করেননি। বড় বড় মুহাদ্দিসগণ যে সমস্ত হাদীসকে সহীহ বলেছেন, সেগুলোকে তিনি যয়ীফ বলেছেন, আবার তারা যেটাকে যয়ীফ বলেছেন, তিনি নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সেগুলোকে সহীহ বলেছেন।

শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী একটি হাদীসকে এক কিতাবে সহীহ বলেছেন, অন্য কোথাও সেটিকে আবার যয়ীফ বলেছেন। এ ধরণের হাদীসের সংখ্যা একটি দু’টি নয়। অসংখ্য হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি এ ধরণের স্ববিরোধীতার আশ্রয় নিয়েছেন;

জালালুদ্দিন সূয়ূতী (রহঃ) সম্পর্কে শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী লিখেছেন,
فيا عجباً للسيوطي كيف لم يخجل من تسويد كتابهِ الجامع الصغير بهذا الحديث

“কী আণ্ডর্য! জালালুদ্দিন সূয়ূতী তাঁর জামে সগীরে কিভাবে এ হাদীস উল্লেখ করতে একটু লজ্জাবোধ করলেন না!

তিনি জালালুদ্দিন সূয়ূতী (রহঃ) সম্পর্কে আরও লিখেছেন-
وجعجع حولهُ السيوطي
অর্থাৎ জালালু্িদ্দন সূয়ূতী (রহঃ) হাঁক-ডাক ছেড়ে থাকেন।
[সিল-সিলাতুজ জয়িফা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮৯]

ইমাম হাকেম, ইমাম যাহাবী এবং আল্লামা মুনযিরি (রহঃ) সম্পর্কে শায়েখের উক্তিঃ

শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানীর দৃষ্টিতে একটা হাদিস সহীহ নয়, অথচ অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে সহীহ বলায় তিনি হাদীসের বিখ্যাত তিন মুহাদ্দিস ইমাম হাকেম, ইমাম যাহাবী, ইমাম মুনযিরি (রহঃ) সম্পর্কে বলেছেন,
وقال الحاكم : " صحيح الاسناد " ! ووافقه الذهبي ! وأقره المنذري في " الترغيب " ( ৩ / ১৬৬ ) ! وكل ذلك من إهمال التحقيق ، والاستسلام للتقليد ، وإلا فكيف يمكن للمحقق أن يصحح مثل هذا ا لاسناد

“হাকেম বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। ইমাম মুনযিরি (রহঃ) “তারগীব ও তারহীব” নামক কিতাবে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এটি হয়েছে, তত্ত্ব-বিশ্লেষণের প্রতি উদাসীনতা, তাকলীদের প্রতি আত্মসমর্পণ (অন্ধানুকরণ), নতুবা একজন বিশ্লেষণধর্মী আলেম কিভাবে একে সহীহ বলতে পারেন”

হাফেয তাজুদ্দিন সুবকী (রহঃ) সম্পর্কে শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী মন্তব্য করেছেন-
ولكنه دافع عنه بوازع من التعصب المذهبي ، لا فائدة كبرى من نقل كلامه وبيان ما فيه من التعصب. .
মাযহাব অনুসরণের গোঁড়ামি তাঁকে প্ররোচিত করেছে। তাঁর কথা উল্লেখ করে এবং তাঁর গোঁড়ামির কথা আলোচনা করে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উপকারিতা নেই।
[সিল-সিলাতুজ যয়িফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৫]


শায়খ হাবীবুর রহমান আজমী (রহঃ) তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন,

الشيخ ناصر الدين الالباني شديد الولوع بتخطئة الحذاق من كبار علماء الاسلام ولا يحابى في ذلك أحدا كائنا من كان ، فتراه يوهم البخاري ومسلما ، ومن دونهما ، ويغلط ابن عبد البر وابن حزم والذهبي وابن حجر والصنعانى ، ويكثر من ذلك حتى يظن الجهلة والسذج من العلماء ان الالباني نبغ في هذا العصرنبوغا يندر مثله

“শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী পৃথিবী বিখ্যাত গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী আলেমদের ভুল ধরার ব্যাপারে চরম বেপরোয়া। এ পথে তিনি কাউকেই মুক্তি দেননি। আপনি দেখবেন! সে ইমাম বোখারী (রহঃ), ইমাম মুসলিমসহ অপরাপর ইমামদের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ইবনে আব্দুল বার (রহঃ), ইবনে হাযাম (রহঃ), ইমাম যাহাবী (রহঃ) ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ), ইমাম সানআনী (রহঃ) সহ আরও অনেককে ভুল সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন। অথচ অনেক অজ্ঞ এবং সাধারণ আলেম তাঁকে বর্তমান যুগের বিরল ব্যক্তিত্ব মনে করে থাকেন।”

বর্তমান বিশ্বের যে সমস্ত আলেম শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানীর এসমস্ত ভ্রান্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন এবং এ সম্পর্কে কিতাব লিখেছেন তাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হল-
১. শায়খ হাবীবুর রহমান আজমী (রহঃ)। তাঁর রচিত কিতাবের নাম-
الألباني شذوذه وأخطاؤه
২. উত্তর আফ্রিকার বিখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ আল-গুমারী (রহঃ)। তাঁর কিতাবের নাম হল-
"القول المقنع في الرد على الألباني المبتدع"
৩. শায়েখ আব্দুল আযীয গুমারী-
"بيان نكث الناكث المقعدي بتضعيف الحارث"
৪. শায়েখ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল-খাজরাযী
"الألباني تطرفاته"
৫. উস্তাদ বদরুদ্দিন হাসান দিয়াব দামেশকী-
"أنوار المصابيح على ظلمات الألباني في صلاة التراويح"
৬. শামের বিখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ আল-হারারী,
التعقب الحثيث على من طعن فيما صح من الحديث
৭. শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ)
"أينَ يضع المصلي يده في الصلاة بعد الرفع من الركوع"
৮. শায়েখ ইসমাইল বিন মুহাম্মাদ আনসারী (রহঃ)
"تصحيحُ حديث صلاة التراويح عشرين ركعة والردّ على الألباني في تضعيفه"
৯. শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহঃ)
"كلماتٌ في كشف أباطيل وافتراءات"
১০. শায়েখ হাসান বিন আলী আস-সাক্কাফ
قاموس شتائم الألباني وألفاظه المنكرة في حق علماء الأمة وفضلائها وغيرهم
১১. শায়েখ হাসান বিন আলী আস-সাক্কাফ,
"البشارةُ والإتحاف فيما بين ابن تيمية والألباني في العقيدة من الاختلاف"

আমরা এখানে সামান্য কয়েকটি কিতাবের নাম উল্লেখ করেছি। শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানীর ভ্রান্ত বিষয়গুলির সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ঠ অধিকাংশ আলেম স্বতন্ত্র কিতাব লিখেছেন। “সাবাতু মুয়াল্লাফাতিল আলবানী” এর গ্রন্থকার এ ধরণের ৫৭ টি কিতাবের নাম উল্লেখ করেছেন। এ সমস্ত গ্রন্থে শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানীর ভ্রান্তিগুলো আলোচনা করা হয়েছে।

বিখ্যাত সালাফী আলেমদের মধ্যে যারা শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর এ সমস্ত ভ্রান্ত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, তাদের কয়েকজনের নাম নিচে উল্লেখ করা হল-
১. শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ)।
২. শায়েখ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ)।
৩. ড. বকর বিন আব্দুল্লাহ আবু যায়েদ।
৪. শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আদ-দাবীশ (রহঃ)
৫. সফর বিন আব্দুর রহমান।
৬. মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান সা’আদ।
৭. শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন মা’নে আল-উতাইবি।
৮. শায়েখ ফাহাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সুনাইদ।
৯. আবু আব্দুল্লাহ মুস্তফা আল-আদাবী।
জামেয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ এর দাওয়া বিভাগের প্রধান ড.আব্দুল আযীয আল-আসকার শায়েখ নাসীরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কে লিখেছেন,
الألباني واتباعه ليسوا سلفية
“আলবানী এবং তার অনুসারীরা মূলতঃ সালাফী নয়”

অর্থাৎ এরা সালাফী (পূর্ববর্তীদের অনুসারী) হওয়ার দাবী করে কিন্তু বাস্তবে এরা সালাফী নয়।

আলবানী সাহেবের তাহকীকের প্রকৃত অবস্থা:
১. উদা বিন হাসান উদা ৫০০ হাদীসের একটি সঙ্কলন বের করেছেন। এই কিতাবে যে ৫০০ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো মুলত: আলবানী সাহেবের তারাজু বা পূর্বের মতামত থেকে ফিরে আসার ব্যাপারে আালোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ আলবানী সাহেব পূর্বে একটা হাদীসকে সহীহ বলেছেন, পরে মত পরিবর্তন করে সেটাকে যয়ীফ বলেছেন। এধরনের রুজু দু'একটি হাদীসে ঘটেনি। এখানে মোট পাচ শ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। এই কিতাবটি আলবানী সাহেব এর নিজস্ব ওযেস সাইট আলবানী ডট নেটে পাওয়া যায়। নিচের লিংক দেকে ডাউন লোড করুন।http://www.alalbany.net/?p=5282

২. আবুল হাসান মুহাম্মাদ হাসান আশ-শাযখ্র আলবানী সাহেব এর রুজু বা পূর্বের মতামত থেকে প্রত্যাবর্তনের উপর একটি সঙ্কলন বের করেছন। এখানেও ৩০০ এর বেশি হাদীসের উপর আলোচনা করা হয়েছে। এ কিতাবটি আলবানী ডট কমে পাওয়া যাবে। নিচের লিংক থেকে ডাউন লোড করুন।
http://www.alalbany.net/?p=5262

৩. আলবানী সাহেবের তারাজু নিয়ে লেখা আরেকটি কিতাব হলো, আত-তাম্বিহাতুল মালিহা আলা মা তারাজায়া আনহুল আল্লামা আল-আলবানী। এটি নিচের লিংক থেকে ডাউন লোড করুন। এ কিতাবেও আলবানী সাহেব এর সহীহ ও যয়ীফ বলার ক্ষেত্রে পূর্বের মত থেকে প্রত্যাবতর্ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং আলবানী সাহেবের রুজু করা হাদীস সঙ্কলন করা হযেছে। ডাউনলোড লিংক,
http://www.alalbany.net/?p=5043

৪. আলবানী সাহেব পূর্বের অবস্থান থেকে ফেরার পাশাপাশি প্রচুর স্ববিরোধীতায় লিপ্ত হযেছেন। একই রাবীকে কোথাও যয়ীফ, কোথাও সহীহ বলা, একই হাদীসকে কোথাও সহীহ এবং কোথাও সহীহ বলাকে তানাকুয বা স্ববিরোধীতা বলে। আলবানী সাহেব এতো বেশি পরিমাণ স্ববিরোধীতা করেছেন যে, এ বিষয়ে তিনি অনেক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। একজন সুস্থ ধারার মুহাদ্দিস দু'একটি হাদীসের ক্ষেত্রে এমন করতে পারেন, কিন্তু তিনি শত শত হাদীসের ক্ষেত্রে এধরণের স্ববিরোধতিা করেছেন। শায়খ হাসান বিন আলী আস-সাক্কাফ আলবানী সাহেবের এ ধরণের স্ববিরোধীতার উপর কিতাব লিখেছেন। কিতাবের নাম, তানাকুযাতুল আলবানিল ওয়াজিহাত। এটি তিন খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তিন খন্ডে আলবানী সাহেবের মোট ১৩০০ স্ববিারোধী বক্তব্য উল্লেখ করা হযেছে। লেখক দাবী করেছেন, আমি আলবানী সাহেবের মোট সাত হাজার স্ববিরোধী বক্তব্য পেযেছি। এই তিন খন্ডে আমি ১৩০০ বক্তব্য প্রকাশ করেছি। বাকীগুলো তিনি আস্তে আস্তে প্রকাশ করবেন।

৫. শায়খ সাইদ আল মামদুহ আলবানী সাহেব এর সহীহ ও যয়ীফ এর উপর তুলনামূলক আলোচনা করে ইলমুল হাদীসের আঙ্গিকে আট শ হাদীসের ব্যাপারে আলবানী সাহেবের ভুল ধরেছেন। অথাৎ একটা হাদীস আলবানী সাহেব এর নিকট যয়ীফ, কিন্তু সেটি বাস্তবে সহীহ আবার একটি হাদীসকে তিনি সহীহ বলেছেন, বাস্তবে সেটি যয়ীফ, এজাতীয় আট শ হাদীসের উপর আলোচনা করেছেন। তিনি এর উপর, আত-তা'রীফ বিআওহামি মান কাস সামাস সুনান ইলা সহীহ ও যয়ীফ নামে ছয় খন্ডের কিতাব লিখেছেন। প্রত্যেক খণ্ডই প্রায় ৫০০ পৃ. এর উপরে।

৬. শায়খ হাম্মাদ বিন হাসান আল-মিসরী ৩০০ শ এর বেশি রাবীর জীবনী আলোচনা করেছেন, যাদের ব্যাপারে আলবানী সাহেব বলেছেন, তাদের কোন জীবনী কোন কিতাবে পাইনি অথবা তারা অপরিচিত, অথচ তাদের জীবনী তিনি যে কিতাব দেখেছেন তাতে বিদ্যমান রয়েছে এবং তারা পরিচিত রাবী। তিনি নাম্বার সহ প্রত্যেক রাবীর নাম ও তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করেছেন। নিচের সাইটে তার আলোচনা গুলো পাওয়া যাবে।
Click This Link

আলবানীর সাহেব ভুল-ভ্রান্তি বিশ্লেষণ করে বাজারে নিয়মিত নতুন নতুন বই আসছে। এর অধিকাংশ বইয়ের লেখক আলবানী সাহব এর ছাত্র ও সালাফী ঘরানার আলেম। সুতরা এসমস্ত ভুলের ব্যাপারে অবগত না হয়ে যেসমস্ত সালাফী বন্ধুরা অন্ধভাবে, যাচাই-বাছাই ছাড়া আলবানী সাহেবের অনুসরণ করছেন, তাদেরকে অন্ধ অনুসারী ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?

অতএব, সর্বশেষ কথা হল, তাবেয়ী ইবনে সিরিন (রহঃ) বলেছেন,
إنَّ هذا العلم دين ؛ فانظروا عمَّن تأخذون دينكم
“নিশ্চয় এই ইলম দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং লক্ষ্য রেখো! কার নিকট থেকে তুমি তোমার দ্বীন গ্রহণ করছো”
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:১০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×