somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধ বানান শিক্ষা।যেসব বানান প্রায়শই ভুল করে থাকেন ।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বানান নিয়ে আগের পোস্ট । ক্লিক করুন ।
১-শিকড় ও শিখর :
*************
দেশি ‘শিকড়’ শব্দের আভিধানিক অর্থ গাছের মূল, মূল, গোড়া প্রভৃতি। ‘শেকড়’ হচ্ছে ‘শিকড়’ শব্দের কথ্য রূপ। সংস্কৃত শিখর (শিখা+র) শব্দের আভিধানিক অর্থ চূড়া, শীর্ষদেশ, উপরিভাগ, উপর প্রভৃতি।
দুটো শব্দের উচ্চারণ প্রায় অভিন্ন বলে কখন কোন বানান হবে তা নিয়ে অন্য কারও সংশয় হয় কি না জানি না, আমার বেশ সংশয় লেগে যায়। এজন্য আমি একটা কৌশল প্রয়োগ করি। কৌশলটা হচ্ছে :
‘ক’ এর পর যেমন ‘খ’-য়ে যেতে হয় তেমনি মূল-এর পর যেতে হয় ‘চূড়া’য়। তাই ‘শিকড়’ বানানে ‘ক’ এবং ‘শিখর’ বানানে ‘খ’।
তাহলে ‘শিকড়’ বানানের শেষে ‘ড়’ এবং ‘শেখর’ বানানে ‘র’ কেন?
শিকড় শব্দের অর্থ গোড়া। ‘ গোড়া’ থেকে শুরু হয় বলে ‘শিকড়’ বা ‘শেকড়’ বানানে ‘গোড়া’ শব্দের ‘ড়’ বসাতে হয়। অন্যদিকে, ‘শেখর’ শব্দের অর্থ ‘উপর’ বলে শব্দটির বানানে ‘উপর’ শব্দের ‘র’ বসাতে হয়।


২-খুশি ও সুখী নিমোনিক :
পোস্টটি আমার মতো যাদের বাংলা বানানে সংশয় হয় তাদের জন্য। বিশেজ্ঞদের পড়ার প্রয়োজন নেই।
****************
ফারসি ‘খুশি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ আনন্দ, সন্তোষ, ইচ্ছা, মর্জি প্রভৃতি। সংস্কৃত ‘সুখী (সুখ+ইন্)’ শব্দের আভিধানিক অর্থ সন্তুষ্ট, সুখভোগে অভ্যস্ত প্রভৃতি। বিদেশি শব্দ বলে ‘খুশি’ বানানে হ্রস্ব-ইকার এবং তৎসম বলে ‘সুখী’ বানানে ঈ-কার। তৎসম-অতৎস বা দেশি-বিদেশি নিয়ে অত জানার সুযোগ আমাদের মতো সাধারণ লোকের নেই। এগুলো বিশেষজ্ঞ পর্যাযের বিষয়। তাই শব্দদুটোর কোনটিতে ই-কার এবং কোনটিতে ঈ-কার হবে তা নিয়ে নিয়ে আমার সংশয় লেগে যায়। সংশয় কাটানোর জন্য আমি মনে মনে একটা কৌশল ঠিক করেছি। যেমন : সখী বানানে ঈ-কার। সখী থেকে ধরে নিলাম সুখী। তাই সুখী বানানেও ঈ-কার।

আন্তঃকক্ষ নাকি অন্তঃকক্ষ?
দুটোই অর্থপূর্ণ শব্দ, তবে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে।

আন্তঃকক্ষ --- দুই (বা তার বেশি) কক্ষের মধ্যে। যেমন-- আন্তঃকক্ষ বৈদ্যুতিক সংযোগ। অর্থাৎ দুটি রুমের মধ্যে যে বৈদ্যুতিক যোগাযোগ/ব্যবস্থা আছে সেই সম্পর্কে বলছেন।

অন্তঃকক্ষ --- একই কক্ষের মধ্যে। যেমন--- অন্তঃকক্ষ বৈদ্যুতিক সংযোগ বললে বোঝাবে শুধুমাত্র ঐ কক্ষের মধ্যেই যে ব্যবস্থাটি আছে সেটি।

দুই তার বেশির মধ্যে কিছু হলে 'আন্তঃ' দিয়ে বলা হয়। আর একই জিনিসের মধ্যে বা অভ্যন্তরে বোঝাতে 'অন্তঃ' দিয়ে লেখা হয়।

অন্তঃবিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতা --- একটিই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দলের মধ্যে।

আন্তঃবিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতা --- বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত

এক্ষণ ও এক্ষণে এক্ষনি নিমোনিক :
এক্ষণ, এক্ষণে, এক্ষুনি তিনটিই অতৎসম এবং বাক্যে ক্রিয়া বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘এক্ষণ’ শব্দের অর্থ এই সময়, এই মুহূর্ত, বর্তমান কাল। ‘এক্ষণে’ শব্দের অর্থ এই মুহূর্তে, এখন, এই সময়ে, বর্তমানকালে; শব্দটি বাক্যে ক্রিয়া বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে বাক্যে ক্রিয়া বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘এক্ষুনি’ শব্দের অর্থ এখনই।
তিনটি শব্দের বানান ও অর্থ প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় কোন শব্দে দন্ত্য-ন এবং কোন শব্দে মূর্ধন্য-ণ বসবে তা নিয়ে গণ্ডগোল লেগে যায়। গণ্ডগোল এড়ানোর জন্য নিচের নিমোনিকটি মনে রাখতে পারেন :
এক্ষণ, এক্ষণে ও এক্ষুনি শব্দের উচ্চারণ যথাক্রমে এক্‌খন, একখ্‌নে এবং একখুনি। খুনি বানানে দন্ত্য-ন। তাই এই তিনটি শব্দের যে শব্দে খুনি উচ্চারিত হয় সে শব্দের বানানে দন্ত্য-ন, বাকি দুটোতে মূর্ধন্য-ণ।
[ আমার অজ্ঞতা : এক্ষণ ও এক্ষণে অতৎসম শব্দ, তবু কেন মূর্ধন্য-ণ!]

ধরন- ধারণ নিমোনিক :
****************
বাক্যে বিশেষ্য পদ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘ধরন (√ধৃ+অন)’ শব্দের অর্থ পদ্ধতি, প্রণালি, বর্ষণবিরতি, আকৃতি, ভঙ্গি, চালচলন প্রভৃতি। অন্যদিকে, বিশেষ্য পদ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘ধারণ (√ধারি+অন)’ শব্দের অর্থ অবলম্বন (লেখনী ধারণ), পরিধান (বেশ ধারণ), সংকুলান (পাত্রের ধারণক্ষমতা), বিধৃতকরণ (শব্দ ধারণ), গ্রহণ (উপাধি ধারণ)। ধারণ থেকে ধারণা। ধারণা শব্দের অর্থ বোধ, অনুমান, বিশ্বাস।
ধরন ও ধারণ বানানের দন্ত্য-ন ও মূর্ধন্য-ণ নিয়ে অনেকে সংশয়ে পড়ে যান। সংশয় দূর করার জন্য একটি সহজসূত্র আমি ব্যবহার করি। সূত্রটি আপনারা অনুসরণ করতে পারেন। অবশ্য এর চেয়ে ভালো কোনো নিমোনিক থাকলে দিতে পারে।
বিষয়টিকে (১+২)= (২+১) করে হিসেব করুন। অ-এর পরে আ এবং দন্ত্য-ন এর পর মূর্ধন্য-ণ। ধরন বানানে ‘দন্ত্য-ন’ কারণ ধরন বানানের প্রথম বর্ণ অ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দ্বিতীয় বর্ণ দন্ত্য-ন। ধারণ বানানে মূর্ধন্য-ণ, কারণ ধারণ বানানের প্রথম বর্ণে আ অতএব এর সঙ্গে যুক্ত হলো প্রথম বর্ণ মূর্ধন্য-ণ। প্রসঙ্গত, ‘ধারণ’ শব্দের একটি অর্থ গ্রহণ। ‘গ্রহণ’ শব্দে মূর্ধন্য-ণ, তাই ‘ধারণ’ শব্দেও মূর্ধন্য-ণ। ‘ধারণ’ থেকে উদ্ভূত শব্দেও মূর্ধন্য-ণ।

বাল, আবাল, আবালবৃদ্ধ, বনিতা এবং আবালবৃদ্ধবনিতা :
****************************************
বাল : ‘বাল (√বল+অ)’ বাংলায় ব্যবহৃত একটি তৎসম শব্দ। এর আভিধানিক ও প্রায়োগিক অর্থ বালক, শিশু, কিশোর, প্রভৃতি। শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে : বালা ও বালি। বালা শব্দের অর্থ অল্পবয়সি মেয়ে, বালিকা, কন্যা, দুহিতা, যুবতী প্রভৃতি।‘বালি’ শব্দের অর্থ কিশোরী, বালিকা প্রভৃতি। ‘বাল’ শব্দ নিয়ে গঠিত শব্দরাশির কয়েকটি হলো : বালচর্চা (শিশুপালন), বালবাচ্চা (ছোটো ছেলেমেয়ে), বালবিধবা (যে কন্যা বালিকা অবস্থায় বিধবা হয়েছে), বালবৈধব্য (বালিকা অবস্থায় বৈধব্যদশা), বালভোগ (বালক কৃষ্ণকে প্রদত্ত প্রাতঃকালীন ভোগ, বালভোগ্য (শিশুদের উপভোগের যোগ্য), বালসুলভ (বালকোচিত), বালসূর্য (নবোদিত সূর্য), বালশশী (শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ার চাঁদ) প্রভৃতি।
বালক : ‘বালক (বাল+ক)’ শব্দের অর্থ অল্পবয়স্ক পুরুষ সন্তান, অনূর্ধ্ব ষোলো বছরের পুরুষ, শিশু, অর্বাচীন, নির্বোধ, অপক্ব, অনভিজ্ঞ প্রভৃতি। ‘বালক’ শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে বালিকা।
আবাল : আ+বাল = আবাল। ‘বাল’ শব্দের ‘আ’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘আবাল’ শব্দ গঠিত হয়েছে। বিস্তৃতি, পর্যন্ত, ব্যাপকতা প্রভৃতি প্রকাশে ‘আ’ উপসর্গটি ব্যবহৃত হয়। যেমন : আ + মৃত্যু = মৃত্যু পর্যন্ত। সে বিবেচনায় ‘আবাল’ শব্দের গঠনের সঙ্গে আকণ্ঠ, আপাদমস্তক, আমরণ, আসমুদ্রহিমাচল, আজীবন, আজন্ম প্রভৃতি শব্দের গঠনের মিল রয়েছে। গঠন অনুযায়ী আবাল শব্দের আভিধানিক অর্থ বাল্যাবধি, বাল্যকাল থেকে, অল্পবয়স থেকে, শিশুকাল থেকে প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, আবাল শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ হচ্ছে আবালি।
আবালবৃদ্ধ : ‘আবালবৃদ্ধ (আবাল+√বৃধ্+ত)” শব্দের অর্থ হচ্ছে বালক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলে। এখানে শুধু বালিকা ও বৃদ্ধের কথা বলা হয়েছে। কাজেই এটি পুঃলিঙ্গ জ্ঞাপক।
আবালবৃদ্ধবনিতা : আবালবৃদ্ধবনিতা শব্দটি আবাল, বৃদ্ধ ও বনিতা শব্দ নিয়ে গঠিত। সংস্কৃত বনিতা(=বনিত+আ) শব্দের অর্থ নারী, স্ত্রী, পত্মী, প্রেয়সী প্রভৃতি।বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, আবালবৃদ্ধবনিতা (=আবালবৃদ্ধ+√বন্+ইত+আ)’ শব্দের অর্থ বালক থেকে বৃদ্ধ এবং নারী পর্যন্ত সকলে।
অনেকে মনে করেন, ‘বাল’ শব্দের অর্থ ‘গোপনাঙ্গের কেশ’, এমন মনে করা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা । অন্য ভাষার শব্দকে নিজ ভাষার শব্দার্থের সঙ্গে একীভূত করে ফেলা হীনম্মন্যতাও বটে। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের কোথাও ‘বাল’ শব্দের অর্থ হিসেবে ‘গোপনাঙ্গের কেশ’ উল্লেখ নেই। তবে কেউ কেউ শব্দটিকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। শুবাচে অপ্রাসঙ্গিকভাবে গালি হিসেবে শব্দটি উত্থাপন না-করার অনুরোধ রইল।


তৎসম চেনার নিমোনিক :
***********************
বাংলায় ৫৫ ভাগের মতো শব্দ তৎসম। এগুলো চেনার কয়েকটি সহজ কৌশল নিচে দেওয়া হলো। তবে বাংলায় এমন অসংখ্য তৎসম শব্দ আছে যা নিচে লিখিত নিয়মের আওতায় পড়ে না। সেগুলো অধ্যয়নের মাধ্যমে চিনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। এবার নিয়মকটি দেখে নেওয়া যাক :
১. প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ঈ ঊ এবং ঋ আর এসব বর্ণের কারচিহ্ন (ী, ‍ূ, ‍ৃ) যুক্ত সকল শব্দ তৎসম।
২. মূর্ধন্য-ণ যুক্ত সব শব্দ তৎসম।মূর্ধন্য-ষ যুক্ত শব্দ সাধারণত তৎসম হয় কিন্তু কিছু কিছু শব্দ আছে যেগুলোর বানানে মূর্ধন্য-ষ থাকলেও তৎসম নয়। যেমন : খ্রিষ্টাব্দ, খ্রিষ্ট, পোষা, ষোলো, বোষ্টম প্রভৃতি তৎসম নয়।
৩. যেসব শব্দের পূর্বে প্র, পরা, অপ, সম, অব, অনু, নির(নিঃ), দুর(দুঃ), উৎ, অধি, পরি, প্রতি, উপ, অভি, অতি শব্দগুলো যুক্ত থাকে সেগুলো তৎসম।
৪. ক্ত্র, ক্ম, ক্ষ, ক্ষ্ণ, ক্ষ্য, ক্ষ্ম, ক্ষ্ম্য, গ্ধ, গ্ন্য, গ্ম, ঘ্ন, ঙ্ক্ষ, ঙ্ম, চ্ছ্ব, চ্ছ্র, জ্ঝ, জ্ঞ, ঞ্ছ, ঢ্র, ত্ত্ব, ত্ম্য, ত্র্য, দ্ব্য, দ্ম, ধ্ন, ধ্ম, ন্ত্য, ন্ত্ব, ন্ত্র, ন্ত্র্য, ন্দ্ব, ন্ধ্য, ন্ধ্র, ন্ন্য, ল্ম, শ্ছ, শ্ম, ষ্ক্র, ষ্ট্য, ষ্ট্র, ষ্ব, ষ্ম, স্ত্য, স্থ্য, হ্ন্য, হ্ম, হ্ল প্রভৃতি যুক্তবর্ণ শুধু তৎসম শব্দে দেখা যায়।
৫. বিসর্গযুক্ত এবং বিসর্গসন্ধিসাধিত শব্দসমূহ তৎসম।
৬ . বহুবচনবাচক গণ, বৃন্দ, মণ্ডলী, বর্গ, আবলি, গুচ্ছ, দাম, নিকর, পুঞ্জ, মালা, রাজি, রাশি প্রভৃতির যে কোনো একটি থাকলে ওই শব্দ তৎসম হয়।
৭. সমাসবদ্ধ পদের একটি অংশ তৎসম হলে অপর অংশ এবং সমস্তপদটিও তৎসম হয়। যেমন চন্দ্রমুখ শব্দে চন্দ্র অংশটি তৎসম সুতরাং ‘মুখ’ এবং ‘চন্দ্রমুখ’ শব্দদুটোও তৎসম।
৮. উপমান কর্মধারয়, উপমিত কর্মধারয় এবং রূপক কর্মধারয় সমাস গঠিত শব্দ সাধারণত তৎসম হয়।
৯. অব্যয়ীভাব এবং প্রাদি সমাস দ্বারা গঠিত পদগুলো সাধারণত তৎসম হয়।
১০. শব্দের শেষে তব্য ও অনীয় থাকলে তা তৎসম হয়। যেমন কর্তব্য, মন্তব্য, বক্তব্য, দ্রষ্টব্য, ভবিতব্য, করণীয়, দর্শনীয়, বরণীয়, রমণীয় প্রভৃতি তৎসম।
১১. শব্দের শেষে তা, ত্ব, তর, তম, বান, মান, এয়, র্য প্রভৃতি থাকলে সাধারণত ওই শব্দগুলো তৎসম হয়।
১২. অব্যয়পদের শেষে ত থাকলে (প্রথমত, অন্তত, জ্ঞানত) তা তৎসম হয়।
স্মর্তব্য : বাংলায় এমন কিছু শব্দ আছে যে শব্দগুলোর সংস্কৃত বানানে নাসিক্য বর্ণ ছিল কিন্তু নাসিক্য বর্ণ ছেড়ে তৎপরিবর্তে চন্দ্রবিন্দু ধারণ করে সংস্কৃত হতে পুরোপুরি বাংলায় চলে এসেছে। তাই চন্দ্রবিন্দুযুক্ত কোনো শব্দই তৎসম নয়। যেমন : চন্দ্র হতে চাঁদ, গ্রাম হতে গাঁও, বংশ হতে বাঁশ, অংশ হতে আঁশ প্রভৃতি তৎসম নয়।


সরণি নিমোনিক :
****************
সংস্কৃত সরণ (√সৃ+অন) শব্দের অর্থ চলন, গমন, পথ, রাস্তা প্রভৃতি। সরণ থেকে সরণি। প্রসঙ্গত, তৎসম সরণি (সৃ+অনি) শব্দের অর্থ পথ, রাস্তা, সড়ক প্রভৃতি। যেমন : বিজয় সরণি, প্রগতি সরণি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, তাজউদ্দীন আহমেদ সরণী প্রভৃতি। কিন্তু অনেকে ‘সরণি’ শব্দকে সরণী, স্মরণী, স্বরণী, স্বরনি, স্মরনি প্রভৃতি ভুল বানানে লিখে থাকেন। জাতীয় জরিপ অধিদপ্তরে প্রবেশ-পথের সাইনবোর্ডে লেখা হয়েছে— ২৯ তাজউদ্দীন আহমেদ স্মরণী। পল্টন মোড়, বিজয়নগর, মগবাজার রোড, সাত রাস্তা, তেজগাঁও প্রভৃতি এলাকার অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডেও সরণি’ বানানের পরিবর্তে লেখা হয়েছে স্বরণী, স্বরণি, স্মরণী।
অনেকে মনে করেন, স্মরণ থেকে স্মরণী। এটি শব্দটির বানান ভুলের একটি কারণ। আর একটি কারণ হচ্ছে উচ্চারণ। তবে সবচেয়ে বড়ো কারণ হচ্ছে অভিধান না- দেখা। এ ভুল হতে রক্ষা পাওয়ার একটা কৌশল আছে। দেখুন কৌশলটি কতটুকু কার্যকর :
প্রথমে মনে রাখনেব রাস্তা নামের প্রাসঙ্গিকতায় লেখা ‘সরণ’ শব্দটি স্মরণ থেকে নয় ‘সরা’ থেকে এসেছে। সরা শব্দের অর্থ স্থান বদলানো। রাস্তায় পথিককে সরে সরে এগুতে হয়। তাই রাস্তার নাম সরণি। শব্দটি সংস্কৃত হওয়ায় ণত্ব বিধি অনুসারে মূর্ধন্য-ণ হয়েছে। যদি কষ্ট হয় তো, অতসব না-ভেবে শুধু মনে রাখুন ‘সরা’ থেকে ‘সরণি’। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে শব্দটিতে ঈ-কার নেই।

দিন, দীন আর দ্বীন ::
কয়েক দিনে আগের কথা। আমার এক সিনিয়র বিশেষ এক ধর্মীয় কর্মসূচিতে যাবেন। বিবরণ ফরম পূরণ করে দেখতে দিলেন।
ধর্ম কলামে তিনি লিখেছেন, “ইসলাম আমার দীন।”
ইসলাম “দীন” হবে কেন? আমি হতভম্ব হয়ে বিরক্ত নিয়ে প্রশ্ন করলাম, “আপনি দীন মানে কি জানেন?”
তিনি বললেন, ধর্ম।
বললাম, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘দীন’ শব্দের অর্থ দরিদ্র, করুণ, নিঃস্ব, নীচ, অনুদার এবং বিশেষ্যে দরিদ্র বা দুঃখী ব্যক্তি। সহজ কথায় এবং আপনার ভাষায় ফকিন্নি। আপনার ধর্ম ইসলাম, আমারও। ইসলাম দরিদ্র হবে কেন, কেন হবে করুণ, নিঃস্ব, নীচ এবং অনুদার? নিজের ধর্মকে এত ছোটো মনে করা আদৌ কোনো ধার্মিকের লক্ষণ নয়।
তিনি রেগে গিয়ে “দীন মানে ধর্ম” বলেই পাশের দেরাজ থেকে বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান নিয়ে পাতা উলটাতে শুরু করলেন। কয়েক মিনিট পর মুখটা ফ্যাকাশে করে হতাশ গলায় বললেন, তাই তো, দীন মানে তো ফকিন্নি।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে দিন শব্দের দুটি পৃথক ভূক্তি রয়েছে।প্রথম ভুক্তিমতে, ‘দিন’ যখন সংস্কৃত; তখন শব্দটির অর্থ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়, দিবস, দিবা, চব্বিশ ঘণ্টাকাল, অহোরাত্র, আয়ু (দিন আমার ফুরিয়ে এল।) সময় (দিন থাকতে চলে এসো, দেরি করো না।), কাল (সুদিন) প্রভৃতি। দ্বিতীয় ভূক্তিমতে, ‘দিন’ যখন আরবি, তখন শব্দটির অর্থ ধর্ম। যেমন : তিনি দিনদার মানুষ। ইসলাম আমার দিন। হিন্দু পৃথিবীর প্রাচীনতম দিন।
অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘দীন’ শব্দের অর্থ দরিদ্র, করুণ, নিঃস্ব, নীচ, অনুদার এবং বিশেষ্যে দরিদ্র বা দুঃখী ব্যক্তি।
অতএব, ভুলেও বলবেন না “ইসলাম আমার দীন”, বলুন, “ইসলাম আমার দিন”।
‘দিন’ আলোর স্ফুরণ আর সূর্যের কিরণ,
‘দীন’ হীনতার লজ্জা, ব্যর্থতার ক্রন্দন।
অনেকে লেখেন, দ্বীন। এটি ভুল শব্দ এবং অপ্রয়োজনীয়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘দ্বীন’ শব্দটি আমার চোখে পড়েনি। হয়তো শব্দটি অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় অভিধানে স্থান দেওয়া হয়নি।

জনাব বনাম জনাবা
‘জনাব’ সম্মানজ্ঞাপক শব্দ। ব্যক্তির নামের পূর্বে শব্দটি সম্মান ও ভদ্রতা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেকে মহিলাদের নামের পূর্বে ‘জনাব’ এর স্ত্রীবাচক পদ হিসাবে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মানুসারে ‘আ’ যুক্ত করে ‘জনাবা’ লিখে থাকেন। এটি রীতিমতো অপমানজনক।
‘জনাবা’ শব্দের অর্থ ঋতুমতী নারী। এ অবস্থায় কোনো নারীর নামের আগে ‘জনাবা’ লেখা ওই নারীর পক্ষে কত লজ্জাকর ও অপমানজনক তা সহজে অনুমেয়। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী ‘জনাব’ শব্দটি নারীপুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তির নামের পূর্বে ব্যবহার করা যায়। তবে কারো নামের পূর্বে সৈয়দ, খান, খন্দকার বা অন্য কোনো পদবি থাকলে ‘জনাব’ লেখা সমীচীন নয়।
আমরা বাংলায় কোনো পুরুষকে ‘জনাব’ বলে সম্বোধন করব, একইভাবে কোনো মহিলার নামের পূর্বেও সম্মানসূচক শব্দ হিসাবে ‘জনাব’ ব্যবহার করব। তবে কোনো অবস্থাতে ‘জনাবা’ নয়। ‘জনাব’ এর পরিবর্তে ‘বেগম’ লেখা যায়। স্মর্তব্য, আরবি বা ফারসি ভাষার লিঙ্গান্তরের নিয়ম বাংলা ভাষার মতো নয়। অধিকন্তু, সম্বোধন বাচক শব্দে বাংলা এত দীন নয় যে, জনাবা লিখতে হবে।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ) অনুযায়ী ‘জনাব’ অর্থ : ব্যক্তিনামের পূর্বে ব্যবহৃত সম্মানসূচক শব্দ, মহাশয়, শ্রী। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এ জনাব সম্পর্কে লেখা আছে : “জনাব [জনাব্] বি সম্মানসূচক ‘মি.’ ও ‘শ্রী’-র পরিবর্তে সাধারণভাবে নারীপুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তিনামের পূর্বে ব্যবহৃত; সম্মানসূচক সম্বোধনবিশেষ; মহাত্মা; মহাশয়; মাননীয়; ভদ্রলোক; sir। জনাবে আলি, ~ আলী বি (সম্বোধনসূচক) মান্যবর; মহামান্য; Your Excellency। {শব্দটি মূলত আরবি হলেও ফারসি ভাষাতেই এটি বহুল ব্যবহৃত, আ. জনাব جــنــب}”। বর্ণিত অভিধান দুটোর কোনোটাতে ‘জনাবা’ শব্দ নেই।
আরবি ভাষায় ‘জনাবা’ একটি সুনির্দিষ্ট শব্দ।যার অর্থ গর্ভবতী শূকর। অতএব এবার ভেবে দেখুন, কোনো মহিলার নামের আগে ‘জনাবা’ লিখবেন কি না।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর 'যথাশব্দ' নামের ভাব-অভিধান (২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ) পুস্তকে ‘জনাবা’ শব্দকে মিজ, মোসাম্মাৎ, শ্রী, -মতী, -যুক্তা প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে অভিন্ন দেখিয়েছেন। তিনি হয়তো এটি অসাবধানতায় করেছেন। যা আদৌ যথার্থ নয়।

সূত্র : ড. মোহাম্মদ আমীন, বাংলা ভাষার মজা, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স।
বি.দ্র -আমি শুধুমাত্র সংগ্রহ করে বানান সমস্যা দূর করার জন্য চেষ্টা মাত্র । বলতে পারেন বাংলার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করছি

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫৭
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×