দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জিতছে ঠিকই। কিন্তু এই নির্বাচনের মধ্য দিয়া এইটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হইছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কখনো সম্ভব। এইটা আওয়ামী লীগের একটা বিশাল পরাজয়। কারণ, তারাই দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের সুবক্তা ছিল।
এদিকে বিএনপি ২০১৪ সাল থিকা এই পর্যন্ত যে সুশীলদের নাকানিচুবানি খাইছে এই বইলা যে, তারা দশম জাতীয় নির্বাচনে যাইতে পারত। বিএনপি নির্বাচনে না যায়া ফাকা মাঠে গোল করার বিশাল সুযোগ দিছে আওয়ামী লীগরে। তাদের ওইসব বালপাকনামি ভবিষ্যদ্বাণী এইবার কই গেল? এইবার তো ঠিকই বিএনপি নির্বাচনে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কতটা ক্ষমতালোভী, কুৎসিত সেইটা বুঝাইতে পারছেন। এইটাও আওয়ামী লীগের প্রকারান্তরে পরাজয়সম।
দুঃখের কথা, ফেনীর এক মহিলা যে ‘ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণে’ কিংবা ‘নৌকায় ভোট না দেয়ার কারণে’ গণধর্ষণের স্বীকার হইলো। সেইটার বিক্ষোভে মুষ্টিমেয় কিছু লোকরে প্রতিবাদ করতে দেখলাম। বিষয়টা মর্মাহত করলো। গণধর্ষণের প্রতিবাদে যদি গণবিক্ষোভ না হয়, তাইলে প্রতিবাদ যারা করতেছে না, তারাও তো গণধর্ষণে শামিল ছিল বইলাই মনে হয়। এই কথাতে আইসাই ‘গণধর্ষণ’ শব্দটার অর্থ ফুইটা ওঠে।
বিএনপির রাজনীতি এখন প্রমাণের রাজনীতিতে রূপ নিতাছে। তারা শুধু এইটা প্রমাণ করতে চায়, সেইটা প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু মাইনসের মনে যেই এইসব প্রমাণপত্র বেমালুম গায়েব হয়া যায়, সেইটা বিএনপি এখনো শিখতে পারে নাই। বিএনপির প্রতীকে একটা মহিলা ভোট দিয়া গণধর্ষণের শিকার হইছে, অথচ তারা এর প্রতিবাদ না কইরা এখন এইটা প্রমাণ করতে চাইতেছে যে, ধানের শীষে ভোট দিয়া সে ধর্ষণের শিকার হইছে, এই প্রমাণের চাইতে মহিলাটা নৌকায় ভোট দেয় নাই—এইজন্য তার এই করুণ পরিণতি হইছে—এইটা প্রমাণ করতে চাইতেছে।
কিন্তু দেখেন, এই জায়গায় যদি আওয়ামী লীগ থাকত। এতক্ষণে মহিলার সাথে শেখ হাসিনার সাক্ষাত হয়া যাইত। হাসপাতালে অবহেলিত না হয়া ঢাকার ইউনাইটেডে ভর্তি হইত তার ধর্ষিত শরীর। প্রেসক্লাবে এমপি ও নেতাকর্মীরা আইসা মানবতার গান শুনাইত। দাবির পর দাবি উইঠা আসত। এরপর সুস্থ হইলে তারে কোনো এক হাসপাতালে নার্সের চাকরিও দিয়া দিত।
কিন্তু দুঃখ হইলো, মহিলাটা ধানের শীষরে সমর্থন করছে। অথচ নেতাকর্মীদের কোনো নড়াচড়া নাই। তারা এখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হইছে কিনা, সেইটা নিয়া ধন্দে পইড়া রইছে। তার চাইতেও বড় দুঃখ হইলো, আজ মহিলাটা নৌকার নয় বলে অবহেলিত হাসপাতালের বিছানায় কাতরাইতেছে।
যাই হোক, এরই মধ্য দিয়া একটা জিনিস বুঝা গেল, মানুষরে নিয়া যে আওয়ামী লীগের ‘উদার মানবিকতার’ স্লোগান, সেইটা এখন জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। আজকে রবীন্দ্রনাথ বাইচাঁ থাকলে হয়ত এটাই কইত—‘সবার উপরে আওয়ামী লীগ সত্য, তার উপরে নাই।’
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২০